Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

ইন্ডিগোর কর্মীদের খোলা চিঠি: ফ্লাইট বাতিলের পেছনে কি ‘ডিজিসিএ-চাপের’ কৌশল বর্ষপঞ্জায় বড় প্রশ্ন

ইন্ডিগোর কর্মীদের খোলা চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, সাম্প্রতিক ফ্লাইট বাতিল কোনও আকস্মিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং ডিজিসিএ-র ওপর চাপ তৈরি করার একটি পরিকল্পিত কৌশল। কর্মীদের অভিযোগ ঘিরে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিমান সংস্থাকে ঘিরে।

ভারতের বিমান পরিবহন শিল্পে ইন্ডিগো দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে। যাত্রীসংখ্যা, ফ্লাইটের বিস্তার এবং পরিষেবার পরিধি—সব দিক থেকেই সংস্থাটি দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইন্ডিগোকে ঘিরে একের পর এক বিতর্ক সামনে এসেছে, যা শুধুমাত্র যাত্রীদের অসুবিধাই বাড়ায়নি, বরং সংস্থার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্নও তুলেছে। হঠাৎ হঠাৎ করে বিপুল সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল, যাত্রীদের বিমানবন্দরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকা, পাইলট ও ক্রু-দের উপস্থিতি সংকট ইত্যাদি নিয়ে যেভাবে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, তার মধ্যেই সামনে এল কর্মীদের লেখা একটি ‘খোলা চিঠি’। চিঠির দাবি—বিমান বাতিলের ঘটনা কেবল কোনো আকস্মিক বা টেকনিক্যাল সমস্যা নয়; বরং এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত কৌশল, যার উদ্দেশ্য ছিল DGCA-র ওপর চাপ সৃষ্টি করা।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইন্ডিগোর কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত কাজের চাপ, বিশ্রামের অভাব, এবং বেতন কাঠামো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন। তাঁদের মতে, সংস্থা যেভাবে ফ্লাইট শিডিউল তৈরি করে, তা পাইলট ও ক্রু-দের স্বাভাবিক বিশ্রামচক্রের সঙ্গে মিলছে না। অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে, মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিরতির পরই নতুন রুটে উড়তে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ‘রেস্ট সাইকেল’ বা বিশ্রামের সময় মেনে চলা জরুরি হলেও, কর্মীদের দাবি ছিল—এসব নিয়ম যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে না। এই অসন্তোষ সময়ের সঙ্গে আরও তীব্র হচ্ছিল এবং কর্মীদের দাবি—ব্যবস্থাপনার কাছে অভিযোগ করলে সেই সমস্যাগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি।

এরপরেই আসে সেই বিস্ফোরক দাবি—কিছু উচ্চপদস্থ আধিকারিক নাকি পরিকল্পনা করেছিলেন, হঠাৎ করে বিপুল সংখ্যায় ফ্লাইট বাতিল করলে DGCA বাধ্য হবে ইন্ডিগোর অভ্যন্তরীণ নীতিগত সমস্যাগুলির দিকে নজর দিতে। শুধুমাত্র নিরাপত্তাজনিত প্রশ্ন তুলেই নয়, বরং ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট, স্টাফিং সংকট এবং বিমান নিরাপত্তা নিয়ম মানার প্রশ্নে DGCA-কে আরও নমনীয় অবস্থানে আনতে এই ‘দাবাবাজি’ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে এসেছে। যদি যাত্রীদের চরম অসুবিধা ঘটে, সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ বাড়ে, তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নাকি সংস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে না; বরং উল্‌টে সংস্থাকে সমস্যা সমাধানে “সময়” দেবে—কর্মীদের চিঠিতে এমনই ইঙ্গিত রয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, অনেক পাইলটকে নাকি পরিকল্পিতভাবে সেদিন ডিউটি-শিটে এমনভাবে বসানো হয়েছিল যাতে তাঁরা নিয়মমতো ‘ফিট-টু-ফ্লাই’ সার্টিফিকেট দিতে না পারেন। অত্যধিক কাজের চাপের কারণে ক্লান্তি বা ‘ফ্যাটিগ’ দেখিয়ে বিশ্রামের অধিকার কর্মীরা প্রয়োগ করেন। এটি আইনসিদ্ধ হলেও, এর সংখ্যাগত বৃদ্ধি ফ্লাইট বাতিলের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কর্মীদের দাবি, তাঁদের ক্লান্তি সত্যিই ছিল, কিন্তু সংস্থার নীতিগত দুর্বলতাকে প্রকাশ করার জন্যই সেই বিশ্রামের সুযোগকে ব্যবস্থাপনা একদিনে অধিক পরিমাণে আসতে দেয়। যাত্রীদের কাছে মনে হলো পাইলটরা হঠাৎ করেই বিশ্রামে চলে গেছেন। কিন্তু কর্মীদের বক্তব্য—এটি ছিল দীর্ঘদিনের বঞ্চনার পর স্বাভাবিকই।

