বিগ বস ১৯ সঞ্চালনা আর দ্য ব্যাং টুর শেষে মৃত্যুর আশঙ্কা মাথায় নিয়েও সলমন নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন
সলমন খানের জীবন যাত্রা সব সময়ই আলোচনার শীর্ষে থাকে আর সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও বেড়ে গিয়েছে কারণ তার কাঁধে যুক্ত হয়েছে এক নতুন এবং অনেক বড় দায়িত্ব যা শুধু তার ক্যারিয়ার নয় বলিউডের ভবিষ্যৎও অনেকটাই বদলে দিতে পারে। তিনি বর্তমানে বিগ বস উনিশ সঞ্চালনা করছেন এবং সেই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই প্রতিদিন নতুন নতুন বিতর্ক ও সংবাদ তৈরি হচ্ছে। দর্শকরা তাকে আবার সেই আগের মতোই দেখতে পাচ্ছেন একই দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাসে। এর মাঝে শেষ হয়েছে দ্য ব্যাং টুর যেখানে দেশ বিদেশে ছুটে বেড়াতে হয়েছে তাকে। স্টেজ শো পারফরম্যান্স মিট অ্যান্ড গ্রিট এবং হাজারো মানুষের সামনে নিজের উপস্থিতি বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে।
এত কাজ সামলানোর পরেও তার মাথার ওপর ভাসছে মৃত্যুর ছায়া কারণ তাকে নিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ অনেক বেড়েছে। বহুবার সংবাদমাধ্যমে এসেছে যে তিনি বিভিন্ন দিক থেকে হুমকি পাচ্ছেন। ফলে নিরাপত্তা বাহিনী তার চারপাশে আরও কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে। কিন্তু সলমন এমন মানুষ যিনি ভয়কে কখনও সামনে আসতে দেন না। তিনি নিজের কাজ করে যান এবং মানুষের মনোরঞ্জনই তার প্রধান লক্ষ্য। তাই তিনি থেমে নেই। বরং নতুন এক দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন যা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় সিদ্ধান্ত হতে পারে।
বলিউডের জনপ্রিয় দবং ফ্র্যাঞ্চাইজি শুরু থেকেই দর্শকদের মধ্যে এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। চুলবুল পান্ডে চরিত্রটি ভারতীয় দর্শকের মনে এমনভাবে জায়গা করে নিয়েছে যা খুব কম চরিত্রই পারে। দবং প্রথম কিস্তি মুক্তি পেয়েছিল দুই হাজার দশ সালে। সে সময়েই সোনাক্ষী সিনহা প্রথমবার পর্দায় এসেছিলেন এবং ছবিটি বিশাল সাফল্য পেয়েছিল। প্রথম ছবিটির পরিচালক ছিলেন অভিনব কাশ্যপ। যদিও ছবির সাফল্যের পরও অভিনবের সঙ্গে সলমনের সম্পর্ক দ্রুত খারাপ দিকে এগোয়।
সংবাদ ও সাক্ষাৎকারে অভিনব একাধিকবার সলমন এবং তার পরিবার সম্পর্কে তীব্র অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে সলমন তাকে পেশাগতভাবে বাধা দিয়েছেন এবং নানা ক্ষেত্রে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি এমন ঘটনাও বলেছেন যেখানে নাকি সলমন এবং আরবাজ খানের মধ্যে তীব্র ঝগড়া হয়েছিল এবং তিনি নাকি খুব ভয় পেয়েছিলেন। অভিনব দাবি করেন যে একদিন সলমন তার সামনে হাঁটু গেড়ে ক্ষমা চাইবেন। যদিও এসব দাবি নিয়ে সলমন বা তার পরিবার কখনোই বিস্তারিত কিছু বলেননি কিন্তু এসব কারণে দবং ফ্র্যাঞ্চাইজির পরবর্তী ছবিগুলিতে অভিনব আর যুক্ত হননি।
দ্বিতীয় ছবিটি পরিচালনা করেন আরবাজ খান এবং তৃতীয়টি পরিচালনা করেন প্রভু দেবা। দুটি ছবিই বক্স অফিসে মোটামুটি সাড়া পেলেও প্রথম ছবির মতো দাগ কাটতে পারেনি। তবে চুলবুল পান্ডের জনপ্রিয়তা থেকে যায় এবং দর্শকরা প্রতিবারই তাকে ফিরে পেতে চান। তাই দবং চার নিয়ে গুঞ্জন বহুদিন ধরেই চারদিকে ঘুরছিল। কিন্তু কে পরিচালনা করবেন সেটিই ছিল বড় প্রশ্ন।
