আন্তর্জাতিক আইটি ও কনসালটিং জায়ান্ট Accenture তাদের বেঙ্গালুরুর BDC7C ক্যাম্পাসে উদ্বোধন করল একটি অভূতপূর্ব ২০,০০০ স্কয়ারফুট নেচার ইনস্পায়ারড ফুডকোর্ট, যা নির্মাণ করেছে সুপরিচিত ডিজাইন-অ্যান্ড-বিল্ড প্রতিষ্ঠান Brawn Globus। আধুনিক কর্পোরেট কর্মপরিবেশকে আরও স্বাস্থ্যকর, স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং মনোউদ্দীপক করে তুলতেই এই বিশাল পরিসরের ফুডকোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এটি শুধু কর্মীদের খাদ্য গ্রহণের জায়গা নয়, বরং এক নতুন Experience Zone, যেখানে প্রকৃতির রঙ, আলো এবং ডিজাইনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এক শান্ত, স্নিগ্ধ ও আরামদায়ক পরিবেশ।
বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি ও কনসালটিং শিল্পে Accenture একটি এমন প্রতিষ্ঠান যার নাম উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই উদ্ভাবন, নতুনত্ব, সৃজনশীলতা এবং প্রযুক্তি-নেতৃত্বের চিত্র ভেসে ওঠে। এবার Accenture আবারও প্রমাণ করল যে আধুনিক কর্মক্ষেত্র শুধু ডেস্ক, কম্পিউটার, মিটিং রুম বা কিউবিকল নয়—বরং কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য, উদ্দীপনা, শরীর-মন–বন্ধু পরিবেশই আধুনিক কর্পোরেট কর্মক্ষেত্রের আসল ভিত্তি। বেঙ্গালুরুতে তাদের BDC7C ক্যাম্পাসে উদ্বোধন করা হলো একটি বিশাল, ২০,০০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের Nature-Inspired Food Court, যা নির্মাণ করেছে সুপরিচিত ডিজাইন-অ্যান্ড-বিল্ড সংস্থা Brawn Globus।
এই প্রকল্পটি শুধু একটি ফুডকোর্ট নয়—এটি আধুনিক কর্পোরেট ক্যাম্পাস ডিজাইনের এক নতুন যুগের সূচনা। যেখানে খাদ্যাভ্যাস, বিশ্রাম, সামাজিক যোগাযোগ, মানসিক প্রশান্তি ও প্রকৃতির স্পর্শ—সবকিছুকে একসাথে যুক্ত করা হয়েছে কর্মীদের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে।
এই ৪০০০ শব্দের প্রতিবেদনে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব—এই ফুডকোর্টে কী কী রয়েছে, কতটা ব্যতিক্রমী এর ডিজাইন, কেন Accenture এই ধরনের উদ্যোগ নিল, কর্মীদের উপর এর প্রভাব কী হতে পারে, Brawn Globus কীভাবে প্রকল্পটি সম্পন্ন করল, এবং ভবিষ্যতে এমন ডিজাইন কেন কর্পোরেট বিশ্বে একটি নতুন ট্রেন্ড হয়ে উঠতে পারে।
Accenture তাদের ফুডকোর্টের ডিজাইনে একটি দারুণ কনসেপ্ট ব্যবহার করেছে—“Where the forest meets the ocean”। এই থিমের মধ্যেই লুকিয়ে আছে পুরো প্রকল্পের দর্শন। একদিকে প্রাকৃতিক বনের শান্ত সবুজ, অন্যদিকে সমুদ্রের ঢেউয়ের স্বচ্ছন্দ ছন্দ—এই দুইয়ের মিলনে তৈরি হয়েছে একটি বৃহৎ কর্পোরেট রিফ্রেশ জোন, যেখানে কর্মীরা কাজে ব্যস্ত থাকার মাঝেও মুহূর্তে প্রকৃতির কোমলতা অনুভব করতে পারবেন।
ডিজাইনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে—
মাটির রঙের নরম শেড
কাঠ ও পাথরের টেক্সচার
জলরাশি ও ঢেউ-অনুপ্রাণিত স্ট্রাকচার
প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের ব্যবস্থা
ছাদের তরঙ্গাকৃতি ডিজাইন
প্লান্ট-ডেকোরেশন এবং গ্রিনারি
এসব মিলিয়ে পুরো ফুডকোর্টে এক অনন্য প্রশান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কেউ এখানে ঢুকলেই বুঝতে পারবেন—এটি শুধু খাবার খাওয়ার জায়গা নয়, বরং ব্যস্ত কর্মপরিবেশের মাঝে নতুন করে শক্তি পাওয়ার একটি প্রাকৃতিক কেন্দ্র।
এই ফুডকোর্টের আয়তন প্রায় ২০,০০০ স্কয়ার ফিট—অর্থাৎ একটি বড় আইটি ক্যাম্পাসের তিনটি তলা মিলিয়ে যা তৈরি হয়, ততখানি জায়গা। এই জায়গাটি শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য নয়, বরং কর্মীদের কাজের চাপ কমানো, সামাজিকতা বাড়ানো, এবং টিম-বন্ডিং বাড়াতে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রবেশপথ থেকে শুরু করে বসার জায়গা, আলো, কারপেটিং, টেবিল-চেয়ার, ক্যাফে স্টেশন—সবকিছু খুব সূক্ষ্ম পরিকল্পনায় তৈরি করা হয়েছে। মেঝে থেকে আলো পর্যন্ত প্রতিটি সেকশন প্রকৃতির রঙ ও ছন্দের সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে—
ওপেন সিটিং
সোশ্যাল সিটিং
কো-ওয়ার্কিং টাইপ বার কাউন্টার
রিল্যাক্সেশন জোন
প্রাকৃতিক প্লান্ট-ডেকোর
ডিফিউজ লাইটিং
ফুডকোর্টকে ঘিরে Accenture একটি “Experience Zone” তৈরি করেছে, যেখানে কর্মীরা শুধু খাবারই নয়, বরং তাদের দিনের ক্লান্তি দূর করতে পারবেন।
Accenture এবং Brawn Globus মিলিতভাবে এই প্রকল্পটি এমনভাবে তৈরি করেছে যাতে এটি ভারতের কর্পোরেট ক্যাম্পাস ডিজাইনের অন্যতম সেরা নির্মাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ডিজাইনে ব্যবহার করা হয়েছে—
Wave ceiling (ঢেউ আকৃতির ছাদ)
Acoustic Panels
Natural texture wall
Wooden fins
Artistic lighting
Ocean-blue carpeting
এই ধরনের আর্কিটেকচার খুব কম কর্পোরেট ক্যাম্পাসে দেখা যায়। ফলে এটি শুধু Accenture-এর জন্য নয়, বরং ভারতের কর্পোরেট ডিজাইনের ক্ষেত্রে একটি Landmark Project।
এই ফুডকোর্টে কর্মীরা খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আরাম করতে পারবেন, টিম মিটিং করতে পারবেন, ছোটখাটো আলোচনা করতে পারবেন, কিংবা মাঝেমধ্যে ক’ মিনিট বসে মনটাকে শান্ত করতে পারবেন।
এখানে রয়েছে—
মাল্টিপল ফুড ব্র্যান্ড
কফি বার
গ্র্যাব-এন্ড-গো কাউন্টার
হাইব্রিড সিটিং জোন
লাউঞ্জ স্টাইলের বসার ব্যবস্থা
ফুডকোর্টের অনেক অংশকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে কর্মীরা ফোনে কথা বলা, ভিডিও কল করা, বা ছোটো টিম মিটিংও করতে পারেন।
কেন এই উদ্যোগ?
