ভারতীয় ক্রিকেটে বড় আলোচনার জন্ম দিলেন বিরাট কোহলি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন যে ভবিষ্যতে তিনি ভারতের হয়ে শুধুমাত্র একটি ফরম্যাটেই খেলবেন। যদিও কোন ফরম্যাটটি তিনি অগ্রাধিকার দেবেন তা সরাসরি উল্লেখ করেননি, তবে তাঁর বক্তব্যে ইঙ্গিত স্পষ্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের শক্তি, ফোকাস ও মানসিক সতেজতা বজায় রাখতে তিনি একাধিক ফরম্যাটে আর খেলতে চান না। কোহলি বলেন, এটাই সবসময় আমার পথে চলার ধরন। আমি যেটিতে নিজেকে সেরা মনে করি, সেটাতেই খেলব।” এই মন্তব্যের পর ক্রিকেট মহলে নানা ব্যাখ্যা ও জল্পনা চলছে। কেউ মনে করছেন কোহলি টেস্ট ক্রিকেটে ফোকাস করতে চান, আবার কেউ বলছেন তিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজের অবদান ধরে রাখতে চাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যস্ত সূচি, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট, মানসিক ক্লান্তি এবং ফিটনেস ম্যানেজমেন্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটে কোহলির এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই বাস্তবসম্মত এবং পেশাদারিত্বপূর্ণ বলছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে তাঁর সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ দলে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এখন সকলের নজর কোন ফরম্যাটে খেলবেন কোহলি এবং তাঁর এই সিদ্ধান্ত ভারতের পরিকল্পনাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে।
ভারতীয় ক্রিকেটে আলোচনা, বিতর্ক, উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে আবার উঠলেন বিরাট কোহলি। আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, বিশ্বের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর প্রেরণা—সেই কোহলি এবার এক বড় ঘোষণা দিলেন। তাঁর কথায়—
“আমি ভারতের হয়ে এখন থেকে একটাই ফরম্যাট খেলব। এভাবেই সবসময় চলবে।”
এই মন্তব্য ক্রিকেট মহলে ঝড় তুলেছে। কারণ বিরাট কোহলি শুধু একজন ব্যাটসম্যান নন—তিনি একটি যুগের প্রতিনিধি। ভারতের সাফল্য, ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা, বিশ্বমঞ্চে আধিপত্য—সবকিছুই কোহলির নামের সঙ্গে জড়িত। তাঁর এই ঘোষণা ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ, নির্বাচনী নীতি, আইসিসি ইভেন্টে দলের পরিকল্পনা—সবকিছুকেই প্রভাবিত করতে পারে। এটি কেবল একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের 'ভারসাম্যহীন সূচি' এবং 'খেলোয়াড়দের মানসিক চাপ'-এর প্রতি এক তীক্ষ্ণ বার্তা। কোহলির এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের বহু ক্রিকেটারের জন্য একটি নজির স্থাপন করতে চলেছে।
এই প্রবন্ধে আমরা বিশদে আলোচনা করছি—কোহলির এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে, তাঁর পছন্দের ফরম্যাট কোনটি হতে পারে, ভারতের ভবিষ্যৎ দলে এর প্রভাব কী, এবং ভারতীয় ক্রিকেটে এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল কী হতে পারে।
সাক্ষাৎকারে বিরাট কোহলি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেন—
“আমি সবসময়ই জানতাম—আমি একাধিক ফরম্যাটে দীর্ঘ সময় খেলতে চাই না। আমি যেখানে নিজেকে সেরা মনে করি, সেই ফরম্যাটেই খেলব।”
