কুসুম দোলা সিরিয়ালের সাত বছর পর আবার একসঙ্গে ফিরছেন জনপ্রিয় দুই অভিনেত্রীরীতা কৌণ্ড এবং মধুমিতা সরকার। এই জুটিকে শাশুড়ি বউমা হিসেবে দেখতে মুখিয়ে রয়েছেন দর্শক। নতুন সিরিয়ালে দেখা যাবে আধুনিক ভাবনার বউ এবং নীতিগতভাবে কঠোর শাশুড়ির দ্বন্দ্ব। স্বাধীনতার পথ অনুসরণ করা মধুমিতা এবং নিয়মমাফিক পরিবার চালাতে চাওয়া রীতার মধ্যে তৈরি হবে আবেগ, সংঘর্ষ ও বোঝাপড়ার নতুন গল্প। কখনও সম্পর্ক হবে মিষ্টিমাখা, আবার কখনও নোনতা কঠোরতায় জমবে নাটকীয়তা। পুরনো সময়ের স্মৃতি আর নতুন গল্পের মোড় দুটো মিলিয়েই সিরিয়ালটি ফিরিয়ে আনবে দর্শকদের আগ্রহ।
সাত বছর আগে কুসুম দোলা সিরিয়ালের মাধ্যমে বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী রীতা কৌণ্ড এবং মধুমিতা সরকার। এই জুটির শাশুড়ি–বউমার রসায়ন এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে সিরিয়াল শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দর্শক তাদের ভুলতে পারেননি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও একসঙ্গে ফিরছেন তারা। নতুন সিরিয়ালটিতে মধুমিতা থাকছেন আধুনিক, স্বাধীনচেতা, নিজের ক্যারিয়ার বানাতে চাওয়া এক তরুণীর ভূমিকায়। আর তার শাশুড়ির ভূমিকায় থাকছেন রীতা—যিনি এবার আরও পরিণত, বাস্তববাদী এবং কঠোর নীতিবান চরিত্রে। বাংলা টেলিভিশনের ইতিহাসে কিছু নাম এমন আছে যেগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়ে যায় না। যারা একসময় সন্ধ্যার আলো নিভে যাওয়ার আগেই টিভির সামনে দর্শকদের বসিয়ে রাখতে পারত, যাদের চরিত্র, সংলাপ, আবেগ আজও স্মৃতির পাতায় জ্বলজ্বল করে। সেইসব স্মরণীয় সিরিয়ালের মধ্যে কুসুম দোলা অন্যতম। এই সিরিয়াল শুধু ঈশান-রূপার প্রেমকাহিনি নয়, বরং ছিল এক পরিবারের সম্পর্কের গভীরতা, সম্পর্কের ওঠাপড়া, শাশুড়ি-বউমার অদৃশ্য টানাপোড়েন, আর মানুষের মনের স্তরগুলোর গল্প। এই সিরিয়ালের অন্যতম শক্তিশালী চরিত্র ছিলেন রীতা—যার অভিনয়ে ছিলেন রীতা কৌণ্ড। তার চরিত্রে ছিল কঠোরতা, আবার ছিল গভীর স্নেহ। তিনি ছিলেন এমন একজন শাশুড়ি, যিনি নিজের মূল্যবোধ ও আদর্শের কাছে কখনও আপস করেন না, কিন্তু প্রয়োজনের সময় বউয়ের পাশে দাঁড়াতে কখনো পিছপা হন না। মধুমিতা সেই সময় অভিনয় করছিলেন এমন একটি চরিত্রে, যার ভেতরে ছিল নিখাদ সরলতা, বউ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখার সংগ্রাম, আর ভালোবাসার প্রতি এক অপরিসীম আস্থা। রীতা ও মধুমিতা—এই দুই নারী চরিত্রই সেই সময় দর্শকের মধ্যে অসাধারণ আবেগ তৈরি করেছিল। সাত বছর কেটে গেছে। দিন বদলেছে, সময় পাল্টেছে, দর্শকের রুচি ও প্রত্যাশা বদলেছে। নাটকের ভাষা, অভিনয়, গল্পের কাঠামো—সবই নতুন রূপে হাজির হয়েছে। কিন্তু পুরনো স্মৃতি কখনও পুরনো হয় না। ঠিক সেই স্মৃতিকেই যেন আবার ছুঁইয়ে দেখতে চলেছে বাংলা টেলিভিশন। কারণ দীর্ঘ সাত বছর পর আবার পর্দায় ফিরছেন এই দুই তারকা—মধুমিতা ও রীতা। এবং আবারও তারা আসছেন শাশুড়ি-বউমার চরিত্রে, তবে এবার সম্পূর্ণ নতুন গল্প, নতুন সম্পর্ক, নতুন আবহে। নতুন সিরিয়ালে মধুমিতা হচ্ছেন আধুনিক, স্বাধীনচেতা, নিজস্ব স্বপ্ন নিয়ে পথ চলা এক তরুণী। এমন এক নারী, যিনি নিজের ক্যারিয়ার ও পরিচয়কে যেকোনো সম্পর্কের ভেতরেও সমান গুরুত্ব দিতে চান। তার স্বামী একজন কর্মঠ যুবক, যে তার মা এবং স্ত্রীর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। আর এখানেই প্রবেশ করেন রীতা—মায়ের ভূমিকায়। আধুনিক যুগেও তিনি নিজের নীতিমালা, অভ্যাস, মূল্যবোধ ধরে রাখতে চান। তার কাছে জীবন মানে শৃঙ্খলা, পরিবার মানে দায়িত্ব, সম্পর্ক মানেই পারস্পরিক বোঝাপড়া। এখানেই শুরু হয় ‘মিষ্টি’ আর ‘নোনতা’র লড়াই।
দর্শকদের মধ্যে প্রশ্ন—রীতা কাকে বেশি পছন্দ করবেন?
