রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৯ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে মান রাখল ভারত। রোহিতের রেকর্ডভাঙা ইনিংস ও কোহলির ঝলকে ভারতীয় দল দারুণভাবে জয়ের ছোঁয়া পেল।
সিডনি, ২৫ অক্টোবর: সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মাটিতে এক অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দিল টিম ইন্ডিয়া। রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির অপ্রতিরোধ্য ব্যাটিংয়ে ভারত মাত্র ১ উইকেটে হারায় অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে সিরিজে মান রক্ষা করল। তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজে আগের দুটি ম্যাচে পরপর পরাজয়ের গ্লানি মুছে এই জয় ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এবং দলকে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে।
রোহিত শর্মার ঐতিহাসিক মাইলফলক
রোহিত শর্মা তাঁর ৫০তম ওডিআই শতরান পূর্ণ করে আবারও প্রমাণ করলেন কেন তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনার। ১২৫ বলে ১২১ রানের (১১ চার, ৫ ছক্কা) এই ঐতিহাসিক ইনিংসে ছিল ধৈর্য, কৌশল ও শক্তির চমৎকার মিশ্রণ। ম্যাচের শুরু থেকেই রোহিত আগ্রাসী খেলার সুর সৃষ্টি করেন এবং পাওয়ারপ্লেতে দ্রুত রান তুলে দলকে শক্ত ভিত্তি দেন।
রোহিতের এই শতরানটি তাঁকে ওডিআই ক্রিকেটে ৫০ শতরান সম্পন্ন করা অষ্টম ব্যাটসম্যানে পরিণত করেছে। বর্তমানে শুধুমাত্র শচীন তেন্ডুলকর (৪৯), বিরাট কোহলি (৫০), রিকি পন্টিং (৩০), সনাথ জয়সূর্যা (২৮), হাশিম আমলা (২৭), কুমার সাঙ্গাকারা (২৫) এবং জ্যাক ক্যালিস (২৫)-এর মতো কিংবদন্তিরাই এই মাইলফলক অর্জন করেছেন।
ম্যাচ শেষে রোহিত আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, "দলের জন্য এই শতরানটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আগের দুটি ম্যাচে হেরেছি, কিন্তু আমরা জানতাম আমাদের সক্ষমতা। আজ সেটা প্রমাণ করতে পেরে খুশি।"
কোহলির চাপ সামলানোর মাস্টারক্লাস
অপরদিকে বিরাট কোহলি নিজের পরিচিত ছন্দে ব্যাট করে দলের জয়কে নিশ্চিত করেন। ৯৮ বলে ৯৩ রান (৮ চার, ২ ছক্কা) করে তিনি রয়ে গেলেন অপরাজিত। বিশেষত মধ্য ওভারে যখন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনাররা চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছিল, তখন কোহলির পরিণত ব্যাটিং ভারতকে বিপদমুক্ত রাখে।
দু'জনের মধ্যে গড়ে ওঠে দ্বিতীয় উইকেটে ১৮৯ রানের দুর্দান্ত এক পার্টনারশিপ, যা অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের সম্পূর্ণভাবে চাপে ফেলে দেয়। এই পার্টনারশিপ ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট এবং ভারতের জয়ের মূল ভিত্তি।
কোহলির কভার ড্রাইভ ও পুল শট দর্শকদের মন জয় করে নেয়। বিশেষত মিচেল স্টার্কের বাউন্সারগুলো তিনি যেভাবে খেলেছেন, তা ছিল মাস্টার ক্লাস।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং পারফরম্যান্স
অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাট করে তুলেছিল ২৮৯ রান (৪৯.৩ ওভার)। স্টিভ স্মিথের ৮৭ রান ও ট্রাভিস হেডের ৬৫ রান ছিল দলের জন্য প্রধান অবদান। তবে ভারতীয় বোলাররা, বিশেষত জসপ্রীত বুমরাহ (৩/৫৮) ও কুলদীপ যাদব (২/৫৪), মধ্য ও শেষ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করে অস্ট্রেলিয়াকে ৩০০-এর নিচে আটকে রাখেন।
