Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

বাড়িতে বসেই খেলাও দেখব বিশ্বকাপ গ্রুপবিন্যাসের আগের দিন মেসির মন্তব্যে তুঙ্গে জল্পনা

শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ফুটবল বিশ্বকাপের গ্রুপবিন্যাস। তার ঠিক আগের দিনই লিয়োনেল মেসির এক মন্তব্যে তোলপাড় ফুটবল দুনিয়া। মেসি জানিয়েছেন, এই বিশ্বকাপে তাঁর খেলা এখনও নিশ্চিত নয়। পরিস্থিতি অনুকূল না হলে হয়তো তিনি বাড়িতে বসেই টিভিতে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখবেন। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে ভক্তমহলে শুরু হয়েছে জল্পনার ঝড়—তাহলে কি মেসিকে আর দেখা যাবে না বিশ্বকাপের মঞ্চে?

ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বহুল প্রতীক্ষিত গ্রুপবিন্যাস, এবং সেই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সমর্থকদের আশা–উত্তেজনার পারদ স্বাভাবিকভাবেই ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু তার ঠিক আগের দিনেই ফুটবল দুনিয়ায় নেমে এলো এক অচিন্তনীয় ঝড়—যার কেন্দ্রবিন্দু আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা ফুটবলার লিয়োনেল মেসি। তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা একটি মন্তব্য মুহূর্তে বদলে দিল বিশ্বকাপ–পূর্ব আবহাওয়া, বাড়িয়ে দিল উদ্বেগ, আর শুরু করল তীব্র জল্পনা-কল্পনা। প্রশ্ন একটাই—মেসি কি সত্যিই পরের বিশ্বকাপে খেলবেন না?

‘ইএসপিএন’-এর দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছেন, আসন্ন বিশ্বকাপে তাঁর খেলা এখনো “নিশ্চিত নয়।” এই একটি বাক্যই আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করেছে। এতদিন ধরে অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপই হতে পারে মেসির ক্যারিয়ারের শেষ লড়াই। তিনি হয়তো আরেকবার আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্ব মঞ্চে তার সোনালি অধ্যায়ের পরিণতি টানবেন। কিন্তু মেসির বক্তব্যে স্পষ্ট—তিনি নিজেও পুরোপুরি জানেন না, তিনি খেলবেন কি না।

মেসি হালকা মজার সুরে বলেছেন, “সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারে—আমি হয়তো বাড়িতে বসে টিভিতে বিশ্বকাপ দেখব!” কিন্তু এই কথাটি যতটা মজার ভঙ্গিতে বলা, ভক্তদের কাছে তা ততটাই উদ্বেগের। কারণ যে মানুষটিকে কোটি কোটি ভক্ত বিশ্বকাপ মাঠে আবার দেখতে চায়, তাঁর মুখ থেকেই যখন শোনা যায় এমন অনিশ্চিত বার্তা, তখন তা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলবেই।

অনেকেই মনে করছেন, মেসি হয়তো নিজের শরীর, বয়স, ফিটনেস এবং পারফরম্যান্স বিচার করেই সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন। ফুটবল বিশ্লেষকদের কথায়—এখনও পর্যন্ত মেসির খেলা, পাসিং, শটিং, গতি, মাঠে উপস্থিতি—সবই যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক। তাই হঠাৎ করে তাঁর এমন মন্তব্য অনেককেই হতচকিত করেছে।

২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে মেসি তাঁর ক্যারিয়ারের পঞ্চম বিশ্বকাপে নেমেছিলেন এবং সেখানেই অর্জন করেন তাঁর স্বপ্নের ট্রফি—FIFA World Cup। আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি যা করেছেন, তা বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেই কারণেই তাঁর ষষ্ঠ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নিয়েই উত্তেজনা ছিল চরমে। কিন্তু তাঁর মন্তব্যেই যেন ভবিষ্যত্‌ এখন ধোঁয়াশায়।

মেসি সাক্ষাৎকারে বলেন, “এটা নিয়ে আমাদের দলে অনেক আলোচনা হয়েছে। স্কালোনি ব্যাপারটা বোঝেন। আমিও চাই খেলতে, কারণ এটি আমার স্বপ্ন। তবে পরিস্থিতি সবসময় আমাদের হাতে থাকে না।”
এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, মেসি স্বপ্ন দেখেন খেলতে, কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছেন না—যা ভক্তদের মনে গভীর হতাশা ও কৌতূহল তৈরি করেছে।

মেসির এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে আগুনের মতো আলোচনা। কেউ মনে করছেন, মেসি মানসিক চাপ কমাতে এই ধরনের মন্তব্য করছেন। কেউ মনে করছেন, তিনি দীর্ঘ মৌসুমের পর নিজেকে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করতে আরও সময় চাইছেন। আবার অনেকেই আশাবাদী—মেসি কখনোই আর্জেন্টিনাকে মাঝমাঠে রেখে যেতে পারেন না, তিনি নিশ্চয়ই খেলবেন।

