Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

রুপি পতনে রাজনৈতিক তাপমাত্রা চরমে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর তীব্র কটাক্ষ: আমাকে নয়, ওদের জিজ্ঞাসা করুন

ভারতীয় রুপি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৯০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে মার্কিন ডলারের বিপরীতে, যা অর্থনীতি ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রুপির এই দুর্বলতা নিয়ে যখন সারাদেশে আলোচনা চলছে, তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাডরা একটি বক্তব্য দিয়েছেন যা মুহূর্তে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক তাঁকে রুপি পতন নিয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনি কেন আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন তাদের জিজ্ঞাসা করুন। অর্থাৎ, BJP কে কটাক্ষ করে তিনি প্রশ্নটি সরাসরি ক্ষমতাসীন দলের দিকে ফিরিয়ে দেন।

রুপি পতনে রাজনৈতিক তাপমাত্রা চরমে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর তীব্র কটাক্ষ: আমাকে নয়, ওদের জিজ্ঞাসা করুন
রাজনীতি

রুপি পতনে রাজনৈতিক ঝড়: প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর তীব্র প্রতিক্রিয়া, প্রধানমন্ত্রী মোদীর পুরনো মন্তব্যকে সামনে এনে ‘কঠিন’ 

ভারতের অর্থনীতির ইতিহাসে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যখন রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেশের সামগ্রিক জনমনে বড় প্রভাব ফেলে। রুপি–ডলার বিনিময় হার সেই বিশেষ সূচকগুলোর একটি, যা অর্থনীতি, বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভ এবং মানুষের আস্থা— সবকিছুকে একসাথে মাপতে দেয়।
সেই সূচক যখন নতুন রেকর্ড ভাঙে, অর্থাৎ ভারতীয় রুপি প্রথমবার ৯০ টাকার দোরগোড়ায় পৌঁছে, তখন শুধু অর্থনীতিই নয়— রাজনৈতিক অঙ্গনও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এই পরিস্থিতিতেই দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাডরা। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি এমন একটি মন্তব্য করেন, যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়—

“আপনি কেন আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন? তাদের জিজ্ঞাসা করুন।”

তারপর তিনি স্মরণ করিয়ে দেন—
২০১৩ সালে যখন রুপি দুর্বল হয়েছিল, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং–কে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

আজ সেই দৃশ্য ঠিক উল্টো— রুপি সর্বকালের সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে এবং বিরোধীদের অভিযোগ— “এখন সরকার কি একই প্রশ্নের উত্তর দেবে?”

এই প্রতিবেদনটি রুপি পতন, অর্থনৈতিক বাস্তবতা, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর বক্তব্যের গভীর বিশ্লেষণমূলক উপস্থাপন।


 ভারতের রুপি ৯০ টাচ করল— কী ঘটল দেশ ও বাজারে?

ভারতীয় রুপির ওপর চাপ গত কয়েক মাস ধরেই বাড়ছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উপাদানের কারণে ডলার শক্তিশালী হচ্ছিল, আর ভারতীয় রুপি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে আসছিল।
সবশেষে রুপি Rs 90/USD–এর কাছে পৌঁছে যায়— যা একটি মনস্তাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে “বড় ধাক্কা” হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

? রুপি পতনের মূল কারণগুলো—

  1. আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি

  2. ভারতের আমদানি বিল বাড়া (বিশেষ করে তেল)

  3. বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের FPI আউটফ্লো

  4. বৈদেশিক রিজার্ভের চাপ

  5. বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা

  6. মার্কিন সুদের হার বৃদ্ধি

  7. Geopolitical tension— রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিম এশিয়া পরিস্থিতি

এই কারণগুলোর সমন্বয়ে রুপি দুর্বল হয়েছে।
কিন্তু রাজনৈতিক ময়দানে বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা পায়।


 সাংবাদিকের প্রশ্ন— রুপি পড়ে যাচ্ছে, কংগ্রেসের মত?

প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল—

“রুপি পড়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?”

