Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

অপ্রত্যাশিত মেট্রো বিপর্যয় ছুটির দিনেও ক্ষুদিরাম ময়দান রুট হয়ে উঠল দুঃস্বপ্ন

রবিবার সকালে নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা থেকে ব্লু লাইনে মেট্রো পরিষেবা চালুর কথা থাকলেও যাত্রীরা স্টেশনে গিয়ে দেখেন পরিষেবা বন্ধ। ঘোষণা করা হয় যে অনিবার্য কারণে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে ময়দান পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে নিত্যযাত্রী ও অফিসগামীদের ভোগান্তি বাড়ে, অনেকে বিকল্প পরিবহনের খোঁজে স্টেশন ছাড়তে বাধ্য হন।

অপ্রত্যাশিত মেট্রো বিপর্যয় ছুটির দিনেও ক্ষুদিরাম ময়দান রুট হয়ে উঠল দুঃস্বপ্ন
ট্রাফিক-পরিবহন

কলকাতা মেট্রো পরিষেবা নিয়ে অসন্তোষ নতুন কিছু নয়। গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক ঘটনায় শহরের নিত্যযাত্রীরা প্রায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন হঠাৎ পরিষেবা বন্ধ, সিগন্যাল ত্রুটি, বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজের কারণে থমকে যাওয়া লাইনের সঙ্গে। তবুও ছুটির দিনে মানুষ আশা করেন একটু শান্তি, আরাম এবং নির্বিঘ্ন যাতায়াত। কিন্তু রবিবার সকালে সেই আশাতেই ফের জল ঢালল ব্লু লাইন মেট্রো।

সকাল থেকেই নানান স্টেশনে ভিড় জমতে থাকে নিত্যযাত্রী, অফিসগামী কর্মী, এমনকি ছুটির দিনে ঘুরতে বেরোনো সাধারণ মানুষের। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী রবিবার সকাল ৯টা থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত ব্লু লাইন পরিষেবা চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তব ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। যাত্রীরা স্টেশনে পৌঁছে দেখেন, মেট্রো নেই, টিকিট কাউন্টারের সামনে বিভ্রান্ত মানুষের লম্বা লাইন, আর লাউডস্পিকারে ঘোষণা
“অনিবার্য কারণে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে ময়দান পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ।”

এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। অনেকে জানান, কোনও পূর্বঘোষণা ছিল না। স্টেশনে পৌঁছে তবেই জানতে পারেন যে পরিষেবা বন্ধ। ফলে কেউ ঘুরপথে বাস ধরতে বাধ্য হন, কেউ আবার অ্যাপ ক্যাব বুক করতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচের মুখে পড়েন। ছুটির সকালেই এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েন বহু মানুষ।

রক্ষণাবেক্ষণের কাজেই বিপত্তি?

মেট্রো কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত থেকেই ব্লু লাইনে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। এর জন্য ‘পাওয়ার ব্লক’ রাখা হয়েছিল। সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এই ধরনের কাজ শেষ হয় এবং পাওয়ার ব্লক তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু রবিবার সকাল পর্যন্ত সেটি তোলা হয়নি।

ফলে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে ময়দান পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ থাকে। ময়দান থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত পরিষেবা স্বাভাবিক থাকলেও দক্ষিণ কলকাতার বড় অংশ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যাদের গন্তব্য ছিল কলকাতার সেন্ট্রাল বা নর্থ জোন, তাদের ভোগান্তি হয় সবচেয়ে বেশি।

মেট্রো কর্তৃপক্ষ দাবি করে, “প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল আপগ্রেডের জন্য কাজ চলছিল, তাই অল্প কিছু সময় পরিষেবা ব্যাহত হয়।”
তবে অল্প সময় বলতে যে এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে যাত্রীরা অস্বস্তিকর অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন সাধারণ মানুষ।

এক ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয় পরিষেবা

প্রায় ১ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর পরিষেবা স্বাভাবিক হয় বলে জানান মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সকাল অবধি অপেক্ষা করা যাত্রীদের অনেকেই সে সময় নিজেদের গন্তব্যের দিকে রওনা দিতে পারেন। তবে অনেকেই ইতিমধ্যেই স্টেশন ছেড়ে অন্য পরিবহনের পথে বেরিয়ে পড়েন।

