নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে লড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবু ট্রাম্পের প্রার্থী শুরু থেকেই প্রতিযোগিতার বাইরে থেকে গেছেন। ভোটের দৌড়ে মূল লড়াই হয়েছিল দুইজন ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর মধ্যে, যেখানে সাধারণ ভোটারদের সমর্থন, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং জনমত কেন্দ্রীভূত ছিল। ট্রাম্পের প্রার্থীর দুর্বলতা ও নির্বাচনী কৌশলের সীমাবদ্ধতা তাকে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে দেয়নি, ফলে ভোটের ফলাফল স্পষ্ট করে দিয়েছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ভোটারদের বর্তমান রুচি।
নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি এক শোচনীয় পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাম্পের প্রার্থী কুর্টিস স্লিওয়া ১০ শতাংশেরও কম ভোট পেয়ে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মেয়র নির্বাচনে মূল লড়াই হয়েছে দুই ডেমোক্র্যাটিক নেতা—ভারতীয় বংশোদ্ভূত জ়োহরান মামদানি এবং প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর মধ্যে। ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে কুয়োমো পরাজিত হওয়ায় তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন, তবে শেষ পর্যন্ত মেয়র পদে জয়ী হন মামদানি।
মামদানি ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি অর্জন করেছেন, যেখানে কুয়োমো পেয়েছেন ৪১ শতাংশের বেশি। ট্রাম্পের প্রার্থী স্লিওয়া পেয়েছেন মাত্র সাত শতাংশের আশপাশে ভোট। পাঁচটি কাউন্টি—ম্যানহ্যাটেন, ব্রুকলিন, কুইনস, ব্রঙ্কস এবং স্টেটেন আইল্যান্ড—এর মধ্যে চারটিতে স্লিওয়া ছিলেন অনেক পিছিয়ে। শুধুমাত্র স্টেটেন আইল্যান্ডে তিনি দুই অঙ্কের ভোট অর্জন করতে পেরেছেন।
এ বছরের নির্বাচনে দেখা গেছে যে ট্রাম্পের দলের ভোট অংশগ্রহণ গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় আরও কমেছে। এছাড়া নিউ জার্সি এবং ভার্জিনিয়ায় গভর্নর নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। নিউ জার্সিতে জ্যাক সিয়াটারেলি এবং ভার্জিনিয়ায় উইনসম এরলিসি যথাক্রমে ৪৩.২% এবং ৪২.৩% ভোট পেয়েছেন। উভয় প্রদেশেই জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা।
মামদানি রাজনৈতিকভাবে বামপন্থী ডেমোক্র্যাট হিসেবে পরিচিত। উগান্ডায় জন্ম হলেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত তিনি ভারতীয় চিত্রপরিচালক মীরা নায়ারের পুত্র। ট্রাম্প নির্বাচনের আগে তাকে ‘১০০ শতাংশ উন্মাদ কমিউনিস্ট’ বলে কটাক্ষ করেন এবং জয়ী হলে কেন্দ্রীয় সরকারি অনুদান বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দেন। তবে জয়ী হওয়ার পর মামদানি ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প, আপনাকে আমি চারটি শব্দ বলতে চাই— আরও জোরে চিৎকার করুন।”
জয়ের পরে মামদানি ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উদ্ধৃতিও তুলে ধরেন, বলেন, “আজ রাতে আমরা পুরনোকে ছেড়ে নতুনের দিকে পা রাখছি।” ট্রাম্পও আঞ্চলিক নির্বাচনের ফল নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে তার দলের পরাজয়ের কারণ দুটি— তিনি নিজে প্রার্থী ছিলেন না এবং দেশের প্রশাসনিক ‘শাটডাউন’।
এই নির্বাচনের ফলাফল ট্রাম্পের দলের জন্য নতুন ধাক্কা, যেখানে রিপাবলিকানরা বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে নিজের প্রভাব হারাচ্ছে এবং ডেমোক্র্যাটরা স্থানীয় রাজনীতিতে প্রাধান্য ধরে রাখছে।
