পশ্চিমবঙ্গে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন কর্মসূচি বা SIR (Special Intensive Revision)। ভারতের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে এই উদ্যোগ, যেখানে ভোটার তালিকায় নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করা, পুরনো তথ্য সংশোধন এবং মৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার কাজ চলবে। দেখে নিন কোন কোন নথি লাগবে এবং কোন ফর্মটি কাদের জন্য প্রযোজ্য।
কলকাতা, ২৮ অক্টোবর: ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) আজ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন কর্মসূচি — Special Intensive Revision (SIR) — শুরু করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও হালনাগাদ করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির দ্বিতীয় ধাপে পশ্চিমবঙ্গসহ মোট ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৪ নভেম্বর ২০২৫ থেকে BLO (Block Level Officer) রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করবেন। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ এবং চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ধার্য করা হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬।
তবে গত বছর বিহারে এই কর্মসূচি চলাকালীন দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে BLO-রা বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহে যাননি, ফলে নাগরিকদেরই স্বউদ্যোগে নথি জমা দিতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতার আলোকে পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের আগে থেকেই সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
নতুন ভোটার হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে বা পুরনো তথ্য সংশোধন করতে নিম্নলিখিত নথিগুলি প্রয়োজন হবে:
পরিচয় প্রমাণের জন্য: আধার কার্ড, পাসপোর্ট, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা সরকারি বা আধা-সরকারি কর্মচারীর পরিচয়পত্র।
ঠিকানার প্রমাণের জন্য: বিদ্যুৎ বা গ্যাসের বিল, ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের পাসবুক, বাড়ি ভাড়ার চুক্তি বা সম্পত্তির দলিল, রেশন কার্ड, ভূমি বা বাড়ি বরাদ্দের সনদ কিংবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ডোমিসাইল সার্টিফিকেট।
বয়সের প্রমাণের জন্য: জন্ম সনদ, দশম বা দ্বাদশ শ্রেণির সার্টিফিকেট বা অ্যাডমিট কার্ড, অথবা স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট।
এছাড়াও NRC রেকর্ড, জাতি সনদ (SC/ST/OBC) অথবা ১ জুলাই ১৯৮৭-এর আগে ইস্যু করা সরকারি পরিচয়পত্রও গ্রহণযোগ্য হবে।
যাদের জন্ম ১ জুলাই ১৯৮৭ থেকে ২ ডিসেম্বর ২০০৪-এর মধ্যে, তাদের প্রমাণ করতে হবে যে আবেদনকারী অথবা তার বাবা-মায়ের মধ্যে অন্তত একজন ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৯৮৭ সালের আগে জন্ম হলে পুরনো ভোটার তালিকা বা বাবা-মায়ের নামসহ ২০০২ সালের ভোটার তালিকার জেরক্স কপি সংরক্ষণ করতে হবে।
সকল আবেদনকারীকে অন্তত ২-৩ কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি আগে থেকে প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
নাগরিকরা https://voters.eci.gov.in ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। অফলাইন আবেদনের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে BLO-এর কাছে সংশ্লিষ্ট ফর্ম ও নথি জমা দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং ভোটার তালিকাকে সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত করতে সকল নাগরিকের সচেতন অংশগ্রহণ কামনা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্যোগ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নির্ভরযোগ্য করে তুলবে।