মধুমিতাকে কি তিনি আগের মতোই আদর করবেন?
নাকি তার কঠোরতা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে? এই গল্পের ভেতরে রীতা আসলে দুই রূপেই উপস্থিত। একদিকে তিনি সেই মধুর শাশুড়ি, যিনি বউকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসেন, তার ভালো-মন্দ দেখেন, সাবধানে রাখেন। অন্যদিকে তিনি সেই বাস্তববাদী, কঠোর, নিজের নিয়মে চলা রীতা—যে ভুল দেখলে মুখে বলে দেয়, যে পরিবারের শৃঙ্খলা নষ্ট হতে দেয় না, যে বিশ্বাস করে নিয়মানুবর্তিতাই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে। নতুন সিরিয়ালের গল্পে মধুমিতা নিজের কাজকে গুরুত্ব দেন। তিনি এক স্বাধীনচেতা নারী, যিনি বিয়ের পরও নিজের স্বপ্নকে ছাড়তে চান না। কিন্তু এই জায়গাটাই অনেকসময় রীতার সঙ্গে সংঘর্ষ তৈরি করে। রীতা মনে করেন সংসারই একজন স্ত্রীর প্রথম দায়িত্ব, আর মধুমিতা মনে করেন সংসার ও কাজ—দুটোই সমানভাবে চালানো যায়। দুই প্রজন্মের ভাবনার এই সংঘাতই সিরিয়ালের মূল টান। কারণ একদিকে আছে রীতার অভিজ্ঞতা, বয়সের সঙ্গে অর্জিত বাস্তবতা, পরিবারকে আঁকড়ে ধরে রাখার ইচ্ছা; অন্যদিকে আছে মধুমিতার আধুনিকতা, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্পষ্টতার দৃষ্টিভঙ্গি, নিজের পরিচয় বজায় রাখার চেষ্ট। এই সংঘর্ষ কখনও তীব্র হয়, কখনও গলে যায়। কখনও তারা দুজন মুখোমুখি দাঁড়ায়, আবার কখনও একে অপরের হাত ধরে পরিস্থিতি সামলায়। শাশুড়ি-বউমার সম্পর্কের এমন ওঠাপড়া বাংলা পরিবারগুলোর বাস্তব প্রতিচ্ছবি। আর সেই কারণে গল্পটি দর্শকদের আরও বেশি নাড়া দেবে। কিন্তু প্রশ্ন থাকে—রীতা কী ধরনের সম্পর্ক বেশি পছন্দ করেন? তিনি কি মিষ্টি সম্পর্কের পক্ষে, যেখানে সবকিছু শান্ত, কোমল, আবেগপ্রবণ? নাকি তিনি নোনতা সম্পর্ককে প্রাধান্য দেন, যেখানে বাস্তবতা, কঠোরতা, সোজাসাপটা কথা বলা—এসবের ভূমিকা বেশি? আসলে রীতার চরিত্র এমন যে, তিনি দুই সমীকরণের মধ্যেই ভারসাম্য খোঁজেন। জীবনের অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছে শুধুই মিষ্টি হলে সম্পর্ক ভেঙে পড়ে, আর একদম নোনতা হলে সম্পর্ক কঠিন হয়ে যায়। তাই তিনি সম্পর্ককে দুই স্বাদের সমন্বয়ে এগিয়ে নিতে চান। তিনি মাঝে মাঝে কড়া কথা বলেন, আবার প্রয়োজন হলে বউকে বুকে টেনে নেন। এই দ্বৈত চরিত্রই তাকে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তব করে তুলেছে। নতুন গল্পে রীতাকে আরও বেশি পরিণত ও চিন্তাশীল দেখানো হবে বলে জানা গেছে। তিনি নিজের জীবনের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন, তাই এবার তিনি বউকে নিজের মেয়ে হিসেবে দেখবেন, কিন্তু সেই মেয়েকে অতিরিক্ত আদরে নষ্ট করবেন না। তিনি তাকে শক্ত করবেন, তাকে নিজের জায়গায় দাঁড়াতে