Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

অভিযোগ নেই তবু জামিন—মেহজ়বীনের চাঞ্চল্যকর দাবি সামনে এল

বাংলাদেশের জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেত্রী মেহজ়বীন চৌধুরীকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক নতুন বিতর্ক। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণিত অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও আদালতে গিয়ে জামিন নিতে হয়েছে তাঁকে। এবার নায়িকা নিজেই জানালেন কেন এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হলেন। কয়েক দিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিভ্রান্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে মেহজ়বীনের নাম জড়িয়ে একটি প্রতারণামূলক ব্যবসায় যুক্ত থাকার দাবি করা হয়। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই তাঁকে লক্ষ্য করে শুরু হয় সমালোচনা ও কটাক্ষ। বিষয়টি বড় আকার নেওয়ায় স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের হয়।তদন্তে নেমে পুলিশ দ্রুতই জানতে পারে, ভিডিওটির সঙ্গে মেহজ়বীনের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি এডিট করা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কনটেন্ট, যা নায়িকার জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে ভাইরাল হওয়ার লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়েছিল।মেহজ়বীন জানিয়েছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তারপরও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিই। যাতে ভবিষ্যতে অকারণে হয়রানির শিকার না হই।’’ তিনি আরও বলেন, মিথ্যা ভিডিওটি পরিবারের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করেছিল। তাই সত্য সামনে আনতেই তিনি আইনি পথে এগিয়েছেন।

 

বাংলাদেশের জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেত্রী মেহজ়বীন চৌধুরী আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। তবে এ বার কোনও নতুন নাটক কিংবা ওয়েব সিরিজ়ের জন্য নয়, বরং এক আইনি জটিলতার কারণে। যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণিত অভিযোগ নেই, পুলিশি তদন্তেও বিশেষ কিছু পাওয়া যায়নি, তবুও তাঁকে আদালতে গিয়ে জামিন নিতে হল। আর এই ঘটনাই প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ দর্শকের মনে—কেন এমন হল? কেন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হল দেশের জনপ্রিয় এক শিল্পীকে? ঠিক কী ঘটেছিল যে মেহজ়বীনকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে হল? নায়িকা নিজেই মুখ খুলেছেন এবং তাঁর বক্তব্য ঘিরে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিনোদন অঙ্গনে।

মামলার সূত্রপাত কয়েক দিনের ঘটনার মধ্যেই। অভিযোগ ওঠে, একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজে আপলোড হওয়া এক বিভ্রান্তিকর পোস্টে নাকি মেহজ়বীনের নাম জড়ানো হয়েছে। সেই পোস্ট অনুযায়ী, নায়িকা কোনো একটি ব্যবসার প্রচারে নাকি প্রতারণামূলকভাবে যুক্ত ছিলেন। যদিও প্রথম থেকেই মেহজ়বীন দাবি করেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং তাঁর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু প্রাথমিক অভিযোগটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় নানা রকম কটাক্ষ, প্রশ্ন ও সমালোচনা। বিষয়টি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়।

তবে তদন্ত শুরু করার পর পুলিশ জানতে পারে, অভিযোগে উল্লেখিত তথ্যগুলোর সঙ্গে মেহজ়বীনের কোনও সম্পর্কই নেই। তদন্তকারীরা দ্রুতই প্রমাণ পান, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি ভিডিও এবং নায়িকার নাম ব্যবহার করা হয়েছে শুধুমাত্র প্রচার পাওয়ার জন্য। সেই সঙ্গে নায়িকার বিরুদ্ধেও কোনও প্রতারণা, আর্থিক লেনদেন বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কোনও তথ্য মেলেনি। ফলে তদন্ত পর্যায়ে স্পষ্ট হয়—মেহজ়বীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের কোনো ভিত্তিই নেই।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে জামিন নিতে হল কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর নায়িকা নিজেই দিয়েছেন সাংবাদিকদের। তাঁর কথায়—বাংলাদেশের আইনি কাঠামোর একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার কারণে তিনি স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়ে আগাম জামিন নিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো হয়রানি বা অপ্রয়োজনীয় আইনি জটিলতায় পড়তে না হয়। তিনি জানান, অভিযোগটি যেহেতু তাঁর নামে দায়ের হয়েছিল, তাই আদালতে গিয়ে জামিন নেওয়াই যুক্তিযুক্ত ও নিরাপদ সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ একটি অভিযোগ খারিজ হতে সময় লাগতে পারে, আর সেই সময়ের মধ্যে কোনও বাহুল্য চাপ বা অকারণ অসুবিধার মুখোমুখি হতে তিনি চাননি। আইনজীবীর পরামর্শেই তিনি এই পদক্ষেপ নেন।

