ভারতের বিমান পরিষেবায় ব্যবহৃত অধিকাংশ বিমানই এয়ারবাস নির্মিত এবং সংস্থাটি আগেই সৌর বিকিরণের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। দেশের প্রায় দুইশো থেকে আড়াইশো বিমান প্রযুক্তিগত সমস্যায় পড়তে পারে এবং এর ফলে বিমান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সৌর বিকিরণে দেশ জুড়ে বিমান পরিষেবা বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা
দেশজুড়ে বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন অসংখ্য বিমান আকাশপথে চলাচল করে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থার একটি বড় ভিত্তি গড়ে তোলে। কিন্তু হঠাৎই এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে যা শুধু বিমান সংস্থাকেই নয় বরং যাত্রীদেরও ব্যাপক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সৌর বিকিরণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের তিন প্রধান বিমান সংস্থা আগেভাগেই সতর্কতা জারি করেছে। এয়ার ইন্ডিয়া ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস জানিয়েছে যে আগামী কয়েক দিনে বিমান চলাচলে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং বহু বিমান নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে নাও পারে। কিছু ক্ষেত্রে ফ্লাইট বাতিলও হতে পারে যার ফলে হাজার হাজার যাত্রী সমস্যায় পড়বেন।
এই সতর্কবার্তা দেওয়ার মূল কারণ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বিমান নির্মাণকারী সংস্থা এয়ারবাসের একটি পূর্ব সতর্কতা। কিছুদিন আগে এয়ারবাস জানায় যে তাদের এ তিনশ বিশ সিরিজের বিমানে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সৌর বিকিরণের কারণে তথ্যগত ত্রুটির সম্মুখীন হতে পারে। এই নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা বিমান পরিচালনার অন্যতম ভিত্তি এবং কোনো ধরনের ত্রুটি বিমান নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই ধরনের বিমানগুলোকে অবিলম্বে পরীক্ষা করা দরকার এবং সেই পরীক্ষার আগে সেগুলোকে পরিষেবার বাইরে রাখতে হতে পারে।
ভারতে বর্তমানে এয়ারবাসের পাঁচশো ষাটটির মত এ বিশ সিরিজের বিমান ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এর মধ্যে দুইশো থেকে আড়াইশো বিমানে ত্রুটির সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান পিটিআই জানিয়েছে। এত বড় সংখ্যক বিমান পরীক্ষা এবং মেরামতের জন্য পাঠানো হলে দেশজুড়ে বিমান পরিষেবায় স্বাভাবিকভাবেই বিশাল সমস্যা তৈরি হবে। কারণ ভারতীয় বিমান চলাচলের একটি বড় অংশ এই মডেলের বিমানের ওপর নির্ভরশীল। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বিমান সংস্থাগুলিকে আগাম পরিকল্পনা নিতে হচ্ছে এবং সেই কারণেই যাত্রীদের উদ্দেশে বারবার সতর্কবার্তা ও দুঃখপ্রকাশ জানানো হচ্ছে।
সৌর বিকিরণের ফলে যে ধরনের সমস্যা হতে পারে তা শুধু প্রযুক্তিগত নয় বরং নিরাপত্তাজনিত দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এয়ারবাসের দাবি অনুযায়ী সৌর বিকিরণ বেড়ে গেলে বিমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এলিভেটর এইলরন কম্পিউটার বা ইএলএসি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই সিস্টেমটি বিমানকে সঠিক দিকনির্দেশে চালাতে সাহায্য করে। সামান্য ত্রুটিও বিমানকে বিপদে ফেলতে পারে। সাম্প্রতিক এক বিদেশি ঘটনায় সৌর বিকিরণের কারণে একটি এয়ারবাস বিমানের নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয় এবং বিমানটিকে জরুরি ভিত্তিতে নামাতে হয়। সেই ঘটনার পরই এয়ারবাস দ্রুত বিবৃতি জারি করে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থাকে সতর্ক করে দেয়।
ভারতে ইন্ডিগো এয়ার ইন্ডিয়া এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস মিলিয়ে শত শত বিমান প্রতিদিন পরিষেবা দেয়। এই সংস্থাগুলির অধিকাংশ বিমানই এয়ারবাস নির্মিত। তাই সৌর বিকিরণজনিত সমস্যার আশঙ্কা তৈরি হওয়ার সাথে সাথে তিন সংস্থাকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। যাত্রীদের প্রতি বার্তা দিয়ে সংস্থাগুলি জানিয়ে দিয়েছে যে কিছু বিমান সময়মতো উঠবে না কিছু বিমান সময় পরিবর্তন করে পাঠানো হবে এবং প্রয়োজনে বাতিলও হতে পারে। যাত্রীদের অনুরোধ করা হয়েছে ভ্রমণের আগে সংস্থার ওয়েবসাইট বা অ্যাপে সময় যাচাই করতে যাতে অযথা বিমানবন্দরে ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।
পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে কারণ এই পরীক্ষার কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব নয়। প্রতিটি বিমানকে আলাদা করে পরীক্ষা করতে হবে সফটওয়্যার আপডেট করতে হবে হার্ডওয়্যার পুনর্বিন্যাস করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে বিমানটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। এই প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ এবং বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদদের তত্ত্বাবধানে করা বাধ্যতামূলক। এয়ারবাস জানিয়েছে যে সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত বিমানকে যথাযথভাবে পরীক্ষা না করা পর্যন্ত আকাশে ওড়ানো ঠিক হবে না।
ভারতে বর্তমানে যে পরিমাণ যাত্রী প্রতিদিন আকাশপথ ব্যবহার করেন সেই সংখ্যার সঙ্গে এই প্রযুক্তিগত সমস্যার তুলনা করলে বোঝা যায় কত বড় বিপর্যয় আসন্ন। শুধু অভ্যন্তরীণ যাত্রাই নয় আন্তর্জাতিক পথেও সমস্যা হতে পারে কারণ ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়ার বহু আন্তর্জাতিক রুটে এয়ারবাসের বিমান ব্যবহার হয়। ফলে বিদেশ গমনকারী যাত্রীদের জন্যও চরম অসুবিধা তৈরি হতে পারে।
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস জানিয়েছে যে তাদের মোট একত্রিশটি এয়ারবাস বিমান রয়েছে তবে ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়ার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। যেহেতু ইন্ডিগো বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এয়ারবাস অপারেটর তাই তাদের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিন সংস্থাই প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে টানা বৈঠক করছে এবং সরকারি সংস্থাগুলোকেও সব তথ্য জানানো হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি আরও একবার প্রমাণ করল যে প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পে সৌর বিকিরণ এবং মহাকাশগতি ঘটনা কতটা প্রভাব ফেলতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতি যতই হোক প্রাকৃতিক শক্তির সামনে তা অনেক সময় দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই বিমান শিল্পকে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ও বিকিরণ সহনশীল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দিকে মনোযোগী হতে হবে।
যাত্রীদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত অসুবিধাজনক। অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে ভ্রমণ করেন এবং বিমান পরিষেবার গোলমালের কারণে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। তবে নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ঝুঁকি নেওয়া যায় না। তাই এই পরীক্ষা প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক এবং যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
ভারতের বিমান চলাচল শিল্প অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ আকাশপথে ভ্রমণ করছেন। দেশের বিভিন্ন শহরকে সংযুক্ত রাখতে বিমান পরিবহন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সৌর বিকিরণজনিত পরিস্থিতিতে দেশের বিমান পরিষেবা বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতি শুধু প্রযুক্তিগত নয় বরং সামাজিক অর্থনৈতিক এবং মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে চলেছে।
বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিমান নির্মাতা সংস্থা এয়ারবাস জানিয়েছে যে সৌর বিকিরণের কারণে তাদের এ তিনশ বিশ সিরিজের বিমানে ব্যবহৃত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ত্রুটিগ্রস্ত হতে পারে। এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিমানকে উড্ডয়ন এবং অবতরণের সময় সঠিকভাবে পরিচালনা করে। এই অংশে ত্রুটি দেখা দিলে বিমানকে নিরাপদভাবে আকাশে রাখা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিদেশে একটি এয়ারবাস বিমানে এমনই ত্রুটি ধরা পড়ে। সৌর বিকিরণের প্রভাবে বিমানের নিয়ন্ত্রক এলিভেটর এইলরন কম্পিউটার বা ইএলএসি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। জরুরি পরিস্থিতিতে বিমানটিকে নামিয়ে দিতে হয়। সেই ঘটনার পরই বিশ্বজুড়ে সতর্কতা জারি হয়। ভারতের ক্ষেত্রেও এই সতর্কতা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক কারণ ভারতীয় বিমান পরিষেবায় ব্যবহৃত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিমান এই সিরিজের।
