Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

দিটওয়া’ ঘূর্ণিঝড়: উপকূল ঘেঁষে চলে যাবে, ল্যান্ডফল হবে না; সতর্কতা জারি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘দিটওয়া’ ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলে প্রভাব ফেলতে পারে, তবে এটি ল্যান্ডফল করবে না। মৌসম দপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে পশ্চিমমুখী হয়ে উপকূল ঘেঁষে চলে যাবে এবং তার প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝোড়ো হাওয়া হতে পারে। তবে, এর শক্তি উপকূলের কাছাকাছি আসলে কিছুটা কমে যাবে। সতর্কতা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কলকাতা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং ওড়িশার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বৃষ্টিপাত এবং ঝোড়ো বাতাসের কারণে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।মৌসম দপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি ল্যান্ডফল করবে না এবং বড় বিপদ সৃষ্টি করবে না, তবে এর প্রভাব সীমিত থাকবে। তবে, সুরক্ষার জন্য প্রশাসন এবং জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

দিটওয়া’ ঘূর্ণিঝড়: উপকূল ঘেঁষে চলে যাবে, ল্যান্ডফল হবে না; সতর্কতা জারি
আবহাওয়া

বঙ্গোপসাগরে এই মুহূর্তে যে ঘূর্ণিঝড়টি তাণ্ডব চালাচ্ছে, তা অনেকেই সতর্কতার সঙ্গে অনুসরণ করছেন। কারণ এটি ভারতের উপকূলীয় এলাকা, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে মৌসম দপ্তর সূত্রে জানা গেছে যে এই ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল হবে না, বরং এটি উপকূল ঘেঁষে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, কতটা কাছাকাছি আসবে এই ঘূর্ণিঝড় এবং এটি কীভাবে প্রভাব ফেলবে? এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে আমাদের প্রথমেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি, তার গতিবিধি এবং আবহাওয়া পূর্বাভাসকে গুরুত্ব দিতে হবে। মৌসম দপ্তরের তরফ থেকে সম্প্রতি জানানো হয়েছে যে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় 'দিটওয়া' ল্যান্ডফল করবে না, বরং এটি উপকূল ঘেঁষে চলে যাবে। মৌসম দপ্তর জানিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে পশ্চিমমুখী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার কিছু অংশে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ো হাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র সমুদ্রের দিকে চলে গেলেও তার প্রভাব উপকূলে পড়বে এবং উপকূলীয় এলাকা, বিশেষত নদী অঞ্চলের ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলবে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘূর্ণিঝড় 'দিটওয়া' বর্তমানে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এবং এটি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করছে। তবে যখন এটি উপকূলের কাছাকাছি আসবে, তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা হ্রাস এবং ভূভাগের প্রভাবে এর শক্তি কিছুটা কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা এবং বিশেষ করে কলকাতা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি যখন উপকূলের কাছাকাছি আসবে, তখন তার প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং ঝোড়ো হাওয়ার সৃষ্টি হবে, যা কিছু ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে। তবে মৌসম দপ্তর নিশ্চিত করেছে যে ঘূর্ণিঝড়টি কোনো বড় আঘাত হানবে না এবং ল্যান্ডফল করবে না। ওড়িশার উপকূলীয় জেলাগুলি, যেমন বালেশ্বর, ভদ্রক, কেন্দ্রপাড়া এবং জগৎসিংহপুরেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই অঞ্চলগুলিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে এবং যারা ইতিমধ্যে সমুদ্রে আছেন, তাদের দ্রুত উপকূলে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হয়েছে, সেটি একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হলেও একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো এর গতিবিধি। সাধারণত এমন ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব উপকূলীয় অঞ্চলে তীব্র আঘাত হানে, কিন্তু 'দিটওয়া' ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। যদিও এটি শক্তিশালী হতে পারে, তবুও এটি সম্পূর্ণভাবে উপকূলের ওপর প্রভাব ফেলবে না, বরং উপকূলের কাছে গিয়ে সরে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তবে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সীমিত থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এছাড়া 'দিটওয়া' একটি নিম্নচাপ থেকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, যা পূর্ববর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলি থেকে কিছুটা আলাদা। এর গতি এবং শক্তি কিছুটা বেশি হলেও এটি ভারতীয় উপকূলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি আসার পর ধীরে ধীরে তার শক্তি কমে যাবে, যার ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কম থাকবে। আবহাওয়া বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এটি একটি মাঝারি শ্রেণীর ঘূর্ণিঝড় হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। তবে উপকূলের কাছাকাছি এলে বাতাসের গতিবেগ কমে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটারে নেমে আসতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার উপকূলবর্তী অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে এবং বাতাসের গতিও তীব্র হতে পারে। যেহেতু এটি ল্যান্ডফল করবে না, তবে এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা, বিশেষত নদী অঞ্চলের জলস্তর বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ঝোড়ো হাওয়ার কারণে ঘরবাড়ি, কৃষি জমি এবং ছোটখাটো অবকাঠামোগত ক্ষতি হতে পারে। বিশেষত কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকা এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং আরও কিছু উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে নদী উপকূলবর্তী অঞ্চলের জলস্তর বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কিছু অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে। তবে এই ঝড়টি আরও পশ্চিম দিকে চলে যাওয়ার কারণে ভৌগোলিক দিক থেকে এর প্রভাব খুব বেশি হবে না। নিম্নাঞ্চলীয় এলাকা এবং যেসব স্থানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল, সেখানে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকা এবং উপকূলীয় দ্বীপগুলিতে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং জোয়ারের প্রভাবে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কৃষিজমি, বিশেষত ধানক্ষেত এবং সবজির খেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি থাকা এলাকাগুলির জন্য বিপদ সংকেতও প্রদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে, যাতে যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি হলে মানুষ সেখানকার নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারে। রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং জেলা প্রশাসন যৌথভাবে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) এবং রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর (SDRF) একাধিক দল উপকূলীয় জেলাগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছে। এই দলগুলি যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধার কাজ চালাতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি সরকারি অফিসগুলি, স্কুল ও কলেজের কার্যক্রম কিছুটা সীমিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং উপকূলবর্তী এলাকাগুলির জন্য ইন্টারনেট ও ফোন পরিষেবা ঠিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মৌসম দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যেন তারা উপকূলীয় এলাকা থেকে দূরে থাকে এবং ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকে। বিদ্যুৎ বিভাগ জরুরি মেরামত দলগুলিকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছে, যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটলে দ্রুত তা পুনরুদ্ধার করা যায়। জরুরি চিকিৎসা সেবা এবং অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও জোরদার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলিতে জরুরি ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মজুত রাখা হয়েছে।ঘূর্ণিঝড় বা দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে মানুষের সচেতনতা এবং প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় এবং জরুরি পরিষেবাগুলি নিশ্চিত করা উচিত। মানুষকে খোলা মাঠে, নদী বা সমুদ্রের কাছে না গিয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।এই সময় উপকূলবর্তী এলাকায় সাধারণত প্রচণ্ড বৃষ্টি এবং বাতাসের কারণে গাছপালা পড়ে যেতে পারে, তাই আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখতে এবং কোনো ধরনের ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষভাবে যারা নদী বা সমুদ্রের কাছে বসবাস করেন, তাদের জন্য জরুরি প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।মৌসম দপ্তর জানিয়েছে যে ঘূর্ণিঝড়টি আসলেও উপকূলের কাছে আসার পর তার শক্তি কমে যাবে এবং এটি আরও পশ্চিমমুখী হয়ে সরে যাবে। তাই এই ঘূর্ণিঝড়টি সাধারণত বড় আঘাত হানবে না এবং শুধু বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার সৃষ্টি করবে। তবে যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এড়াতে উপকূলীয় অঞ্চলগুলির বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতা অবলম্বন করছে।ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করার পরও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। পড়ে যাওয়া গাছপালা, ভাঙা বিদ্যুতের তার এবং জলাবদ্ধ এলাকা থেকে সাবধান থাকতে হবে। সরকারি অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ভবন বা এলাকায় প্রবেশ করা উচিত নয়।স্বাস্থ্য বিভাগ ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে জলবাহিত রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে। বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রচারণা চালানো হবে।‘দিটওয়া’ ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলের কাছাকাছি আসলেও ল্যান্ডফল করবে না, তবে এর প্রভাবে বৃষ্টি এবং ঝোড়ো বাতাস হতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য কিছু সতর্কতা এবং প্রস্তুতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তবে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সীমিত থাকবে। সব মিলিয়ে, এই ঘূর্ণিঝড়টি বড় বিপদ না তৈরি করলেও, সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতির কারণে তা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।

news image
আরও খবর
Preview image