ফ্লাইট বাতিলের জেরে যাত্রীরা প্রচণ্ড অসন্তুষ্ট হন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সরকার ও DGCA-র দিক থেকেও চাপ বাড়তে থাকে—কেন এত বড় সংখ্যায় বিমান বাতিল হলো, কাজের সূচি কি সঠিক ছিল, পাইলটরা কেন একযোগে বিশ্রামে গেলেন—প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। DGCA শুরু করে তদন্ত, ডাকে সংস্থার পদস্থ অফিসারদের, কাজের ঘণ্টা, বিশ্রামনীতি এবং ফ্লাইট শিডিউল নিয়ে রিপোর্ট চায়। কর্মীদের অভিযোগ—ঠিক এই পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা নিজেদের দাবিগুলো সামনে তুলতে চেয়েছিল। DGCA-র সঙ্গে আলোচনায় সংস্থার কিছু দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান চাইতে ইন্ডিগোর কিছু অংশ নাকি এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল।

এদিকে কর্মীরা নিজেদের চিঠিতে অভিযোগ করেন, তাঁদের প্রতি ব্যবস্থাপনার আচরণ অত্যন্ত রুক্ষ এবং অমানবিক। কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যে তাঁরা মানসিক চাপের কারণে স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের বক্তব্য—একদল আধিকারিক সংস্থার সুনাম নিয়ে যতটা ভাবেন, কর্মীদের সুস্থতা নিয়ে তার অর্ধেকও ভাবেন না। ফ্লাইট বাতিলের ঘটনা ঘটার পর যখন যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন, তখনও নাকি ব্যবস্থাপনা বোঝানোর চেষ্টা করে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে পাইলট ও ক্রু-দের ‘দায়িত্বহীনতা’র কারণে। এতে কর্মীরা আরও অসন্তুষ্ট হন এবং গণমাধ্যমে সত্য তুলে ধরার প্রয়োজন অনুভব করেন।

চিঠির ভাষা ও অভিযোগের জেরে সংস্থার অভ্যন্তরে আরও অস্থিরতা বেড়েছে। অনেক কর্মী মনে করছেন—যদি বিষয়টি চাপ সৃষ্টি করে DGCA-কে নমনীয় করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তবে সেই কৌশল অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিমান পরিবহন শিল্পে নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। DGCA-র ওপর চাপ সৃষ্টির মতো চেষ্টা বা যাত্রীদের ভোগান্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা গুরুতর নৈতিক প্রশ্ন তোলে। একইসঙ্গে, কর্মীদের আরেক অংশ বলে—যদি ব্যবস্থাপনা সত্যিই এমন কিছু করে থাকে, তবে সেটি আন্তর্জাতিক বিমান নিরাপত্তা মানদণ্ডের বিরোধী। যদি বিমান বাতিলের ঘটনা পরিকল্পিত হয়, তাহলে তা শুধু যাত্রী নয়, বিমানচালনা সম্পর্কিত টেকনিক্যাল নিরাপত্তাকেও বিপন্ন করতে পারে।

অন্যদিকে, সংস্থার পক্ষ থেকে ইন্ডিগো এই অভিযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাঁদের দাবি—ফ্লাইট বাতিলের ঘটনা ছিল কেবল অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি সংকট ও শিডিউলিং সমস্যার ফল। DGCA-র ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ইন্ডিগোর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, কর্মীরা যে সমস্যাগুলির কথা উল্লেখ করেছেন, তা সংস্থা খতিয়ে দেখছে এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। শিডিউল পুনর্বিন্যাস, অতিরিক্ত স্টাফ নিয়োগ, নতুন রোস্টার সিস্টেম—এসব ধাপে ধাপে কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়। তবে কর্মীদের খোলা চিঠি সামনে আসার পর জনমত এবং অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ আরও বেড়েছে।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে বিমান পরিবহন শিল্প দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রচুর নতুন ফ্লাইট চালু হচ্ছে, যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে, হাব-অ্যান্ড-স্পোক মডেলে বিমানবন্দরের ব্যস্ততাও বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে কর্মীসংখ্যা বা বিশ্রাম কাঠামো বাড়ছে না। ফলে ইন্ডিগোর মতো বড় সংস্থার ক্ষেত্রেও কর্মীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি—এই শিল্পে ‘ফ্যাটিগ’ বা ক্লান্তি একটি গুরুতর নিরাপত্তা সমস্যা। পাইলটদের স্বাভাবিক বিশ্রামচক্র বজায় রাখা না গেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কর্মীদের অভিযোগ সত্য হলে এটি শুধুমাত্র ইন্ডিগোর জন্য নয়, দেশের বিমান নিরাপত্তার জন্যও উদ্বেগজনক।

