দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু এবং সুপরিচিত নির্মাতা–লেখক রাজ নিডিমোরুর বিয়ে ঘিরে নতুন আলোচনায় মেতে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। ১ ডিসেম্বর কোইম্বাটুরের ইশা যোগা সেন্টারে ঘনিষ্ঠ পরিজনদের উপস্থিতিতে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু এই বিবাহ অনুষ্ঠান যতটা সাদামাটা দেখাচ্ছিল, ঠিক ততটাই বড় একটি চমক অপেক্ষা করছিল সামান্থার জন্য।
ভারতের বিনোদন জগতে প্রেম, সম্পর্ক, বিবাহ ও উপহারের গল্প কখনই নিছক ব্যক্তিগত থাকে না। যখন সেই গল্পের কেন্দ্রে থাকেন দুই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব— দক্ষিণী সুপারস্টার সামান্থা রুথ প্রভু এবং নির্মাতা–লেখক রাজ নিডিমোরু, তখন গল্প আরও রঙিন, আরও নজরকাড়া, আরও চর্চিত হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁদের বিবাহের দিনে রাজ নাকি সামান্থাকে উপহার দিয়েছেন হায়দরাবাদের জুবিলি হিলস এলাকার একটি লাক্সারি হাউস। আর এই খবর মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদমাধ্যম, বলিউড ও দক্ষিণ ভারতীয় ইন্ডাস্ট্রিতে আলোচনার ঝড় তুলেছে।
কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়। এই উপহার পেছনে রয়েছে প্রেম, শ্রদ্ধা, সম্পর্কের গভীরতা এবং একটি অসাধারণ জার্নির দীর্ঘ বিস্তার। তাই আজ আমরা এই ৪,০০০ শব্দের প্রতিবেদনে জানব—
• তাঁদের বিবাহের দিন কী হয়েছিল,
• কেন এই উপহার এত আলোচনার কেন্দ্রে,
• কীভাবে শুরু হয়েছিল তাঁদের সম্পর্ক,
• সামান্থার কঠিন সময় ও তাতে রাজের ভূমিকা,
• দর্শক–ভক্তদের প্রতিক্রিয়া,
• এবং তাঁদের নতুন জীবনের সম্ভাব্য ছবি।
এই প্রতিবেদনের লক্ষ্য— শুধু খবর বলাই নয়, বরং সেই খবরের প্রতিটি পরত পাঠকের সামনে তুলে ধরা।
২০২৫ সালের ১ ডিসেম্বর, কোইম্বাটুরের ইশা যোগা সেন্টার— শান্ত, পবিত্র, ধ্যানমগ্ন পরিবেশ। এটাই বেছে নিয়েছিলেন সামান্থা ও রাজ, তাঁদের জীবনের সবচেয়ে বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য।
অনুষ্ঠানটি ছিল ছোট, ব্যক্তিগত, পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের উপস্থিতিতে সম্পন্ন।
সামান্থা— সিল্ক বেনারসি লাল শাড়ি পরেছিলেন, যেটি দক্ষিণ ভারতীয় ট্র্যাডিশনের সৌন্দর্যকে সর্বোচ্চভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল।
রাজ— পরেছিলেন অফ–হোয়াইট ধুতি-কুর্তা।
বিয়ের সময় দুই পরিবারের হাসি, মন্ত্রপাঠের মধ্যে শান্তি, বিয়ের আগুনের সামনে তাঁদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া— সব মিলিয়ে যেন সিনেমার দৃশ্য।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর পরিবার–বন্ধুরা বাইরে এসে দু’জনকে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিচ্ছিলেন।
কিন্তু দিনের শেষ দিকে মূল বিস্ময় অপেক্ষা করছিল সামান্থার জন্য।
বিবাহের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবার পরে রাজ নিডিমোরু সামান্থাকে ডেকে দিলেন। আশেপাশে ছিলেন মাত্র কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মানুষ।
রাজ হাত বাড়িয়ে দিলেন একটি বাক্স— সুন্দর, রেশম-কাগজে মোড়া।
সামান্থা ভেবেছিলেন হয়তো এটি একটি অলঙ্কার, একটি চিঠি, বা কোনও স্মারক।
কিন্তু বাক্স খুলে তিনি পুরোপুরি হতবাক—
