Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

বর্ধমান সদরে ‘লুকানো খিদে’ মোকাবিলায় অভিনব উদ্যোগ— দুই স্কুলে রান্নাঘর সংলগ্ন সবজি বাগান তৈরি করল নিউট্রিশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি

বর্ধমান সদর প্যায়ারা নিউট্রিশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যাগে কাঞ্চননগর ডি এন দাস হাইস্কুলে এবং লাকুর্ডি বিদ্যামন্দিরে তৈরী করা হল রান্নাঘর সংলগ্ন বাগান। এই বাগানে লাগানো হল বেগুন, ফুলকপি,বাঁধাকপি,পালং শাক, নটে শাক,ধনে পাতা,ছোট পেঁয়াজ,টমেটো,লঙ্কা,সীম এবং বিনস। সোসাইটির সম্পাদক প্রলয় মজুমদার বলেন স্কুল পড়ুয়াদের অনুপৌষ্টিক উপাদানের ঘাটতি জনিত "লুকানো খিদে" (হিডেন হাঙ্গার) দূর করার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের রোগ প্রবণতা কমানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ। কাঞ্চননগর ডি এন দাস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ড: সুভাষচন্দ্র দত্ত বলেন এই উদ্যোগ মিড ডে মিলে বৈচিত্র আনবে। লাকুর্ডি বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা পাপড়ি সাহা বলেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এই উদ্যোগে রাসায়নিক মুক্ত টাটকা শাকসবজি পাবে।

বর্ধমান সদর প্যায়ারা নিউট্রিশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে দুই স্কুলে রান্নাঘর সংলগ্ন সবজি বাগান— ‘লুকানো খিদে’ দূরীকরণে জেলার অভিনব উদ্যোগ

পুষ্টিহীনতা ও ‘লুকানো খিদে’— Hidden Hunger— আজ শুধু দরিদ্র মানুষের সমস্যা নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে থাকা এক নীরব বিপদ। স্কুল–কলেজে পড়া বহু ছাত্রছাত্রী সময়মতো খাবার পেলেও তাদের শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থেকে বঞ্চিত থাকে। ফলে পড়াশোনায় অনীহা, রোগ–প্রবণতা, শারীরিক দুর্বলতা, মনোযোগের অভাব— এমন নানা সমস্যা দেখা দেয়। ঠিক এই কারণেই বর্ধমান সদর প্যায়ারা নিউট্রিশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে, যার লক্ষ্য— স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে তাদের সুস্বাস্থ্যের দিকে নিয়ে যাওয়া।

সোসাইটির উদ্যোগে কাঞ্চননগর ডি.এন. দাস হাইস্কুল এবং লাকুর্ডি বিদ্যামন্দির— এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৈরি করা হয়েছে পরিপূর্ণ রান্নাঘর সংলগ্ন সবজি বাগান। এই বাগান শুধু সবজি চাষের জায়গা নয়, বরং শিশুদের ‘পুষ্টি–অধিকার’-এর দিশারী হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বাগানে লাগানো হয়েছে— বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, নটে শাক, ধনে পাতা, ছোট পেঁয়াজ, টমেটো, লঙ্কা, সীম এবং বিনস— যা শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির অন্যতম উৎস।

এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক–শিক্ষিকা, সোসাইটির সদস্য, অভিভাবক এবং স্থানীয় সমাজের মানুষদের মধ্যে ইতিমধ্যেই উৎসাহের আবহ তৈরি হয়েছে। এই প্রতিবেদন সেই উদ্যোগের সামগ্রিক ছবি পাঠকের সামনে তুলে ধরছে।


? বর্ধমান সদরে পুষ্টি আন্দোলনের নতুন অধ্যায়

বর্ধমান জেলা বহুদিন ধরেই শিক্ষাক্ষেত্র, কৃষিক্ষেত্র এবং সমাজসেবামূলক কাজে পরিচিত। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল স্কুল পড়ুয়াদের পুষ্টি নিশ্চিত করার এক যুগান্তকারী প্রয়াস। প্যায়ারা নিউট্রিশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি— খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতা ছড়ানো এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে পুষ্টি সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে বহুদিন। তবে এ বছর তাদের উদ্যোগ অন্যবারের মতো সাধারণ নয়— বরং আরও বাস্তবমুখী, সহজলভ্য ও কার্যকর।

সোসাইটির সম্পাদক প্রলয় মজুমদার জানান—

“স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে অনুপৌষ্টিক উপাদানের ঘাটতি জনিত ‘লুকানো খিদে’ দূর করার লক্ষ্যেই আমরা এই বাগান তৈরি করেছি। রান্নাঘর সংলগ্ন এই বাগান থেকে প্রাপ্ত তাজা শাকসবজি মিড ডে মিলে ব্যবহার হবে, যা শিশুদের রোগ–প্রবণতা কমাতে সাহায্য করবে।”

এই মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার— এই প্রকল্প কোনও সাধারণ বাগান তৈরির উদ্যোগ নয়, বরং শিশুদের সুস্থতা নিশ্চিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।


? "লুকানো খিদে"— কেন এত বড় সমস্যা?