ভারতের ব্যাটিং পরিকল্পনা
ভারতের ব্যাটিং শুরু থেকেই ছিল নিয়ন্ত্রিত ও আত্মবিশ্বাসী। শুভমান গিল (১৫) প্রথম উইকেট হিসেবে বিদায় নিলেও রোহিত-কোহলির জুটি ভারতকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
রোহিতের ছক্কা-বাউন্ডারিতে সিডনি স্টেডিয়াম মুখরিত হয়ে ওঠে। বিশেষত পাওয়ারপ্লেতে তাঁর আক্রমণাত্মক খেলা ভারতকে দ্রুত গতি দেয়। কোহলিও তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে ইনিংসকে স্থিতিশীল রাখেন এবং প্রয়োজনে রান রেট বৃদ্ধি করেন।
অস্ট্রেলিয়ান বোলিং ব্যর্থতা
অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা প্রথম উইকেট তুলে নিলেও পরবর্তীতে কোনো ব্রেকথ্রু পান না। মিচেল স্টার্ক (১/৬২), প্যাট কামিন্স (০/৫৫), অ্যাডাম জাম্পা (০/৫৮) — কেউই রোহিত-কোহলির জুটিকে থামাতে পারেননি। তাঁদের ফিল্ডিংও ছিল গড়পড়তা মানের, যা ম্যাচের গতি ভারতের পক্ষে নিয়ে যায়।
ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মন্তব্য
প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার বলেন, "রোহিত ও কোহলি যখন একসাথে রান করেন, তখন বোলারদের জন্য কোনো উত্তর থাকে না। আজকের পার্টনারশিপ ছিল একেবারে পরিপূর্ণ।"
অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ম্যাথিউ হেইডেন বলেন, "কোহলি এখনও বিশ্বের সেরা চেজার। তাঁর টেম্পো বজায় রাখার ক্ষমতা অসাধারণ। আর রোহিত যখন আক্রমণাত্মক মুডে থাকেন, তখন তাঁকে থামানো অসম্ভব।"
সিরিজের বর্তমান অবস্থান
এই জয়ের ফলে ভারত কেবল সিরিজের ক্লিন সুইপ রুখল না, বরং দলে নতুন উদ্যম ও আত্মবিশ্বাসও ফিরিয়ে আনল। সিরিজের স্কোর এখন ২-১, অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে রয়েছে। তবে আগামী দুটি ম্যাচ মেলবোর্ন ও পার্থে অনুষ্ঠিত হবে, এবং ভারতীয় দল এখন পূর্ণ আত্মবিশ্বাসে সিরিজ জিতার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।
অধিনায়ক হিসেবে রোহিতের এই ইনিংস তাঁকে ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সফল ওপেনার ও নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ম্যাচের স্কোরকার্ড সারসংক্ষেপ
অস্ট্রেলিয়া: ২৮৯/৮ (৪৯.৩ ওভার)
ভারত: ২৯০/১ (৪৬.২ ওভার)
ফলাফল: ভারত ৯ উইকেটে জয়লাভ করেছে
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ: রোহিত শর্মা
উপসংহার
শেষ পর্যন্ত ভারত মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে সহজ জয় তুলে নেয় এবং সিডনির দর্শকদের উপহার দেয় এক স্মরণীয় মুহূর্ত। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা ইতিমধ্যেই বলছেন — "রোহিত-কোহলি মানেই ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। এই দুই কিংবদন্তি যতদিন একসাথে খেলবেন, ভারতীয় ক্রিকেট ততদিন শক্তিশালী থাকবে।"
এই জয় শুধু একটি ম্যাচের জয় নয়, এটি ভারতীয় ক্রিকেটের চরিত্রের প্রমাণ — যেখানে বিপদের সময়েও দল ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং ফিরে আসে আরও শক্তিশালী হয়ে।
? মূল দিকগুলো:
রোহিত শর্মার ৫০তম ওডিআই শতরান (১২১ রান)
বিরাট কোহলির অপরাজিত ৯৩ রান
১৮৯ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ
মাত্র ১ উইকেটে ভারতের দুর্দান্ত জয়
অস্ট্রেলিয়ার ক্লিন সুইপ রুখল ভারত
সিরিজ ২-১, অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে
জসপ্রীত বুমরাহর ৩ উইকেট
