Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

Accenture-এর বড় ঘোষণা: সব কর্মীর নতুন পরিচয় Reinventor, এআই যুগে কোম্পানির সম্পূর্ণ রূপান্তর

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রযুক্তি ও কনসালটিং সংস্থা Accenture তাদের প্রায় ৮০০,০০০ কর্মীকে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করাল Reinventors। এআই প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণ এবং জেনারেটিভ এআই-এর যুগে নিজেদের ব্যবসাকে ভবিষ্যতের উপযোগী করে তুলতেই প্রতিষ্ঠান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। The Guardian রিপোর্ট অনুযায়ী, Accenture এখন চায় তাদের প্রতিটি কর্মী নিজেকে শুধু কর্মচারী নয়, বরং পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে দেখুক।  

অ্যাকচেঞ্চারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত: ৮ লক্ষ কর্মীর নতুন পরিচয় ‘রিইনভেন্টর’ — এআই যুগে কর্পোরেট বিশ্বের চরম রূপান্তর

বৈশ্বিক কর্পোরেট দুনিয়াকে কাঁপাতে সক্ষম এমন এক সিদ্ধান্ত নিল আন্তর্জাতিক কনসালটিং ও প্রযুক্তি পরিষেবা সংস্থা Accenture। সারা বিশ্বে প্রায় ৮০০,০০০ কর্মীর পরিচয় বদলে দিয়ে প্রতিষ্ঠান ঘোষণা করল—এখন থেকে প্রত্যেক কর্মীকে বলা হবে “Reinventor”। কেবল চাকরির টাইটেল নয়, প্রতিষ্ঠান নিজেই বদলে ফেলছে তার অবস্থান, দর্শন, লক্ষ্য ও ভবিষ্যতের পথচলার মূলমন্ত্র।
এআই বা Artificial Intelligence-কে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রের যে প্রবল রূপান্তর চলছে, Accenture-এর এই সিদ্ধান্ত সেই পরিবর্তনেরই প্রতিফলন। প্রশ্ন এখন—এই সিদ্ধান্ত কি উন্নতির বার্তা, নাকি কর্মীদের উপর নতুন চাপ? এই ৪০০০ শব্দের বিশেষ প্রতিবেদনে আমরা বিশদভাবে বিশ্লেষণ করব Accenture-এর এই সাহসী পদক্ষেপের কারণ, উদ্দেশ্য, প্রভাব, প্রতিক্রিয়া এবং কর্পোরেট বিশ্বের ভবিষ্যৎ দিক।

Accenture বরাবরই প্রযুক্তি রূপান্তরের অগ্রদূত। তবে এই নতুন ঘোষণা যেন প্রতিষ্ঠানটিকে এক নতুন আদর্শে রূপান্তর করছে। The Guardian-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে Accenture যে গভীর প্রযুক্তি অভিযানে নেমেছে, এই ঘোষণা সেই অভিযানেরই সর্বশেষ ধাপ। প্রতিষ্ঠানটি কেবল এআই-চালিত কাজের গতি বাড়াতে চাইছে না, বরং প্রতিটি কর্মীকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি-চালিত অর্থনীতির “পরিবর্তনকারী” হিসেবে গড়ে তোলার অভিলাষ রাখছে।

কেন এই সিদ্ধান্ত? Accenture-এর মতে, বিশ্ব দ্রুত বদলাচ্ছে। জেনারেটিভ এআই—ChatGPT থেকে শুরু করে LLM-ভিত্তিক এন্টারপ্রাইজ সমাধান—আজ সব শিল্পকে নতুন পথে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে—সামনের দশকে যেসব কোম্পানি নিজেদের পুনর্গঠন করতে পারবে না, তারা ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে না। এই অবস্থায় Accenture চায়—তাদের কর্মীরা কেবল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী নয়, বরং প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন ব্যবসায়িক মডেল, নতুন দক্ষতা, নতুন পরিষেবা এবং নতুন প্রতিযোগিতা তৈরি করুক।
 

কিন্তু কেন কর্মীদের নাম বদলানোর প্রয়োজন পড়ল? Accenture বলছে—এআই যুগে কাজের ধরন বদলে গেছে। শুধু নির্দেশ মেনে কাজ করলে চলবে না; প্রতিটি কর্মীকেই নতুন ধারণা, নতুন দক্ষতা এবং নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে হবে। তাই “Reinventor” নামটি কর্মীদের মানসিকতা নতুনভাবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, কেবল নাম পরিবর্তন করলে কর্মীদের স্কিল-গ্যাপ দূর হবে না। এআই-ভিত্তিক কাজের চাপ, দক্ষতা বৃদ্ধির তাগিদ এবং কর্মসম্পাদনের নতুন মানদণ্ড কর্মীদের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে। কেউ কেউ এটিকে “ব্র্যান্ডিং গিমিক” বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