এই ঘটনার পর যাত্রীদের প্রশ্ন—
“রক্ষণাবেক্ষণের কাজ আগের রাতেই শুরু হয়, তা হলে কেন আগেই ঘোষণা করা হয়নি?”
তাদের বক্তব্য, পূর্ব ঘোষণা থাকলে স্টেশনে এসে বিপাকে পড়তে হত না। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন—
“মেট্রোর ওপর বিশ্বাস আর রাখা যাচ্ছে না। কখন কী হয় বলা যায় না!”

গত এক মাস ধরে বারবার বিপর্যয়

এই বিপর্যয় কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত এক মাসে ব্লু লাইনে অন্তত ৮–১০ বার পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। কখনও সিগন্যালিং সমস্যায়, কখনও লাইনে ফাটল, কখনও ওভারহেড ইকুইপমেন্টে ত্রুটি।

শনিবারও একই ঘটনা ঘটেছিল। দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে রক্ষণাবেক্ষণের কারণে দীর্ঘক্ষণ পরিষেবা বন্ধ ছিল। সেই সময় বরাহনগর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত চলেছিল ‘ভাঙা পথে’ পরিষেবা। যাত্রীদের ধারণা, বারবার রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন মানে কোথাও না কোথাও বড় সমস্যার ইঙ্গিত—যা মেট্রো কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানাচ্ছে না।

যাত্রীদের বক্তব্য—
“দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণ হওয়ার পর থেকেই পরিষেবা বারবার বিপর্যস্ত হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ এত ঘনঘন কেন লাগছে?”

‘ভাঙা পথ’ পরিষেবা—যাত্রীদের নতুন দুঃস্বপ্ন

ব্লু লাইনে সমস্যার সময় মেট্রো কর্তৃপক্ষ যে ‘ভাঙা পথে পরিষেবা’ চালানো শুরু করেছেন, সেটিও যাত্রীদের জন্য নতুন দুর্ভোগের কারণ। যাত্রীরা জানাচ্ছেন—

  • কখন ট্রেন কোন স্টেশন পর্যন্ত যাবে

  • কোন লাইনে বদলাতে হবে

  • কোথায় পরিষেবা বন্ধ

এসব বিষয়ে যথাযথ তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে হুহু করে বাড়ছে বিভ্রান্তি।

প্রতিদিনের মতো রবিবারেও একই চিত্র দেখা যায়। দক্ষিণেশ্বর–ময়দান পর্যন্ত ট্রেন চললেও ময়দান–শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত পরিষেবা বন্ধ ছিল। যাত্রীদের অনেকে মাঝ পথে নেমে রাস্তায় বের হতে বাধ্য হন।

ছুটির দিনেও ভোগান্তি

ছুটির দিন বলে বহু মানুষ সকালবেলা বের হন না, এটা ঠিক। কিন্তু যারা বেরিয়েছিলেন—তাদের ভোগান্তি আরও বেশি। অনেকেই জানান—
“রবিবার একটু স্বস্তিতে বেরোনোর পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু মেট্রোই সব নষ্ট করে দিল।”

news image

অনেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর রাগে ও অসহায়ে মুখে স্টেশন ছেড়ে যেতে দেখা যায়।

সমাধান কবে? প্রশ্ন বাড়ছে নিত্যযাত্রীদের

দিন দিন যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে ব্লু লাইনে। দক্ষিণেশ্বর থেকে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত দীর্ঘ পথ জুড়ে হাজার হাজার মানুষ নির্ভর করেন এই পরিষেবার উপর। সেই পরিকাঠামো যদি নিয়মিত ব্যাহত হয়, তবে মেট্রোর এই জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যমটির উপর সাধারণ মানুষের আস্থা কমতে বাধ্য।

যাত্রীদের দাবি—

  • আগাম ঘোষণা

  • নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের উপযুক্ত সময়

  • পরিষ্কার তথ্য প্রচার

  • বিকল্প ব্যবস্থা

এগুলো নিশ্চিত করতে হবে।

পরিষেবা ফের স্বাভাবিক হলেও বিভ্রাটের ধাক্কা কিন্তু থেকেই যায়। প্রতিদিনকার যাতায়াতে অস্থিরতা, দেরি, অতিরিক্ত ভিড়—এসব মোকাবিলা করতে করতে নিত্যযাত্রীরা আজ প্রায় ক্লান্ত।

ছুটির দিনেও বিভ্রাট—অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে কি?

