Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

ধনুষের জমাট উপস্থিতি, রণবীরের আগ্রাসী ধুরন্ধর বড়পর্দা জিতবে কে?

শুক্রবার প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বীহীন বাজারে মুক্তি পেতে চলেছে টিম ধুরন্ধর এর নতুন ছবি। তবে চ্যালেঞ্জ থাকছেই। আগের সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ধনুষ এবং কৃতি সেনন অভিনীত তেরে ইশ্ক মে এখনও বক্স অফিসে দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। ইতিবাচক রিভিউ এবং ক্রমবর্ধমান আয়ের গ্রাফ ছবিটিকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে, যা ধুরন্ধর এর পথ আরও কঠিন করে দিতে পারে।

ডিসেম্বরের সূচনাতেই সিনেমাপ্রেমীদের জন্য হাজির এক ভরপুর শুক্রবার। সারা বছর জুড়ে বিভিন্ন ভাষার একের পর এক ছবি মুক্তি পেলেও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যেন বিশেষ ভাবেই জমজমাট হয়ে উঠছে বড়পর্দা। কারণ ৫ ডিসেম্বর একসঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে পাঁচটি ভিন্ন ভাষার ছবি—হিন্দি, বাংলা, মালয়ালম, তামিল ও তেলুগু। এই ধরনের বহু-ভাষার মুক্তি একদিকে যেমন দর্শকের বিকল্প বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে বক্স অফিসে তৈরি করছে নতুন ধরনের প্রতিযোগিতা। বর্তমানে সিনেমা ব্যবসায় স্থিতাবস্থার অভাব, অনলাইনে কনটেন্টের দাপট এবং দর্শকের রুচির দ্রুত পরিবর্তন—সব মিলিয়ে ঠিক কোন ছবি কতটা সফল হবে, তা অনুমান করাও কঠিন। তবুও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন একটাই নাম—রণবীর সিংহের ‘ধুরন্ধর’।

গত কয়েক বছরে রণবীর সিংহের কেরিয়ারে স্থায়ী সাফল্য বলতে খুব বেশি কিছু নেই। বক্স অফিসের সূচকে তাঁর গ্রাফ ছিল ওঠানামা পূর্ণ। ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’ কিছুটা হলেও তাঁকে স্বস্তি দিয়েছিল, কিন্তু সেটি ছিল একটি বহুমাত্রিক স্টার-স্টাডেড প্রজেক্ট—যেখানে আলিয়া ভট্ট, কর্ণ জোহরের নির্দেশনা, এবং শক্তিশালী সাপোর্টিং কাস্ট বড় ভূমিকা পালন করেছিল। ফলে তাঁর ব্যক্তিগত স্টার-পাওয়ার নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল। সেই কারণেই ‘ধুরন্ধর’কে ঘিরে প্রত্যাশা অনেক বেশি—এই ছবিই কি রণবীরকে তাঁর আগের সাফল্যের জৌলুস ফিরিয়ে দিতে পারবে?

এদিকে আগের সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ধনুষ ও কৃতি সেনন অভিনীত ‘তেরে ইশ্ক মেঁ’ এখনও বক্স অফিসে ভালোভাবেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ইতিবাচক রিভিউ, মুখে-মুখে প্রশংসা এবং শক্তিশালী অভিনয়—সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়েও ছবির আয় ঊর্ধ্বমুখী। তাই ‘ধুরন্ধর’-এর সামনে এটি নিঃসন্দেহে একটি কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করছে। অনেকেই মনে করছেন, ‘ধুরন্ধর’ যদি প্রথম তিন দিন দর্শকের মন জয় করতে না পারে, তবে ‘তেরে ইশ্ক মেঁ’-এর থেকে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে না।

তবে ‘ধুরন্ধর’-এর ট্রেলারে রণবীরের অ্যাকশন অবতারের ঝলক ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট আলোড়ন ফেলেছে। গুপ্তচরের চরিত্রে তাঁর শরীরী ভাষা, স্টাইল ও ইনটেন্স লুক দর্শকদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। ছবির পরিচালক আদিত্য ধর—যিনি ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’–এর মাধ্যমে নজর কেড়েছিলেন—তাই পরিচালনায়ও প্রত্যাশা কম নয়।

এই সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে আরও চারটি ছবি—তেলুগুর ‘অখণ্ডা ২: তাণ্ডবম’, বাংলা ছবি ‘রাপ্পা রায় ও ফুলস্টপ ডট কম’, মালয়ালমের ‘লকডাউন’, এবং ‘পোঙ্গালা’। প্রতিটি ছবিরই নিজস্ব দর্শকশ্রেণি রয়েছে। দক্ষিণের ছবিগুলোর প্রতি সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, তাতে এগুলিও উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ করতে পারে। বাংলা দর্শকদের জন্য এ সপ্তাহের একমাত্র নতুন ছবি ‘রাপ্পা রায় ও ফুলস্টপ ডট কম’—যার প্রতি পরিবারমুখী দর্শকদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে মালয়ালম ছবির কনটেন্ট-ভিত্তিক জনপ্রিয়তা ‘লকডাউন’ ও ‘পোঙ্গালা’-কে একটি প্রাথমিক সুবিধা দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে ৫ ডিসেম্বরের শুক্রবারটি হতে চলেছে এক রঙিন, বহুভাষিক লড়াই। তবে ট্রেড মহলের মত—প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও আসল নজর থাকবে ‘ধুরন্ধর’-এর দিকেই। এখন দেখার—রণবীর সিংহ কি দর্শকের হৃদয় জয় করতে পারেন, নাকি অন্য কোনও ছবি চমক দেখিয়ে এগিয়ে যাবে!

