গবেষকরা বলছেন, ফুসফুসের ক্যানসার এবং নিউমোনিয়ার প্রথম পর্যায়ের উপসর্গ প্রায় একই রকম, তাই সঠিক রোগ নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ।
সর্দি-কাশি বা নিউমোনিয়ার মতো সাধারণ উপসর্গ অনেক সময় মানুষকে বিভ্রান্ত করে। ঘরে বসে ওষুধ খেয়ে বা কাশির সিরাপ ব্যবহার করলেও রোগ সারছে না মনে হলে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যান না। কিন্তু এসব উপসর্গের কিছু ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রাথমিক চিহ্নও লুকিয়ে থাকতে পারে। বিশেষ করে প্রথম পর্যায়ে নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ প্রায় একই রকম, তাই রোগ সঠিকভাবে ধরা দুষ্কর হয়ে ওঠে।
গবেষকরা বলছেন, নিউমোনিয়ার প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা এবং মাথা ব্যথা দেখা দেয়। তবে ফুসফুসের ক্যানসারেও অনুরূপ উপসর্গ থাকে। বিশেষ পার্থক্য হলো, ক্যানসারের ক্ষেত্রে শুকনো কাশি মাসের পর মাস ধরে থাকে, কাশির সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে, হঠাৎ ওজন কমতে থাকে এবং অ্যান্টিবায়োটিকেও রোগ সারতে চায় না। এমআইটির গবেষকরা জানাচ্ছেন, ঘন ঘন নিউমোনিয়া হয়েছে এমন ব্যক্তির ফুসফুসে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
ফুসফুসের ক্যানসারের ক্ষেত্রে জিনে রাসায়নিক পরিবর্তন (মিউটেশন) ঘটে, যা কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন ও টিউমারের সৃষ্টি ঘটায়। এছাড়া, ফুসফুসে ক্যানসার থাকা অবস্থায় ঘন ঘন নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে নিউমোনিয়া ও ক্যানসারের মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসকেরা সাধারণত চেস্ট এক্স-রে ও লো-ডোজ সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে রোগের প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করেন। তবে সম্প্রতি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (MIT) গবেষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা প্রাথমিক পর্যায়ে নিউমোনিয়া ও ক্যানসারের পার্থক্য ধরতে সক্ষম।
১) ‘সিবিল’ নামের নতুন AI মডেল সিটি স্ক্যানের ডেটা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি অনুমান করতে পারবে।
২) বিশেষ ধরনের চেস্ট এক্স-রে প্রযুক্তি ফুসফুসের কোষ বিভাজন শুরু হয়েছে কিনা তা শনাক্ত করতে সক্ষম।
৩) ব্রিডালাইজ়ার টেকনোলজির সাহায্যে ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া ও ক্যানসারের সূক্ষ্ম পার্থক্য গোড়াতেই ধরা সম্ভব।
গবেষকরা বলছেন, এই পদ্ধতিগুলো চিকিৎসককে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করবে, যাতে রোগী যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারেন এবং জীবন রক্ষা সম্ভব হয়। ফুসফুসের ক্যানসার এবং নিউমোনিয়ার এই প্রাথমিক মিল ও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পার্থক্য জানা এখন অনেক বেশি কার্যকর ও নিরাপদ হয়ে উঠেছে।