Cyclone Ditwah–এর ধাক্কায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়াতে পাকিস্তান জরুরি সহায়তা পাঠায়। কিন্তু সেই মানবিক সহায়তার মধ্যেই সামনে আসে বড় বিতর্ক। কলম্বো পৌঁছানো ত্রাণসামগ্রীর বাক্স খুলতেই দেখা যায় অনেক খাবার, শুকনো খাদ্য, বেবি ফুড, এমনকি কিছু মেডিক্যাল আইটেমও মেয়াদোত্তীর্ণ। কিছু প্যাকেটের ওপর লেখা রয়েছে Expiry: June 2024, Best Before: October 2024, এমনকি Do Not Use After: 2023 এই দৃশ্য ভাইরাল হতেই শ্রীলঙ্কার জনগণ, আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা ও সোশ্যাল মিডিয়া ক্ষোভে ফুঁসছে।
২০২৫ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত দেশ শ্রীলঙ্কা। মহাসাগরীয় ঝড় ও ভয়াবহ বন্যার ধাক্কায় দেশটির বহু জেলা ভাসছে বন্যায়, ঘরবাড়ি ডুবে গেছে, লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয়হীন, খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পাকিস্তান শ্রীলঙ্কাকে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ পাঠায়। কিন্তু সেই মানবিক সহায়তার মধ্যেই তৈরি হয় আরও বড় বিতর্ক। শ্রীলঙ্কা পৌঁছানো প্যাকেটগুলি খুলতেই দেখা যায়—ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যসামগ্রী, চিকিৎসাজনিত উপকরণ এবং জরুরি খাবার, যেগুলোর মেয়াদ অন্তত ৬–১২ মাস আগেই অতিক্রান্ত।
এই খবর ভাইরাল হতেই পুরো দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে বয়ে যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া। শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা কর্মী পর্যন্ত সবারই প্রশ্ন—“বন্যায় বিপর্যস্ত একটি দেশকে কি মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার পাঠানো মানবিক সহায়তা নাকি অপমান?” পাকিস্তান যে উদ্দেশ্য নিয়ে সহায়তা দিতে চেয়েছিল তা হয়তো মানবিকই ছিল, কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিক্রিয়া পুরোপুরি উল্টো হয়েছে।
পাকিস্তানের দূতাবাস দাবি করেছে—এটি “ছোট ভুল” এবং “গুদামের মিক্স-আপ”—ইচ্ছাকৃত নয়। কিন্তু শ্রীলঙ্কার ত্রাণ বিভাগ বলেছে—বিপর্যস্ত মানুষের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার পাঠানো মানবিকতার লঙ্ঘন। শ্রীলঙ্কা সরকার ঘটনাটি নিয়ে “গুরুতর উদ্বেগ” প্রকাশ করেছে এবং আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চেয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় #ExpiredAid, #DeadEconomyPakistan, #SriLankaFloods হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড হতে শুরু করে। অনেকেই ব্যঙ্গ করে লিখছেন—“পাকিস্তান নিজের জনগণকেই খাওয়াতে পারছে না, শ্রীলঙ্কায় কী পাঠাবে?” আবার কেউ লিখছেন—“এটা সাহায্য নয়, অপমান।”
এদিকে ভারতের ‘Operation Sagar Bandhu’-র অধীনে পাঠানো ১২ টন মানসম্মত ত্রাণসামগ্রীর সঙ্গে পাকিস্তানের মেয়াদোত্তীর্ণ সহায়তার তুলনা টেনে অনেকে দুই দেশের মনোভাব তুলে ধরেছেন। আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও মানবিক সংস্থাগুলি বলেছে—ত্রাণ পাঠানোর ক্ষেত্রে “zero negligence” বাধ্যতামূলক, কারণ মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য রোগ ছড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন—পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্য ঘাটতি ও গুদাম ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এ ঘটনার কারণ হতে পারে। তবে মানবিক সহায়তায় এ ধরনের অবহেলা দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