ভেতরে ছিল—
হায়দরাবাদের জুবিলি হিলসে একটি নতুন লাক্সারি হাউসের ডিড পেপার এবং চাবি।
সামান্থার চোখের জলে ভিজে ওঠা সেই মুহূর্ত আজও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
জুবিলি হিলস ভারতের অন্যতম অভিজাত ও সবচেয়ে ব্যয়বহুল এলাকা। সেখানে একটি বাড়ি উপহার দেওয়া—
• শুধু উপহার নয়,
• একটি সুরক্ষার প্রতীক,
• ভালোবাসার প্রতীক,
• দায়িত্বের প্রতীক।
আর সেই কারণেই এই খবর সংবাদমাধ্যমে দেদার চর্চা পাচ্ছে।
এই জায়গার বাড়িগুলোর দাম সাধারণত ₹২৫–₹১০০ কোটি রেঞ্জে।
একটি পুরো বাড়ি গিফট— বলিউডে বিরল।
বাস্তবে এটি খুব কম দেখা যায়।
তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিচ্ছেদ, অসুস্থতা (মায়োসাইটিস), শারীরিক কষ্ট— সবকিছুর মধ্যে দিয়ে গেছেন।
এটি সাধারন উপহার নয়—
এটি একটি গভীর বার্তা:
“আমি তোমাকে সুরক্ষা দিচ্ছি।”
ডায়মন্ড রিং, গাড়ি— এসব দেখা গেছে।
কিন্তু পুরো বাড়ি?
প্রায় নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ লেখেন—
“এ যেন রূপকথার প্রেম।”
সামান্থা ও রাজ বহুদিন ধরেই একে অপরকে পেশাগতভাবে চিনতেন।
কিন্তু তাঁদের কাছাকাছি আসার গল্প শুরু হয়—
Citadel: India Adaptation
শুটিংয়ের সময়।
সামান্থা তখন কঠিন অসুস্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন—
• শরীর দুর্বল
• নিয়মিত চিকিৎসা
• কাজের চাপ
• ব্যক্তিগত জীবনের ভাঙন
এই সময় রাজ তাঁকে শুধু সহ-পরিচালক হিসেবে নয়, বরং সমর্থনকারী মানুষ হিসেবে পাশে দাঁড়ান।
তিনি নাকি শুটিং শিডিউল সামান্থার শারীরিক অবস্থার সঙ্গে মানানসই করে তৈরি করতেন।
তখন থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব গভীর হয়।
বন্ধুত্ব থেকে আসে টান, টান থেকে আসে সম্পর্ক।
এমনটাই বলছে ঘনিষ্ঠ মহল।
সামান্থা ২০২১–২০২৪ সাল পর্যন্ত জীবনে কঠিন অধ্যায় পার করেন:
বহু বছরের সম্পর্ক, জনপ্রিয় দম্পতিত্ব— সব ভেঙে যায়।
এই রোগে শরীরের পেশী গুরুতরভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
তাঁর কেরিয়ারও চাপে পড়ে যায়।
এই সময় রাজ নিডিমোরু তাঁর পাশে দাঁড়ান বন্ধুর মতো, সহকর্মীর মতো, সঙ্গীর মতো।
শিল্পমহলের এক সদস্য বলেন—
“রাজ তাকে শুধু সহযোগী নয়, একজন মানুষ হিসেবে দেখেছিলেন।”
এটাই হয়তো তাঁদের সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি।
রাজও তাঁর জীবনে বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন—
২০২২ সালে তাঁর প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
দু’জনেই তখন জীবনের কঠিন সময়ে ছিলেন।
এই সময়ই তাঁরা একে অপরকে খুঁজে পান।
তাই অনেকেই বলছেন—
“তাঁদের সম্পর্ক ঠিক সময়েই এসেছে।”
এই বাড়িটি চারতলা বিল্ডিং, আধুনিক ডিজাইন, ব্যক্তিগত গার্ডেন, সুইমিং পুল ও স্মার্ট-হোম সুবিধাযুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা জানান—
“এটি কোনও সাধারণ বাড়ি নয়, এটি বিনিয়োগ ও ভবিষ্যৎ গড়ার নিরাপদ প্রতীক।”
সামান্থার জন্য এমন একটি উপহার
• আত্মবিশ্বাস
• সুরক্ষা
• ভালোবাসা
সবকিছুরই প্রতীক।
এছাড়া এটি রাজের সিদ্ধান্তের পরিণতিপূর্ণতা প্রমাণ করে—
“তাঁর পরিবার, তাঁর ভবিষ্যৎ— সবই তোমার সঙ্গে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন—
• “Royal gift! Beautiful gesture of love.”