তিনি সোজাসুজি বলে দেন—

**“Why are you asking me? Ask them.

They questioned Dr Manmohan Singh when the rupee fell.
Ask them the same question now.”**

বাংলায় অর্থ—
“আপনি কেন আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন? তাদের জিজ্ঞাসা করুন।
রুপি পতনের সময় তারা মনমোহন সিং–কে জিজ্ঞাসা করেছিল, ব্যঙ্গ করেছিল।
এখন একই প্রশ্ন তাদেরকেই করুন।”

তার বক্তব্য তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।


 পুরনো ভিডিও ভাইরাল— যখন মোদী বলেছিলেন “রুপি পড়ে যাওয়া মানে প্রধানমন্ত্রী দুর্বল”

২০১৩ সালের সময়, রুপির দাম ৬৮–৭০ টাকার দিকে যাচ্ছিল।
তখন নরেন্দ্র মোদী (তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী) বলেছিলেন—

“Rupee is crying because the government is weak.”

আরও একটি বক্তব্য—

“Dollar is climbing, rupee is dying… and the Prime Minister is silent!”

এই বক্তব্যগুলো বিরোধীরা এখন আবার সামনে নিয়ে এসেছে।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মন্তব্যও মূলত এই পুরনো প্রসঙ্গের সঙ্গে যুক্ত।

 রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া— BJP বনাম Cong তর্ক

রুপি পতন রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের জন্য শক্তিশালী অস্ত্র।
কংগ্রেস বলছে—

  • মোদী সরকার ১০ বছর ধরে অর্থনীতি পরিচালনা করেছে

  • কিন্তু এখন রুপি সর্বনিম্ন

  • “২০১৩-র মতো জবাব দিন”

BJP পালটা বলেছে—

  • বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ

  • শুধু ভারত নয়, সব দেশই মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা চাপের মুখে

  • “তুলনা করতে হলে বৈশ্বিক উপাদান যুক্ত করুন”

অর্থনীতিবিদরা বেশি নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন—
“মুদ্রার মান শুধু সরকারের কারণে পড়ে না। বৈশ্বিক উপাদান বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”


 রুপি পতনের অর্থনৈতিক প্রভাব— সাধারণ মানুষের জীবনে কী পরিবর্তন আনবে?

রুপি দুর্বল হওয়ার সরাসরি প্রভাব—

 আমদানির খরচ বাড়বে

জ্বালানি
গাড়ি
ইলেকট্রনিক্স
মোবাইল
গম-ডাল-তেল (আমদানি নির্ভর পণ্য)

 বিদেশে পড়াশোনা খরচ বাড়বে

টিউশন ফি
হোস্টেল
লোডজিং খরচ

 বিদেশ ভ্রমণের খরচ বাড়বে

 জ্বালানির দাম বাড়লে পরিবহন খরচ বাড়বে → প্রভাব পড়বে সব পণ্যে

ওষুধ → খাদ্য → পোশাক → পরিবহন

রপ্তানি কিছু ক্ষেত্রে লাভবান

IT সেক্টর
টেক্সটাইল
হ্যান্ডিক্রাফট

সুতরাং রুপি দুর্বলতার একদিকে চাপ, অন্যদিকে সুযোগ।


 অর্থনীতিবিদরা কী বলছেন?

দেশবিদেশের অনেক অর্থনীতিবিদ বলেছেন—

“রুপি পড়ছে— এটি বৈশ্বিক প্রবণতার অংশ। ভারত একা নয়।”

news image
আরও খবর

কিন্তু আরেকদল বলছেন—

“যখন আমদানি এত বেশি, তখন রুপির ওপর চাপ আরও বেশি পড়ে। এটি সরকারের নীতি ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের ইঙ্গিত।”

রুপি পতনে RBI বাজারে ডলার বিক্রি করে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করছে।


 রাজনৈতিক মাহাত্ম্য— কেন প্রিয়াঙ্কার বক্তব্য এত আলোচিত?

কারণ—

 তিনি রাজনৈতিক স্মৃতি তাজা করে দিয়েছেন

২০১৩ সালে BJP রুপি পতনে কংগ্রেসকে দোষারোপ করেছিল।
এবার পরিস্থিতি উল্টো।

 প্রশ্নের জবাব দেননি— প্রশ্নটি ফিরিয়ে দিয়েছেন

এটি রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী বার্তা।
এ যেন— “আপনারাই বলেছিলেন, এখন আপনারাই উত্তর দিন।”

 ২০২৯–এর প্রস্তুতি

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রিয়াঙ্কার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।
এ ধরনের মন্তব্য দলকে সংগঠিত করে।

 সামাজিক মাধ্যমে মানুষের প্রতিক্রিয়া

বেশিরভাগ মানুষ পুরনো ভিডিও দেখে তুলনা করছেন।
এ তৈরি করেছে রাজনৈতিক বিতর্ক।


 ভারতীয়দের মূল প্রশ্ন— “রুপি কেন কমছে?”