তবুও Accenture বলছে—তারা ইতিমধ্যে সবচেয়ে বড় এআই-স্কিল আপস্কিলিং প্রোগ্রাম চালু করেছে এবং হাজার হাজার কর্মী ইতিমধ্যেই জেনারেটিভ এআই-এর কাজে প্রশিক্ষিত। প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস করে—যারা এআই-দক্ষতায় এগিয়ে যাবে, তারাই ভবিষ্যতের কর্মজগতে নেতৃত্ব দেবে।

Accenture-এর এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে বৈশ্বিক কর্পোরেট দুনিয়ায় একটি বড় ইঙ্গিত। এখন প্রশ্ন—অন্য বড় কোম্পানিগুলিও কি এই পথ অনুসরণ করবে? এআই-যুগে কর্মীদের ভূমিকা যে বদলাতে চলেছে, তা স্পষ্ট। 


আপনি চাইলে এ

Accenture ২০২৫ সালে তার পাঁচটি প্রধান বিভাগের পুনর্গঠন করে—Strategy, Consulting, Creative, Technology এবং Operations—এখন সেগুলিকে একত্রিত করে তৈরি করেছে “Reinvention Services” নামের একটি বৃহৎ ইউনিট। এই ইউনিটের ভাবনা হলো—কর্পোরেট বিশ্বের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে “Reinvention” বা পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ শুধু সফটওয়্যার তৈরি বা পরামর্শ দেওয়া নয়, বরং ব্যবসাকে নতুন যুগের উপযোগী করে গড়ে তোলা।

কিন্তু কেন নাম পরিবর্তন? কর্মীদের “Employee” বা “Staff” বলার বদলে “Reinventor” বলা কি কেবল ব্র্যান্ডিং? নাকি এর পিছনে রয়েছে আরও জটিল উদ্দেশ্য?

Accenture বলছে—এই নতুন পরিচয় কর্মীদের মনোভাব সম্পূর্ণভাবে বদলে দেবে। এখন তারা কেবল কোম্পানির কর্মচারী নন, বরং ভবিষ্যতের পরিবর্তনের কারিগর। প্রতিষ্ঠানের ভাষ্যায়—“Every employee must become a Reinventor. Reinvent yourself, reinvent clients, reinvent industries.” এই ভাষ্যই বোঝায়—প্রতিষ্ঠান কর্মীদের শুধু কাজ করতে বলছে না, বরং তাদের উপর দায়িত্ব দিচ্ছে ব্যবসা রূপান্তরের নেতৃত্ব নেওয়ার।

তবে এই ঘোষণা যতই আকর্ষণীয় হোক, সমালোচনা কিন্তু কম নয়। The Guardian-এর প্রতিবেদনে একজন ব্র্যান্ড বিশেষজ্ঞ বলেছেন—“নাম বদলালেই কোম্পানির সংস্কৃতি বদলায় না।” আরও অনেকে মনে করেন—এটি আসলে একটি কৌশল, যেখানে কোম্পানি কর্মীদের উপর আরও দক্ষতা অর্জনের চাপ দিচ্ছে, বিশেষত এআই-স্কিল না থাকা কর্মীদের উপর।

news image
আরও খবর

Accenture পরিষ্কার বলেছে—যারা নিজেদের এআই-দক্ষতায় উন্নীত করতে পারবে না, তাদের ভবিষ্যতে কোম্পানির ভেতরে জায়গা ধরে রাখা কঠিন হবে। এর মানে খুবই স্পষ্ট—Accenture ভবিষ্যতে সেই কর্মীদের প্রতিস্থাপন করবে, যাঁরা এআই নিয়ে কাজ করতে সক্ষম নন।

অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠান বলছে—তারা প্রায় ৩০,০০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ সম্পদ বিনিয়োগ করেছে কর্মীদের এআই-ট্রেনিংয়ে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় আপস্কিলিং প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। তবে কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন—“এআই-এর কারণে চাকরি কমছে, আর কোম্পানি বলছে এখন সবাই রিইনভেন্টর! এর মানে কি?”

