Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

অসহায় আত্মসমর্পণ শেষ দিন সাড়ে ৩ ঘণ্টায় শেষ গম্ভীরের ভারত ক্লাব স্তরের ক্রিকেট খেলে ঘরে চুনকাম দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে

গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে ভারতীয় দল আবারও লজ্জার মুখোমুখি হল নিউ জ়িল্যান্ডের পর এবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ঘরের মাঠে ৪০৮ রানে হারল ভারত গুয়াহাটিতে

ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক গৌরবময় দিন রয়েছে কিন্তু গুয়াহাটির টেস্ট ম্যাচটি ভারতের ক্রিকেটের জন্য এক লজ্জাজনক অধ্যায় হয়ে রইল। গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে ভারতীয় দলের উজ্জ্বল দিনগুলি এখন যেন অতীতের এক সোনালি অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সময়ের দল ছিল শক্তিশালী এবং প্রতিটি ম্যাচে তাদের দাপট ছিল অবিশ্বাস্য। তবে গুয়াহাটির সেই দিনটা ছিল একেবারে ভিন্ন। যখন ভারতীয় দল আট উইকেট হাতে নিয়ে শেষ দিনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল তখনও তাদের মধ্যে একটি ক্ষীণ আশা ছিল। সকলেই আশা করছিল যেন কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে এবং ভারতীয় দল এই বিপদের মুখ থেকে মুক্তি পায়। তবে ক্রিকেটের অদ্ভুত নিয়ম এবং খেলার অনিশ্চয়তার জন্য কখনও কখনও এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটে, এটাই বিশ্বাস করে মাঠে নামতে চেয়েছিল ভারতীয় দল।

কিন্তু বাস্তবতা প্রমাণ করে দিল, এই ভারতীয় দলের জন্য অলৌকিক কিছু সম্ভব নয়। দিনের শেষে ভারতের অবস্থান ছিল একেবারে বিপর্যস্ত এবং সেদিনের ম্যাচটি ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক দিনগুলির মধ্যে একটি হয়ে রইল। এই ম্যাচের পর ভারতের ক্রিকেট প্রেমীদের মনে এক ভয়াবহ শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ছড়িয়ে পড়েছিল, যা সহজে কাটানো সম্ভব ছিল না।

গুয়াহাটির এই টেস্ট ম্যাচটি ভারতীয় ক্রিকেট দলের জন্য এক বড় শিক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। এটি প্রমাণ করে দিল যে কোনও কিছুই স্থায়ী নয়। গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে যে ভারতীয় দল একসময় অদম্য ছিল, তারা এখন অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। সিডনি টেস্টের মতো ম্যাচ বাঁচানোর স্মৃতিগুলি খুব দ্রুত মুছে যেতে পারে এবং তার জায়গায় আসে নতুন বাস্তবতা। এই ম্যাচে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ ছিল ভেঙে পড়া এবং দলের মনোবলও একেবারে নিচে নেমে গিয়েছিল।

যদিও ভারতীয় দলের জন্য এই হার ছিল বড় একটি আঘাত, তবুও এই ঘটনা তাদের জন্য নতুন করে কিছু শিখানোর সুযোগ ছিল। ক্রিকেটের অদ্ভুত নিয়ম ও ঘটনা কখনও কখনও অবিশ্বাস্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু যখন বাস্তবতা কঠিন হয়ে ওঠে, তখন এটি প্রতিটি দলের জন্য কঠিন সময় হয়ে দাঁড়ায়। এই ম্যাচটি ভারতের ক্রিকেট দলকে আরও সতর্ক এবং সচেতন করে তুলেছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন পরাজয় পুনরায় না ঘটে।

