অপারেশন সিঁদুর-এ ভারতের ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অস্ত্রের কার্যকারিতা প্রমাণ হওয়ার পর বিশ্ববাজারে ভারতের অস্ত্রশস্ত্রের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র আর্মেনিয়া ও মিশরের মতো দেশগুলো নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এমনকি চীনের আরেকটি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনামও ভারতের সামরিক প্রযুক্তিতে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের তৈরি অস্ত্রশস্ত্রের কার্যকারিতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং কৌশলগত সুবিধা আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের অবস্থান শক্তিশালী করছে। এই নতুন চাহিদা ভারতকে কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করলেও, একই সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তানের একের পর এক সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানার পর বিশ্বে ভারতের ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অস্ত্রের খ্যাতি অনেক বেড়ে গেছে। এমনকি পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বক্তব্যেও উঠে এসেছিল রাশিয়ার সহযোগিতায় তৈরি ভারতের ব্রহ্মস ক্রুজ সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের নাম। এবার দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসন রুখতে সেই অস্ত্রের উপর ভরসা করেছে ফিলিপিন্স।
শুক্রবার ফিলিপিন্সের সরকারি সংবাদমাধ্যম আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের তৈরি ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের খবর এবং ছবি প্রকাশ করেছে। বর্তমানে ফিলিপিন্স ফৌজের মেরিন কোরের তত্ত্বাবধানে জাম্বালেস প্রদেশের উপকূলীয় সেনাঘাঁটিতে রাখা হয়েছে ‘ব্রহ্মস ব্যাটারি’। মস্কো-নয়াদিল্লি যৌথ উদ্যোগে গঠিত ব্রহ্মস এরোস্পেস সংস্থায় তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্র স্থলভূমি, ডুবোজাহাজ এবং জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য। ফিলিপিন্স মেরিন কোর ইতিমধ্যেই কয়েক বছর আগে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে ব্রহ্মসের জাহাজ বিধ্বংসী সংস্করণ কিনেছিল এবং সেগুলি এখন মোতায়েন করা হয়েছে।
অপারেশন সিঁদুরে কার্যকারিতা প্রমাণের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ভারতের অস্ত্রশস্ত্রের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর্মেনিয়া, মিশর, এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনামও ভারতের অস্ত্রে আগ্রহ দেখিয়েছে। ব্রহ্মসের পাশাপাশি ‘আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা’ এবং ডি-৪ ‘ড্রোন কিলার’-ও এই তালিকায় রয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ এলাকা চীন নিজেদের অংশ বলে দাবি করে আসছে। ফলে ফিলিপিন্স, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেইয়ের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে চীনের দ্বিপাক্ষিক টানাপোড়েন দীর্ঘদিন ধরে চলছেই। ফিলিপিন্সের চীন বিরোধের এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল সেকেন্ড থমাস শোলে দ্বীপ। ১৯৯৯ সালে ফিলিপিন্স নৌবাহিনী এই দ্বীপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের একটি জাহাজে অস্থায়ী নৌঘাঁটি স্থাপন করেছিল। এরপর ২০১২ সালে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি দ্বীপটি দখল করলে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
দক্ষিণ চীন সাগর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের মোট বাণিজ্য সামগ্রীর প্রায় ২১ শতাংশ এই জলপথ দিয়ে পরিবহণ হয়, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও বেড়েছে। ফলে চীনের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সংঘাত ও কৌশলগত টানাপোড়েন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ফিলিপিন্সের ব্রহ্মস মোতায়েন দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসন ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।