সবচেয়ে বড় বিরোধিতা এসেছে Apple Inc.-এর পক্ষ থেকে। অ্যাপল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তাদের iOS ইকোসিস্টেমের নিয়ম অনুযায়ী কোনো থার্ড-পার্টি অ্যাপ সরকার বাধ্যতামূলকভাবে ফোনে প্রি-লোড করতে পারে না। অ্যাপল বলেছে এটি তাদের নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ও সফটওয়্যার আর্কিটেকচার নীতির সরাসরি বিরোধী। Reuters জানিয়েছে, অ্যাপল কর্তৃপক্ষ নীতিগতভাবে সরকারের এই আদেশ মানতে “অসমর্থ” এবং এটি করলে iOS-এর মূল নিরাপত্তা দর্শন নষ্ট হবে।
২০২৫ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বড় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে Apple Inc.–এর সঙ্গে ভারত সরকারের নতুন নির্দেশনা নিয়ে সংঘাত। কেন্দ্রীয় সরকার স্মার্টফোন নির্মাতাদের কাছে একটি বিশেষ আদেশ পাঠিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে—আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ভারতে বিক্রি হওয়া প্রত্যেকটি নতুন স্মার্টফোন মডেলে বাধ্যতামূলকভাবে প্রি-লোড করতে হবে একটি সরকারি অ্যাপ, যার নাম Sanchar Saathi। এই অ্যাপ ইতিমধ্যেই ভারতে ব্যবহৃত হয় — মূলত মোবাইল ফোন চুরি, অবৈধ IMEI ক্লোনিং, সিম বদলজনিত অপরাধ ও প্রতারণা রোধ করার জন্য।
কিন্তু এই আদেশ প্রকাশ্যে আসতেই প্রযুক্তি বিশ্বে আলোড়ন পড়ে যায়। বিশেষ করে অ্যাপল সরাসরি জানিয়ে দেয়—তারা এই নির্দেশ মানতে “অসমর্থ”, কারণ এটি সম্পূর্ণরূপে iOS সিস্টেমের নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি নীতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। অ্যাপল এমনকি স্পষ্ট ভাষায় বলেছে—
“We cannot do this. Period.”
এই একটি বাক্যই রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রযুক্তি অঙ্গনের বিতর্ককে আরও জোরালো করে তুলেছে।
Samsung, Xiaomi, Vivo-সহ অন্যান্য স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলিও নির্দেশটি পর্যালোচনা করছে, তবে কোনো প্রতিষ্ঠানই অ্যাপলের মতো স্পষ্টভাবে আপত্তি জানায়নি। টেলিকম শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নির্দেশ প্রযুক্তি কোম্পানির স্বাধীনতা ও সাধারণ ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার ওপর বড় প্রশ্ন তুলছে। অনেকেই এটিকে ভারতের ডিজিটাল নীতিতে একটি নতুন “কঠোর নিয়ন্ত্রণের সূচনা” বলে মনে করছেন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই খবর নজর কেড়েছে। মার্কিন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন—ভারত যদি রাষ্ট্রীয় অ্যাপ বাধ্যতামূলক করার পথে হাঁটে, তাহলে এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি করবে, যা বৃহত্তর টেক ইকোসিস্টেমে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে সরকার বলছে—দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিস্ফোরণ ঘটেছে, এবং চুরি ও সাইবার অপরাধ রোধে এ সিদ্ধান্ত “নাগরিক সুরক্ষার স্বার্থেই” গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে এই ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে ভারত সরকার এবং বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী প্রযুক্তি কোম্পানি Apple। এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে, সে দিকেই এখন নজর পুরো টেক দুনিয়ার।
Reuters-এর রিপোর্ট বলছে—ভারত সরকারের এই নির্দেশ কোনো প্রকাশ্য নোটিফিকেশন নয়। এটি ছিল একটি “classified order”, যা শুধুমাত্র নির্মাতাদের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে।
এটি জানাজানি হতেই বিরোধীদের পাশাপাশি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের অংশ থেকে প্রশ্ন উঠেছে—
কেন নির্দেশটি জনসমক্ষে আনা হয়নি?