DGCA চিঠির অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখছে। যদি দেখা যায়, কর্মীদের দাবি সত্য, তাহলে এটি সংস্থার বিরুদ্ধে বড় ধরনের নীতিগত প্রশ্ন তুলবে। আর যদি দেখা যায় অভিযোগ অতিরঞ্জিত অথবা ভুল ব্যাখ্যার ফল, তাহলে সংস্থার পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা আসতে পারে। তবে একথা ঠিক যে, এই ঘটনার পর ইন্ডিগোকে কর্মী কল্যাণ ও শিডিউল নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতেই হবে—কারণ এই বিতর্ক একবারে অনেকগুলি ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতাকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।

news image
আরও খবর

সংস্থার শীর্ষ কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন যাত্রীদের জন্য পরিষেবা উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। পাশাপাশি কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বার্তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিমান বাতিল এবং DGCA-চাপের অভিযোগ যে ঝড় তুলেছে, তা এত দ্রুত থামার নয়। কর্মীদের খোলা চিঠি এখন দেশের বিমান পরিবহন খাতে শ্রমনীতি, নিরাপত্তা, কাজের চাপ এবং কর্পোরেট সিদ্ধান্তের নৈতিকতা নিয়ে একটি বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন শিল্পে ইন্ডিগো এমন এক নাম, যা দীর্ঘদিন ধরেই যাত্রীর আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। বিশাল বহর, দেশের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বেশি রুট কাভার করা, সময়নিষ্ঠা—সব মিলিয়ে ইন্ডিগো নিজেকে শীর্ষস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সংস্থাটিকে ঘিরে একের পর এক বিতর্ক সামনে আসতে শুরু করেছে। হঠাৎ ব্যাপক সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল, যাত্রীদের অস্বস্তি, বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা, এবং শেষ পর্যন্ত পাইলট ও অন্যান্য কর্মীদের দ্বারা প্রকাশিত একটি খোলা চিঠি—এসব ঘটনাই যেন একজোট হয়ে ইন্ডিগোর কার্যপদ্ধতি নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলছে। কর্মীদের সেই চিঠিতেই উঠে এসেছে সবচেয়ে বড় বিস্ফোরক দাবি—ফ্লাইট বাতিলের ঘটনা নাকি ছিল একটি পরিকল্পিত কৌশল, যার উদ্দেশ্য ছিল DGCA-র ওপর চাপ তৈরি করা।

চিঠিটি প্রকাশ্যে আসার পর বিমান পরিবহন শিল্পে আলোড়ন পড়ে যায়। কর্মীদের বক্তব্য, বহুদিন ধরেই তাঁরা অতিরিক্ত কাজের চাপ, বিশ্রামের অভাব এবং স্বাভাবিক মানবিক সুবিধার ঘাটতি নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু অভিযোগ জানানো হলেও তা নাকি যথাযথভাবে সমাধান করার কোনও প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি। তারা উল্লেখ করেন, ইন্ডিগোর ফ্লাইট শিডিউলিং এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে পাইলটদের প্রায়ই তাঁদের ‘ডিউটি আওয়ার’ সীমা অতিক্রম করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, পাইলটের নির্দিষ্ট বিশ্রামের সময় মানতেই হবে। শারীরিক বা মানসিক ক্লান্তি থাকলে তাদের ‘ফিট-টু-ফ্লাই’ সার্টিফিকেট দেওয়া উচিত নয়, কারণ ক্লান্ত পাইলট বিমান চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। এই নিয়মই নাকি ইন্ডিগো বহুদিন ধরে লঙ্ঘন করে চলেছিল বলে কর্মীদের দাবি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, হঠাৎ‐হঠাৎ এতগুলো ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পেছনে শুধুমাত্র পাইলটদের বিশ্রাম বা শিডিউলিং সমস্যা নেই; বরং কিছু উচ্চপদস্থ আধিকারিক নাকি ভেবেছিলেন—এভাবে বিপুল সংখ্যক বিমান বাতিল হলে DGCA ঘটনাটিকে গুরুত্ব সহকারে নেবে। তারা নাকি বিশ্বাস করতেন, পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তবে DGCA বাধ্য হবে সংস্থার ওপর আর্থিক বা নীতিগত চাপ কমাতে, তদন্ত স্থগিত রাখতে বা কিছু নীতিগত শর্ত শিথিল করতে। কর্মীদের দাবি, চাপ সৃষ্টি করার এই অদ্ভুত কৌশলের শিকার হয়েছেন যাত্রীরা, এবং সেটা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে।