 

 

 

 

 


ধুরন্ধর: রণবীর সিংহের প্রত্যাবর্তনের বাজি

আদিত্য ধর পরিচালিত ‘ধুরন্ধর’ নিছক একটি অ্যাকশন ফিল্ম নয়—বরং এটি একজন ভারতীয় গুপ্তচরের জীবনের রোমাঞ্চ, ঝুঁকি আর দায়িত্বের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। আদিত্য ধরের নাম এলেই অনেকেই তার রাজনৈতিক ঝোঁক, প্রচারধর্মী বিষয়বস্তুর সিনেমা তৈরির ইতিহাসের কথা টেনে আনেন। কিছু মহলে পরিষ্কার অভিযোগ—তিনি বিজেপি-ঘনিষ্ঠ বলেই তাঁর ছবিতে একপেশে জাতীয়তাবাদী ছোঁয়া থাকে। আর তাই ‘ধুরন্ধর’ নিয়েও বিতর্ক বাঁধতে বেশি সময় লাগেনি।

কিন্তু বিতর্কই যে আলোচনার জন্ম দেয়, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই সিনেমাটি নিয়েই বেশি কথা হচ্ছে, অন্য কোনও মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নয়। অগ্রিম টিকিট বিক্রিতেই ৪.৫ কোটি টাকার কাছাকাছি আয় করে ফেলেছে ‘ধুরন্ধর’। কলকাতার বেশ কয়েকটি মাল্টিপ্লেক্সে টিকিটের দাম ৫০০ টাকারও বেশি—এটা দর্শকের আগ্রহেরই ইঙ্গিত।

এই ছবিতে রণবীরের পাশাপাশি রয়েছেন—

  • অর্জুন রামপাল

  • সঞ্জয় দত্ত

  • অক্ষয় খন্না

  • আর. মাধবন

  • সারা অর্জুন

তারা প্রত্যেকেই ছবিকে বাড়তি ওজন দিয়েছেন। বহুদিন পর রণবীরকে আবার সেই পুরনো স্টাইলিশ, স্মার্ট, মুদ্রাবহুল অ্যাকশন অ্যাভাটারে দেখতে চলেছে দর্শক। রণবীরও জানেন এবার বাজি বড়—ব্যর্থতার সুযোগ নেই। তাই প্রচারপর্বেও তিনি ব্যাপক সক্রিয় ছিলেন, বিভিন্ন রিয়্যালিটি শো থেকে শহর সফর—সব জায়গাতেই 'ধুরন্ধর'কে প্রচারের কোনও সুযোগ হাতছাড়া করছেন না।

ট্রেড অ্যানালিস্টদের মতে, যদি মুখে-মুখে প্রচার ভাল হয়, তাহলে ‘ধুরন্ধর’ লম্বা দৌড় দিতে পারে এবং ডিসেম্বরের সবচেয়ে বড় ব্লকবাস্টার হিসেবেও উঠে আসতে পারে।


অখণ্ডা ২: তাণ্ডবম — আবার ফিরছে বালকৃষ্ণের তাণ্ডব

২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অখণ্ডা’ তেলুগু ইন্ডাস্ট্রিতে রীতিমতো ঝড় তুলেছিল। পরিচালক বয়াপতি সিনু এবং অভিনেতা নন্দমুরি বালকৃষ্ণ জুটি তখন ছিল ট্রেন্ডিং টপিকে। ‘অখণ্ডা’ ছিল এমন এক ছবি যেটি অন্ধ ভাষাভিত্তিক সীমা পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিল। সেই জনপ্রিয়তার জোরেই তৈরি হল দ্বিতীয় পর্ব—‘অখণ্ডা ২: তাণ্ডবম’

বালকৃষ্ণের চরিত্রটি মূলত এক যোগীর, যিনি এক গ্রামের নিরপরাধ মানুষদের রক্ষার জন্য এক দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন। প্রথম ছবিতে যেমন তীব্র অ্যাকশন দেখা গিয়েছিল, দ্বিতীয় পর্বে তার মাত্রা আরও বাড়বে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তামিল ও তেলুগু বাজারে ইতিমধ্যেই ছবিটি নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে।

news image
আরও খবর

প্রশ্ন একটাই—হিন্দি অঞ্চলেও কি ‘অখণ্ডা ২’ পূর্বের মতোই অ্যাকশন–ঝড় তুলতে পারবে?


