পরিবার ও তৃণমূলের দাবি, ‘এসআইআর আতঙ্কে’ আত্মহত্যা করেছেন ২৮ বছরের জাহির মাল। এটি রাজ্যে এ ধরনের পঞ্চম মৃত্যু বলে অভিযোগ, যদিও বিজেপি সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরুর দিনেই এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় তীব্র শোরগোল। পরিবার ও রাজ্যের শাসকদলের দাবি, ‘এসআইআর আতঙ্কে’ আত্মহত্যা করেছেন এলাকার এক দিনমজুর। এ নিয়ে রাজ্যে ‘এসআইআর আতঙ্কে’ পঞ্চম মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের খলিসানি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ২৮ বছরের জাহির মাল পেশায় দিনমজুর ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ। যদিও কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি, পরিবারের দাবি — এসআইআর নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন জাহির। তাঁর স্ত্রী রেজিনা বিবি বলেন,
“এসআইআর নিয়ে ভয় পেত ও। সব সময় বলত, বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। সেই ভয়েই নিজেকে শেষ করে ফেলেছে।”
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে একটি প্রতিনিধিদল গিয়েছে মৃতের বাড়িতে। রাজ্যের পূর্ত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী পুলক রায় বলেন,
“আমাদের দল এই পরিবারের পাশে আছে। আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে রাজ্যে — বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। কেন্দ্রকে বলব, মৃত্যুর রাজনীতি বন্ধ করুন।”
অন্য দিকে, বিজেপি তৃণমূলের অভিযোগ খারিজ করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন,
“এসআইআর নিয়ে ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক লাভ তুলছে মমতা ও অভিষেকের দল। মানুষকে অকারণে আতঙ্কিত করা হচ্ছে।”
এর আগেও রাজ্যে ‘এসআইআর আতঙ্কে’ চারটি মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
২৮ অক্টোবর, আগরপাড়ায় মশারি ব্যবসায়ী প্রদীপ কর আত্মঘাতী হন — একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়।
৩০ অক্টোবর, বীরভূমের ইলামবাজারে ৯৫ বছরের ক্ষিতীশ মজুমদারের মৃত্যু হয়, যিনি ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজের নাম না থাকায় চিন্তিত ছিলেন বলে দাবি পরিবারের।
২ নভেম্বর, পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে দিঘার হোটেলমালিক শেখ সিরাজউদ্দিনের মৃত্যু হয় নথিতে ভুল নাম দেখে উদ্বেগে পড়ে।
৩ নভেম্বর, হুগলির ডানকুনিতে ৬০ বছরের হাসিনা বেগের মৃত্যু হয়, তিনিও ভোটার তালিকা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন বলে পরিবারের দাবি।
রাজ্যে এই একের পর এক মৃত্যু ঘিরে বাড়ছে বিতর্ক — আতঙ্কের দায় কার, সেই প্রশ্নেই সরগরম রাজনৈতিক মহল।