❖ আমদানি বেশি → ডলারের চাহিদা বেশি

❖ রপ্তানি কম → ডলার প্রবাহ কম

❖ বিদেশি বিনিয়োগ কম → ফান্ড আউটফ্লো

❖ বৈশ্বিক অস্থিরতা → ডলার শক্তিশালী

❖ তেলের দাম বেশি → ভারত বেশি ডলার খরচ করছে

এই সবকিছু মিলিয়ে রুপি চাপের মুখে।


 প্রিয়াঙ্কার বক্তব্য অর্থনৈতিক না রাজনৈতিক?

দুটোই।

একদিকে তিনি অর্থনৈতিক দিক থেকে সরকারের দায় চাপিয়েছেন—
“রুপি দুর্বল, সরকার ব্যাখ্যা দিক।”

অন্যদিকে তিনি রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন—
“২০০৯-১৩ সালে BJP যেমন প্রশ্ন করেছিল, এবার তাদের উত্তর দিতে হবে।”


 সাধারণ মানুষের মনোভাব— রুপি দুর্বল মানেই কি দেশ দুর্বল?

এ বিষয়ে ভুল ধারণা ছড়ায় প্রায়ই।
রুপি দুর্বল মানে—

  • আমদানি বেশি

  • ডলার চাহিদা বেশি

  • বৈশ্বিক অস্থিরতা বেশি

  • RBI হস্তক্ষেপ সীমিত

কিন্তু এটি সর্বদা সরকারের ব্যর্থতা নয়।
তবে সরকারের অর্থনৈতিক নীতি রুপি স্থিতিশীল করতে ভূমিকা রাখে।


 বিরোধীদের কৌশল— কেন রুপি পতনকে ইস্যু বানানো হচ্ছে?

কারণ—

 মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব পড়ে
 মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক
 রাজনৈতিকভাবে তুলনা করা সহজ
 পূর্বের মন্তব্য থেকে সরকারকে ‘ডিফেন্স’-এ রাখা যায়
 মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে আসে

কংগ্রেস চায়— বিষয়টি জনমনে প্রশ্ন তুলে দিক—

“যারা ২০১৩ সালে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন এখন নীরব?”

 BJP–র কৌশল— কেন তারা প্রতিরক্ষায়?

BJP বলছে—

 রুপি শুধু ভারতেই নয়, অনেক দেশে দুর্বল
 বৈশ্বিক অর্থনীতি চাপের মুখে
 ভারতের GDP, FDI, ডিজিটাল পরিকাঠামো দ্রুত বাড়ছে
 মডেল উন্নয়নই রুপিকে স্থিতিশীল করবে

এটি একটি “ম্যাক্রো ইকোনমিক কন্ট্রোলড রেসপন্স”।


 রুপি কি ৯৩–৯৫ স্পর্শ করতে পারে? অর্থনীতিবিদদের ভয়

কিছু বিশ্লেষকের মতে—

  • যদি তেলের দাম আরও বাড়ে

  • যদি বৈদেশিক রিজার্ভ কমে

  • যদি যুক্তরাষ্ট্র সুদের হার বাড়ায়

তাহলে রুপি ৯৩–৯৫–এর দিকে যেতে পারে।

এটি ভারতের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ।


 প্রিয়াঙ্কার মন্তব্যের রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতি

 তার পক্ষে:

  • বিরোধী ভাষ্যে শক্তি

  • পুরনো বক্তব্য মনে করিয়ে দেওয়া

  • সরকারকে প্রতিরক্ষায় রাখা

 সরকারের পক্ষে:

  • “বিশ্বও একই সংকটে” ব্যাখ্যা দেওয়া

  • ভারতের শক্তিশালী অর্থনৈতিক সূচক দেখানো


 উপসংহার— রুপি পতন অর্থনীতি–রাজনীতি দুই ক্ষেত্রেই বড় পরীক্ষা

রুপি দুর্বল হওয়া অর্থনীতির জটিল বাস্তবতা।
কিন্তু ভারতের রাজনৈতিক পরিবেশে এই ঘটনাকে “বহুমাত্রিক অস্ত্র” হিসেবে দেখা হয়।

প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর বক্তব্য সেই বাস্তবতাকে আরও সামনে এনেছে—
প্রশ্নের উত্তর প্রাপ্য।
শুধু বিরোধীদের নয়— সরকারেরও।

অর্থনীতি ও রাজনীতি এখানে এক জায়গায় এসে মিলেছে।

Preview image