যারা বহু বছর ধরে প্রচলিত পরামর্শদাতা কাজ করেছেন, তাঁদের জন্য এই পরিবর্তন খুব সহজ নয়। অনেক কর্মী মনে করছেন—কেবল নাম পরিবর্তন নয়, বরং পুরো কাজের ধরন বদলে যাচ্ছে। যেখানে আগে মানবিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, মাঠের কাজ—the core consulting skills—মূল ছিল, এখন জোর দেওয়া হচ্ছে জেনারেটিভ এআই-নির্ভর বিশ্লেষণ, অটোমেশন, প্রেডিকশন এবং ডেটা-চালিত সিদ্ধান্তে। ফলে যারা প্রযুক্তিতে তত দক্ষ নন, তাঁরাই উদ্বেগের জায়গায়।

একাধিক পরামর্শদাতা কোম্পানি এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। কারণ Accenture-এর মতো বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান যখন কর্মীদের নতুন পরিচয় দেয়, তখন এটি কর্পোরেট দুনিয়ায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। আগামী কয়েক বছরে Deloitte, McKinsey, EY—সব প্রতিষ্ঠানই হয়তো কর্মীদের নতুনভাবে ব্র্যান্ডিং করবে, কারণ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই এখন নিজেদের “AI-first Company” হিসেবে পরিচিত করতে চাইছে।

Accenture-এর ঘোষণার আরেকটি দিক হলো—এটি শুধু কর্মীদের পরিচয় পরিবর্তনের বিষয় নয়, বরং পুরো ব্যবসা মডেলের পুনর্গঠন। Reinvention Services ইউনিট এখন থেকে বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিগুলিকে তাদের ব্যবসা নতুনভাবে সাজাতে সাহায্য করবে—এআই ব্যবহার করে সাপ্লাই চেইন অটোমেশন, কাস্টমার এনালিটিকস, ক্লাউড-ভিত্তিক মডেল, ডিজিটাল প্রোডাক্ট, স্মার্ট ফ্যাক্টরি—সব ক্ষেত্রে Accenture নেতৃত্ব দিতে চায়। ফলে কোম্পানি নিজেকে কেবল “কনসালটিং ফার্ম” নয়, বরং “গ্লোবাল ট্রান্সফরমেশন লিডার” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।

কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন—এটি নিছকই ব্র্যান্ডিংয়ের খেলা। কর্মীদের নতুন টাইটেল দেওয়া হলেও তাদের বেতন বৃদ্ধি বা কাজের চাপ কমানোর কোনো গ্যারান্টি নেই। বরং অনেকেই বলছেন—এটি কর্মীদের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করে। কারণ "Reinventor" শব্দটি কর্মীদের জানিয়ে দিচ্ছে—“তোমাকে সবসময় নতুন হতে হবে, সবসময় শিখতে হবে, না হলে পিছিয়ে পড়বে।” এই সংস্কৃতি অনেকের কাছে মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে।

তবে Accenture-এর পক্ষে যারা আছেন, তাঁরা বলছেন—এটাই ভবিষ্যৎ। এআই বিশ্বের বাস্তবতা হলো—যারা রূপান্তর না করবে, তারা হারিয়ে যাবে। তাই Accenture সময়ের আগেই তার কর্মীদের প্রস্তুত করছে।

অনেকে আবার বলছেন—এটি কর্মীদের জন্য ভালো সুযোগ। কারণ ভবিষ্যতে এআই-দক্ষতা সবচেয়ে মূল্যবান স্কিল। যারা আজ শিখবে, তারা বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারে এগিয়ে থাকবে। Accenture-এর প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা তাদের ক্যারিয়ারে নতুন পথ খুলে দিতে পারে।

বিশ্বব্যাপী এআই-এর কারণে চাকরি হারানো এবং নতুন চাকরি তৈরি—দুটি ঘটনাই সমানভাবে ঘটছে। তাই কর্মীদের প্রস্তুত করা ছাড়া প্রতিষ্ঠানের আর কোনো পথ নেই।

Accenture-এর সিদ্ধান্ত শুধু প্রযুক্তির পরিবর্তন নয়, বরং কর্মক্ষেত্রের নতুন সংস্কৃতি তৈরি করার প্রচেষ্টা। এখন প্রশ্ন—এটি কি সফল হবে? বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট দুনিয়া কি এই পথ অনুসরণ করবে? কর্মীরা কি মানসিকভাবে এই পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে পারবেন?

এআই-যুগে এটি একটা যুগান্তকারী মুহূর্ত। কেবল Accenture নয়, বরং পুরো চাকরির বাজার আগামী বছরগুলিতে এভাবেই বদলাবে।
এদিন হয়তো একটি শব্দ—Reinventor—আমাদের কাছে শুধু ব্র্যান্ডিং মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছু বছর পরে এটি হয়তো বিশ্বব্যাপী কর্মীদের নতুন পরিচয় হয়ে উঠতে পারে।

Accenture-এর এই পদক্ষেপ সত্যিই ইতিহাস গড়বে নাকি কর্মীদের উপর চাপ বাড়াবে—তা সময়ই বলবে। তবে নিশ্চিত যে এআই দুনিয়ার পরিবর্তন এখন আর থামবে না, এবং এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানুষ — যারা ভবিষ্যৎকে পুনর্নির্মাণ করবে। আর সেই কারণেই হয়তো Accenture বলেছে—“We don’t just work. We reinvent.”

Preview image