অনেকেই মনে করেন, পেট ভরে খাবার পেলেই শিশু সুস্থ থাকে। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে—

পেট ভরা খাবার ≠ পুষ্টিকর খাবার।

‘Hidden Hunger’ বা ‘লুকানো খিদে’ বলতে বোঝানো হয়—
শরীর প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, যেমন—

  • আয়রন

  • ভিটামিন এ

  • ভিটামিন বি১২

  • ফলিক অ্যাসিড

  • ম্যাগনেশিয়াম

  • জিঙ্ক
    ইত্যাদির ঘাটতি।

পেট ভরলেও যদি এসব উপাদান না থাকে, তবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সমস্যাই সবচেয়ে বেশি দেখা যায় স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে।

তার ফল—
● মনোযোগ কমে যায়
● রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়
● পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া
● শারীরিক বৃদ্ধি কমে যাওয়া
● হিমোগ্লোবিনের অভাবে অ্যানিমিয়া

তাই স্কুলে পুষ্টিকর খাদ্য অত্যন্ত জরুরি। রান্নাঘর সংলগ্ন বাগান নিশ্চিত করে—
টাটকা, রাসায়নিকমুক্ত, পুষ্টিকর খাবার।


? কোন কোন সবজি লাগানো হয়েছে বাগানে? এবং কেন?

এই প্রকল্পে যে সবজি লাগানো হয়েছে, সেগুলো শুধুই সহজলভ্য বলে নয়— বরং ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমানের কথা মাথায় রেখে নির্বাচন করা হয়েছে।

১. বেগুন

ফাইবারে সমৃদ্ধ— হজমশক্তি বাড়ায়।

২. ফুলকপি ও বাঁধাকপি

ভিটামিন সি ও কে— রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৩. পালং শাক ও নটে শাক

আয়রন, ক্যালসিয়াম— অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।

news image
আরও খবর

৪. ধনে পাতা

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট— রোগ দূর করে।

৫. ছোট পেঁয়াজ

শরীরে প্রয়োজনীয় সালফার যৌগ সরবরাহ করে।

৬. টমেটো

লাইকোপেন— চোখ ও ত্বকের জন্য উপকারী।

৭. লঙ্কা

ভিটামিন সি— রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।

৮. সীম ও বিনস

প্রোটিন— শিশুদের গ্রোথ বৃদ্ধিতে সহায়ক।

এভাবে প্রতিটি সবজির পুষ্টিগুণ মাথায় রেখে এই বাগান তৈরি করা হয়েছে।


? মিড-ডে মিল হবে পুষ্টিকর ও বৈচিত্র্যময়

কাঞ্চননগর ডি.এন. দাস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ড. সুভাষচন্দ্র দত্ত বলেন—
“এই বাগান মিড–ডে মিলে বৈচিত্র আনবে। ছাত্রছাত্রীরা নির্ভেজাল টাটকা সবজি পাবে, যা তাদের শরীরকে আরও সুস্থ রাখবে।”

মিড-ডে মিল সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। কিন্তু এই প্রকল্পে সবজি সংগ্রহের জন্য অনেক সময় বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়। বাজারের সবজি সবসময় ভালো মানের নাও হতে পারে। অনেক সময় রাসায়নিক সার বা কীটনাশক যুক্ত থাকে।

স্কুলের নিজেদের সবজি বাগান থাকলে—
✔ সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত খাবার
✔ নিয়মিত প্রাপ্তি
✔ খরচ কম
✔ ছাত্রছাত্রীদের হাতে কলমে কৃষিশিক্ষা
সবই নিশ্চিত করা সম্ভব।


? ছাত্রছাত্রীরা পাবে “রাসায়নিকমুক্ত টাটকা সবজি” — লাকুর্ডি বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকার বক্তব্য

