Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

পাকিস্তানের হামলা ব্যর্থ উরি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রক্ষা করলেন উনিশ সিআইএসএফ জওয়ান

সীমান্তে গোলাগুলি চলার মধ্যেই উরি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ সদস্যরা অসাধারণ সাহস দেখিয়ে দুশো পঞ্চাশ বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করে আনেন তাঁদের এই মানবিক সাহসিকতাকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছে

কাশ্মীরের কঠিন পরিস্থিতে অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন যে নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহ ভারতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃঢ়তা ও পেশাদারিত্বকে আবারও সামনে এনেছে তা হল উরির জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রকে ঘিরে পাকিস্তানের ধারাবাহিক হামলার পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়ার অসাধারণ সাফল্য। পাকিস্তান সেই সময় বিভিন্ন জায়গায় উত্তেজনা তৈরি করে ভারতকে সামরিকভাবে চাপে রাখার চেষ্টা করছিল এবং পহেলগাঁওয়ে হওয়া জঙ্গি হামলার পর অপারেশন সিঁদুর শুরু করার মাধ্যমে ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে দেশ তার নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ধরনের আপস করবে না। এই পটভূমিতেই পাকিস্তান পরিকল্পনা করে উরির জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে ভারতকে বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর মাধ্যমে বড় ক্ষতি দেওয়ার চেষ্টা করবে কিন্তু সেই পরিকল্পনা সফল হতে দেয়নি সিআইএসএফের উনিশ জন জওয়ান।

এই উনিশ জন জওয়ানের দায়িত্ব ছিল বারামুলা জেলার বিতস্তা নদীর উপর নির্মিত উরি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম এবং কৌশলগত দিক থেকেও অত্যন্ত সংবেদনশীল। পাকিস্তান বহুবার চেষ্টা করেছে এই প্রকল্পে হামলা চালাতে কারণ এই কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব শুধু কাশ্মীরেই নয় দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও পড়তে পারে। সেই কারণে সিআইএসএফের জওয়ানদের এই দায়িত্ব ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ তবুও তাঁরা অসাধারণ শান্ত মাথা ধীরতা এবং সুদক্ষ সামরিক দক্ষতার মাধ্যমে বহুবার আসন্ন বিপদকে আটকে দিয়েছেন।

৬ মে থেকে ৭ মে রাতের অন্ধকারে একাধিক বার পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে ড্রোন পাঠিয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। ড্রোনগুলির লক্ষ্য ছিল প্রকল্পের মূল অংশ যাতে একটি সফল আঘাতেই উৎপাদন কেন্দ্র দীর্ঘ সময়ের জন্য অচল হয়ে যায়। পাকিস্তান এই ধরনের আক্রমণের মাধ্যমে একদিকে ভারতের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছিল অন্যদিকে কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি করার ছকও ছিল। সেই সময় কেন্দ্রটি পাহারার দায়িত্বে ছিলেন কমান্ড্যান্ট রবি যাদব এবং তাঁর নেতৃত্বে আরও আঠারো জন সাহসী জওয়ান। তাঁরা কোনও মুহূর্তে ভীত না হয়ে প্রতিটি আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হন।

ড্রোনের গতিবিধি লক্ষ্য করে দ্রুত আক্রমণ প্রতিহত করতে তাঁরা আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করেন এবং সকল ড্রোনকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে সক্ষম হন। শুধু হামলা প্রতিহত করাই তাঁদের কাজ ছিল না বরং আশপাশের প্রতিটি বাড়ি খুঁজে খুঁজে স্থানীয় লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়াও তাঁদের কাজের অংশ ছিল। গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত মানুষদের সান্ত্বনা দিয়ে তাঁদের হাত ধরে নিরাপদ এলাকায় নিয়ে যাওয়া যে কতটা সাহসের পরিচয় দেয় তা ভাষায় বোঝানো কঠিন। জওয়ানরা নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অন্ধকার রাতেও প্রতিটি দরজা কড়া নেড়ে মানুষকে বের করে আনেন এবং প্রায় দুশো পঞ্চাশ জনকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশনের কর্মী আধিকারিক ও শ্রমিকরা। যদি তাঁরা সেই সময়ে সেখানে আটকে থাকতেন তবে পাকিস্তানের হামলা সফল হলে বড় ধরনের প্রাণহানি হতো।

এই জওয়ানদের মানবিকতার আরও একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখা যায় যখন তাঁরা আতঙ্কিত শিশু বয়স্ক নারী ও অসুস্থ মানুষদের বিশেষ যত্ন নিয়ে উদ্ধার করেন। তাঁরা বারবার আশ্বাস দেন যে দেশ তাঁদের পাশে আছে এবং কোনওভাবেই হামলাকারীরা তাঁদের স্পর্শ করতে পারবে না। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও জওয়ানরা যে স্থিরতা ধরে রেখেছিলেন তা কেবল প্রশিক্ষণের নয় বরং দেশপ্রেমের এক অতুলনীয় উদাহরণ।

পাকিস্তানের বারবার গোলাবর্ষণ ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান নড়াতে পারেনি। সিআইএসএফ জওয়ানরা শুধু প্রকল্পটিকে আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত করেননি তাঁরা পাকিস্তানের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দেন। এই কারণে ভারতীয় সেনা এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলির সঙ্গে সিআইএসএফের সমন্বয় আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারত যে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তার অন্যতম মুখ ছিল এই উনিশ জন জওয়ান।

