২০১৮ সালে স্ত্রীকে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালান হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসী। পরে তাঁকে বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্প্রতি বেলজিয়ামের আদালত জানিয়েছে, তাঁকে ভারতে ফেরানোর পথে আর কোনও আইনি বাধা নেই।
ঋণখেলাপি ও ব্যাংক প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত পলাতক হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসীর সম্পত্তি নিলামে তোলার নির্দেশ দিয়েছে মুম্বইয়ের এক বিশেষ আদালত। আদালতের অনুমতি অনুযায়ী, তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় ৪৬ কোটি টাকার সম্পত্তি এবার সরকারের হেফাজতে নিলামে উঠবে। এই তালিকায় রয়েছে ১৩টি সম্পত্তি, যার মধ্যে আছে একাধিক ফ্ল্যাট, বাণিজ্যিক ভবন, রুপোর বাট এবং মূল্যবান রত্ন।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, নিলামে উঠতে চলেছে ‘গীতাঞ্জলি জেম্স লিমিটেড’ নামের সংস্থার সম্পত্তি, যা মেহুল চোকসী এবং তাঁর ভাইপো নীরব মোদীর সঙ্গে যুক্ত। দু’জনই দীর্ঘদিন ধরে দেশ থেকে পলাতক, এবং তাঁদের বিরুদ্ধে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের প্রায় ₹১৩,৫০০ কোটি টাকার প্রতারণার মামলা চলছে।
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সূত্রে জানা গেছে, মুম্বইয়ের বোরিভলি অঞ্চলের চারটি ফ্ল্যাট আদালতের অনুমতিপ্রাপ্ত সম্পত্তির মধ্যে অন্যতম। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ₹২.৫৫ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি, বান্দ্রা কুরলা কমপ্লেক্সের বিখ্যাত ‘ভারত ডায়মন্ড বোর্স’ এলাকায় অবস্থিত একটি বাণিজ্যিক ভবনও নিলামে উঠবে। এটিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হিরের বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মুম্বই সংলগ্ন গোরেগাঁও এলাকার কিছু সম্পত্তি এবং জয়পুরে ‘গীতাঞ্জলি জেম্স’-এর মালিকানাধীন রুপোর বাট, মূল্যবান রত্ন ও যন্ত্রপাতি-ও নিলামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আদালতের বিচারক এ. ভি. গুজরাতি এক নির্দেশনামায় জানান, কর্তৃপক্ষ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় এই সম্পত্তিগুলি নিলামে তুলতে পারবে এবং নিলাম থেকে প্রাপ্ত অর্থ স্থায়ী আমানত (Fixed Deposit) আকারে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
মেহুল চোকসীর বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের আদালত ইতিমধ্যেই দুটি জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ২০১৮ সালে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে তাঁকে বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার করা হয়, এবং বহু বছর ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের পর বেলজিয়ামের আদালত সম্প্রতি জানায় যে, তাঁকে ভারতে প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে আর কোনও আইনি বাধা নেই।
এই নির্দেশের ফলে ভারত সরকারের হাতে চোকসীকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ অনেকটাই সহজ হয়ে গেল। দেশজুড়ে আলোচিত এই মামলায় আদালতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নতুন দিশা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।