• “Samantha deserves all happiness.”
• “Raj is a gem of a person.”
• “This is true love.”
• হ্যাশট্যাগ #SamRajWedding ট্রেন্ড করেছে।
• হাজারো ফ্যান তাঁদের ছবি কোলাজ বানিয়ে পোস্ট করেছেন।
• ইউটিউবে ভক্তরা ফ্যান-মেড ভিডিও প্রকাশ করেছেন।
অনেক সেলিব্রিটি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন—
“So happy for you Sam, you deserve the world.”
“Two strong, talented souls. Wishing a powerful journey ahead.”
পালক মুচ্ছল পলাশের বোন— তিনিও নাকি অত্যন্ত খুশি এই সম্পর্ক নিয়ে।
সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে সামান্থা বলেন—
“কাউকে হৃদয় দিয়ে তখনই গ্রহণ করা যায়, যখন নিজেকে গ্রহণ করতে শেখো।”
তিনি আরও জানিয়েছিলেন—
তিনি নতুনভাবে জীবনকে দেখছেন, নিজের ক্যারিয়ার, পরিবার ও সম্পর্ককে নতুন করে সাজাতে চাইছেন।
রাজের উপহার সেই মানসিকতার সঙ্গে সুন্দরভাবে মিলেছে।
রাজ সামান্থা সম্পর্কে বলেন—
“তিনি অসাধারণ শক্তিশালী এক নারী। তাঁর যাত্রা, তাঁর লড়াই আমাকে অনুপ্রাণিত করে।”
এটাই তাঁদের সম্পর্ককে বিশেষ করে তোলে।
বলিউড ও দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির মিলন— খুব কমই দেখা যায়।
তাই তাঁদের সম্পর্ক একটি শক্তিশালী জুটি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
তাঁর সুখ মানেই হাজারো ফ্যানের সুখ।
Stree, Go Goa Gone, The Family Man— সবই হিট।
শিল্পমহলের ধারণা—
উভয়ের অভিজ্ঞতা মিলবে।
Citadel–এর মতো আরও প্রজেক্ট।
জুবিলি হিলসের বাড়ি তাঁদের নতুন কেন্দ্র।
যদিও এ বিষয়ে দম্পতি কিছু জানাননি।
এই সম্পর্ক শেখায়—
যে যুগে সম্পর্ক ভাঙা খবর সবচেয়ে বেশি আসে, সেই যুগে সামান্থা ও রাজের গল্প একটি রূপকথার মতো।
তাঁদের বিয়ে, তাঁদের সুখ, তাঁদের সম্মান, এবং বিবাহের দিনে রাজের সেই অবাক করা উপহার— সব মিলিয়ে এটি এক আবেগ, এক প্রতিশ্রুতি, এক শক্তিশালী দাম্পত্যের শুরু।
ফ্যানেরা এখন শুধু একটাই কথা বলছেন—
“সামান্থা সুখী থাকুক। রাজ–সামান্থার এই যাত্রা যেন সারা জীবন প্রেমে ভরা থাকে।”