আগামী শীতে কোথায় ঘুরবেন তা ভাবছেন? তাহলে কফির খোঁজে বেরিয়ে পড়ুন দক্ষিণ ভারতের মনোরম বাগিচাগুলোতে। শুধুমাত্র সুগন্ধি কফি নয়, এই বাগানগুলো আপনাকে ঘেরা সবুজ পাহাড়, শান্ত পরিবেশ এবং স্বাভাবিক সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। কোরাপাড়া, কোডাগু, চেরাপুঞ্জি সহ দক্ষিণ ভারতের একাধিক শৈলশহর কফি চাষের জন্য বিখ্যাত। এখানে আপনি কফির চাষের প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ পাবেন, তাজা কফির স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন এবং পাহাড়ি গ্রামগুলোর সাদাসিধে জীবনযাত্রা অনুভব করতে পারবেন। শীতের মৃদু হাওয়ায় কফির বাগানগুলো ঘুরে বেড়ানো এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হবে, যা আপনাকে শহরের ভিড় থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে প্রকৃতির কোলে পৌঁছে দেবে।
শীতের দিনগুলিতে ধূমায়িত এক কাপ কফি সবাইকে মন ভালো করে দেয়। কিন্তু যদি সেই কফি পান করা যায় কফি বাগানের ক্যাফেতে বসে, কফির ইতিহাস জানতেও থাকেন, তবে তা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। যদিও আমরা দার্জিলিং, মিরিক বা ডুয়ার্সকে চা-বাগানের জন্য বেশি চিনি, তবে দক্ষিণ ভারতের মুন্নার থেকে উটি পর্যন্ত এমন স্থানও আছে যেখানে কফি বাগানই পর্যটনের মূল আকর্ষণ। আগামী শীতে ঘুরে আসার মতো এমন তিনটি স্থান আজ আমরা আপনাদের দেখাব।
দক্ষিণ ভারতের চিকমগলুরকে বলা হয় ‘দ্য ল্যান্ড অফ কফি’ বা কফির দেশ। এই অঞ্চলকে শুধু কফির জন্মস্থান হিসাবেও মনে করা হয়। প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে এখানে কফি চাষ হয় এবং আমরা যে কফি প্রতিদিন পান করি, তা নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বীজে পরিণত হয়। চিকমগলুরে পর্যটকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে তারা কফি গাছ, ফল থেকে বীজ তৈরির প্রক্রিয়া এবং কফির স্বাদ উপভোগ করতে পারেন। বাগানের কফি ঘেঁটে দেখার পাশাপাশি তা কিনতেও পারবেন। কথিত আছে, ১৭শ শতকে বাবা বুদান নামে এক সন্ন্যাসী ইয়েমেন থেকে কফির বীজ আনেন এবং সেই থেকেই কফি চাষের ইতিহাস শুরু।
চিকমগলুর শুধু কফির জন্যই বিখ্যাত নয়, এখানকার সৌন্দর্যও অসাধারণ। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ঘিরে রেখেছে সবুজ ঢেউ খেলানো পাহাড়, যার মধ্যে মুল্লায়নগিরি শৃঙ্গ এবং ঝারি ঝর্নার মতো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ঝর্নার জল একটি ছোট জলাশয়ে জমে গেছে, যা হাঁটাপথে পৌঁছাতে হয়। বাবা বুদানগিরি নামে আরেক মনোরম স্থানও আছে, যেখানে সবুজ ঘাসের চাদর আর পাহাড়ি দৃশ্য চোখকে স্বস্তি দেয়। তবে পাহাড়ে ওঠার জন্য কিছুটা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
কেরনার্তকেও কমতি নেই। কুর্গকে ভারতের কফি রাজধানী বলা হয়। এখানে ‘অ্যারবিকা’ ও ‘রোবাস্টা’ ধরনের কফি বীজ চাষ হয়। ঢেউখেলানো পাহাড়, চা-বাগান এবং কফি বাগান মিলিয়ে কুর্গ পর্যটকদের জন্য এক প্রকৃতির রত্নরাজ্য। মাদিকেরি দুর্গ, অ্যাবে জলপ্রপাত, ইরুপু ঝর্না, হোন্নামানা কেরে হ্রদ এবং মাল্লালি জলপ্রপাত ঘুরে দেখার মতো আকর্ষণ।
কেরলের মুন্নারও কফিপ্রেমীদের কাছে সমানভাবে আকর্ষণীয়। ৫,২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই শৈলশহরে সারা বছর হালকা শীত বিরাজ করে। চা বাগানের alongside একাধিক কফি বাগানও ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। সবুজ ঢেউখেলানো চা-বাগান, ঘন জঙ্গল, উচ্ছ্বল ঝর্না, পাহাড়ি নদী এবং মশলা বাগান মিলিয়ে মুন্নারের দৃশ্য এক অপূর্ব অনুভূতি দেয়। এছাড়া ভালারা জলপ্রপাত, মাট্টুপেট্টি জলাধার ও চা-কারখানা ঘুরে দেখতেও পারেন। স্থানীয় চকলেটের স্বাদ নেওয়া অবশ্যই ভুলবেন না।
শীতের সময়ে এই কফি বাগানগুলো ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা শুধু স্বাদই নয়, চোখ, মন ও প্রাণকেও প্রাণবন্ত করে তোলে। তাই এই শীতে যদি প্রকৃতি, কফি এবং পাহাড়ি সৌন্দর্য একসাথে উপভোগ করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে এই তিনটি স্থান আপনার ট্রিপ তালিকায় অবশ্যই থাকা উচিত।