অনেকেই মনে করছিলেন নতুন কোনো পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হবে অথবা আরবাজ আবার ফিরবেন। কিন্তু সম্প্রতি বলিউডের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায় যে এবার দবং চার পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চলেছেন সলমন নিজেই। তিনি শুধু অভিনেতাই হবেন না তিনি ছবির পরিচালকের চেয়ারে বসবেন। এটা অনেক বড় পদক্ষেপ কারণ পরিচালনা মানে গল্প নির্মাণ থেকে শুরু করে প্রতিটি দৃশ্যের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করা। আর এমন একটি জনপ্রিয় চরিত্রকে আবার জীবন্ত করে তুলতে যথেষ্ট সাহস এবং দক্ষতার প্রয়োজন হয়।
সূত্র জানায় যে ছবির শুটিং শুরু হবে আগামী বছর। সলমন আবারও চুলবুল পান্ডের চরিত্রে পর্দায় ফিরবেন তার পরিচিত হাসি তার বেপরোয়া স্টাইল এবং তার সেই স্বাক্ষর ভঙ্গিমা নিয়ে। আবারও দেখা যাবে সেই পুলিশ মহারাজ যিনি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন না। তবে এবার তার চরিত্রের গভীরতা আরও বাড়ানো হতে পারে বলে অনুমান। যেহেতু তিনি নিজেই পরিচালনা করবেন তাই গল্পে তিনি এমন কিছু যোগ করতে পারেন যা দর্শকদের নতুন অভিজ্ঞতা দেবে।
এই সিদ্ধান্ত সলমনের জন্য বিশেষ কারণ তিনি অনেকদিন ধরেই পরিচালনার কাজ থেকে দূরে ছিলেন। যদিও তিনি প্রযোজনা করেছেন বহু ছবি এবং এসব ক্ষেত্রে তার শিল্পব্যবস্থা পরিচালনার দক্ষতা প্রমাণিত বহুবার। কিন্তু পরিচালনায় ফিরে আসা মানে নতুন দায়িত্ব নতুন চ্যালেঞ্জ এবং নতুন আশা। দর্শকরা আশা করছে যে তিনি এই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবেন যেখানে এটি আবারও বলিউডের শীর্ষ জনপ্রিয় ছবির তালিকায় জায়গা পাবে।
তার পাশাপাশি তাকে সামলাতে হচ্ছে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং সার্বক্ষণিক ঝুঁকি। তবে সলমন কখনোই এসব ব্যাপারে প্রকাশ্যে ভয় দেখান না। তার কাজই তার পরিচয়। তিনি সবসময় বলেন যে তিনি নিজের দায়িত্ব করেন এবং বাকিটা সময় ঠিক করে দেয়। তাই দবং চার পরিচালনার সিদ্ধান্ত তার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে।
বলিউডের অভিজ্ঞ মহলের মতে সলমন খান যদি দবং চার সফলভাবে পরিচালনা করতে পারেন তবে এই সাফল্য তার ক্যারিয়ারে এক নতুন দরজা খুলে দেবে। কারণ তিনি বহু বছর ধরে শুধু একজন জনপ্রিয় নায়ক হিসেবেই পরিচিত নন তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এক বহুমুখী ব্যক্তিত্ব হিসেবে যিনি অভিনয় প্রযোজনা এবং শিল্প ব্যাবস্থাপনার নানা ক্ষেত্রে দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। তাই তাকে পরিচালক হিসেবে দেখা মানে দর্শকদের সামনে আরও একটি নতুন সলমনকে দেখা। এমন একজন সলমন যিনি শুধু পর্দার সামনে নয় পর্দার পেছনেও সমান শক্তিশালী দায়িত্ব নিতে পারেন।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তিনি জানেন দর্শক কোন ধরনের গল্প দেখতে চান। জনপ্রিয়তার এত বছর পরেও তিনি মানুষের রুচি পরিবর্তন বোঝার ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। তিনি জানেন কোন চরিত্রের সঙ্গে দর্শকের আবেগ জড়িয়ে আছে এবং কোন দৃশ্য মানুষের মনে দীর্ঘদিন ধরে ছাপ ফেলতে পারে। এই জ্ঞান কেবল অভিজ্ঞতা থেকেই আসে আর সলমনের অভিজ্ঞতা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে গড়ে উঠেছে।
