ভারতের ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশন (DoT) সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপগুলির জন্য নতুন নিরাপত্তা নিয়ম ঘোষণা করেছে। নতুন নিয়ম অনুসারে, SIM-বাইন্ডিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা অর্থাৎ, একটি অ্যাকাউন্টে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর এবং SIM কার্ডের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। এর ফলে, ব্যবহারকারীরা শুধুমাত্র তাদের ফোনের SIM কার্ড দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ চালাতে পারবেন এবং যদি SIM পরিবর্তন করা হয় বা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তবে অ্যাপ ব্যবহার করা যাবে না।
বর্তমানে, বিশ্বজুড়ে প্রায় প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। এই মেসেজিং অ্যাপটি শুধু ব্যক্তিগত চ্যাটের জন্য নয়, ব্যবসায়িক, সামাজিক এবং পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকেও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তবে সম্প্রতি ভারতের ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশন (DoT) হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপগুলির জন্য একটি নতুন নির্দেশনা দিয়েছে, যার ফলে এই অ্যাপগুলির ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু নতুন নিয়ম চালু হতে যাচ্ছে। এই নিয়মগুলি মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েব অ্যাপ উভয়ই প্রভাবিত করবে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। তবে এর পাশাপাশি, এটি নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং প্রতারণা রোধের জন্য কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
SIM-বাইন্ডিং বলতে, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপের ব্যবহারকে ফোনের SIM কার্ডের সঙ্গে যুক্ত করা। অর্থাৎ, আপনার ফোনের সিম কার্ড ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। এই নিয়মের মাধ্যমে, সরকার নিশ্চিত করতে চাচ্ছে যে, প্রতিটি অ্যাকাউন্টের মালিকানা সঠিকভাবে যাচাই করা হবে এবং কোনো ধরনের প্রতারণামূলক কাজ সহজে সম্ভব হবে না।
মোবাইল সিমের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টের সত্যতা যাচাই করা হয়, যা মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি হ্যাকারদের এবং স্প্যামারদের জন্য কাজ করা কঠিন করে তোলে, যারা সাধারণত ভুয়া বা নিষ্ক্রিয় নম্বর ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে এবং অনলাইনে প্রতারণা বা অপরাধমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়। এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে, ব্যবহারকারীরা তাদের সঠিক মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে বাধ্য হবেন, যা অনেক নিরাপত্তাজনিত সুবিধা এনে দেবে।
নতুন নির্দেশনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের ওয়েব সেশন সম্পর্কিত নতুন নিয়ম। বর্তমানে, হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব ব্যবহারকারীরা একবার লগ ইন করার পর দীর্ঘ সময় ধরে সেই সেশনে থাকেন, এবং যখনই তারা নতুন ডিভাইসে লগ ইন করেন, তখন তাদের আগের সেশনগুলি সক্রিয় থাকে। তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ৬ ঘণ্টায় হোয়াটসঅ্যাপ Web-সেশন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগ আউট হয়ে যাবে, এবং ব্যবহারকারীদের আবার QR কোড স্ক্যান করে লগ ইন করতে হবে। এটি মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা উন্নত করতে সহায়তা করবে এবং ব্যবহারকারীদের অজান্তে বা অন্য কারো মাধ্যমে অ্যাকাউন্টের অবৈধ ব্যবহার রোধ করবে।
এই নতুন নিয়মের উদ্দেশ্য হলো নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা এবং ব্যবহারকারীদের ওয়েব সেশন দীর্ঘ সময় ধরে চালানোর মাধ্যমে কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে বাধা দেওয়া। অনেক সময় হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব সেশনগুলো বেশ কিছুদিন ধরে সক্রিয় থাকে, এবং যদি সেই সেশনটি কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তবে এটি একটি বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, যখন কোনো কম্পিউটার বা পাবলিক প্ল্যাটফর্মে হোয়াটসঅ্যাপ Web ব্যবহার করা হয়, তখন এটি আরও বড় সমস্যা হতে পারে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
এই নতুন নিয়মটি নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রতারণা এবং অনলাইনে অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধে সাহায্য করবে। হোয়াটসঅ্যাপের ওয়েব সেশন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগ আউট হওয়ার কারণে, ব্যবহারকারীদের মেসেজিং অ্যাপটি বেশি সময় ধরে অন্যের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য থাকবে না। ফলে, যারা অপরাধমূলক কার্যক্রম বা প্রতারণা করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
প্রমাণযোগ্যতা এবং ট্রেসেবিলিটি
