Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

ভারতের হতাশা! দুর্বল অলরাউন্ডার ও রক্ষণাত্মক কৌশলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ০-২ ব্যবধানে সিরিজ হার!

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে রক্ষণাত্মক মানসিকতা ও দুর্বল অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের কারণে ০-২ ব্যবধানে হারল ভারত। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতার অভাব ও বোলিংয়ে পরিকল্পনার ঘাটতি আবারও স্পষ্ট। স্মিথ ও মার্শের ব্যাটে ভর করে অস্ট্রেলিয়া সহজেই ম্যাচ জিতে সিরিজ দখল করে নিল, আর ভারত রইল প্রশ্নবিদ্ধ কৌশলের মধ্যে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ভারতের পরাজয় ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য ছিল এক বড় হতাশা। তিন ম্যাচের এই সিরিজে দলীয় পারফরম্যান্সে যে দুর্বলতা চোখে পড়েছে, তা ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান বাস্তবতাকে স্পষ্টভাবে সামনে এনেছে। একসময় যে দলকে বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম শক্তিধর হিসেবে গণ্য করা হতো, সেই দল এখন ব্যাটিং-বোলিং দুই দিকেই ভারসাম্য হারাচ্ছে। রক্ষণাত্মক মনোভাব, অদূরদর্শী টিম সিলেকশন ও দুর্বল অলরাউন্ড পারফরম্যান্স — এই তিন কারণেই ভারত শেষ পর্যন্ত ০-২ ব্যবধানে সিরিজ হারল অস্ট্রেলিয়ার কাছে।

প্রথম ম্যাচ থেকেই দেখা গেছে ভারতের পরিকল্পনার অভাব। পিচে কিছুটা সহায়তা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় ব্যাটাররা সেই সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি। রোহিত শর্মা ও শুভমান গিলের শুরুটা আশাব্যঞ্জক হলেও মধ্যক্রম ভেঙে পড়ে দ্রুত। শ্রেয়াস আইয়ার, সুর্যকুমার যাদব এবং হার্দিক পান্ডিয়া — কেউই বড় ইনিংস গড়তে পারেননি। ফলে নির্ধারিত ওভারে ভারত বড় স্কোর দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা ছিল শৃঙ্খলাপূর্ণ ও ধারাবাহিক। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজেলউডের নিখুঁত লাইন ও লেংথে ভারতীয় ব্যাটাররা বারবার বিপদে পড়েছেন।

দ্বিতীয় ম্যাচেও চিত্রটা প্রায় একই রকম ছিল। রোহিতের টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত শুরুতে সঠিক মনে হলেও, দলের ব্যাটাররা আবারও ব্যর্থ হন। এবারও বড় জুটির অভাব ছিল। স্মৃতি হিসেবে রোহিত ও গিলের শুরু ভালো হলেও, মিডল অর্ডারে কেউ দায়িত্ব নিতে পারেননি। এমনকি উইকেটরক্ষক ব্যাটার লোকেশ রাহুলও নিজের ছন্দ খুঁজে পাননি। ব্যাটিং অর্ডারের এই অনিশ্চয়তা এবং দুর্বল ব্যাটিং ডেপথই শেষ পর্যন্ত ভারতের পতনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা আবারও নিজেদের প্রমাণ করে দেন। স্টিভ স্মিথের শান্ত মাথার ইনিংস ও মিচেল মার্শের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে পুরোপুরি নিস্তেজ করে দেয়।

বোলিং বিভাগেও ভারতের দুর্বলতা স্পষ্ট। জসপ্রিত বুমরাহর ধার ফিরে এলেও, অন্য বোলারদের পারফরম্যান্স ছিল অনিয়মিত। মোহাম্মদ সিরাজ ও অক্ষর প্যাটেল রান আটকাতে ব্যর্থ হন, আর স্পিনার কুলদীপ যাদব মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি। অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার থেকেও প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স মেলেনি, যার ফলে দল ভারসাম্য হারায়। ভারতীয় বোলাররা উইকেটের জন্য ছটফট করলেও, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা সহজেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখে।

news image
আরও খবর

এই সিরিজে ভারতীয় দলকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে রক্ষণাত্মক মানসিকতা। প্রতিটি ম্যাচেই দেখা গেছে, দল জয়ের চেয়ে যেন হার এড়ানোর চেষ্টা করছে। কৌশলগত দিক থেকেও কোচ ও ক্যাপ্টেনের মধ্যে সঠিক সমন্বয় দেখা যায়নি। বোলিং চেঞ্জে দেরি, ফিল্ডিংয়ে অগোছালো অবস্থান এবং ব্যাটিং অর্ডারে পরীক্ষানিরীক্ষা — সব মিলিয়ে দলটি আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে বলেই মনে হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান ভারতীয় দল মানসিকভাবে ক্লান্ত এবং নতুন পরিকল্পনা ছাড়া তারা আর এগোতে পারবে না।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জিতে প্রমাণ করল কেন তারা এখনো বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম সেরা দল। তাদের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস, ফিটনেস ও টিমওয়ার্ক ছিল নিখুঁত। স্টিভ স্মিথ নেতৃত্বে দারুণ স্থিতিশীল, আর মিচেল মার্শ, ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নারের মতো ব্যাটাররা প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে জানেন। তাদের বোলিং আক্রমণও ছিল পরিকল্পনামাফিক। প্রতিটি ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটারদের দুর্বলতা বিশ্লেষণ করে সেই অনুযায়ী স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছে অস্ট্রেলিয়া।

সিরিজ শেষে ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা একটাই প্রশ্ন তুলছেন — এই দল কি বড় টুর্নামেন্টে সাফল্য পেতে পারবে? কারণ বিশ্বকাপের মতো বড় প্রতিযোগিতায় জয়ের জন্য শুধুমাত্র তারকা খেলোয়াড় নয়, দরকার একতাবদ্ধ দল, সুস্পষ্ট কৌশল এবং মানসিক দৃঢ়তা। রোহিত শর্মা ও রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে ভারতীয় দলকে এখন আত্মসমালোচনা করতে হবে। হার থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা গঠন করাই হবে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ।

এই সিরিজ ভারতের জন্য কেবল একটি হার নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা। যদি এখনই তারা নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে না ওঠে, তাহলে আসন্ন বিশ্বকাপে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই ০-২ পরাজয় তাই ভারতের ক্রিকেটে নতুন ভাবনার সূচনা হওয়া উচিত — যেখানে রক্ষণাত্মক খেলার জায়গা নেই, কেবল সাহস, পরিকল্পনা ও দলগত ঐক্যের মধ্য দিয়েই ফিরে আসা সম্ভব।

Preview image