বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়িকা মেহজ়বীন চৌধুরী হঠাৎই আইনি জটিলতায় ঘেরা। তাঁর বিরুদ্ধে ২৭ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও কোনও প্রমাণ মিলেনি। তবুও জারি হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা, নিতে হয়েছে জামিন। মেহজ়বীন বলছেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের পরিশ্রমের পরও এমন অপমান সহ্য করতে হচ্ছে যা তাঁকে ব্যথিত ও বিস্মিত করেছে।
মেহজ়বীনের বিরুদ্ধে ২৭ লক্ষ টাকার মিথ্যা অভিযোগ — কেন প্রমাণ ছাড়াই গ্রেফতারি পরোয়ানা? নায়িকার ক্ষোভ, অপমান ও আইনি লড়াইয়ের পূর্ণ বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের অভিনয় জগতের পরিচিত মুখ মেহজ়বীন চৌধুরী—যাকে এক দশকের বেশি সময় ধরে দর্শকেরা অভিনয়শিল্পী হিসেবে ভালোবেসে এসেছেন—হঠাৎই এমন এক আইনি জটিলতার মধ্যে পড়লেন, যা তাঁকে কষ্ট, অপমান, প্রশ্নবিদ্ধতা এবং হতাশার মুখে দাঁড় করিয়ে দিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ—২৭ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ! অথচ মামলার নথিতেই নেই কোনও দৃঢ় প্রমাণ, নেই কোনও কাগজপত্র, নেই কোনও চুক্তি, নেই কোনও ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার—অর্থাৎ অভিযোগের ভিত্তি শূন্য।
তারপরও এই অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের হলো মামলা, জারি হলো গ্রেফতারি পরোয়ানা, আর বাধ্য হয়ে মেহজ়বীনকে আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে হলো।
যে শিল্পী দীর্ঘ ১৫ বছর নিষ্ঠা, পরিশ্রম এবং সততার সঙ্গে করে আসছেন অভিনয়—তাঁর জন্য এটি শুধু আইনি চ্যালেঞ্জ নয়, এক গভীর মানসিক আঘাতও। এই ঘটনার পরই তিনি প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন—
“১৫ বছর ধরে নিষ্ঠা দিয়ে কাজ করার পরও আজ আমাকে আমার সততা প্রমাণ করতে হচ্ছে!”
এ বক্তব্যের গভীর বেদনা অনেক।
কারণ এটি শুধুই একটি অভিযোগ নয়—এটি একজন সফল শিল্পীর চরিত্র, সামাজিক মর্যাদা এবং পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা।
অভিযোগের গোড়ায় যে ব্যক্তি—তিনি আসলে কে? কেন হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না?
মামলাটি শুরু হয় ২০২৫ সালের মার্চ মাসে। একজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন—
তিনি নাকি ২০১৬ সাল থেকে মেহজ়বীনের সঙ্গে ব্যবসা করতেন
সেই ব্যবসার জন্য তিনি নায়িকাকে ২৭ লক্ষ টাকা দিয়েছেন
কিন্তু নায়িকা নাকি ব্যবসার কোনও হিসাব দেননি
তাই তিনি আত্মসাতের মামলা করছেন
শুনতে যতটা সরল, পিছনের ছবিটা ততটাই জটিল।
অভিযোগকারী নিজেই—
নায়িকার সঠিক ফোন নম্বর জানতেন না
ঠিকানা জানতেন না
কোনও পরিচয়পত্র জমা দেননি
ব্যবসা সংক্রান্ত কোনও নথি দেননি
ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দিতে পারেননি
চেক, চুক্তিপত্র, রসিদ—কিছুই নেই
এমনকি ব্যবসায়িক যোগাযোগের কোনও ভিডিও বা ছবি পর্যন্ত নেই
সাধারণত কোনও ব্যবসা বা টাকার লেনদেন ছাড়া একজন ব্যক্তি এত বড় অঙ্কের অভিযোগ কীভাবে দায়ের করেন—এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
অভিযোগকারী ও তাঁর আইনজীবী মামলা দায়েরের পরে গায়েব হয়ে যান।
তাঁদের ফোন বন্ধ থাকে।
অবস্থান অজানা।
ট্রেস করা যায়নি।
তাহলে অভিযোগের ভিত্তি কী?
নিঃসন্দেহে এটি একটি সন্দেহজনক মামলা।
ন’মাস ধরে কোনও নোটিস নেই, কোনও ফোন নেই — এমন মামলাই আদালতে!
মেহজ়বীন বলেন—
“পুরো ন’মাস আমি প্রশাসন বা আদালত—কোনও দিক থেকে কোনও তথ্য পাইনি।”
এর মানে—
পুলিশ নোটিস দেয়নি
তদন্ত দল যোগাযোগ করেনি
আদালত চিঠি পাঠায়নি
কেউ হাজিরা চায়নি
এত দীর্ঘ সময় অভিযোগ উড়ে বেড়ালেও, আসামিকে একবারও ডাক দেয়া হয়নি—এটি কার্যত অসম্ভব।
এখানেই সন্দেহ আরও গভীর হয়—
মামলাটি কি ইচ্ছাকৃত ভাবে আদালতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল?
কীভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলো প্রমাণবিহীন অভিযোগে?
আইনজীবীরা বলছেন—
সাধারণত কোনও আর্থিক আত্মসাতের মামলায়—
প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ
নথি
চুক্তি
আর্থিক রেকর্ড
ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট
এসব ছাড়াই আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া অস্বাভাবিক।
তারপরও মেহজ়বীনের নামে পরোয়ানা জারি হলো।
এবং অভিনেত্রীকে কোনও বিকল্প না পেয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হয়।
আদালতে আত্মসমর্পণ ও জামিন — কিন্তু অপমানের দাগ থেকে গেল
রবিবার সন্ধ্যায় মেহজ়বীন ও তাঁর ভাই ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা হক তানিয়ার সামনে হাজির হন।
জামিনের আবেদন করেন।
আদালত তা মঞ্জুর করেন।
কিন্তু নায়িকা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত।
কারণ তিনি জানেন—এই অভিযোগ শুধু তাঁকে আইনি ঝামেলায় ফেলে দেয় না, তাঁর ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
তাই তিনি পরদিন সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ পোস্ট করেন, যেখানে তিনি লিখেন—
“এ সব ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে—এটাই আমার কাছে সবচেয়ে লজ্জার।”
নায়িকার যুক্তি—“একটি কাগজও দেখাতে পারেনি অভিযোগকারী”
মেহজ়বীন প্রকাশ্যে জানান—তিনি কোনওদিন ওই ব্যক্তিকে চেনেন না।
আরও বলেন—
অভিযোগকারী দেখাতে পারেননি—
ব্যবসার চুক্তি
আর্থিক লেনদেন
ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট
লিখিত নথি
পরিচয়পত্র
ঠিকানা
আইনজীবীর বৈধ পরিচয়
ব্যবসার মিটিংয়ের ছবি
ব্যবসার ভিডিও
চেক বা লেনদেনের রসিদ
একজন মানুষ যদি সত্যিই ২৭ লক্ষ টাকা দেন,
তবে তার কোনও কাগজপত্র থাকবে না?
এটাই প্রমাণ করে—মামলাটি উদ্দেশ্যমূলক।
অনেক তারকাই আগে এমন ভুয়ো মামলার শিকার হয়েছেন
বাংলাদেশে বিনোদন জগতের তারকাদের বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা হওয়া নতুন কিছু নয়।
পরীমণি
অপু বিশ্বাস
নুসরত ফারিয়া
হিরো আলম
অতীতে এঁরাও নানা সময়ে ভুয়ো অভিযোগ, ব্ল্যাকমেল, ভুয়ো কাগজপত্র বা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
জনপ্রিয় মানুষ হওয়া মানেই অনেক সময়ই তাঁরা এমন অযাচিত আক্রমণের শিকার হন।
মেহজ়বীনের ক্ষেত্রেও ঘটনা সেই একই ধাঁচের বলে মনে করছেন অনেকেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নায়িকার ব্যঙ্গ — “তাঁকে পেলে আমার কাছে নিয়ে আসবেন”
জামিনের পরে মেহজ়বীন বলেন—
সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর থেকেই অভিযুক্ত গায়েব।
তিনি ব্যঙ্গ করে লেখেন—
“কেউ তাঁকে পেলে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। আরও কিছু ‘ব্যবসায়িক’ কথা আছে।”
এই বাক্যেই বোঝা যায়—নায়িকা ব্যথিত, অভিমানী, বিরক্ত এবং অসহায়।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটি স্পষ্টতই ‘ফাঁদ’ হতে পারে
আইনজীবীরা বিশ্লেষণ করে বলেছেন—
যদি অভিযোগকারী—
সঠিক নম্বর না জানেন
ঠিকানা না জানেন
পরিচয়পত্র নেই
আর্থিক নথি নেই
তাহলে তাঁর অভিযোগ আদালত পর্যন্ত যাওয়ারই কথা নয়।
এটি হতে পারে—
সেলিব্রিটিকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা
জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে অর্থ আদায়ের ফাঁদ
সংবাদে আসার চেষ্টা
চাঁদা তোলার উদ্দেশ্য
চরিত্রহনন
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এমন কৌশল আজকাল খুব সাধারণ।
মেহজ়বীনের লড়াই — সত্যের পথে হাঁটার প্রতিজ্ঞা
এই ঘটনার পরও মেহজ়বীন তাঁর আত্মবিশ্বাস হারাননি।
বরং তিনি স্পষ্ট বলেন—
“মিথ্যা মামলা ধোপে টিকবে না। সত্যের জয় হবেই।”
তিনি আইনের প্রতি আস্থা রাখছেন।
এবং আশা করছেন—অভিযোগকারীকে শিগগিরই শনাক্ত করা যাবে।
ঘটনার সামাজিক প্রভাব — শিল্পীর সম্মান সবচেয়ে মূল্যবান
