রাজস্থানের জয়পুরে লোহা মান্ডি এলাকায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একটি দ্রুতগামী ডাম্পার ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরপর ১৭টি যানবাহনকে ধাক্কা দেয়। ঘটনায় অন্তত ১৪ জন নিহত ও ১৩ জনের বেশি আহত হন। পুলিশ জানিয়েছে, চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে সোমবার বিকেলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৪ জন নিহত এবং ১৩ জনের বেশি আহত হয়েছেন। শহরের লোহা মান্ডি এলাকায় একটি দ্রুতগামী ডাম্পার ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরপর ১৭টি যানবাহনকে ধাক্কা দিয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটায়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাজস্থানে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনাগুলির একটি বলে মনে করা হচ্ছে।স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাটি ঘটে সোমবার বিকেল আনুমানিক ৩টা ৪৫ মিনিটে। হারমাড়া এলাকার লোহা মান্ডির ব্যস্ত রোড নং ১৪-তে একটি বড় ডাম্পার ট্রাক অত্যধিক গতিতে ছুটে আসছিল। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ট্রাকটি প্রায় ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে চলছিল। হঠাৎই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, গাড়ি ও বাস — একের পর এক যানবাহনে ধাক্কা মারতে শুরু করে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরো রাস্তা এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বহু গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে একে অপরের ওপর উঠে যায়, অনেক মোটরসাইকেল ট্রাকের তলায় চাপা পড়ে। আহত ও আতঙ্কিত মানুষের চিৎকারে ভরে ওঠে চারপাশ। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করতে শুরু করেন। প্রায় ৩০০ মিটার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ট্রাকটি অবশেষে একটি রাস্তার বিভাজক রেলিংয়ে ধাক্কা খেয়ে থেমে যায়।সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুই শিশু (বয়স ৫ ও ৭ বছর) এবং দুই নারীও রয়েছেন। এছাড়াও ১৩ জনের বেশি আহত, যাদের মধ্যে অন্তত তিনজনের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। আহতদের অনেকেই সাধারণ পথচারী ছিলেন, যারা দুর্ঘটনার সময় রাস্তা পার হচ্ছিলেন। সকল আহতকে জরুরি ভিত্তিতে সওয়াই মানসিংহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেকেরই মাথা ও বুকে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং বেশ কয়েকজনকে ভেন্টিলেটরে রাখতে হয়েছে।তদন্তে উঠে এসেছে যে, ট্রাক চালক মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে এবং অ্যালকোহল পরীক্ষায় পজিটিভ ফলাফল পাওয়া গেছে। চালকের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ট্রাকের বীমা নথি যাচাই করা হচ্ছে। কিছু সূত্র দাবি করেছে, দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগে চালকের সঙ্গে অন্য এক গাড়িচালকের ঝগড়া হয়, এরপরই সে রাগে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে শুরু করে।একজন স্থানীয় দোকানদার জানান, "আমি হঠাৎ একটা বিকট শব্দ শুনলাম। বাইরে তাকিয়ে দেখি, ট্রাকটা ধেয়ে আসছে আর সামনে যা পাচ্ছে তাই পিষে ফেলছে। লোকজন চিৎকার করছিল, কেউ দৌড়াচ্ছিল, আবার কেউ গাড়ির নিচে আটকা পড়েছিল|
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে নিহতদের পরিবারকে প্রতি পরিবারে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। আহতদের সমস্ত চিকিৎসা খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে বলে জানানো হয়েছে।পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, "চালককে আটক করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে রাশ ড্রাইভিং, মদ্যপ অবস্থায় ড্রাইভিং ও মানবহত্যা সংক্রান্ত ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।" প্রশাসন এখন সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে এবং খতিয়ে দেখছে ট্রাকটির ব্রেক ফেল হয়েছিল কিনা, নাকি পুরো ঘটনাটি সম্পূর্ণরূপে মানবিক ত্রুটির ফল।দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই জয়পুর শহরজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। হাসপাতালের বাইরে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জনদের খোঁজে অপেক্ষা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, "লোহা মান্ডির এই রাস্তায় প্রতিদিন শত শত ভারী যানবাহন চলাচল করে, কিন্তু কোনো সঠিক নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