তবে একথা অস্বীকার করা যায় না—মেসির উপস্থিতি মানেই দলের অন্য খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়া। তাঁর নেতৃত্ব, গেম সেন্স, অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা তাঁকে ছাড়া মাঠে নামুক, এটা কল্পনাতেই কঠিন।

সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ গ্রুপবিন্যাসের আগে মেসির এই মন্তব্য নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে সমর্থকদের মনে দুশ্চিন্তা, অন্যদিকে মেসির কথার ভঙ্গি তাদের মনে রেখে দিয়েছে একটু হলেও আশার আলো। ফলে এখন নজর থাকবে সময়ের দিকে—শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেন ফুটবলের জাদুকর।

ইএসপিএন-এর সাক্ষাৎকারে মেসির মন্তব্যেই আলোড়ন

‘ইএসপিএন’-এর এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মেসিকে প্রশ্ন করা হয় তাঁর পরবর্তী বিশ্বকাপ পরিকল্পনা নিয়ে। তিনি অত্যন্ত শান্তভাবে এবং স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলেন—

“এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। স্কালোনি বিষয়টা খুব ভালোভাবে বোঝেন। আমরা অনেক কথাই বলেছি। আশা করি খেলতে পারব। পরের বিশ্বকাপে খেলা আমার একটা স্বপ্ন। তবে সব কিছু যে আমার হাতে থাকবে, তা নয়। সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারে—আমি হয়তো বাড়িতে বসে টিভিতে খেলা দেখব। তবে সেটাও আমার কাছে আলাদা অভিজ্ঞতা হবে।”

মেসির মুখ থেকে এই কথাগুলো বের হতেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় তোলপাড়। লাখ লাখ সমর্থক প্রশ্ন তুলছেন—মেসি কি তাহলে আর পরের বিশ্বকাপে খেলবেন না? আর্জেন্টিনা দল কি এবারও তাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে? নাকি বয়স, স্বাস্থ্যের গতি, পারফরম্যান্স—এসব বিষয় মাথায় রেখেই মেসি নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন?

২০২২ সালের সাফল্য—মেসির জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন

২০২২ কাতার বিশ্বকাপে মেসি তাঁর ক্যারিয়ারের পঞ্চম বার খেলতে নেমে অর্জন করেছিলেন জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ট্রফি—FIFA World Cup। দীর্ঘ ফুটবল জীবনে অসংখ্য পুরস্কার জিতেও তাঁর সংগ্রহে বিশ্বকাপ ছিল না। সেই শূন্যস্থান পূরণ হয়েছিল চোখধাঁধানো ফুটবল ও অসাধারণ নেতৃত্বে।
কাতারে মেসির পারফরম্যান্স, গোল, অ্যাসিস্ট—সব মিলিয়ে সেটি ছিল যেন তাঁর ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ প্রদর্শন। আর্জেন্টিনা দলও যেন এক নতুন আবেগকে নিজের সঙ্গে বয়ে নিয়ে মাঠে নেমেছিল। পরপর ম্যাচে শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে তারা পৌঁছে যায় ফাইনালে। আর সেখানে ড্রামাটিক টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা হারায় ফ্রান্সকে—যা ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম নাটকীয় ফাইনাল হিসেবে বিবেচিত হয়।

এবারের বিশ্বকাপ হলে সেটি হবে মেসির ষষ্ঠ বিশ্বকাপ অভিযাত্রা। আর সেই কারণেই তাঁর অংশগ্রহণকে ঘিরে জল্পনা এতটাই বেশি।

অভিজ্ঞতা ও আবেগ—আর্জেন্টিনার সঙ্গে মেসির বন্ধন

সাক্ষাৎকারে মেসি আরও বলেন—

“বিশ্বকাপ সব ফুটবলারের কাছেই একটি আলাদা আবেগ। কিন্তু আর্জেন্টিনার জন্য এই আবেগ আরও গভীর। আমরা এক বিশেষ অনুভূতির মধ্যে বাঁচতে ভালোবাসি। দেশের মানুষের আনন্দ, দুঃখ, উৎসব—সবই ফুটবলকে কেন্দ্র করে।”

আর্জেন্টিনার ফুটবল ঐতিহ্য সব সময়ই আবেগ ও গর্বের কেন্দ্রবিন্দু। ডিয়েগো মারাদোনা থেকে শুরু করে বাতিক্রমধর্মী ফুটবল সংস্কৃতি—মেসির মতো খেলোয়াড়েরা সেই ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন। তাই মেসিকে ছাড়া বিশ্বকাপ মানে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের কাছে এক অদ্ভুত শূন্যতা।

news image
আরও খবর

পরবর্তী বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সম্ভাবনা—মেসির আত্মবিশ্বাস