এই পরিস্থিতি নজরে আসতেই ভারতের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ শুরু করে। এয়ার ইন্ডিয়া ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস সংস্থাগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে আলোচনা করা হচ্ছে এবং তারা কীভাবে প্রতিটি বিমান পরীক্ষা করবে সেই প্রক্রিয়াও নির্ধারণ করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরও পরিষ্কার হবে এবং জানা যাবে কোন কোন বিমান পরিষেবায় ফিরে আসতে পারবে।
ভারতে বর্তমানে পাঁচশো ষাটটিরও বেশি এয়ারবাস এ বিশ সিরিজের বিমান সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে দুইশো থেকে আড়াইশো বিমানে ত্রুটি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান। এত সংখ্যক বিমানের পরীক্ষা এবং মেরামত করতে সময় লাগবে এবং সেই সময়ে বহু বিমান পরিষেবা বন্ধ রাখতে হতে পারে। বিমান সংস্থাগুলি যাত্রীদের আগেই সতর্ক করে দিয়েছে যাতে ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায় এবং অযথা বিমানবন্দরে ভোগান্তির শিকার না হতে হয়।
এই পরিস্থিতিতে দেশের অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে। ব্যবসায়িক ভ্রমণ অধ্যয়ন চিকিৎসা সংক্রান্ত যাত্রা এবং বিভিন্ন প্রয়োজনের জন্য যারা প্রতিদিন বিমান ব্যবহার করেন তারা সকলেই সমস্যায় পড়বেন। শুধু দেশের মধ্যে নয় আন্তর্জাতিক পরিষেবাতেও প্রভাব পড়বে কারণ বহু আন্তর্জাতিক রুটে ভারতের সংস্থাগুলি এয়ারবাস বিমানের ওপর নির্ভর করে। বিদেশগামী যাত্রীদেরও সময় পরিবর্তন বা বিমান বাতিল হওয়ার ঝুঁকিতে থাকতে হবে।
এই সমস্যা প্রযুক্তিগত হলেও এর প্রভাব সমাজ অর্থনীতি এবং দৈনন্দিন জীবনে গভীর ছাপ ফেলবে। বিমান শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবহন ব্যবস্থার কোনো বড় সমস্যা শিল্প বাণিজ্য কর্মসংস্থান এবং ব্যবসার ওপরও চাপ সৃষ্টি করে। ফলে সৌর বিকিরণজনিত এই সঙ্কটকে শুধু প্রযুক্তিগত সমস্যা হিসেবে দেখলে ভুল হবে। এটি একটি বৃহত্তর চ্যালেঞ্জ যা কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে যুক্ত।
এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কোনো বিমান যদি সামান্য সন্দেহজনক অবস্থায়ও আকাশে ওঠে তাহলে যাত্রী এবং ক্রু সদস্যদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই বিমানগুলোকে পরীক্ষা না করা পর্যন্ত পরিষেবা থেকে সরিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক। বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদদের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি বিমানকে সফটওয়্যার আপডেট হার্ডওয়্যার পুনর্বিন্যাস এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুনরায় যাচাই করতে হবে। এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলেও নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনোভাবেই আপস করা যাবে না।
ভারতের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বিমান সংস্থাগুলির দ্রুত পদক্ষেপ পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে। কিছুদিনের মধ্যেই পরীক্ষার অগ্রগতি জানা যাবে এবং কোন বিমান আগে পরিষেবায় ফিরবে তার তথ্যও প্রকাশ করা হবে। যাত্রীদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে বলা যায় সৌর বিকিরণজনিত এই সমস্যা শুধু প্রযুক্তিগত পরিমণ্ডল নয় বরং সমাজ অর্থনীতি পরিবহন ব্যবস্থা এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে চলেছে। কোটি কোটি মানুষের যাতায়াত নির্ভর করে এই বিমানের ওপর এবং কোনো ভুল সিদ্ধান্ত মারাত্মক হতে পারে। তাই দ্রুত সমাধান এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন মূল লক্ষ্য। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী এবং বিকিরণ সহনশীল প্রযুক্তি উন্নয়ন করা অত্যন্ত জরুরি। বিমান শিল্পকে নতুন বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে এবং যাত্রী নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।