স্বাগতার ‘গওহর জান’-এ মুগ্ধ দেবশ্রী রায়! বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর মতে, চরিত্রটিকে স্বাগতা যেভাবে জীবন্ত করে তুলেছেন, তা সত্যিই অনন্য। দেবশ্রী রায় বলেছেন, “ওর মতো করে ‘গওহর জান’ আর কেউ করতে পারবে না।
কলকাতার মঞ্চে বহুবার ‘নটী’ রূপে দেখা গিয়েছে স্বাগতা মুখোপাধ্যায়কে। শীতের শুরুতেই ফের তিনি ফিরিয়ে আনছেন সেই চরিত্রকে। তবে কয়েক দিনের ব্যবধানে দিল্লির মঞ্চেও ‘গওহর জান’-এর নতুন রূপ নিয়ে হাজির হবেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন উঠেছিল— ঘন ঘন ‘গওহর জান’-এর প্রত্যাবর্তনে কি দর্শক আকর্ষণ হারাবেন না? আনন্দবাজার ডট কম-কে স্বাগতা জানিয়েছেন, “তা কেন? কোনও চরিত্রকে বারবার করা মানে তাঁকে আরও গভীরভাবে জানা। সব কিছু এক নাটকে দেখানো সম্ভব নয়। তাই দর্শক যেন দু’টি নাটকই দেখেন, ভালো অংশগুলো থেকে শেখেন— তাতেই ‘নটী’ বেঁচে থাকবে আরও অনেক দিন।” অর্পিতার নাটক এখনও দেখা হয়নি, তবে তাঁর উপস্থাপনা দেখার ইচ্ছা প্রবল বলে জানালেন স্বাগতা।
স্বাগতার ‘গওহর জান’-এর সঙ্গে পরিচয় আজ থেকে এক দশক আগে। অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী ইপ্সিতা মুখোপাধ্যায় প্রথম ‘নটী’ মঞ্চস্থ করেন ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়িতে। সেই নাটক দিয়েই স্বাগতার প্রথম গওহর জান হওয়া। নিজের প্রযোজনায় দ্বিতীয়বার তিনি ফিরেছিলেন একই চরিত্রে। তারপর থেকে নিয়মিতই মঞ্চে ফিরে আসছেন ‘গওহর’ হয়ে।
মঞ্চে এই চরিত্রে একক অভিনয় করেন তিনি— একা স্বাগতা, সঙ্গে কেবল তানপুরা ও নেপথ্যের সুর। কখনও নটীর বাবা, কখনও মা, কখনও প্রেমিক— সব চরিত্রই তিনি একাই ফুটিয়ে তোলেন। নিজের কণ্ঠে পরিবেশন করেন গওহর জানের সব গান। একমাত্র বিরতির সময়েই মঞ্চ ছাড়েন।
তবে এত বছরের অভিজ্ঞতার পরও সহজ হয়ে ওঠেনি চরিত্রটা। স্বাগতার কথায়, “প্রতি বার ভয় হয়— কোনও তথ্য বা সাল ভুল বললে ইতিহাস বিকৃত হবে। তাই প্রতিবারই নতুন করে চরিত্রে ডুবে যাই।”
অভিনয়ের এই যাত্রায় তাঁকে মুগ্ধ করেছেন দেবশ্রী রায়ও। আনন্দবাজার ডট কম-কে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বলেন, “মাকে নিয়ে স্বাগতার অভিনয় দেখতে গিয়েছিলাম। এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরাতে পারিনি— অনবদ্য!”
গান শেখার অভিজ্ঞতাও কম মজার নয়। “বাঈজি ঘরানার কণ্ঠ একেবারে আলাদা। কয়েকটি গান তুলতে গিয়েছিলাম মসকুর আলি খানের কাছে, রন্তিদেববাবুর কাছেও। উনি প্রথমে আমার শাস্ত্রীয় গানের দক্ষতা শুনে তারপর গান তুলিয়েছিলেন।”
নিজের কণ্ঠস্বর নিয়ে একসময় আক্ষেপ ছিল স্বাগতার। তাঁর মনে হত, লতা মঙ্গেশকর বা আশা ভোঁসলের গান তাঁর গলায় মানায় না। কিন্তু ‘গওহর জান’-এর গান তুলতে গিয়েই তাঁর উপলব্ধি— তাঁর কণ্ঠই আসলে এই ঘরানার জন্য উপযুক্ত। বেগম আখতার, শুভা মুদ্গল বা ইলা অরুণের মতোই স্বতন্ত্র, শক্তিশালী।
নটী গওহর জানকে আত্মস্থ করতে গিয়ে স্বাগতা দেখেছেন তাঁর জীবনের এলোমেলো পথ, সংগ্রাম ও যন্ত্রণা। তাই আক্ষেপ করেন, “গওহর জান শুধু তওয়ায়েফ ছিলেন না। তিনি আমাদের গানের জগৎ ও বিনোদন দুনিয়াকে সমৃদ্ধ করেছেন। কিন্তু আমরা কি তাঁকে যথাযথ সম্মান দিতে পেরেছি?”
তবুও এই চরিত্র তাঁকে আজও টানে। কারণ, স্বাগতার মতে, “গবেষণালব্ধ চরিত্রে অভিনয় মানে নিজের ভিতরেও নতুন আলো খুঁজে পাওয়া।” তাই হয়তো তাঁরই কথায়, “গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো”— নটী হয়ে প্রতিবারই গওহর জানকে নতুন করে বাঁচিয়ে তোলেন তিনি।