মেহজ়বীন স্পষ্টভাবে বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। পুলিশ তদন্তে পরিষ্কার প্রমাণ পেয়েছে যে আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টেনে আনা হয়েছে। আমি নিজে কিছুই করিনি। এরপরও আমাকে জামিন নিতে হয়েছে, কারণ অভিযোগ আমার নামেই করা হয়েছিল। আদালতের প্রক্রিয়া মেনে চলা আমার দায়িত্ব ছিল। তাই আমি আগাম জামিন নিয়েছি, যাতে আর কোনও অসুবিধা না হয়।’’

নায়িকার কথায়, এই ঘটনাটি তাঁর জন্য মানসিক চাপের কারণও হয়ে উঠেছিল। অভিযোগের ভিডিওটি প্রথম ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই তিনি নাকি পরিবারের জন্য চিন্তায় পড়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার পরিবার, আমার ভক্তরা সবাই দুশ্চিন্তায় পড়েছিল। কেউ কেউ ফোন করে খোঁজ নিত, কেউ আবার রাতেও মেসেজ করত। আমি বুঝতে পারছিলাম, একটা মিথ্যা তথ্য কত দ্রুত মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সবকিছু আইনি পথে পরিষ্কার করব।’’

বিনোদন অঙ্গনের অনেক তারকা মেহজ়বীনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ভুয়ো খবর বা বিভ্রান্তিকর প্রচার কতটা সহজ, আর তা একজন জনপ্রিয় শিল্পীর ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনে কত বড় ক্ষতি করতে পারে, সেটাই এই ঘটনা প্রমাণ করেছে। অনেকের মত, এমন অভিযোগ ভাইরাল হওয়া মাত্রই নায়িকার সামাজিক ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং সেই ক্ষতি মেরামত করতে সময় লাগে। সেজন্যই তাঁরা চান, মিথ্যা প্রচার বন্ধে আইন আরও শক্ত হোক।

মামলার আইনি পরিকাঠামো বুঝতে গেলে জানা যায়—যে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করা হলে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগটি রেকর্ডেই থাকে। যদিও অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হতে পারে, কিন্তু অভিযোগের অস্তিত্ব থাকলে আদালতে হাজিরা বা জামিন প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। বাংলাদেশে এই নিয়ম বহু বছর ধরেই প্রচলিত। নায়িকাও সেই নিয়মের আওতায় পড়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও মামলাটি থেকে নিস্তার পেতে তাঁকে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে।

news image
আরও খবর

মামলার তদন্তকারী এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান—মেহজ়বীন কোনও ভাবেই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁরা ইতিমধ্যেই সাইবার সেলের সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন, যাতে মিথ্যা ভিডিওটি কোন সূত্র থেকে তৈরি হয়েছে বা কারা এটি ছড়িয়েছে, তা খুঁজে বের করা যায়। পুলিশের ধারণা—এটি হয়তো নায়িকার জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা ব্যক্তি ভাইরাল হওয়ার উদ্দেশ্যে করেছেন। তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, ভিডিওতে ব্যবহৃত ছবি ও কথোপকথন আগে থেকেই এডিট করা ছিল এবং মূল উৎস সন্দেহজনক।

এদিকে মেহজ়বীন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ তুলেছেন—তিনি মনে করেন কোনও গোষ্ঠী তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক মাস ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার নাম ব্যবহার করে একাধিক বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এবার যেটা হয়েছে, তা আমার সহ্যের বাইরে। আমাকে মানহানির মুখে পড়তে হয়েছিল। এজন্যই আমি সব আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি।’’

