28,800 কোটির অদ্ভুত সাম্রাজ্য গড়ে তুলেও আজও থামেননি তিনি। রাম চরণের দাদামশাই-শ্বশুর ডঃ প্রতাপ সি. রেড্ডি যিনি ৯১ বছর বয়সেও সপ্তাহে ছ’দিন নিয়ম করে কাজ করেন। পৃথিবীর অন্যতম সফল কর্পোরেট হাসপাতাল চেইন—Apollo Hospitals তারই হাত ধরে জন্ম নেয় ভারতীয় স্বাস্থ্যসেবায় এক বিপ্লবের সূচনা করে। একসময় ভারতে আধুনিক চিকিৎসার সুবিধা ছিল সীমিত, বিদেশে গিয়ে বড় সার্জারি করাতে হতো। সেই পরিকাঠামোর ঘাটতি বদলে দেওয়ার সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন এই মানুষটি। আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ৭১টি অ্যাপোলো হাসপাতাল, ৫০০০+ ফার্মেসি, ডিজিটাল হেলথ ইকোসিস্টেম, লক্ষ লক্ষ রোগীর আস্থা ও সুস্বাস্থ্যের প্রতীক। বয়স তাঁর কাছে কখনই বাধা ছিল না। বরং প্রতিদিন নতুন কাজ, নতুন পরিকল্পনা আর মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে তাকে আরও শক্তি দিয়েছে। তাঁর নেট ওয়ার্থ আজ প্রায় 28,800 কোটি, কিন্তু তার চেয়েও বড় বিষয় এ বয়সেও তাঁর কাজের উদ্যম, শৃঙ্খলা ও মূল্যবোধ। তাঁর গল্প শুধু সফলতার নয় এ হল ইচ্ছাশক্তির, অধ্যবসায়ের, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির এবং ভারতকে উন্নত স্বাস্থ্যসেবার দিকে নিয়ে যাওয়ার এক অদম্য যাত্রা।
28,000 কোটির বিশাল সাম্রাজ্যের শিখরে দাঁড়িয়ে আছেন এমন এক মানুষ, যাঁর গল্প আজকের প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার জীবন্ত উদাহরণ। তিনি ডঃ প্রতাপ সি. রেড্ডি—রাম চরণের ৯১ বছর বয়সি দাদামশাই-শ্বশুর এবং ভারতের স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটানো Apollo Hospitals-এর প্রতিষ্ঠাতা। বয়স যখন অনেকের জীবনে গতি কমিয়ে দেয়, তখন এই মানুষটি দেখিয়েছেন—ইচ্ছাশক্তি আর অদম্য পরিশ্রম থাকলে বয়স কোনও বাধাই নয়।
দেশ–বিদেশে বিস্তৃত ৭১টি Apollo Hospital, হাজারো চিকিৎসক, কোটি রোগীর আস্থা—সব কিছুর নেপথ্যে তাঁর দূরদর্শিতা, সাহসিকতা ও স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা। আশ্চর্যের বিষয়, ৯১ বছর বয়সেও তিনি নিয়ম করে সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করেন, মিটিং করেন, পরিকল্পনা করেন এবং হাসপাতাল নেটওয়ার্ককে আরও আধুনিক করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যান। তাঁর নেট ওয়ার্থ আজ দাঁড়িয়েছে প্রায় 28,800 কোটি—যা শুধু আর্থিক সাফল্য নয়, ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির প্রতীক।
তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় বার্তা—
বয়স কোনো বাধা নয় আসল শক্তি হল মন, ইচ্ছাশক্তি এবং শিখতে থাকার আগ্রহ।
ডঃ রেড্ডির যাত্রা দেখিয়ে দেয়, জীবনে সঠিক লক্ষ্যে ফোকাস থাকলে, প্রতিদিন একটু একটু করে এগোলে, আর মানুষের জন্য কাজ করার মানসিকতা থাকলে সাফল্য অবশ্যই আসে। তিনি শুধু এক হাসপাতাল সাম্রাজ্যই গড়ে তোলেননি—তিনি গড়ে তুলেছেন এক নতুন স্বাস্থ্যবিপ্লব, যা আজ কোটি মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে।
৯১ বছর বয়সেও এমন কর্মস্পৃহা, এমন শৃঙ্খলা, এমন উদ্দীপনা সত্যিই বিরল। তাই তাঁর গল্প শুধু তথ্য নয়, এটি এক গভীর অনুপ্রেরণার উৎস, যা শেখায়—জীবনে কখনো থেমে যেও না।
মানুষের জীবন সম্পর্কে আমরা প্রায়ই শুনে থাকি বয়স তো শুধু একটি সংখ্যা। কিন্তু এই বাক্যের বাস্তব উদাহরণ হাতে গোনা কয়েকজনই দিতে পারেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম নাম—ডঃ প্রতাপ সি. রেড্ডি, দক্ষিণ ভারতের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া এক মানুষ, যিনি শুধু নিজের স্বপ্নই পূরণ করেননি, পূরণ করেছেন লাখো মানুষের আশা।
