প্রকৃতির শক্তির সামনে মানুষ বরাবরই অসহায়। ভূমিকম্প সেই ভয়ঙ্কর শক্তিরই একটি বহুরূপী প্রকাশ। হঠাৎ মাটির নিচে জমে থাকা অস্থির শক্তির মুক্তি যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠকে নাড়িয়ে দেয়, তখন মুহূর্তের মধ্যে তছনছ হয়ে যেতে পারে জনজীবন, অবকাঠামো, পরিবেশ এবং মানুষের প্রাণ। ২০২৫ সালের এই ভূমিকম্প সেই ভয়েরই একটি বাস্তব উদাহরণ। আজ সকালে বাংলাদেশে অনুভূত হওয়া ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প মুহূর্তের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে সমগ্র পূর্বভারত, বিশেষ করে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বহু জেলায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেও ভূমিকম্পটি যে প্রভাব ফেলেছে, তা যে কোনও মানুষকে ভাবিয়ে তুলবে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আজ সকালেই জোরালো কম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৭। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূমির বেশ গভীরে, ফলে কম্পন ছড়িয়ে পড়ে দূরবর্তী এলাকা পর্যন্ত। ভূকম্পবিদদের মতে, এই ধরনের মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত ১০–১৫ সেকেন্ড স্থায়ী হয়, কিন্তু পৃথিবীর ভূত্বকের প্রকৃতি অনুযায়ী এর অনুভূতি আরও তীব্র মনে হতে পারে।
প্রকৃতির শক্তির সামনে মানুষ বরাবরই অসহায়। ভূমিকম্প সেই ভয়ঙ্কর শক্তিরই একটি বহুরূপী প্রকাশ। হঠাৎ মাটির নিচে জমে থাকা অস্থির শক্তির মুক্তি যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠকে নাড়িয়ে দেয়, তখন মুহূর্তের মধ্যে তছনছ হয়ে যেতে পারে জনজীবন, অবকাঠামো, পরিবেশ এবং মানুষের প্রাণ। ২০২৫ সালের এই ভূমিকম্প সেই ভয়েরই একটি বাস্তব উদাহরণ। আজ সকালে বাংলাদেশে অনুভূত হওয়া ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প মুহূর্তের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে সমগ্র পূর্বভারত, বিশেষ করে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বহু জেলায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেও ভূমিকম্পটি যে প্রভাব ফেলেছে, তা যে কোনও মানুষকে ভাবিয়ে তুলবে।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আজ সকালেই জোরালো কম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৭। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূমির বেশ গভীরে, ফলে কম্পন ছড়িয়ে পড়ে দূরবর্তী এলাকা পর্যন্ত। ভূকম্পবিদদের মতে, এই ধরনের মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত ১০–১৫ সেকেন্ড স্থায়ী হয়, কিন্তু পৃথিবীর ভূত্বকের প্রকৃতি অনুযায়ী এর অনুভূতি আরও তীব্র মনে হতে পারে।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের উৎসস্থল হলেও কম্পন স্পষ্ট অনুভূত হয় পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় — কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মালদহ পর্যন্ত বহু মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
কলকাতার বিভিন্ন এলাকায়— সল্টলেক, বিধাননগর, নিউটাউন, কলেজ স্ট্রিট, বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, বেহালা, ইএম বাইপাস, পার্ক সার্কাস, ঠাকুরপুকুর— হালকা হলেও স্পষ্ট দুলুনি টের পেয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। বহু বহুতল ভবনে কাজ করা অফিসকর্মীরা জানান, হঠাৎ চেয়ার-টেবিল কাঁপতে শুরু করে। জানালার কাচ হালকা আওয়াজ করে উঠেছিল। কিছু অফিসে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বিদ্যুৎ ওঠা-নামার ঘটনাও নথিভুক্ত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের কাছে এক অফিসকর্মী জানান—
“হঠাৎ মনে হলো চেয়ার নড়ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম মাথা ঘুরছে, কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরই দেখি সামনে থাকা কম্পিউটারের মনিটর নিজে নিজে কাঁপছে। তখনই বুঝলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। আমরা সবাই আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে যাই।”