কোহলির এই বাক্যটির তিনটি বড় বার্তা আছে, যা তাঁর ব্যক্তিগত দর্শন (Personal Philosophy) এবং শারীরিক ব্যবস্থাপনার (Physical Management) সংমিশ্রণ:
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রিকেটারদের সামনে যে বিশাল চাপ তৈরি হয়েছে—রোজ ট্রাভেল, নানা দেশে টেস্ট, ওডিআই, টি–২০, আইপিএল, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ—এগুলো শারীরিক চাপ বাড়িয়েছে এবং মানসিক ক্লান্তি (Mental Fatigue) তৈরি করেছে। কোহলি এই অতিরিক্ত বোঝা আর বইতে চান না।
তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, "আমি যেখানে দেশের জন্য সর্বোচ্চ পারফর্ম করতে পারি, সেখানেই থাকব।" কোহলির পুরো ক্যারিয়ারই প্রমাণ করে তিনি ফোকাস এবং ইনটেনসিটি-তে বিশ্বাসী। তিন ফরম্যাটে ফোকাস ভাগ করে দেওয়ার চেয়ে এক ফরম্যাটে নিজেকে উজাড় করে দিতে চান তিনি।
তিনি বারবার বলেছেন যে সকলের মতো “অতিরিক্ত প্রস্তুতি”, “লম্বা নেট সেশন” তাঁর প্রয়োজন হয় না। তিনি বিশ্বাস করেন 'মানসিক সতেজতা' হল তাঁর সেরা প্রস্তুতি। এক ফরম্যাটে খেলা তাঁকে সেই সতেজতা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেবে।
এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ নয়। এর পেছনে বহু কৌশলগত এবং ব্যক্তিগত কারণ রয়েছে।
| কারণ | বিশ্লেষণ | প্রভাব |
| ১. আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচি | বছরে প্রায় ৭০+ আন্তর্জাতিক ম্যাচ, আইপিএল, এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ভিড়ে একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে সর্বোচ্চ মানের পারফর্ম করা অসম্ভব। | শারীরিক বার্নআউট (Burnout) এড়ানো। |
| ২. বয়স ও ফিটনেস ব্যবস্থাপনা | বিরাট কোহলি এখন ৩৬। এই বয়সে ফিটনেস ধরে রাখতে গেলে শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে এবং কম ফরম্যাট খেলে বেশি মানসিক সতেজতা রাখতে হবে। | ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করা (Longevity)। |
| ৩. মানসিক চাপ | বিশ্বকাপ, আইপিএল, বাণিজ্যিক প্রচার, ভ্রমণ—সব মিলিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ওপর মানসিক চাপ সীমাহীন। | চাপমুক্ত হয়ে পারফরম্যান্সে মনোযোগ দেওয়া। |
| ৪. ব্যক্তিগত জীবনে সময় | পরিবার, সন্তানের বড় হওয়া, ব্যক্তিগত সময়—এগুলো তাঁর কাছে এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক ফরম্যাটের ব্যস্ততা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে সময় কমিয়ে দিচ্ছিল। | ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে ভারসাম্য (Work-Life Balance)। |
Export to Sheets
এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। কোহলির ট্র্যাক রেকর্ড এবং তাঁর বর্তমান ক্যারিয়ারের লক্ষ্য বিবেচনা করলে দুটি ফরম্যাটই আলোচনার কেন্দ্রে আসে:
অনেকেই মনে করেন—কোহলি টেস্ট ক্রিকেটকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।
যুক্তি: তাঁর অধিনায়কত্বে ভারত বিশ্বের সেরা টেস্ট দল ছিল। টেস্টেই তিনি সবচেয়ে ধারাবাহিক ও আগ্রাসী। টেস্ট ক্রিকেটের স্থিতিশীলতা তাঁর খেলার ধরনের সঙ্গে মানানসই। WTC-তে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাঁর মধ্যে থাকতে পারে।
এটাও খুব সম্ভব, কারণ কোহলি ওডিআইয়ের ‘রাজা’ হিসেবে পরিচিত।