তিনি শুধু একজন ডাক্তার নন; তিনি ভারতীয় চিকিৎসা পরিকাঠামোর স্থপতি। তাঁর চিন্তা, পরিশ্রম, সাহসিকতা এবং দূরদর্শিতার ফলেই জন্ম নেয় Apollo Hospitals, যা আজ ভারতের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য হেলথকেয়ার নেটওয়ার্কগুলোর একটি।
এমন এক ব্যক্তি, যার বয়স ৯১ বছর, অথচ এখনও সপ্তাহে ছ’দিন নিয়ম করে অফিস করেন, মিটিং করেন, পরিকল্পনা করেন এবং নতুন নতুন হেলথ টেকনোলজি নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর নেট ওয়ার্থ আজ ₹28,800 কোটি, কিন্তু তার চেয়েও বড় তাঁর অবদান ভারতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া।
ডঃ রেড্ডির জন্ম ১৯৩৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের তেলেঙ্গানার এক সাধারণ পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল মানুষকে সেবা করা, একজন চিকিত্সক হওয়া। সেই সময় ভারতে আধুনিক চিকিৎসা ছিল পরিমিত, অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের বিদেশে গিয়ে বড় সার্জারি করতে হতো।
তিনি মেডিক্যাল পড়াশোনা শেষ করার পর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। সেখানে তিনি বুঝতে পারেন
ভারতের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো উন্নত হাসপাতাল পরিকাঠামোর অভাব।
তাঁর মনে দৃঢ় হয়
একদিন দেশে ফিরে ভারতের মানুষের জন্য বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরি করব।
ভারত স্বাধীন হলেও ৬০–৭০-এর দশকে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি ছিল খুব সীমিত। বিদেশে চিকিত্সার খরচ সাধারণ ভারতীয়ের নাগালের বাইরে। সেই সময়ে ডঃ রেড্ডি ভাবলেন
ভারতে এমন একটি আধুনিক হাসপাতাল দরকার যেখানে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পাওয়া যাবে, যাতে ভারতীয়দের বিদেশে যেতে না হয়।
এই ভাবনা থেকেই জন্ম নিল Apollo Hospitals-এর ধারণা।
১৯৮৩ সাল। মাত্র কয়েকজন ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞকে সঙ্গে নিয়ে চেন্নাইয়ে গড়ে তুললেন প্রথম Apollo Hospital।
তখন কেউই ভাবেননি এই হাসপাতাল ভারতের চিকিৎসা ইতিহাস পাল্টে দেবে।
এটি ছিল
প্রথম বহুমাত্রিক কর্পোরেট হাসপাতাল
প্রথম আন্তর্জাতিক চিকিৎসা মানদণ্ডে তৈরি প্রতিষ্ঠান
যেখানে প্রযুক্তি, দক্ষতা, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সবকিছু বিশ্বমানের
রোগীরা ধীরে ধীরে বিদেশ যাওয়ার বদলে Apollo-কে ভরসা করতে শুরু করেন।
আজ Apollo শুধু একটি হাসপাতাল নয়—এটি একটি হেলথকেয়ার ইকোসিস্টেম।
তাদের রয়েছে
৭১টি মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতাল
৫,০০০+ Apollo Pharmacy
১,০০০+ Diagnostic Centers
Apollo Telemedicine Network
Apollo Health Insurance Services
TeleHealth, AI-Based Diagnostics, Robotic Surgery Programs
ভারতের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় Apollo রুগীদের সেবা দিচ্ছে।
ডঃ রেড্ডির এই সাম্রাজ্য মূল্য ২০২৫ সালের হিসাবে ₹28,800 কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
সাধারণত ৬০–৭০ বছর বয়সের পর সবাই অবসর নেন।
কিন্তু ডঃ রেড্ডি বিশ্বাস করেন—
“যতদিন সক্ষম, ততদিন মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া উচিত।”
তাই
তিনি প্রতিদিন সকালে ওঠেন
নিয়ম করে অফিসে যান
উচ্চ পর্যায়ের মিটিং করেন
নতুন স্বাস্থ্য প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন
দেশের স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবেন
৯১ বছর বয়সে এমন নিয়মিত কাজ করা সত্যিই বিরল।
তিনি বলেন—
“কাজ আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। মানুষের সেবা আমার শক্তির উৎস।”