মেসি বিশ্বাস করেন, পরবর্তী বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনা অন্যতম সম্ভাবনাময় দল হবে। তাঁর কথায়—

“আমাদের দলে অসাধারণ কিছু খেলোয়াড় রয়েছে। তারা বছরের পর বছর নিজেদের প্রমাণ করেছে। স্কালোনি আসার পর থেকে দলের উত্তেজনা ও আত্মবিশ্বাস দুই-ই বেড়েছে। প্রত্যেকেই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখে। মানসিকভাবে সবাই শক্তিশালী। তারা সব ট্রফিই জিততে চায়।”

মেসির বিশ্বাস, আর্জেন্টিনার বর্তমান দল বিশ্বকাপ জেতার সামর্থ্য রাখে। তবে তিনি সতর্কও করলেন—

“আমরা আবার বিশ্বকাপ জিততে পারি, সেই দল আমাদের আছে। তবে অনেক ছোটখাটো বিষয় ঠিক করা প্রয়োজন। ছোট সুযোগ হাতছাড়া হলেই বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে যেতে হয়। এক শট পোস্টে লাগলেই বা পেনাল্টি বাইরে গেলেই শেষ।”

এই কথাগুলোই বুঝিয়ে দেয়—যদিও মেসি দলকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, তবুও আন্তর্জাতিক ফুটবলের অস্থিরতা সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ সজাগ।

টাইব্রেকারের স্মৃতি—নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের বিপক্ষে কঠিন লড়াই

২০২২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দু’টি নকআউট ম্যাচ পেনাল্টি শুটআউটে জিতেছিল। নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের বিপক্ষে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ দু’টিই শেষ পর্যন্ত গড়ায় টাইব্রেকারে। মেসি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন—

“আমরা পেনাল্টিতে জিতলেও দুটো ম্যাচেই আমরা প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো খেলেছি। আর আমাদের কাছে রয়েছে ‘দিবু’—গোলকিপার মার্তিনেস, যে বিশ্বমানের খেলোয়াড়।”

‘দিবু’ মার্তিনেসের বীরত্ব সেই সময় বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল। তাঁর সেভ, মনস্তাত্ত্বিক খেলা—সব কিছুই আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথ সুগম করেছিল।

তাহলে কি সত্যিই মেসি খেলবেন না?

মেসির মন্তব্যে যতই অনিশ্চয়তা দেখা দিক, বাস্তবে অনেক ফুটবল বিশ্লেষক মনে করছেন—মেসি এখনও খেলার মতো ফিট, এবং তাঁর অভিজ্ঞতা আর্জেন্টিনার জন্য অত্যন্ত জরুরি। বয়স বাড়লেও তাঁর পাসিং, ভিশন, ম্যাচ রিডিং—সবকিছুই এখনও আগের মতোই তীক্ষ্ণ।

অনেকেই মনে করছেন, মেসি হয়তো চাপে থাকতে চান না। তিনি চান ধীরে সুস্থে নিজের ফর্ম, ফিটনেস এবং মানসিক প্রস্তুতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে। তাঁর কথার ভঙ্গিও ঠিক সেরকমই, যেখানে তিনি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দরজা খুলে রেখেছেন, বন্ধ করেননি।

সার্বিকভাবে কী বোঝা গেল?

১. মেসি বিশ্বকাপে খেলবেন কিনা—এখনও নিশ্চিত নন।
২. তিনি স্কালোনির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
3. তিনি আশা করছেন খেলতে পারবেন, কিন্তু গ্যারান্টি দিচ্ছেন না।
4. খেলার পাশাপাশি তিনি আর্জেন্টিনার পরবর্তী বিশ্বকাপ সম্ভাবনা নিয়েও আত্মবিশ্বাসী।
5. ছোট ভুল বড় ক্ষতি করতে পারে—সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ফুটবল দুনিয়ায় প্রতিক্রিয়া

মেসির মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই সমর্থকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া:

  • কেউ হতাশ, কারণ তাঁরা মেসিকে আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখতে চান।

  • কেউ মনে করছেন মেসি মিডিয়ার প্রেশার কমাতে চাইছেন।

  • আবার অনেকে বলছেন, মেসি হয়তো নিজের শরীর-মনকে প্রস্তুত হতে দিচ্ছেন।

তবে এক জিনিস নিশ্চিত—যে দিন পর্যন্ত মেসি নিজেই ঘোষণা না করছেন যে তিনি আর খেলছেন না, ততদিন আশা জাগতেই থাকবে।

Preview image