Accenture বলছে—কর্মীদের স্বাস্থ্য, মনোবল ও পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য কর্মস্থলে শুধু ডেস্ক নয়, এমন পরিবেশ তৈরি জরুরি যেখানে তারা মানুষ হিসেবে অনুভব করবে। এমন জায়গা কাজের মাঝখানে “রিফ্রেশ” হওয়ার সুযোগ দেবে, যা দীর্ঘমেয়াদে কর্মক্ষমতা ও ধৈর্য বাড়াতে সহায়ক হবে।
ফুডকোর্টটিকে নেচার-ইনস্পায়ারড করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো প্রাকৃতিক আলো। বড় বড় কাঁচের প্যানেল ও ওপেন সিলিং সিস্টেমের মাধ্যমে দিনের বেলায় প্রচুর সূর্যের আলো প্রবেশ করে। এতে—
বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়
মানসিক চাপ কমে
কর্মীরা সতেজ অনুভব করেন
এছাড়া ব্যবহৃত হয়েছে eco-friendly acoustic materials, energy-efficient lighting এবং sustainable ডিজাইন এলিমেন্ট।
Accenture বলছে—এই ধরনের স্পেস কর্মীদের productivity বাড়ায়, মন ভালো রাখে, এবং ব্যস্ততার মাঝে স্বস্তির জোন তৈরি করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিবেশ—
কর্মীদের মনোযোগ বাড়ায়
টিম বন্ডিং উন্নত করে
স্ট্রেস কমায়
রিটেনশন রেট বাড়ায়
নতুন প্রতিভা নিয়োগে সাহায্য করে
কর্পোরেট দুনিয়ায় কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। Accenture এই ফুডকোর্টের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে—মানুষের কাজের মান ঠিক রাখতে হলে প্রথমে মানুষকে ভালো রাখা জরুরি।
Brawn Globus ভারতের অন্যতম Design & Build প্রতিষ্ঠান। তারা পুরো প্রজেক্টটি একসাথে পরিকল্পনা, ডিজাইন, নির্মাণ ও ইনস্টলেশন করেছে। এই প্রজেক্টে ব্যবহৃত হয়েছে—
ওভারহেড সিলিং স্কাল্পচার
উচ্চ-গুণমানের অ্যাকুস্টিক মেটেরিয়াল
দ্রুত নির্মাণ প্রযুক্তি
প্রকৃতির অনুপ্রাণিত ফ্লোরিং
আর্টিস্টিক কারিগরি কাজ
প্রকল্পটি মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হয়—যা এই স্কেল ও ডিজাইন জটিলতার কাজের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয়।
এই প্রকল্প কর্পোরেট বিশ্বে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—
“কর্মক্ষেত্র আর কেবল কাজের জায়গা নয়, বরং কর্মীর অভিজ্ঞতার জায়গা।”
পুরোনো দিনের ক্যান্টিন বা মেসের কনসেপ্ট এখন অতীত। আধুনিক কর্মীরা চান—
aesthetic environment
peaceful zone
natural ambiance
mental refreshment
social engagement
Accenture-এর এই প্রকল্প ভবিষ্যতে অন্যান্য আইটি কোম্পানিকেও প্রভাবিত করবে—যেমন Infosys, TCS, Wipro, Cognizant, Capgemini—যারা ইতিমধ্যে ‘Campus Experience’ উন্নত করতে কাজ করছে।
Brawn Globus পুরো প্রকল্পটি Design & Build মডেলে করেছে—অর্থাৎ পরিকল্পনা, নির্মাণ, ইন্টিরিয়র, লাইটিং ও অ্যাকুস্টিক সবকিছু একসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
এই ধরনের উদ্ভাবনী কাজ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্পোরেট ক্যাম্পাস ডিজাইনের প্রবণতা বদলাচ্ছে—সহজ খাদ্যাধিকারের জায়গা নয়, এখন ‘এক্সপেরিয়েন্স’-ভিত্তিক ফুড কোর্ট হবেই বিভিন্ন কোম্পানিতে।
প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়েছে সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ।
“Where the forest meets the ocean” এই থিম অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে—আর্দার্থ মাটির রঙ, জৈব টেক্সচার, এবং হালকা রোদ ও প্রাকৃতিক আলো ব্যবহৃত হয়েছে কর্মীদের উদ্দীপনা ও মনোবল বাড়ানোর জন্য।
ডিজাইনে রয়েছে তরঙ্গাকৃতির সিলিং, ক্যান লাইটিং, অ্যাকুস্টিক সিলিং প্যানেল, এবং ভরপুর সোশ্যাল সিটিং জোন—যেখানে কর্মীরা শুধু খেতে বসবে না, বরং বিশ্রাম নেবে, কথা বলবে, কাজের ফাঁকে আবার নিজেকে রিচার্জ করবে।
Accenture-এর এই ২০,০০০ স্কয়ার ফুটের নেচার-ইনস্পায়ারড ফুডকোর্ট কর্পোরেট দুনিয়ায় নতুন দৃষ্টান্ত। এটি শুধু স্থাপত্যে নয়, বরং কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার দিকে বড় পদক্ষেপ। এই ধরনের স্পেস কেবল সাজসজ্জা নয়—বরং Modern Workplace Productivity-এর ভবিষ্যত দর্শন।