ঘটনার পর থেকেই বাংলাদেশি বিনোদন জগতে শুরু হয়েছে বড় আলোচনা—তারকাদের পরিচিত মুখ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতারণা বা ভুয়ো প্রচারণা বন্ধ করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অনেকে মনে করেন, সাইবার অপরাধ দমন আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। জনপ্রিয় মানুষেরা প্রতিদিন অসংখ্য ভুয়ো পেজ, ভুয়ো ভিডিও এবং অনলাইন প্রতারণার মুখোমুখি হন। অনেক সময় তাঁরা অভিযোগ করলেও সেগুলো কার্যকরভাবে ঠেকানো যায় না।

এই ঘটনার ফলে মেহজ়বীন চান, সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত মানুষের নাম ব্যবহার করে ভুয়ো কনটেন্ট তৈরির বিরুদ্ধে আরও কঠোর আইন হোক। তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই না আর কোনো শিল্পী বা সাধারণ মানুষ এমন সমস্যায় পড়ুক। একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে আমার দায়িত্ব আছে সমাজকে সচেতন করার। সোশ্যাল মিডিয়ায় যেটা দেখছেন, সবই সত্যি নয়—এটা মানুষকে বুঝতে হবে।’’

ঘটনার তদন্ত চললেও নায়িকা এখন স্বাভাবিক কাজে ফিরেছেন। শুটিং শিডিউল নিয়ে ব্যস্ত। তবে মানসিক অভিঘাত তাঁর কণ্ঠে স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘একটা মিথ্যা অভিযোগ মানুষের জীবন কতটা নাড়া দিতে পারে, সেটা আমি কাছ থেকে দেখলাম। কারও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য অনেকে কতদূর যেতে পারে, সেটাও বুঝলাম। কিন্তু আমি সত্যের ওপর বিশ্বাস রাখি। সত্যি প্রকাশ পাবে, তাই আমি ভয় পাই না।’’

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লিখছেন—অভিযোগহীন মামলায় একজন জনপ্রিয় শিল্পীকে আদালতে যেতে হওয়া বাস্তবিকই চিন্তার বিষয়। অনেকের মত, অভিযোগের প্রাথমিক যাচাই না করে মামলা নিলে নিরপরাধ ব্যক্তিও হয়রানির শিকার হতে পারে। তাই আইন পরিবর্তনের দাবি তুলছেন সামাজিক অধিকারকর্মীরাও।

সব মিলিয়ে, অভিযোগহীন মামলায় জামিন নেওয়ার ঘটনা শুধুই একটি আইনি প্রক্রিয়া নয়—এটি বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নায়িকার প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বেপরোয়া আচরণ, ভুয়ো তথ্য ছড়ানো এবং আইনি জটিলতার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। মেহজ়বীনের বক্তব্য সামনে আসার পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—একটি ভুয়ো ভিডিও কি করে একজন জনপ্রিয় শিল্পীর জীবনকে নাড়া দিতে পারে? কেন এই ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তির সুরক্ষা কি ক্রমশই ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে?

এই প্রশ্নগুলোই এখন মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, আর তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে মেহজ়বীন জানিয়ে দিলেন—তিনি পিছিয়ে আসবেন না, সত্যের লড়াই চালিয়ে যাবেন। তাঁর বক্তব্যে যে দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস দেখা গিয়েছে, তা অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিতর্ক যতই বাড়ুক, তিনি মনে করেন নিজের সততা আর আইনের ওপর বিশ্বাস রাখাই তাঁর শক্তি।

বাংলাদেশের বিনোদন শিল্প আজ নতুন করে ভাবছে—তারকার জনপ্রিয়তা যেমন আশীর্বাদ, কখনও কখনও তা দুঃস্বপ্নের কারণও হতে পারে। আর সেই দুঃস্বপ্নের মধ্যেই দাঁড়িয়ে মেহজ়বীন যেন বলতে চাইছেন—মিথ্যা যত ছড়ায়, সত্য ততই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

Preview image