এরপর দিল্লিতে সিআইএসএফের একটি বিশেষ কর্মসূচিতে এই উনিশ জন জওয়ানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানানো হয়। তাঁদের হাতে সাহসিকতার পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় এবং জানানো হয় যে দেশের প্রতি তাঁদের অবদান অমূল্য। সিআইএসএফ কর্তৃপক্ষ জানায় সীমান্তে যখন লাগাতার গোলাবর্ষণ চলছিল তখনও উরি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা জওয়ানরা নিজের প্রাণের ভয় উপেক্ষা করে দেশের সম্পদ এবং মানুষকে রক্ষা করেছেন। তাঁরা শুধু বিদ্যুৎ প্রকল্পকেই সুরক্ষিত করেননি আশপাশের বাসিন্দাদের উদ্ধার করে যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা দেশের প্রতিটি নাগরিককে গর্বিত করেছে।

news image

সিআইএসএফের বিবৃতিতে বলা হয় যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিমানবন্দর বিদ্যুৎকেন্দ্র সমরকৌশলগত স্থাপত্য সবকিছুই এই বাহিনীর অধীনে নিরাপদ থাকে এবং এই দায়িত্ব পালন করার সময় জওয়ানদের প্রতিটি মুহূর্ত অজানা বিপদের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। উরি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এই ঘটনা প্রমাণ করেছে যে সিআইএসএফ শুধু একটি নিরাপত্তা বাহিনী নয় বরং দেশের যেকোনো বিপদের সময় সবচেয়ে আগে এগিয়ে আসা রক্ষাকবচ।

এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর আঘাত হানার যেকোনো চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় কারণ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভারতীয় বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত। পাকিস্তান যত বড় পরিকল্পনাই করে থাকুক ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীর চোখে ধুলো দিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কখনোই সহজ নয়। উরি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানোর যে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা হয়েছিল তা শুধু একটি স্থাপনা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ছিল না বরং ভারতের সামরিক মনোবলকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা ছিল। কিন্তু সিআইএসএফের জওয়ানরা যে ধরনের কৌশলগত দক্ষতা এবং মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তা পাকিস্তানের যে কোনও পরিকল্পনাকে মুহূর্তেই ব্যর্থ করে দেয়।

এই ঘটনাটি আরও বড় অর্থ বহন করে কারণ এটি শুধু সামরিক সাফল্যের প্রমাণ নয় বরং ভারতের মনস্তাত্ত্বিক শক্তিকেও প্রকাশ করে। সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ যখন থমথমে পরিবেশ তৈরি করছিল তখনও জওয়ানরা কোনও ধরনের আতঙ্কে ভেঙে পড়েননি। তাঁরা জানতেন তাঁদের হাতে শুধু একটি প্রকল্প রক্ষা করার দায়িত্ব নয় বরং পুরো এলাকার মানুষের জীবন সুরক্ষার দায়িত্বও রয়েছে। এই উপলব্ধি থেকেই তাঁরা নিজেরা সর্বপ্রথম বিপদের মুখোমুখি দাঁড়ান এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন।

যে সময়ে ড্রোনগুলি আকাশ থেকে বারবার আক্রমণের চেষ্টা করছিল সেই সময়ে সিআইএসএফ জওয়ানরা শুধু পাল্টা প্রতিরোধই গড়ে তোলেননি বরং দ্রুততার সঙ্গে স্থানীয় মানুষদের বের করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন। এক একটি বাড়ি থেকে মানুষকে বার করে আনা কোনও সাধারণ কাজ নয় কারণ এর মধ্যে থাকতে পারে এক অসহায় বৃদ্ধ একজন অসুস্থ মানুষ কিংবা আতঙ্কে কাঁপতে থাকা একটি শিশু। তবুও জওয়ানরা তাদের নিজেদের ভাইবোনের মতো করে সকলকে উদ্ধার করেন। তাঁদের এই মানবিকতা প্রমাণ করে যে ভারতীয় বাহিনীর দায়িত্ব শুধুমাত্র প্রতিরক্ষায় সীমাবদ্ধ নয় মানুষের সুরক্ষা ও শান্তি নিশ্চিত করাও তাঁদের অঙ্গীকার।

অপারেশন সিঁদুরের সময় উরির এই ঘটনা ভারতের নিরাপত্তা কাঠামোর একটি বড় অধ্যায় হয়ে থাকবে। এই ঘটনার মাধ্যমে দেশবাসী আরও একবার বুঝতে পারলেন যে ভারত যুদ্ধে বা সংঘাতে যতই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হোক দেশের নিরাপত্তা বাহিনী সবসময়ই অটল এবং দৃঢ়চিত্ত। দেশের প্রতিটি নাগরিককে রক্ষা করতে তাঁরা এক মুহূর্তের জন্যও পিছিয়ে যান না এবং প্রয়োজন হলে নিজের জীবন বিপন্ন করতেও তাঁদের দ্বিধা নেই। এই ঘটনাটির সবচেয়ে বড় শক্তি হল এটি পুরো দেশকে এক অনুপ্রেরণা দিয়েছে এবং বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে যে ভারতের নিরাপত্তা শুধু সীমান্তে থাকা সেনার হাতে নয় বরং দেশের প্রতিটি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য দেশের প্রতিটি দায়িত্বশীল নাগরিকের হাতেও ন্যস্ত।

এই উরি ঘটনার মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা যায় যে ভারত আজ আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী আরও সুরক্ষিত এবং আরও আত্মবিশ্বাসী। সিআইএসএফের মতো বাহিনী যখন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাহারা দেয় তখন মানুষ নিশ্চিন্তে থাকতে পারে কারণ তাঁদের পিছনে আছে এমন একটি দল যাঁরা শুধু দায়িত্ব পালন করেন না বরং দেশের ভবিষ্যতকে রক্ষা করেন।

Preview image