অনেকেই জানেন না, ডঃ রেড্ডি হলেন দক্ষিণ ভারতের সুপারস্টার রাম চরণ-এর দাদামশাই-শ্বশুর।
রাম চরণের স্ত্রী উপাসনা কামিনেনি—Apollo Hospitals-এর ভাইস চেয়ারপার্সন।
রেড্ডি পরিবার শুধু স্বাস্থ্যসেবা নয়, ভারতের কর্পোরেট ও সামাজিক কাজেও গভীরভাবে যুক্ত।
সেলিব্রিটি ফ্যাক্ট থাকলেও বাস্তব হল—ডঃ রেড্ডির ব্যক্তিত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি এবং কাজের মানই তাকে বড় করে তুলেছে।
ডঃ রেড্ডি প্রথমবারের মতো দেশে আধুনিক হৃদরোগ চিকিৎসা আনেন।
হার্ট সার্জারি, বাইপাস, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির সফলতা Apollo-কে বিশ্বে পরিচিত করে।
Apollo Cancer Centres এখন ভারতের সবচেয়ে আধুনিক ক্যান্সার কেয়ার সিস্টেম।
সেখানে রয়েছে—
Robotic Surgery
Proton Therapy
Bone Marrow Transplant
ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনার জন্য Telemedicine চালু করেন তিনি—যা আজ কোটি মানুষের জীবন বাঁচায়।
Apollo Munich Health Insurance ভারতীয়দের স্বাস্থ্যনিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখে।
ডঃ রেড্ডির মতে, সফলতার তিনটি স্তম্ভ—
ইচ্ছাশক্তি
শৃঙ্খলা
নিরবচ্ছিন্ন শেখার মানসিকতা
তিনি বলেন—
“দিনে কয়েক ঘণ্টা কাজ নয়, মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার ইচ্ছাই আমাকে আজও কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।”
ডঃ রেড্ডির জীবনে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মেয়েরা সকলেই Apollo-এর বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেন।
তিনি সবসময় বলেন—
“হাসপাতাল শুধু ব্যবসা নয়; এটি মানুষের বিশ্বাসের জায়গা। মানবিকতা ছাড়া চিকিৎসা অসম্পূর্ণ।”
তাই Apollo-র প্রত্যেকটি ইউনিটে রোগীর যত্ন, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত মানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কারণ—
তিনি শূন্য থেকে সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন
বয়সকে কখনোই বাধা হতে দেননি
ভারতীয় স্বাস্থ্যসেবাকে বিশ্বে পরিচিত করেছেন
তিনি প্রমাণ করেছেন ইচ্ছাশক্তি ও মানসিক দৃঢ়তা থাকলে যেকোনো বয়সে সাফল্য সম্ভব
তিনি প্রায়ই বলেন—
“স্বাস্থ্যই মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। যদি আমরা মানুষকে সুস্থ রাখতে পারি, তবে দেশও এগোবে।”
তিনি আরও বলেন—
“গল্পের নায়ক হতে চাইলে নিজের ভয়কে জয় করতে হবে। আমি ভয় পাইনি, তাই Apollo সম্ভব হয়েছে।”
তিনি পরবর্তী প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে কিছু বড় লক্ষ্য স্থির করেছেন—
AI ভিত্তিক ডায়াগনস্টিক
ভারতে সাশ্রয়ী চিকিৎসা
ছোট শহরে আরও হাসপাতাল
মেডিক্যাল ট্যুরিজম বাড়ানো
ডিজিটাল হেলথকার্ড সুবিধা
বিশ্বমানের নার্সিং এবং মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট
তার মতে—“আগামী ২০ বছর ভারতের স্বাস্থ্যসেবার সোনালি যুগ।”
ডঃ প্রতাপ সি. রেড্ডি আমাদের শেখান—
আপনি যদি সত্যিকারের ইচ্ছা রাখেন, বয়স কখনোই আপনার পথ আটকাতে পারে না।
৯১ বছরেও ছ’দিন কাজ করা, ভারতের স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব আনা, ₹28,800 কোটির সাম্রাজ্য তৈরি করা—এসবই প্রমাণ করে যে তাঁর জীবনটাই এক অনুপ্রেরণা।
যে মানুষ দেশের উন্নতির জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছেন—তিনি আজ ভারতের স্বাস্থ্য ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম।
তাঁর গল্প শুধু সফল ব্যবসার নয়; এটি মানবিকতার, দৃষ্টিভঙ্গির, সাহসিকতার এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির এক অমূল্য উদাহরণ।