কলকাতা মেট্রো দেশের পুরনো এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থাগুলির একটি। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই ব্লু লাইনের পরিষেবা এমন অনিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে যে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—
“ছুটির দিনেও কি তবে বিভ্রাট অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে?”

রবিবারের বিপর্যয় আবারও দেখিয়ে দিল—যাত্রীরা এখনও সেই পুরনো সমস্যার মধ্যেই রয়েছেন। নতুন কিছু নয়, শুধু একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি 

কলকাতা মেট্রো দেশের অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ ব্লু লাইন ধরে দক্ষিণেশ্বর থেকে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত যাতায়াত করেন। অফিসগামী কর্মী থেকে শুরু করে পরীক্ষার্থী, দোকানদার, সাধারণ পথচলতি মানুষ—এই পরিবহন ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীলতার সীমা নেই। অথচ গত কয়েক মাস ধরে এই সিস্টেমে এমন অনিয়মিতা দেখা দিচ্ছে যে নিত্যযাত্রীদের ধৈর্য প্রায় শেষ হয়ে আসছে। সিগন্যালিং ত্রুটি, ওভারহেড কাজ, লাইনে ফাটল, রক্ষণাবেক্ষণের অজুহাতে বারবার পরিষেবা বন্ধ—এসব যেন রোজকার অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে।

যাত্রীরা বারবার অভিযোগ জানিয়েছেন যে মেট্রো কর্তৃপক্ষ কোনও পূর্বঘোষণা দেয় না। অনেক সময় স্টেশনে পৌঁছনোর পরেই জানতে হয় ট্রেন চলবে না বা মাঝপথে পরিষেবা বন্ধ। এতে শুধু সময়ই নষ্ট হয় না, যতোটা ক্ষতি হয় মানুষের মানসিক শান্তি ও দৈনন্দিন রুটিনের। কর্মস্থলে দেরি হওয়া, আপসেট শিডিউল, বিকল্প পরিবহনে অতিরিক্ত খরচ—সব মিলিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

রবিবারের ঘটনাও সেই একই কাহিনি। এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর যদিও পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই ধরনের অনিয়ম আর কতদিন চলবে? যাত্রীরা ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলছেন, “রোজ রোজ এই বিভ্রাট মানা যায় না। একটা নির্ভরযোগ্য পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের উপরেই।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণের পর লাইনের ওপর চাপ বেড়েছে। ফলে নিয়মিত এবং উন্নত মানের রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বারবার পাওয়ার ব্লক, টেকনিক্যাল ত্রুটি এবং দীর্ঘ সময় ধরে পরিষেবা বন্ধ থাকা—এসবই ইঙ্গিত করে যে সমস্যার মূলে বড় কোনও প্রযুক্তিগত ঘাটতি রয়ে গেছে।

নিত‍্যযাত্রীদের দাবি, যেহেতু পরিষেবার সমস্যাগুলি গত কয়েক মাস ধরে বারবার ঘটছে, তাই প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা, আধুনিক মনিটরিং ব্যবস্থা এবং যাত্রীদের পরিষ্কার তথ্য দেওয়ার উদ্যোগ। যেকোনো বড় শহরের পরিবহন ব্যবস্থা যতোটা নির্ভরযোগ্য হওয়া প্রয়োজন, কলকাতার মেট্রো সেই জায়গায় বারবার পিছিয়ে পড়ছে।

ছুটির দিনেও সারাক্ষণ বিভ্রাটের ঘটনাই যেন আরও পরিষ্কার করে দিল—
যাত্রীদের সমস্যাকে গুরুত্ব না দিলে, ভবিষ্যতে এই পরিবহন ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে।

Preview image