ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমি বিরোধে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার সকালে লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আধা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। দুই দশক ধরে চলা এই জমি বিরোধের মীমাংসা হয়নি। নিহতের পরিবার দ্রুত বিচার দাবি করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি উপজেলায় শনিবার সকালে জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক দেখা দেয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার দুই পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে তীব্র বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জের ধরে সকাল থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই উভয় পক্ষের লোকজনকে বিতর্কিত জমির পাশে জড়ো হতে দেখা যায়। কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। উভয় পক্ষ লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয় এবং স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যান। শিশু ও নারীরা ভয়ে কাঁদতে থাকেন এবং পুরো এলাকা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল, তাদের জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়। নিহতের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা হাসপাতালে ভেঙে পড়েন এবং হাহাকার করতে থাকেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও দুপুর পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। পুলিশ টহল জোরদার করেছে এবং উভয় পক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, জমি নিয়ে পুরনো বিরোধের জেরেই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ ঘটনায় একজন নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে এবং সংঘর্ষে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে তদন্ত করছে। অন্যদিকে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে, পুলিশের উপস্থিতি থাকলে হয়তো এ ধরনের প্রাণহানি ঘটত না। তারা জানায়, আগেও একাধিকবার বিরোধের ঘটনা ঘটেছে এবং পুলিশকে জানানো হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিহতের পরিবার দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি দাবি করেছে। তারা ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে| এলাকাবাসী দ্রুত বিরোধের স্থায়ী সমাধান এবং দোষীদের শাস্তি কামনা করছেন|