লাকুর্ডি বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা পাপড়ি সাহা বলেন—
“এই উদ্যোগের ফলে ছাত্রছাত্রীরা রাসায়নিকমুক্ত টাটকা শাকসবজি পাবে। ছোটদের স্বাস্থ্যের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই তারা সুস্থ হয়ে বড় হোক, শক্তিশালী হোক। এই বাগান সেই লক্ষ্যেই তৈরি।”

তিনি আরও বলেন—
“এই বাগান ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশ–সম্পর্কিত শিক্ষা দিতেও সাহায্য করবে। তারা দেখবে কীভাবে বীজ থেকে গাছ হয়, কীভাবে প্রকৃতির যত্ন নেওয়া যায়।”


? শুধু পুষ্টিই নয়— শিশুদের হাতে–কলমে কৃষিশিক্ষা

এই প্রকল্পের একটি বড় সুবিধা হলো—
শিশুরা নিজেরা চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।

তারা শিখবে—
● বীজ বুনন
● মাটির পরিচর্যা
● সার প্রয়োগ
● জল দেওয়া
● কীটনাশকবিহীন চাষ
● পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া

এতে ছাত্রছাত্রীরা প্রকৃতির কাছে আরও ঘনিষ্ঠ হবে।


? স্থানীয় সমাজের অংশগ্রহণ— সাফল্যের চাবিকাঠি

এই প্রকল্পে স্থানীয় ক্লাব, অভিভাবক ও সমাজের প্রবীণ মানুষেরাও এগিয়ে এসেছেন।
অনেকেই বলেছেন—
“শিশুদের ভালো ভবিষ্যতের জন্য এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।”

অনেকে আবার নিজেরা চারা ও বীজও দিয়েছেন।


? ভবিষ্যতে আরও স্কুলে এই মডেল চালু হবে?

প্রলয় মজুমদার দিয়েছেন ইতিবাচক ইঙ্গিত—
“ফলাফল ভালো এলে আগামী বছরের মধ্যে আরও স্কুলে আমরা এই পদ্ধতি চালু করব।”


? উপসংহার: বর্ধমানের দুই স্কুলে ‘সবুজ বিপ্লব’— শিশুর পেটে শুধু ভাত নয়, পুষ্টিও পৌঁছবে

বর্ধমান সদর প্যায়ারা নিউট্রিশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিছক এক বাগান তৈরি নয়—
এটি
● জনস্বাস্থ্য মডেল
● পুষ্টি–নিরাপত্তার নতুন পথ
● শিশুর ভবিষ্যৎ গঠনের সেতু
● সমাজকে আরও স্বাস্থ্যবান করার দিশা।

আজকের এই উদ্যোগ আগামী দিনের জন্য এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

বর্ধমান সদর প্যায়ারা নিউট্রিশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে জেলার দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান— কাঞ্চননগর ডি.এন. দাস হাইস্কুল এবং লাকুর্ডি বিদ্যামন্দিরে তৈরি করা হয়েছে রান্নাঘর সংলগ্ন সবজি বাগান। পড়ুয়াদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা এবং মিড-ডে মিলকে আরও পুষ্টিকর ও বৈচিত্র্যময় করার লক্ষ্যেই এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্কুল প্রাঙ্গণে তৈরি বাগানে লাগানো হয়েছে স্থানীয় ও পুষ্টিগুণে ভরপুর বিভিন্ন সবজি— বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, নটে শাক, ধনে পাতা, ছোট পেঁয়াজ, টমেটো, লঙ্কা, সীম এবং বিনস।

সোসাইটির সম্পাদক প্রলয় মজুমদার জানান, স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে ‘লুকানো খিদে’ বা Hidden Hunger–এর সমস্যা অত্যন্ত গভীর। পেট ভরে খাবার পেলেও শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাব থেকে যায়, যার ফলে শারীরিক দুর্বলতা, রোগের প্রবণতা, ক্লান্তি, মনোযোগের ঘাটতি, এমনকি অ্যানিমিয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। তিনি বলেন— “রাসায়নিকমুক্ত তাজা শাকসবজি ছাত্রছাত্রীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং তাদের পুষ্টির ঘাটতি কমাবে।”

কাঞ্চননগর ডি.এন. দাস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ড. সুভাষচন্দ্র দত্ত জানান, এই বাগান স্কুলের মিড-ডে মিলে নতুন বৈচিত্র যোগ করবে। বাণিজ্যিক বাজারের সবজির ওপর নির্ভর না করে স্কুল নিজেরাই প্রতিদিন তাজা সবজি সংগ্রহ করতে পারবে। ফলে খাদ্যের গুণগতমান বজায় থাকবে এবং খাদ্য নিরাপত্তাও আরও নিশ্চিত হবে।

Preview image