রাপ্পা রায় ও ফুলস্টপ ডট কম — সুযোগের গল্প থেকে সেলুলয়েডে

বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের জন্য এ সপ্তাহের একমাত্র স্বস্তির খবর—মুক্তি পাচ্ছে ‘রাপ্পা রায় ও ফুলস্টপ ডট কম’। সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় কমিক বইয়ের গল্প থেকে উঠে আসা এই চরিত্রকে কেন্দ্র করে নির্মিত হচ্ছে ছবিটি। রাপ্পা রায়—যিনি ছোটদের কাছে জনপ্রিয় এক গোয়েন্দা, আবার প্রাপ্তবয়স্ক দর্শকের কাছেও নস্টালজিয়ার মিশেলে প্রিয় মুখ।

ছবিতে অভিনয় করেছেন—

  • রজতাভ দত্ত

  • শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়

  • সৌরভ দাস

  • অলিভিয়া সরকার

  • অর্পণ রায়

সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—মুখ্য চরিত্রটি প্রথমে করছিলেন সৌম্য মুখোপাধ্যায়, কিন্তু একমাস শুটিংয়ের পর তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। পরিবর্তে টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ অর্পণ রায়কে নেওয়া হয়। ফলে অনেকের মতে, এ ছবিটি অর্পণের কাছে কেরিয়ারের বড় পরীক্ষা।

বাংলা ছবির বাজার এই মুহূর্তে খুবই চ্যালেঞ্জিং, কারণ গত মাসেই বহু ছবি মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু সেগুলির প্রায় কোনওটিই তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে ‘রাপ্পা রায় ও ফুলস্টপ ডট কম’ ঠিক কতটা দর্শক টানতে পারে, সেটাই দেখার।


লকডাউন — এক চরিত্রের ছবি, এক নারীর লড়াই

মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রি গত কয়েক বছর ধরে প্রমাণ করে চলেছে—বড় বাজেট নয়, বড় গল্পই আসল। সেই ধারাকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ‘লকডাউন’। ছবিটি ফিচার ফিল্ম হলেও শুট করা হয়েছে ডকুমেন্টারি স্টাইলে। পুরো ছবিতে মাত্র একটি চরিত্র—অভিনেত্রী অনুপমা পরমেশ্বরম

কোভিড–যুগে লকডাউনের সময় একজন নারীর মানসিক লড়াই, ভয়, একাকিত্ব, হতাশা এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে ছবিটি। ট্রেলার ইতিমধ্যেই ৪০ লক্ষের বেশি ভিউ পেয়েছে। মালয়ালম ছবির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে দেখে ধারণা করা হচ্ছে—এই ছবি দক্ষিণ ভারতে ভাল ব্যবসা করতে পারে।


পোঙ্গালা — মালয়ালমের সরলতায় গল্পের অনন্য শক্তি

মালয়ালম ছবির সুনাম আজ সারা দেশেই। গল্প বলার স্টাইল, বাস্তবতা, অভিনয়—সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক বছরে বেশ কয়েকটি ছবি জাতীয় স্তরে হইচই ফেলে দিয়েছে। সেই ধারারই নতুন সংযোজন ‘পোঙ্গালা’

স্বল্প বাজেটের হলেও ছবির চিত্রনাট্য বেশ গভীর। মানুষের আবেগ, সম্পর্ক, সামাজিক বাস্তবতা—এসব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে গল্পটি। ‘পোঙ্গালা’ প্রধানত কনটেন্ট–ড্রিভেন দর্শকদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে।


বক্স অফিসের সম্ভাবনা: কে এগিয়ে?

সপ্তাহের বিগ–রিলিজ হিসেবে ‘ধুরন্ধর’ই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিদ্বন্দ্বী ছবিগুলো থাকলেও, তাদের অধিকাংশই নির্দিষ্ট ভাষাভিত্তিক বাজারে সীমাবদ্ধ। ফলে সর্বভারতীয় স্কেলে রণবীরই এগিয়ে শুরু করছেন।

যদিও মাথায় রাখতে হবে—

  • ‘তেরে ইশ্ক মেঁ’ এখনও দ্বিতীয় সপ্তাহে স্থির আছে

  • মালয়ালম ছবির কনটেন্ট দর্শকের মন ভালো করতে পারে

  • তেলুগু–তামিল বাজারে ‘অখণ্ডা ২’ হতে পারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী

তবুও ট্রেড মহলের দাবি—
“শুক্রবারের ময়দান মূলত ধুরন্ধরের।”


শেষ কথা

ডিসেম্বরের প্রথম শুক্রবার সিনেমা–মহল জমজমাট। দর্শকের হাতে প্রচুর বিকল্প, প্রতিটি ছবিরই রয়েছে আলাদা আবেদন। রণবীরের অ্যাকশন–ঝড়, মালয়ালমের গভীর গল্প বলার শক্তি, বাংলা ছবির নস্টালজিয়া—সব মিলিয়ে এই সপ্তাহটি হয়ে উঠতে পারে বছরের অন্যতম বর্ণময় মুক্তিসপ্তাহ।

এখন দেখার—
কোন ছবি দর্শকের মন জিতে নেয় আর কোনটি হারিয়ে যায় ভিড়ে।

Preview image