সার্বিকভাবে, পাকিস্তানের এই ‘expired relief’ প্রেরণ শ্রীলঙ্কার ত্রাণ কার্যক্রমে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে এবং পাশাপাশি ইসলামাবাদকে কূটনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে। বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার মানুষ এখন আরও উপযুক্ত ও নিরাপদ সহায়তা প্রত্যাশা করছে।
Cyclone Ditwah ২০২৫ সালের শেষ সপ্তাহে শ্রীলঙ্কায় আঘাত হানে। ভারী বৃষ্টি, প্রবল বাতাস ও পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ফলে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশে ভয়াবহ ক্ষতি হয়। রাজধানী কলম্বোসহ বহু জেলা পানির নিচে চলে যায়।
হাজার হাজার পরিবার ঘরহারা, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন এলাকা বাড়ছে, খাবার ও ওষুধের সংকট ভয়ানক হয়ে ওঠে। দেশের দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগ জানায়—
লক্ষাধিক মানুষকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে
হাসপাতালগুলোতে শিশুদের ডায়রিয়া, জ্বর ও জলবাহিত রোগ বেড়ে গেছে
ত্রাণ কার্যক্রমে এখনো বিশাল ঘাটতি
এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশসহ আন্তর্জাতিক সমাজের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
বন্যার খবর ছড়িয়ে পড়তেই পাকিস্তান ঘোষণা করে যে তারা শ্রীলঙ্কার পাশে আছে। ইসলামাবাদ জানায় যে তারা বিশেষভাবে খাদ্য, পানীয়, শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠাচ্ছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত টুইট করেন—
“ভাইজানের পাশে ভাই, শ্রীলঙ্কা আমাদের বন্ধু। আমরা সাহায্য করতে গর্বিত।”
দ্রুত বিমানযোগে ত্রাণসামগ্রী লোড করা হয়। বাক্সে লেবেল লাগানো হয়—“Humanitarian Assistance from Pakistan to Sri Lanka.”
কিন্তু এখানেই শুরু হয় বিতর্কের সূত্রপাত।
শ্রীলঙ্কার ত্রাণ সংস্থার সদস্যরা প্যাকেট খুলতেই তারা স্তম্ভিত হয়ে যায়।
বহু খাদ্যসামগ্রীর ওপর তারিখ লেখা—
"Expiry: October 2024"
"Best before: June 2024"
"Do not use after: 10/2023"
অর্থাৎ বন্যা সহায়তায় পাঠানো খাবারগুলি অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ। কিছু খাবার খারাপ গন্ধও ছড়াচ্ছিল। সামগ্রীগুলো পরিদর্শনকারী এক কর্মকর্তা বলেন—
“এটা কি সহায়তা! বিপর্যস্ত মানুষের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার পাঠানো মানবিকতার অপমান।”
শুধু খাবার নয়, কিছু মেডিকেল আইটেম, স্যালাইন, ব্যান্ডেজ বা ওষুধেও মেয়াদ অতিক্রান্ত তারিখ পাওয়া যায়।
যেই ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ালো, তাতেই মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করে।
টুইটারে হ্যাশট্যাগে ট্রেন্ড শুরু হয়—
#ExpiredAid
#SriLankaFloods
#PakistanHelpFail
#DeadEconomyPakistan
অনেকে পাকিস্তানের এই আচরণকে “মানবিক অপমান” বলেছেন, কেউ বলেছেন—“নিজেদের অর্থনীতি মৃত, তাই মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার ছাড়া দিতে পারছে না।”
বিখ্যাত শ্রীলঙ্কান সাংবাদিক লিখেছেন—
“বন্যায় আমরা ডুবছি, আর পাকিস্তান পাঠাচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার! এটাই মানবিক সাহায্য?”
