পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরের একলক্ষী মা মীনা শর্মা নিজের অসম্পূর্ণ স্বপ্নকে পূরণ করেছেন দুই মেয়ের মাধ্যমে। কলেজে খেলাধুলা করলেও নিজে ক্যারিয়ার গড়তে না পারা এই শারীরিক শিক্ষিকার দৃঢ়তা ও ত্যাগেই আজ তার মেয়ে তনভি শর্মা বিশ্ব জুনিয়র ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য পদক জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ব্যাডমিন্টনের জগতে তাই মীনা শর্মা আজ ‘মহাবীর ফোগাট অফ ব্যাডমিন্টন’ নামে পরিচিত — এক মায়ের অনুপ্রেরণার অনন্য গল্প।
পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুর জেলার এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা মীনা শর্মা আজ দেশের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম। তিনি শুধু একজন মা নন, এক নিবেদিতপ্রাণ প্রশিক্ষকও, যিনি নিজের অসম্পূর্ণ স্বপ্নকে পূরণ করেছেন তাঁর মেয়েদের মাধ্যমে। তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা তনভি শর্মা সম্প্রতি গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জুনিয়র ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য পদক জিতে ইতিহাস গড়েছেন।
মীনা শর্মা এক সময় কলেজে ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন, পাশাপাশি ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টনেও দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু পারিবারিক দায়িত্ব এবং সুযোগের অভাবে নিজের ক্রীড়াজীবন এগিয়ে নিতে পারেননি। জীবনের সেই অপূর্ণতাই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল তাঁর দুই মেয়েকে খেলাধুলার পথে চালিত করতে। একজন একলক্ষী মা হিসেবে, সীমিত আর্থিক অবস্থাতেও তিনি দুই মেয়েকে ব্যাডমিন্টনের মতো ব্যয়বহুল খেলায় অংশগ্রহণ করিয়েছেন।
তনভি ও রাধিকা— দুই বোনই আজ দেশের প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। রাধিকা নিজেও জাতীয় স্তরে খেলেছেন। তাঁদের মা মীনা প্রথমে মেয়েদের খেলাধুলায় আনেন শুধুমাত্র শরীরচর্চা ও টিভি থেকে দূরে রাখার জন্য, কিন্তু পরে সেটাই তাঁদের জীবনের লক্ষ্য হয়ে ওঠে। রাধিকা বলেন, “মা নিজে অনেক খেলায় প্রতিভাবান ছিলেন, কিন্তু আমাদের জন্য নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলেন। তিনিই আমাদের কোচিং শুরু করিয়েছিলেন, নিজেই কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।”
মীনা শর্মা বিশ্বাস করতেন, দলগত খেলায় নয়, তাঁর মেয়েদের সফলতা আসবে ব্যক্তিগত খেলায়— যেখানে তাদের পরিশ্রম ও প্রতিভাই মূল চালিকা শক্তি হবে। তাই ব্যাডমিন্টনকেই বেছে নেন। তিনি দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে মেয়েদের প্রস্তুত করেছেন।
আজ তনভির বিশ্বজয়ী পদক সেই মায়ের অদম্য পরিশ্রমের ফল। সমাজে যেখানে প্রায়ই মা’রা নিজেদের স্বপ্ন বিসর্জন দেন সন্তানের জন্য, মীনা শর্মা প্রমাণ করেছেন — সেই ত্যাগই একদিন সন্তানের সাফল্যের মূলে দাঁড়ায়। পাঞ্জাবে অনেকেই তাঁকে এখন বলেন, “ব্যাডমিন্টনের মহাবীর ফোগাট” — যিনি নিজের কন্যাদের কাঁধে ভর করে লিখেছেন গৌরবের এক নতুন অধ্যায়।
মীনা শর্মা ও তাঁর দুই মেয়ের এই গল্পটি শুধু খেলাধুলার নয়, এটি এক মায়ের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি, ভালোবাসা ও ত্যাগের প্রতীক — যা অনুপ্রেরণা জোগাবে দেশের প্রতিটি পরিবারকে।