যুক্তি: ওডিআইয়ে সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি শতক এবং ম্যাচ জেতানোর অভূতপূর্ব রেকর্ড তাঁর। আগামীতে বড় ICC ওডিআই টুর্নামেন্ট থাকলে তিনি দলকে নেতৃত্ব দিতে চাইতে পারেন।
এই ফরম্যাটে খেলার সম্ভাবনা খুব কম। তিনি নিজেই বলেছেন—টি–২০ থেকে দূরে থাকতে চান মানসিকভাবে ফ্রেশ থাকার জন্য।
বিশ্লেষকদের মতে— কোহলি টেস্ট বা ওডিআই—এই দুইয়ের যে কোনো একটিতে খেলবেন। তাঁর ফোকাস এখন হবে কিংবদন্তি হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে নিজের আসন আরও পাকাপোক্ত করা, অথবা ওডিআই ক্রিকেটে নিজের রেকর্ডগুলোকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়া।
কোহলির এই সিদ্ধান্ত ভারতের ব্যাটিং অর্ডার, নির্বাচন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনায় বিশাল পরিবর্তন আনবে।
| পরিস্থিতি | ভারতের দলে প্রভাব | সম্ভাব্য সুবিধা | সম্ভাব্য ঝুঁকি |
| কোহলি শুধু টেস্ট খেললে | ওডিআই–তে নতুন চার নম্বর দরকার, নেতৃত্ব কাঠামোতে পরিবর্তন। | জেসওয়াল, গিল, সূর্যকুমারদের মতো তরুণরা সুযোগ পাবে, বেঞ্চ স্ট্রেংথ বাড়বে। | বড় টুর্নামেন্টে অভিজ্ঞতার ঘাটতি, মিডল অর্ডারে অস্থিরতা। |
| কোহলি শুধু ওডিআই খেললে | টেস্ট দলে বড় শূন্যতা তৈরি হবে (৩ বা ৪ নম্বর)। | ওডিআইতে তাঁর ধারাবাহিকতা দলীয় জয়ের নিশ্চয়তা দেবে। | টেস্ট দলে বড় ইনিংস নির্মাণকারী ও মানসিক দৃঢ়তার অভাব। |
Export to Sheets
যদি কোহলি ২০২৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ওডিআই খেলেন, তবে তা ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে। এর পর তিনি শুধু টেস্টে মনোনিবেশ করতে পারেন।
কোহলির এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সূচির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন: “এই সিদ্ধান্ত কোহলির ক্যারিয়ারকে আরও দীর্ঘায়িত করবে (Longevity)। এটি আধুনিক ক্রিকেটে একটি ‘পাওয়ার মুভ’ (Power Move), যেখানে খেলোয়াড়রা নিজেদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।”
সাবেক ক্রিকেটারদের মত: “তিনি যা চান, সেটাই তাঁর করা উচিত। এক ফরম্যাটেই তিনি ম্যাচ উইনার এবং ভারতীয় ক্রিকেট তাঁর অবদান ভুলবে না।”
বিশ্বমিডিয়া: “ক্রিকেটের আকাশে এক যুগের সমাপ্তি শুরু হলো। তারকাদের নিজেদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত।”
| দিক | সুফল (Benefits) | কুফল (Drawbacks) |
| খেলোয়াড় | কোহলি আরও ৩–৪ বছর ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবেন, মানসিক ক্লান্তি কমবে। | তাঁর মতো অভিজ্ঞতা ও দৃঢ়তার অভাব অনুভব করবে দল। |
| দলীয় কৌশল | তিন ফরম্যাটে তরুণরা সুযোগ পাবে, ফিটনেস ও প্রস্তুতি উন্নত হবে। | বড় ম্যাচে তাঁর অনুপস্থিতি দলকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে, নির্বাচনী নীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। |
| ক্রিকেট সূচি | অন্যান্য তারকাদের জন্যও ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথ খুলবে। | ভারতের ব্যাটিং অভিজ্ঞতা কমবে। |
Export to Sheets
কোহলির এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা করে দিল। এই সিদ্ধান্ত ইঙ্গিত দেয় যে, আধুনিক ক্রিকেটে 'পেশাদারিত্ব' মানে সব ফরম্যাটে খেলা নয়, বরং 'পছন্দের ফরম্যাটে সর্বোচ্চ মানের পারফর্ম করা'। কোহলি আবারও দেখালেন তিনি নিজের পথেই হাঁটেন।