সাহায্য করবেন। আবার যখন বউ ভুল করবে, তখন কঠিন কথাও বলবেন। এই কঠোরতার আড়ালেই আছে তার ভালোবাসা, যা গল্প এগোলে স্পষ্ট হবে। মধুমিতার চরিত্রটিও এবার অনেক বেশি ডায়নামিক। তিনি কেবল মিষ্টি মুখের বউ নন, তিনি নিজের কাজ, আত্মসম্মান এবং ভালোবাসার মধ্যেও ভারসাম্য খোঁজেন। তিনি রীতাকে সম্মান করতে চান, কিন্তু নিজের মতামতও জানাতে চান। তিনি সম্পর্কের ভেতর স্বাধীনতা ও শ্রদ্ধা—দুটোকেই জায়গা দিতে চান। এর ফলে রীতা ও তার সম্পর্ক কখনও মিষ্টি, কখনও নোনতা, কখনও খুব আবেগময়, আবার কখনও ঝড়ো হয়ে ওঠে। এই দুই নারীর পারস্পরিক সম্মান, শক্তি, দুর্বলতা, ভুল, শেখা—এসবই কাহিনিকে বাস্তব ও ছুঁয়ে যাওয়া করে তুলবে। দর্শকদের কাছে এই ফেরাটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা আবার একসঙ্গে দেখবেন দুই শক্তিশালী অভিনেত্রীকে। তাদের পুরনো রসায়ন এখনও দর্শকের মনে তাজা। এই নতুন গল্প সেই নস্টালজিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। দুই নারীর সম্পর্কের এই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা বোঝাপড়াই সিরিয়ালের প্রাণ। এখানে নেই শুধুই শাশুড়ি-বউমার সংঘাত; আছে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। রীতা যেমন শিখছেন নতুন প্রজন্মের ভাবনা, তেমনই মধুমিতা শিখছেন পুরনো প্রজন্মের অভিজ্ঞতা ও মূল্যবোধ। দুজন দুজনের জীবনকে সমৃদ্ধ করছেন, আবার দুজন দুজনের প্রতিচ্ছবি হয়ে যাচ্ছেন। সিরিয়ালটির সামাজিক প্রভাবও কম নয়। আজকের সমাজে বউ-মায়ের সম্পর্ক অনেকই ভেঙে যাচ্ছে ভুল বোঝাবুঝির কারণে, প্রত্যেকের নিজের অবস্থান হারানোর ভয় বা অতিরিক্ত প্রত্যাশার জন্য। নতুন গল্পটি দেখাবে কিভাবে দুই নারী একটু একটু করে একে অপরকে বোঝে, বদলায়, ভালোবাসে এবং সমঝোতার পথে এগিয়ে যায়। শুধুমাত্র সংঘাত নয়, সম্পর্কের সৌন্দর্য ও পরিপক্বতাও এখানে সমানভাবে তুলে ধরা হবে। সব মিলিয়ে, রীতা আসলে কোন সমীকরণকে পছন্দ করেন? মিষ্টি না নোনতা? উত্তরটি পরিষ্কার—তিনি দুটোই পছন্দ করেন। কারণ দুটো মিলে তৈরি হয় সম্পর্কের আসল স্বাদ। মিষ্টি দিয়ে শুরু, নোনতা দিয়ে কঠোরতা, মিষ্টি দিয়ে সম্পর্কের পুনর্মিলন, আর নোনতা দিয়ে বাস্তবতা। রীতা বাস্তব জীবনকে যেমন দেখেন, তেমনই গল্পে দেখানো হবে মুখোমুখি হওয়া দুই প্রজন্মের মনস্তত্ত্ব। তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পরিবারের সুরক্ষা, সম্পর্কের সম্মান, আর মনোভাবের উন্নতি। তাই কখনও তিনি মধুমিতাকে মেয়ের মতো আগলে রাখবেন, আবার কখনও ভুল দেখলে কঠিন ভাবে বলবেন—"না, এটা ঠিক নয়!" এই বহুমাত্রিক রসায়নই সিরিয়ালটিকে আবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবে।
আর দর্শকদের চোখ আটকে থাকবে—এই বিশেষ জুটির ওপর।