তার ক্যারিয়ারের দীর্ঘ পথচলায় তিনি বহু উত্থান পতন দেখেছেন কিন্তু তার জনপ্রিয়তা কখনও কমেনি। তিনি এমন অভিনেতা যিনি সময়ের সঙ্গে বদলেছেন আরও পরিণত হয়েছেন এবং নিজেকে নতুন স্টাইলে তুলে ধরেছেন। তিনি শুধুই নায়ক নন তিনি একজন দায়িত্বশীল পেশাদার যিনি জানেন একটি বড় প্রকল্প পরিচালনা করতে হলে কতটা শৃঙ্খলা মনোযোগ এবং দৃঢ়তার প্রয়োজন হয়।
এ কারণে বলিউডের অনেকেই মনে করেন দবং চার তার জন্য শুধু আরেকটি ছবি নয় এটি তার ক্ষমতার নতুন পরীক্ষা। যদি তিনি এই ছবির মাধ্যমে নতুন কিছু করতে পারেন তবে ভবিষ্যতে তিনি আরও বড় চলচ্চিত্র পরিচালনা করতে পারেন যার মাধ্যমে বলিউডে তিনি এক নতুন পরিচয় তৈরি করতে পারেন।
তাকে নিয়ে যেসব বিতর্ক বা ব্যক্তিগত ঝুঁকি রয়েছে সেগুলো কখনোই তার পেশার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। বরং এসব তাকে আরও দৃঢ় করে তোলে। তিনি জানেন তার প্রতিটি সিদ্ধান্ত লাখো দর্শকের প্রত্যাশার সঙ্গে যুক্ত। তাই তিনি যেটাই করেন তা সর্বস্ব দিয়ে করেন।
এই কারণেই তিনি এত বছর পরেও সমান জনপ্রিয়। সময় তাকে বদলাতে পারেনি বরং তিনি সময়কে ব্যবহার করেছেন নিজের শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য। তার জীবনযাত্রা তার পেশা এবং তার নিরলস প্রচেষ্টা দেখিয়ে দেয় যে তিনি আসলে কতটা শক্তিশালী মানুষ। আর দবং চার পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত সেই শক্তিরই আরেকটি উদাহরণ হতে চলেছে।
আরেকদিকে অনেকেই মনে করছেন যে অভিনব কাশ্যপের অভিযোগ দবং চার প্রকল্পকে আরও আলোচনায় নিয়ে যাবে। কারণ যখনই চুলবুল পান্ডে ফিরে আসে তখনই মানুষ সেই পুরোনো বিতর্ক মনে করে। কিন্তু সলমন এসবকে পাত্তা দেন না। তিনি জানেন তার কাজই উত্তরের কাজ করবে। যদি তিনি ভালো ছবি দেন তাহলে সব অভিযোগ ধীরে ধীরে নিঃশব্দ হয়ে যাবে।
দর্শকদেরও দবং চার নিয়ে উৎসাহ অনেক বেশি। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে প্রতিদিনই নানা পোস্ট মিম এবং আলোচনায় দেখা যাচ্ছে ভক্তরা কেমন করে অপেক্ষা করছে চুলবুল পান্ডের প্রত্যাবর্তনের জন্য। তারা আশা করছে যে এবার গল্প আরও দৃঢ় হবে অ্যাকশন আরও বেশি হবে আর চুলবুলের ব্যক্তিত্ব আরও নতুন ভাবে তুলে ধরা হবে।
সব মিলিয়ে সলমন খান এমন এক দায়িত্ব নিয়েছেন যা তার ক্যারিয়ারকে নতুন মোড় দিতে পারে। তিনি তার ব্যস্ততা নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং বিতর্কের মাঝেও নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চাইছেন। যে মানুষ এত বছর ধরে ভারতীয় দর্শকদের বিনোদন দিয়ে এসেছে তিনি জানেন কীভাবে নিজের ভক্তদের সন্তুষ্ট করতে হয়। তাই দবং চার শুধু একটি ছবি নয় এটি সলমনের ব্যক্তিগত লড়াই তার আত্মবিশ্বাস তার ক্ষমতা এবং তার দায়িত্ববোধের নতুন অধ্যায় হতে চলেছে।