আরও অভিযোগ উঠেছে, বহু পাইলটকে নাকি এমনভাবে শিডিউল করা হয়েছিল যে তাঁরা আইনগতভাবে ‘ফ্লাই’ করার অবস্থায় থাকবেন না। অতিরিক্ত কাজের চাপ, একটানা ফ্লাইট এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের কারণে একদিনে বহু পাইলট তাঁদের বিশ্রামের অধিকার প্রয়োগ করেন। স্বাভাবিক অবস্থায় এটি আইনসিদ্ধ। কিন্তু কর্মীদের মতে, সংস্থার অভ্যন্তরে এমন পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল যাতে একই দিনে বেশি সংখ্যক পাইলট ক্লান্তি দেখিয়ে বিশ্রামে যান। এর ফলে একসঙ্গে বহু ফ্লাইট বাতিল হয়, যা দেখলে মনে হয় এটি ‘অপ্রত্যাশিত’ ঘটনার ফল। কিন্তু কর্মীদের দাবি—এটি ছিল ব্যবস্থাপনার নীরব অনুমোদনপ্রাপ্ত ঘটনা, যা তারা বোঝেননি বা থামানোর চেষ্টা করেননি।

ফ্লাইট বাতিল হওয়ার ফলে হাজার হাজার যাত্রী বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় ছিলেন। কারও বিদেশগমন ব্যাহত হয়েছে, কারও পারিবারিক অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি, কেউ আবার গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল মিটিংয়ে পৌঁছাতে পারেননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় জমতে থাকে ক্ষোভের পাহাড়। ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ তখন ব্যাখ্যা দেয় কর্মীসংক্রান্ত ‘অপ্রত্যাশিত অনুপস্থিতি’র কথা। কিন্তু কর্মীদের খোলা চিঠি যখন প্রকাশ্যে আসে, তখন চিত্রটি আর এত সরল থাকে না। কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা মানদণ্ড, এবং ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে আসে।

সংস্থার অভ্যন্তরীণ আচরণ নিয়ে কর্মীদের অভিযোগ আরও উদ্বেগজনক। চিঠিতে বলা হয়, তাঁদের সঙ্গে নাকি প্রায়ই রুক্ষ ভাষায় কথা বলা হয়, কাজের চাপ সামলাতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে তাদের দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়, এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে যে উদ্বেগ তারা প্রকাশ করেন তা নাকি অগ্রাহ্য করা হয়। তারা মনে করেন—যে সংস্থা যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সময়নিষ্ঠতার কথা বলে বাজারে নিজেকে প্রচার করে, সেই সংস্থাই নাকি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মান বজায় রাখতে ব্যর্থ।

বিমান বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লান্তি বা ‘ফ্যাটিগ’ বিমানচালকদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিভিন্ন দেশে পাইলট বিশ্রাম সংক্রান্ত আইন অত্যন্ত কঠোর। বিশ্রামের সুযোগ না থাকলে ছোট ভুলই বড় দুর্ঘটনায় পরিণত হতে পারে। ফলে কর্মীদের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তবে এটি শুধু ইন্ডিগোর নয়, পুরো দেশের বিমান নিরাপত্তার জন্য বড় বিপদ।

DGCA ইতিমধ্যেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। তারা কর্মঘণ্টা, রোস্টার, বিশ্রাম রেকর্ড এবং বাতিল হওয়া ফ্লাইটের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে। যদি তদন্তে উঠে আসে যে অভিযোগ সত্য, তবে ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। আবার সংস্থার দাবি সত্য হলে, যারা ‘ভুল তথ্য ছড়িয়েছে’ তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তবে যাই হোক, এই ঘটনার ফলে ইন্ডিগোকে তাঁদের মানবসম্পদ নীতি, নিরাপত্তার মানদণ্ড এবং কর্মপরিবেশ নিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতেই হবে।

এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি সংস্থার অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, বরং দেশের বিমান শিল্পে শ্রমনীতি ও নিরাপত্তা সংস্কৃতি নিয়ে বৃহত্তর আলোচনা শুরু করেছে। কর্মীদের খোলা চিঠি দেখিয়ে দিয়েছে—যাত্রীদের সুরক্ষা ও স্বাচ্ছন্দ্যের পিছনে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের প্রতি সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কতটা জরুরি। বিমান উড্ডয়ন শিল্পে ক্ষুদ্রতম বিচ্যুতিও বড় বিপদের কারণ হতে পারে। তাই একটি সংস্থার অভ্যন্তরীণ নীতি, কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা এবং কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব—সবকিছুর ওপর নতুন করে আলো ফেলেছে ইন্ডিগোকে ঘিরে এই বিতর্ক।

Preview image