ভারতীয় ক্রিকেটের এই লজ্জাজনক দিনটি শুধু একটি ম্যাচের ফলাফল নয়, বরং দলের জন্য একটি বড় শিক্ষা ছিল, যে দল যত শক্তিশালীই হোক না কেন, পরাজয় কখনও আসতে পারে এবং সেটি একান্তভাবে দলের মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের সামনে সিডনি কিংবা লর্ডসের মতো চ্যালেঞ্জ ছিল না, বরং গুয়াহাটির পিচে দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী স্পিন আক্রমণ এবং ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয় ছিল এক ভয়াবহ সংগ্রাম। ২০২১ সালে সিডনিতে ভারত যেভাবে পুরো দিনের জন্য ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচিয়েছিল, সেই কাজ যাঁরা করেছিলেন, সেই হনুমা বিহারি দীর্ঘদিন জাতীয় দল থেকে বাইরে। আর রবিচন্দ্রন অশ্বিন, যিনি এক সময় ভারতের অন্যতম ভরসার জায়গা ছিলেন, তিনি গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় খেলার পর নিজেকে অবসর নিতে বাধ্য করেছিলেন। আর সেই সময় এই জওয়ানদের জায়গায় নতুন ব্যাটসম্যানরা কোনও জাদু দেখাতে পারেননি। গত ইংল্যান্ড সফরে মহম্মদ সিরাজ, জসপ্রীত বুমরাহরা চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি, কিন্তু তারা তাও ম্যাচ হারিয়ে ফিরেছিল।

গুয়াহাটির পিচে ভারতের বিপর্যয়: ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়

ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অনেক গৌরবময় মুহূর্ত আছে তবে গুয়াহাটির পিচে ২০২১ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া একটি হারের ঘটনা কিছুটা আলাদা। ভারতের ক্রিকেট প্রেমীরা এখনও ভুলতে পারেনি সেই মুহূর্ত যখন ৫৪৯ রানের লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয়ে তাদের স্কোর দাঁড়িয়ে ছিল মাত্র ১৪০ রানে। এটি ভারতের জন্য ছিল এক দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক পরাজয় যা ক্রিকেট ইতিহাসে দীর্ঘদিন মনে থাকবে।

গুয়াহাটির পিচের আক্রমণাত্মক স্পিন শক্তি এবং ভারতের ব্যাটিংয়ের অবস্থা একত্রিত হয়ে যে বিপর্যয় তৈরি করেছিল তা ছিল নজিরবিহীন। প্রথম ইনিংসে ভারতের সংগ্রহ ছিল যথেষ্ট ভালো কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে চরম ব্যর্থতা দেখানো হয়। ৫৪৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা হাল ধরতে পারেননি। পিচের অবস্থা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং শক্তি ভারতের ব্যাটসম্যানদের জন্য এক ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

এই পরাজয় শুধু ভারতের ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা ছিল না বরং এই হারটি ভারতের স্পিন শক্তি এবং দলের খেলার মনোবলকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল। পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলি ভারতের স্পিন শক্তির উপর সফলভাবে আক্রমণ চালিয়েছে, যা ভারতের স্পিন ইতিহাসের জন্য একটি বড় ধাক্কা এটি ভারতের ক্রিকেট দলের জন্য এক গভীর উদ্বেগের বিষয় ছিল এবং তাদের খেলার ক্ষেত্রে এক নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয়

news image

ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ ছিল দুর্বল এবং দলের স্পিন শক্তি সহ অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলোও দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতি ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন একটি ঘটনা হয়ে রইল যা তার জন্য একটি বড় শিক্ষা ছিল। ভারতীয় ক্রিকেট দলের জন্য এ ধরনের পরাজয় তাদের আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানে এবং ভবিষ্যতে আরও মনোযোগী এবং পরিকল্পিতভাবে খেলার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে

এই ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতির জন্য একটি সঙ্কটমুখী মুহূর্ত ছিল এবং দলের জন্য এটি একটি কঠিন সময় ছিল, তবে একই সাথে এটি দলের জন্য নতুন উদ্যোগ এবং মনোভাবের সৃষ্টি করেছিল এই পরাজয়টি শুধু একটি খেলার পরাজয় নয় বরং ভারতের ক্রিকেট দলের পুনর্গঠন এবং উন্নতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে একসময় এমন স্পিনাররা গর্বের বিষয় ছিল যাদের মধ্যে বিষান সিংহ বেদি, অনিল কুম্বলে, হরভজন সিংহের মতো প্রতিভাধররা ছিলেন। কিন্তু এখন সেই দেশের মাঠেই যে স্পিনারেরা খেলে গেছেন, তাঁদের কেউ বিখ্যাত হয়ে গেছেন, কেউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের নাম ছড়িয়ে দিয়েছেন ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয়ে একের পর এক অখ্যাত স্পিনাররা ভারতের মাঠে এসে নাম কামিয়েছেন। প্রথমে স্টিভ ও'কিফ, তারপর অজাজ পটেল মিচেল স্যান্টনার শোয়েব বশির, সাইমন হারমার এদের সবাই ভারতের মাঠে এসে খেলা শেষ করে শিরোনামে চলে এসেছেন

এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় দলের জন্য এই হারের দায়ভার একমাত্র ক্রিকেটারদের ওপর না ফেলা উচিত। দেশের কোচের নেগেটিভ মনোভাব আর ব্যাটসম্যানদের উপর আস্থাহীনতা ভারতীয় দলের ভরসার অভাবের অন্যতম কারণ। এক দিকে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, অশ্বিনের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছিলেন, কিন্তু তাদের অভাব এখন স্পষ্ট। সুতরাং, কোনো ব্যাটসম্যান যদি এলোমেলো শট খেলে আউট হয়, তাহলে সেই ব্যাটসম্যানই দায়ী। কিন্তু কোচ সীতাংশু কোটাক কি একবারও কোন উপদেশ দেন? এমন প্রশ্ন উঠতে পারে। কোচের ভূমিকা কোথায়? আধুনিক ক্রিকেটে, যেখানে প্রযুক্তি দিয়ে দলের দুর্বলতা খুঁজে বের করা সহজ, সেখানে ভারত কেন পিছিয়ে যাচ্ছে?

ক্রিকেটের মধ্যে কিছু সাধারণ বিধি রয়েছে। ক্লাব স্তরের ক্রিকেট খেললেও কোচরা তাদের ব্যাটসম্যানদের শেখান কখন আগাতে হবে, কখন পেছন দিকে খেলতে হবে। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা সেই সাধারণ শটগুলোই ভুলে গেছেন। যত বড় নামই থাকুক না কেন, খেলার মৌলিকতা থেকে দূরে সরে যাওয়া তাদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে

অতীতে ভারতীয় দলের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস ছিল, তা এখন প্রায় বিলুপ্ত। ক্রিকেটে যা কিছু ভালো শট খেলার জন্য প্রয়োজন, তা এখন প্রায় ভুলে গেছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। একাধিক শট খেলার মধ্যে এমন ভুল হয় যে, পাড়ার ক্রিকেটেও তা দেখা যায় না। এই পরিস্থতিতে যদি কোচও ভুলে যান কিভাবে খেলানো উচিত, তাহলে ম্যাচের ফলাফল তো এমনই হবে।

যতই খারাপ হোক না কেন, একটা জিনিস স্পষ্ট ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রতি জনতার আস্থা এখনও অটুট। তবে সামনে যা রয়েছে, তা নিয়ে ভাবনা প্রয়োজন। পরবর্তী সিরিজ শ্রীলঙ্কায় এবং তার পরের বছর অক্টোবরের মধ্যে আরও চ্যালেঞ্জ আসছে। ভারত যদি তার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারে, তবে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে।

একের পর এক ব্যর্থতার পর, রবীন্দ্র জাডেজা প্রমাণ করেছেন, কখনও কখনও সঠিক মানসিকতা নিয়ে খেললে যেকোনো পিচে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব। জাডেজা, যিনি পুরনো ভারতীয়দের মধ্যে একমাত্র মাঠে দাঁড়িয়ে লড়াই করছেন, এই ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে দেশের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর এই মানসিকতা, পরিশ্রম এবং বুদ্ধিমত্তা আজকের দিনের ক্রিকেটে দরকার

ভারতের ক্রিকেট দল যদি তার উপর আস্থা রাখতে না পারে তবে পরবর্তী ম্যাচে শ্রীলঙ্কা বা অন্য যে কোনও শক্তিশালী দলেও একইভাবে হারতে হতে পারে। এমনকি ভারতের ক্রিকেটকে দীর্ঘ সময়ের জন্য লাল বলের ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে হতে পারে যদি তারা নিজেদের চিন্তা-ভাবনা না বদলায়

Preview image