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালি ও রাজধানী ঢাকাতেও অনুভূত হয় এই কম্পন। সব জায়গায় আতঙ্কে মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। বাংলাদেশের ভূকম্পবিদ জানান, উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আন্তঃসীমান্ত এলাকায় হওয়ায় কম্পন দ্রুত বিস্তৃত হয়েছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, বন্দর এলাকা এবং পাহাড়তলী অঞ্চলে বহুতল ভবনগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি দুলুনি টের পাওয়া যায়। সিলেটের জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, দক্ষিণ সুরমা এলাকাতেও লোকজন আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসে। বিশেষ করে যেসব ভবন পুরনো বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, সেইসব এলাকায় কিছুটা ভিড় জমে যায়।
ঢাকায় অফিসপাড়া মতিঝিল, গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি এবং মিরপুর এলাকায় বহু কর্মচারী নিরাপত্তার স্বার্থে ভবন থেকে নেমে আসেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জরুরি ব্যবস্থা নেয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি বা গুরুতর ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ এবং পূর্ব ভারতের ভূগোল ভৌগোলিকভাবে একটি অত্যন্ত সক্রিয় ভূকম্পনীয় অঞ্চলের অংশ। ভারতীয় প্লেট, বার্মা প্লেট এবং ইউরেশীয় প্লেটের মিলনস্থল হওয়ায় এই এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সবসময়ই বেশি। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা আগেও ছিল, এখনও রয়েছে।
ভূতত্ত্ববিদদের মতে, সিলেট-চট্টগ্রাম-বঙ্গোপসাগর অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ জায়গা। এই এলাকায় ৬.৫ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সবসময় থাকে।
পশ্চিমবঙ্গও দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকম্প ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার, মালদহ এবং দক্ষিণবঙ্গের কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও বর্ধমানের কিছু অংশ মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পড়ে।
কলকাতার মাটি প্রধানত নদীবাহিত পলি দিয়ে তৈরি। ফলে ভূমিকম্প হলে যে দুলুনি অনুভূত হয়, তা বাস্তবের চেয়েও বেশি মনে হতে পারে। ১৯৩৪ সালের বড় ভূমিকম্পের পর থেকে পূর্ব ভারতের বিরুদ্ধে বড় কোনো ধাক্কা আসেনি, কিন্তু ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মানে এই নয় যে ঝুঁকি কমে গেছে। বরং শক্তির সঞ্চয় আরও বাড়ছে।
কলকাতা এবং বাংলাদেশ, উভয় জায়গাতেই দুর্বল ও পুরনো দালানগুলি বড় ঝুঁকি তৈরি করে। বহু মানুষ আতঙ্কিত কারণ:
ভূমিকম্প সরাসরি যেমন ক্ষতি করে, তেমনই ভয় এবং বিশৃঙ্খলা থেকেও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পরই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিভিন্ন ভিডিও, ছবি ও অভিজ্ঞতা। কেউ জানলার কাচ কাঁপতে দেখেছেন, কেউ আবার দুলতে থাকা পাখার ভিডিও শেয়ার করেছেন।
গুগল ট্রেন্ডস অনুযায়ী, “earthquake”, “ভূমিকম্প”, “kolkata earthquake”, “Bangladesh earthquake” সার্চ এক ঘণ্টার মধ্যেই কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এটি কখন আসবে তা কেউ জানে না। বাংলাদেশের পৃথিবীর ভূত্বক বিদীর্ণ রেখার অবস্থানের কারণে এখানে মাঝেমধ্যেই ভূমিকম্প হবে— এটা ভূ-বিজ্ঞানীরাই বরাবর বলে আসছেন।
পূর্ব ভারতের অবস্থা একই।
এই সব কারণ মিলিয়ে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর কলকাতা পুলিশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর সমস্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন পুরনো দালানগুলির পরিদর্শন নিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করতে পারে।
বাংলাদেশেও প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ভূমিকম্প কয়েক সেকেন্ডের ঘটনা হলেও মানুষের মনে এর প্রভাব বহুক্ষণ থাকে। বিশেষ করে যাঁরা বহুতলে থাকেন, তাঁদের কাছে এই অভিজ্ঞতা অনেক বেশি ভীতিকর।
অনেকে জানান—
“এভাবে হঠাৎ করে দালান দুলতে শুরু করলে মনে হয় শেষ হয়ে গেলাম।”
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্বেগ একেবারেই স্বাভাবিক। বিশেষ করে যাঁদের আগে এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ভয় বেশি হতে পারে।
ভূমিকম্প সরাসরি পরিবেশে কয়েকটি পরিবর্তন আনে—
বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে সামান্য ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে। তবে বড় কোনো ক্ষতির তথ্য নেই।
ভূমিকম্প রোধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু ক্ষতি কমানো সম্ভব। নিরাপত্তা বিধি মানা, দালানের মান উন্নত করা, সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি— এই চারটি দিকেই জোর দিতে হবে।