কেন ৯০ দিনের কঠোর ডেডলাইন?
কেন অ্যাপটি প্রি-লোড করা বাধ্যতামূলক করা হলো যখন এটি আগে স্বেচ্ছামূলকভাবে ইনস্টল করা যেত?
এই প্রশ্নগুলি সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে সরকার বলছে—দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৩০ মিলিয়নের বেশি। এতো বড় বাজারে সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। মোবাইল চুরি ও প্রতারণা মোকাবিলায় Sanchar Saathi App প্রি-লোড থাকলে প্রক্রিয়া দ্রুত করা যাবে।
কিন্তু যুগের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির একটিকে এই আদেশ মানতে বাধ্য করার সিদ্ধান্তই এখন বড় সংঘাত।
অ্যাপল তাদের বক্তব্যে বলেছে—iOS এমন একটি ইকোসিস্টেম যেখানে সরকার, তৃতীয় পক্ষ বা কোনও বাহ্যিক পক্ষকে প্রি-লোড করা অ্যাপ ইনস্টল করার অনুমতি দেওয়া হয় না। নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, ডেটা সুরক্ষা এবং অ্যাপ ভেরিফিকেশন—এসবই অ্যাপলের পরিচিত শক্তি। তাদের মতে, কোনও তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ প্রি-লোড করলে—
ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি ভঙ্গ হতে পারে
ডেটার ওপর সরকারের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ তৈরি হতে পারে
ফোন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে
এবং iOS-এর মূল ডিজাইনের বিরোধিতা হবে
তাই Apple পরিষ্কার বলেছে—
“We cannot integrate a pre-loaded state-run application. It violates our operating model.”
এই অবস্থান ভারতের স্মার্টফোন নীতির সঙ্গে সংঘাতে দাঁড়িয়েছে।
ভারতে এই ইস্যু পুরোপুরি রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে। বিরোধীরা দাবি করছে—
এই অ্যাপ ব্যবহার করে সরকারি নজরদারি (surveillance) বাড়ানো হবে।
বিরোধীদের এক শীর্ষ নেতা সংসদে বলেন—
“This is not about safety. This is about surveillance. Big Brother wants to watch us.”
তারা আরও প্রশ্ন তুলছেন—
যদি অ্যাপটি সত্যিই স্বেচ্ছামূলক হয়, তবে প্রি-লোড বাধ্যতামূলক কেন?
এখানে কি নাগরিকদের ফোন ব্যবহারের ওপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য রয়েছে?