একজন শিল্পীর জন্য তাঁর সুনাম, তাঁর সততা, তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা—এটাই সবচেয়ে বড় সম্পদ।
মেহজ়বীনের ক্ষেত্রে সেই জায়গাটিই আঘাত পেয়েছে।
তিনি শুধু আইনি লড়াই করছেন না—
তিনি নিজের শিল্পী-অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছেন।
এই ঘটনা দেখিয়ে দিল—
একটি মিথ্যে অভিযোগ একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর মানসিক ও পেশাগত জীবনে কত বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
“সত্যকে ঢেকে রাখা যায়, হারানো যায় না”—মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে মেহজ়বীনের লড়াই এবং মানবিক সাহসের গল্প
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজ়বীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ওঠা ২৭ লক্ষ টাকার আত্মসাতের অভিযোগ শুধু একটি আইনি মামলা নয়—এটি একজন শিল্পীর সম্মান, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং মানবিক মর্যাদার উপরে সরাসরি আক্রমণ। যে অভিযোগের কোনও বৈধ ভিত্তি নেই, নেই কোনও নথি, নেই কোনও আর্থিক প্রমাণ—তার এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া যে গ্রেফতারি পরোয়ানা পর্যন্ত জারি হল—এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রশ্ন ওঠে, প্রমাণের অনুপস্থিতিতে কীভাবে এই মামলা আদালত পর্যন্ত গেল? কী উদ্দেশ্যে এমন মিথ্যে অভিযোগ আনা হলো? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীকে এভাবে মানসিকভাবে আঘাত করার নেপথ্যে আসল উদ্দেশ্য কী?
মামলার প্রতিটি ধাপে অসঙ্গতি স্পষ্ট। অভিযোগকারী ব্যক্তি নাকি ২০১৬ সাল থেকে নায়িকার সঙ্গে ব্যবসা করেছেন—কিন্তু তাঁর কাছে নেই কোনও ব্যাঙ্ক লেনদেনের প্রমাণ, নেই কোনও চুক্তিপত্র, নেই কোনও রসিদ, নেই কোনও ভিডিও বা মিটিংয়ের ছবি। এমনকি তিনি নায়িকার সঠিক ফোন নম্বর বা ঠিকানা পর্যন্ত জানতেন না। অভিযোগকারী ও তাঁর আইনজীবীর ফোন মামলার পর থেকেই বন্ধ—এটিও সন্দেহকে আরও গভীর করে। সব মিলিয়ে ঘটনা স্পষ্ট—এটি একটি পরিকল্পিত, উদ্দেশ্যমূলক ও ভিত্তিহীন অভিযোগ, যার নেপথ্যে হয়তো অন্য কোনও চাপ, ক্ষোভ বা ব্ল্যাকমেলিংয়ের প্রয়াস লুকিয়ে আছে।
এই পরিস্থিতিতে নায়িকা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন—যা আদালত মঞ্জুরও করে। কিন্তু জামিন পাওয়া মানেই মানসিক শান্তি ফিরে পাওয়া নয়। তাঁর কাছে সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো—১৫ বছরের সৎ, নিষ্ঠাভরা ক্যারিয়ারের পর আজ তাঁকে নিজের চরিত্র, সততা এবং পেশাদারিত্ব ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে। এই মানসিক লজ্জা এবং অপমান একজন শিল্পীর জন্য গভীর আঘাতের সমান। নিজের অভিমানে তিনি তাই লিখেছেন—
“আমি এত বছর পরিশ্রম করে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি। কিন্তু আজ আমাকে নিজের সততা ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে—এটাই সবচেয়ে কষ্টের।”
তবে এই কঠিন সময়ে তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং তাঁর বিশ্বাস—সত্যের জয় হবেই।
এই বিশ্বাসই তাঁকে পথ দেখাচ্ছে।
মিথ্যে অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা কখনোই সহজ নয়—বিশেষত যখন আপনি একজন পরিচিত মুখ, একজন জনপ্রিয় শিল্পী। তখন প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি কথা, প্রতিটি সিদ্ধান্ত জনসমক্ষে আসে, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়। কিন্তু মেহজ়বীনের ধৈর্য, দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করে—তিনি শুধু একজন ভালো অভিনেত্রী নন, একজন সাহসী মানুষও।
এই পুরো ঘটনায় একটি বিষয় স্পষ্ট—সত্যকে হয়তো সাময়িকভাবে চাপা রাখা যায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা সামনে আসে। মিথ্যা কখনোই স্থায়ী হয় না। আর এই বিশ্বাসই মেহজ়বীনের সবচেয়ে বড় শক্তি।
তিনি জানেন—সমাজ, দর্শক এবং আইন—শেষ পর্যন্ত তাঁর পাশে দাঁড়াবে।