সমালোচনার ঝড় উঠতেই পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রণালয় বিবৃতি দেয়—
“এটি একটি ছোট ভুল। কিছু কার্টন গুদামে ভুলভাবে মিশে গিয়েছিল। পাকিস্তান ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার পাঠায়নি।”
তারা আরও দাবি করে—
“বাকি ত্রাণসামগ্রী সম্পূর্ণ মানসম্মত।”
কিন্তু শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা বলছেন—
এটি ‘মারাত্মক অবহেলা’।
গুদামের ভুল হলেও তা মানবিক সহায়তায় সহ্যযোগ্য নয়।
শ্রীলঙ্কার ত্রাণ ও বৈদেশিক বিভাগের এক মুখপাত্র বলেছেন—
“আমরা পাকিস্তানের সহায়তার ইচ্ছাকে সম্মান করি। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ সামগ্রী মানবিকতার পরিপন্থী। এটি ত্রাণমান বজায় রাখার ব্যর্থতা।”
সরকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে বলেছে।
শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ঐতিহ্যগতভাবে মিত্র। কিন্তু এই ঘটনা দু’দেশের সম্পর্ককে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলো
শ্রীলঙ্কার জনগণের মধ্যে পাকিস্তান-বিরোধী মনোভাব বাড়তে পারে
ভারত-পাকিস্তান আঞ্চলিক রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে
অনেকে ব্যঙ্গ করেছেন—
“ভারত পাঠাচ্ছে ১২ টন খাদ্য, পাকিস্তান পাঠাচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ বাক্স।”
এই ঘটনার মাঝে ভারত শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়ায় ‘Operation Sagar Bandhu’-র মাধ্যমে ১২ টন জরুরি খাদ্য ও ওষুধ পাঠিয়ে। ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমান কলম্বোতে পৌঁছে সাহায্য পৌঁছে দেয়।
ভারতের সহায়তার মান দেখে অনেকেই তুলনা করেছেন—
“ভারত সময়মতো, মানসম্পন্ন ত্রাণ পাঠায়; পাকিস্তান পাঠায় মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার।”
জাতিসংঘের কিছু ত্রাণ সংস্থা জানিয়েছে—
“মানবিক সহায়তা কখনোই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া উচিত নয়। এটি সহায়তার উদ্দেশ্য নষ্ট করে।”
আন্তর্জাতিক রেডক্রস বলেছে—ত্রাণ পাঠানোর ক্ষেত্রে ‘zero negligence’ বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন উঠছে—
পাকিস্তানের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কি মানহীন ত্রাণ পাঠানো হয়েছে?
দেশটি বর্তমানে—
IMF ঋণে জর্জরিত
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কম
খাদ্য আমদানিতে সমস্যা
দেশীয় পণ্য উৎপাদন কম
অনেকে বলছেন—
পাকিস্তান নিজের জনগণকেই পর্যাপ্ত খাদ্য দিতে পারছে না, অন্য দেশের ত্রাণ পাঠানোর অবস্থা কোথায়?
ইন্টারনেট ভরে গেছে হাস্যরস আর ট্রোলে—
“এটাই পাকিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা।”
“ত্রাণ নয়, ট্র্যাশ পাঠিয়েছে।”
“বাংলাদেশকে গালি দিয়ে শ্রীলঙ্কায় মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার পাঠায়!”
অনেকে বলছেন—পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সাহায্যকে ‘আত্মসম্মানহীনভাবে’ উপস্থাপন করেছে।
শ্রীলঙ্কা ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে এই কনসাইনমেন্টের বিস্তারিত তদন্ত করা উচিৎ—কোন ধরণের ঘোষণা ছিল, উপস্থাপনায় কোন ভুল হয়েছে কিনা।
রিলিফ হেল্পের ক্ষেত্রে “মান” ও “সময়োপযোগিতা” একইরূপ গুরুত্ব পায়—দ্রুত পাঠানো হলে কিন্তু কার্যকর না হলে তা সহায়তার অর্থহীনতা হয়ে দাঁড়ায়।
পাকিস্তানকে পরবর্তী ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে যাতে সহায়তা পাঠানোর সময় এমন ভুল না হয়।
ভুক্তভোগীদের জন্য নিরাপদ ও মানসম্পন্ন ত্রাণ উপকরণ নিশ্চিত করা আবশ্যক—কোনো দেশীয় রাজনৈতিক বা অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে ত্রাণের মান কমিয়ে দেওয়া যায় না।
এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ায় মানবিক সহায়তার মান ও দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন সামনে এনেছে।
পাকিস্তান হয়তো মানবিক উদ্দেশ্যে ত্রাণ পাঠাতে চেয়েছিল, কিন্তু—
পরিকল্পনার ব্যর্থতা
গুদাম ব্যবস্থাপনার ভুল
মানহীন প্রক্রিয়া
এবং ত্রাণ পাঠানোর তাড়াহুড়ো
এই সব মিলিয়ে দেশের আন্তর্জাতিক ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার মতো বিপর্যস্ত দেশের জন্য সহায়তা পাঠানো জরুরি, কিন্তু মানহীন বা মেয়াদোত্তীর্ণ ত্রাণ পাঠানো কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।