সরকার অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন—
“Appটি স্বেচ্ছামূলক। ব্যবহারকারী চাইলে সঙ্গে সঙ্গে ডিলিট করতে পারবেন।”
কিন্তু বাস্তবে ফোনে অ্যাপ প্রি-লোড থাকা—তা ডিলিট করা অসম্ভব না হোক, ব্যবহারকারী নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ভারত সরকারের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশে বিক্রি হওয়া সব নতুন স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলকভাবে রাষ্ট্রীয় অ্যাপ Sanchar Saathi প্রি-লোড করতে হবে—এ খবর প্রকাশ্যে আসতেই প্রযুক্তি দুনিয়ায় তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অ্যাপটি মূলত মোবাইল ফোন চুরি, IMEI ক্লোনিং ও সিম প্রতারণা রোধে ব্যবহৃত হলেও, Apple Inc. এই আদেশ মানতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অ্যাপলের মতে, কোনো তৃতীয়-পক্ষ বা সরকারি অ্যাপকে iOS-এ প্রি-লোড করতে দেওয়া নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার নীতির পরিপন্থী। অন্যদিকে বিরোধী দল অভিযোগ করেছে—এই সিদ্ধান্ত নাগরিকদের ওপর নজরদারি বাড়াতে পারে। তবে সরকার দাবি করছে—অ্যাপটি নিরাপদ, এবং ব্যবহারকারী চাইলে ডিলিট করতে পারবেন। Samsung ও Xiaomi-সহ অন্যান্য নির্মাতা নির্দেশটি পর্যালোচনা করছে, কিন্তু স্পষ্ট আপত্তি তুলেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতি প্রযুক্তি কোম্পানির স্বাধীনতা, প্রাইভেসি অধিকার ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলছে। বিষয়টি এখন ভারত সরকার ও অ্যাপলের মধ্যে বড় সংঘাত তৈরি করেছে।
Sanchar Saathi একটি সুরক্ষা অ্যাপ। এটি—
ফোন চুরি হলে IMEI ব্লক করতে পারে
দ্বিতীয়হাত ফোন কিনলে তার বৈধতা পরীক্ষা করা যায়
পোর্টিং বা সিম প্রতারণা রোধে সহায়তা করে
সরকার বলছে—ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন বাজার, যেখানে ফোন চুরি ও IMEI ক্লোনিং ব্যাপক। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে এই অ্যাপ প্রি-লোড করলে সব ফোন একই সিস্টেমে যুক্ত হবে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
Sanchar Saathi সরকার-চালিত, তাই নজরদারি আশঙ্কা থেকেই যায়।
ব্যবহারকারীর ফোনে কোন অ্যাপ থাকবে তা সরকার ঠিক করছে—এটি গণতান্ত্রিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
Reuters জানিয়েছে—
Samsung “অর্ডারটি পর্যালোচনা করছে”
Xiaomi internal discussion শুরু করেছে
Vivo, Oppo-সহ আরও পাঁচটি কোম্পানি সরকারের সঙ্গে আলোচনায়
কিন্তু কেউই অ্যাপলের মতো স্পষ্ট আপত্তি জানায়নি।
কিন্তু সবাই চায়—সময়সীমা বাড়ানো হোক, এবং প্রি-লোড নীতি শিথিল করা হোক।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
রাষ্ট্রীয় অ্যাপ বাধ্যতামূলকভাবে ইনস্টল করা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিরল
এটি ব্যবহারকারীর autonomie এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক
এটি কেন্দ্রীয় database-এ ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করবে
আইটি বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন—এটি surveillance state তৈরি করতে পারে।
যদিও সরকার বলছে—অ্যাপটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ট্র্যাকিং শুধুমাত্র চুরি হওয়া ফোনে কার্যকর।
যদি অ্যাপল নির্দেশ মানতে না চায়—
ভবিষ্যতে Apple ও ভারতের মধ্যে আইনি লড়াই হতে পারে
iPhone-এর অনুমোদন ও সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়ায় বাধা আসতে পারে
ভারত সরকারের উপরও টেক-বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবমূর্তি বজায় রাখার চাপ বাড়বে
ভারত অ্যাপলের অন্যতম বৃহৎ উৎপাদন কেন্দ্র। তাই বিরোধ বাড়লে দু’পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন—
ভারত এমন একটি বাজার যেখানে রাষ্ট্রীয় অ্যাপ বাধ্যতামূলক করা হলে এটি ভবিষ্যতের নজির তৈরি করবে।
অনেকেই এটিকে চীনের মতো কঠোর রাষ্ট্রীয় মডেলের সঙ্গে তুলনা করছেন।
পুরো বিষয়টির সারকথা—
সরকার বলছে: “নাগরিক সুরক্ষা প্রথম।”
অ্যাপল বলছে: “ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা প্রথম।”
এই দ্বন্দ্ব যতদিন সমাধান না হয়, ভারতীয় টেক ইকোনমি, গোপনীয়তা অধিকার, আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বাজার—সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব পড়তে থাকবে।