কয়েক সপ্তাহ ধরে মানসিকভাবে অস্থিরতা ও অবসাদের মধ্যে ভুগছিলেন এক তরুণী কর্মী। নিজের মানসিক অবস্থার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও তাতে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তবুও প্রতিদিন অফিসে এসে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি, যতক্ষণ না মানসিক ক্লান্তি চরমে পৌঁছয়।
কর্মজীবনের চাপ, মানসিক ক্লান্তি ও অবহেলার এক কঠিন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন গুরুগ্রামের এক তরুণী। বয়স মাত্র একুশ। কয়েক সপ্তাহ ধরে মানসিকভাবে অস্থির ও ক্লান্ত বোধ করছিলেন তিনি। নিজের এই মানসিক অবস্থা সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলতে সাহস দেখিয়েছিলেন অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তাঁর সেই কথাকে গুরুত্ব দেননি ঊর্ধ্বতনরা। বরং নিয়মিত কাজের চাপে তাঁকে আরও জর্জরিত করে তোলা হয়।
দিনের পর দিন মানসিক অস্থিরতার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন ওই তরুণী। কিন্তু এক সময় তাঁর শরীর ও মন দুটোই ভেঙে পড়ে। অফিসে কাজের সময়ই আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি, শুরু হয় শ্বাসকষ্ট ও মানসিক ভাঙন। পরের দিন আর অফিস যাওয়ার মতো শক্তি বা মানসিক অবস্থা থাকে না তাঁর। তাই মনোবিদের পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
নিজের মানসিক অবস্থার কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে অফিসের মানবসম্পদ (HR) বিভাগে ছুটির আবেদন করেন তিনি। মেল করে জানান, তাঁর অবস্থা এমন যে তিনি ফোন ধরতেও সক্ষম নন। কিন্তু মানবিক সহানুভূতির বদলে মেলে তিরস্কার। ঊর্ধ্বতনরা তাঁর আবেদনকে অবজ্ঞা করে মন্তব্য করেন— “এমন কী হয়েছে যে ফোন ধরতে পারছেন না?” এরপর সহকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ঠাট্টা-ইয়ার্কি। তরুণী জানতে পারেন, অফিসে তাঁর মানসিক সমস্যাকে নিয়েই চলছে হাসাহাসি, কেউ কেউ তাঁকে “নাটকবাজ” বলেও কটাক্ষ করছেন।
ঘটনায় মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েন ওই তরুণী। নিজের কষ্টের কথা ও এই ঘটনার বিবরণ তিনি লেখেন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘রেডিট’-এ, ‘r/Gurgaon’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে। পোস্টে তিনি লেখেন, “আমি মানসিকভাবে ঠিক ছিলাম না। কিন্তু সাহায্য চাওয়ার পরও কেউ গুরুত্ব দিল না। এখন সবাই আমাকে নিয়ে হাসছে।” যদিও লেন্সপিডিয়াবাংলা অনলাইন এই পোস্টের সত্যতা যাচাই করেনি, তবে বিষয়টি সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলার এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে।
পোস্টটি প্রকাশের পর নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ তরুণীর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সাহস দেন, কেউ আবার বাস্তব পরামর্শ দেন। এক জন লিখেছেন, “অফিসের সহকর্মীরা আপনার আত্মীয় নন। তাঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করবেন না। তাঁরা কখনও আপনার কষ্ট বুঝবে না।” এই মন্তব্যে ফুটে ওঠে কর্পোরেট দুনিয়ায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার অভাব ও সহমর্মিতার সংকট।
এই ঘটনা আবারও সামনে এনে দিয়েছে সেই চিরচেনা বাস্তবতাকে— এখনও অনেক অফিসে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, বরং তা নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করা হয়। তরুণীর মতো অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েও চুপ করে যান, কারণ সত্যি বললে তাঁরা “হাসির পাত্রী” হয়ে যান। অথচ এই সমাজেই এখন সময় এসেছে মানসিক সুস্থতার বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার, এবং কর্মক্ষেত্রে সহানুভূতির পরিবেশ গড়ে তোলার।