একই সঙ্গে, এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে প্রমাণযোগ্যতা এবং ট্রেসেবিলিটির বিষয়টিও উন্নত হবে। হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টের মালিকানা এবং ব্যবহারের জন্য যে মোবাইল নম্বর বা SIM কার্ডটি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিশ্চিত হবে। এছাড়া, অন্য কেউ যদি আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার চেষ্টা করে, তাহলে এটি সহজেই শনাক্ত করা যাবে, কারণ নতুন SIM-বাইন্ডিং নিয়মের মাধ্যমে কোনো ভুল বা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করা কঠিন হয়ে যাবে। এর ফলে, প্রতারণার ঝুঁকি কমবে এবং হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারীরা আরও নিরাপদ থাকতে পারবেন।
ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি
ব্যবহারকারীদের জন্য এটি নিরাপত্তার একটি বড় সুবিধা, বিশেষত যারা হোয়াটসঅ্যাপের ওয়েব সংস্করণ ব্যবহার করেন। অনেক সময় দেখা যায়, ব্যবহারকারীরা তাদের ওয়েব সেশনে দীর্ঘ সময় ধরে লগ ইন করে থাকেন এবং তাদের কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইসটি অন্যরা ব্যবহার করতে পারেন। এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে, ওই ধরনের ঝুঁকি কমানো যাবে, কারণ সেশন ৬ ঘণ্টা পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগ আউট হয়ে যাবে।
মোবাইলে অ্যাপ চালাতে হলে — অবশ্যই সেই SIM কার্ড থাকা চাই। SIM বদলে গেলে বা SIM বন্ধ হলে অ্যাপ কাজ করবে না।
যারা ডেস্কটপে বা ওয়েব ব্রাউজারে WhatsApp ব্যবহার করেন — তারা প্রতি ৬ ঘণ্টা পর পুনরায় লগ‑ইন করতে হবে। অর্থাৎ পুরনো “লগইন একবার, সারাজীবন” সুবিধা আর থাকবে না।
অফিস, স্কুল, বা পাবলিক কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য একটু অস্বস্তিকর হলেও — নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনেক ঝুঁকি কমবে।
যদিও এই নতুন নিয়মটি নিরাপত্তার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তবুও কিছু ব্যবহারকারীর জন্য এটি কিছু অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, যারা অনেক সময় ধরে কম্পিউটার বা ওয়েব ব্রাউজারে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন, তাদের প্রতি ৬ ঘণ্টায় পুনরায় লগ ইন করতে হবে। এটি কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে, বিশেষত যদি তারা একাধিক ডিভাইসে একই সময়ে লগ ইন করেন।
এছাড়া, যারা পাবলিক বা শেয়ার করা কম্পিউটার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এই নিয়মটি আরও অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে, কারণ তারা বারবার লগ আউট হয়ে যেতে পারেন এবং পুনরায় লগ ইন করার জন্য QR কোড স্ক্যান করতে হবে। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করবে।
DoT জানায়, ক্যানভাস ডিভাইস বা ওয়েব ব্রাউজারে দীর্ঘ সময় একটি অ্যাকাউন্ট লগ‑ইন অবস্থায় রাখলে — বিশেষ করে যদি SIM বের করে রাখা যায় — সেগুলো স্বল্প চেকিং ও ট্রেসিং‑এর সুযোগ তৈরি করে। বেসিক একবার নম্বর ভেরিফাই করেই অ্যাপ চালু হয়ে যায়, কিন্তু পরবর্তীতে SIM না থাকলেও মেসেঞ্জার কাজ করে। এই loophole অনেক প্রতারণাকারী বা প্রতারনামূলক কাজে ব্যবহার করছেন, বিশেষ করে বিদেশ থেকে ভার্চুয়াল বা নিষ্ক্রিয় নম্বরের মাধ্যমে।
বিশ্বব্যাপী, অনেক দেশেই হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপগুলির জন্য SIM-বাইন্ডিং বা Web সেশন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। ভারতের ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আসার পর, অন্যান্য দেশের আইনগত সংস্থাও এই ধরনের নিয়ম প্রবর্তন করতে পারে। এই ধরনের পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা এবং ব্যবহারের সঠিকতা নিশ্চিত করা। অন্যান্য দেশে এমন সিদ্ধান্তের ফলে, ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপত্তা আরো শক্তিশালী হবে এবং প্রতারণার ঝুঁকি কমবে।
এই নতুন নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার পর, হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তা আরও উন্নত হবে। তবে, ভবিষ্যতে হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপের জন্য আরও শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেমন, ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা, ডেটা এনক্রিপশন এবং অনলাইন নিরাপত্তা প্রোটোকলের উন্নয়নসহ বিভিন্ন সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হবে।
ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের জন্য নতুন SIM-বাইন্ডিং এবং প্রতি ৬ ঘণ্টায় Web-সেশন লগ আউট নিয়মগুলো কার্যকর করার মাধ্যমে, ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে, অনলাইনে অপরাধমূলক কার্যক্রম এবং প্রতারণার ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে। যদিও কিছু ব্যবহারকারীর জন্য এটি কিছু অসুবিধা তৈরি করতে পারে, তবে নিরাপত্তা এবং প্রমাণযোগ্যতার দিক থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
