পুরুষ ব্যাডমিন্টন টপ ১০০-র মধ্যে সবচেয়ে খাটো খেলোয়াড় কোকি ওয়াতানাবে, কিন্তু তার স্বপ্ন ও লড়াই অনেক উঁচু। গতি, দক্ষতা ও মানসিক শক্তিতে তিনি প্রমাণ করেছেন — উচ্চতা নয়, হৃদয়ের জোরই আসল শক্তি। কোর্টে তার প্রত্যাবর্তন আজ অনুপ্রেরণার প্রতীক।
টোকিও, জাপান — ব্যাডমিন্টন কোর্টে যখন একের পর এক লম্বা, শক্তিশালী ও দ্রুতগতির খেলোয়াড়দের দেখা যায়, তখন তাদের মাঝে জাপানের তরুণ তারকা কোকি ওয়াতানাবে যেন এক ভিন্ন উপস্থিতি। উচ্চতায় বিশ্বের পুরুষ ব্যাডমিন্টন শীর্ষ-১০০ খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে খাটো হলেও, তার দৃঢ়তা, ক্ষিপ্রতা ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি প্রমাণ করেছে— উচ্চতা নয়, আসল শক্তি লুকিয়ে থাকে মনোবলে।
কোকি ওয়াতানাবের উচ্চতা তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেকটাই কম। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তিনি জানতেন, বিশ্বমঞ্চে টিকে থাকতে হলে নিজের দুর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। তিনি সেই অনুযায়ী নিজের খেলাকে গড়ে তুলেছেন— দ্রুতগতির ফুটওয়ার্ক, নিখুঁত টাইমিং এবং আশ্চর্যজনক রিফ্লেক্স-এর সমন্বয়ে।
জাপানের জাতীয় প্রশিক্ষণ শিবিরে শুরু থেকেই তিনি কোচদের নজর কেড়েছিলেন। অনেকেই তার উচ্চতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও, কোকি প্রতিটি ম্যাচে তাদের ভুল প্রমাণ করেছেন।
ব্যাডমিন্টনে উচ্চতা অনেক সময় বিশেষ সুবিধা দেয়— বিশেষত স্ম্যাশ বা সার্ভ-রিসিভে। কিন্তু কোকি তার খাটো গড়নকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করেন। তার গতি এমন যে, প্রতিপক্ষের চোখের পলকে দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম। দ্রুত লাফিয়ে ওঠা, ডাইভ করে বল ফিরিয়ে দেওয়া বা আক্রমণের সুযোগ নেওয়া— সবেতেই তিনি দুর্দান্ত।
তার একাধিক ম্যাচে দেখা গেছে, লম্বা প্রতিপক্ষ যখন স্ম্যাশ মারতে প্রস্তুত, তখন কোকি আগেই পড়ে ফেলেন বলের দিক। মুহূর্তের মধ্যে কোর্টের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গিয়ে তিনি এমনভাবে বল ফেরত দেন যে দর্শকরা হতবাক হয়ে যান।
কোকি শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও অসাধারণ শক্তিশালী। তার খেলার ধরন ভিন্ন— বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনা, মাইন্ড গেম এবং প্রতিপক্ষের দুর্বলতা কাজে লাগানো। দীর্ঘ র্যালিতে তিনি ধৈর্য ধরে সুযোগের অপেক্ষা করেন। যখন প্রতিপক্ষ ক্লান্ত বা বিভ্রান্ত, তখন হঠাৎ আক্রমণে যান— যা প্রায়ই ম্যাচের গতিপথ বদলে দেয়।
জাপানের ব্যাডমিন্টন সংস্কৃতিতে শৃঙ্খলা, অধ্যবসায় ও নিয়মিত অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। কোকি ওয়াতানাবে সেই ঐতিহ্য রক্ষা করছেন নিখুঁতভাবে। ২০২৪-২৫ মৌসুমে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জার সিরিজ ও সুপার ৩০০ টুর্নামেন্টে তার পারফরম্যান্স ব্যাডমিন্টন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে তার ডিফেন্সিভ টেকনিক ও কাউন্টার-অ্যাটাকিং ক্ষমতা আজ তরুণ প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয় উদাহরণ।
কোকি ওয়াতানাবের সাফল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়— "উচ্চতা নয়, আত্মবিশ্বাসই সাফল্যের মাপকাঠি।" তিনি প্রমাণ করেছেন, মন থেকে ইচ্ছা থাকলে শরীরের সীমাবদ্ধতা কোনও বাধা নয়। বরং সেটিই হতে পারে সাফল্যের অনুপ্রেরণা।
এখনও তরুণ কোকির সামনে অনেক পথ বাকি। অলিম্পিক বা বিশ্ব ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জেতার স্বপ্ন নিয়ে তিনি অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তার কোচ বলেন, "কোকি এমন এক খেলোয়াড়, যে প্রতিদিন নিজেকে আগের দিনের চেয়ে একটু ভালো করতে চায়। এই মনোভাবই একদিন তাকে বড় মঞ্চে পৌঁছে দেবে।"
খাটো উচ্চতা আজ তার পরিচয়ের অংশ, কিন্তু সীমাবদ্ধতা নয়। কোকি ওয়াতানাবে আজ এমন এক নাম, যিনি ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে প্রমাণ করেছেন— ছোট শরীরেও বড় স্বপ্ন বাসা বাঁধে। তিনি শুধু একজন খেলোয়াড় নন, তিনি অনুপ্রেরণা— সকলের জন্য যারা বিশ্বাস করেন, সীমাবদ্ধতা মানে শেষ নয়, বরং নতুন সম্ভাবনার শুরু।
