এখানে আপনার লাইনের ভিত্তিতে একটি সংক্ষিপ্ত ও আকর্ষণীয় short description দিলাম— (কোনও হ্যাশট্যাগ বা সিম্বল ছাড়া) নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য সারমেয়দের উদ্ভব নেকড়ের কাছ থেকে হলেও তাদের শরীরে থাকা নেকড়ের ডিএনএ শুধু বিবর্তনের অবশিষ্টাংশ নয় প্রায় ২০ হাজার বছর আগে পোষ মানানোর সময়ের বাইরে অন্য কোনও প্রক্রিয়ায় এই জিন এসে থাকতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা কেন এবং কীভাবে এই ডিএনএ সারমেয়দের জিনে প্রবেশ করল তা নিয়েই এখন শুরু হয়েছে নতুন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান
মানুষের অন্যতম প্রিয় পোষ্য সারমেয়কে আমরা আজ যেভাবে দেখি বুদ্ধিমান অনুগত, মানবসমাজে সম্পূর্ণভাবে মানিয়ে নেওয়া এমন চরিত্র কিন্তু তার জন্মসূত্রে ছিল না হাজার হাজার বছর আগে নেকড়ে নামক বন্য প্রাণী থেকেই কুকুরের উদ্ভব এই তথ্যটি বহুদিন ধরেই জানা কিন্তু সাম্প্রতিক এক মার্কিন গবেষণা কুকুরের বিবর্তন ইতিহাস সম্পর্কে নতুন বিস্ময়কর তথ্য সামনে এনেছে নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে যে পৃথিবীর বেশির ভাগ আধুনিক কুকুরের জিনে এখনও রয়ে গেছে নেকড়ের ডিএনএ এবং তা কোনও মৃত বিবর্তনের অবশিষ্ট চিহ্ন নয় বরং বহু শতাব্দী ধরে ঘটে যাওয়া আন্তঃপ্রজননের ফল
বাড়ির আদরের পোষ্যটি হয়তো দেখতে শান্ত, ছোটখাটো, কিংবা খেলাধুলাপ্রিয়। কিন্তু তার জিনের গভীরে হয়তো আজও ঘুমিয়ে আছে নেকড়ের বন্য বংশধারা। শুধু বড় আকৃতির কুকুর নয় ছোট আকারের চিহুয়াহুয়া থেকেও গবেষকেরা নেকড়ের ডিএনএ খুঁজে পেয়েছেন এই আবিষ্কারটি সাম্প্রতিক সময়ে কুকুর সম্পর্কিত ধারনাগুলিকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে
প্রায় ২০ হাজার বছর আগে মানুষ এবং নেকড়ের মধ্যে প্রথম সংযোগ সৃষ্টি হয়। তখন মানুষ ছিল যাযাবর, আর নেকড়ে ছিল বনে বিচরণশীল শিকারি। পরস্পরের প্রয়োজন এবং সহাবস্থানের ফলে নেকড়ে ধীরে ধীরে মানুষের সঙ্গী হয়ে ওঠে। বন্য স্বভাব থেকে ধীরে ধীরে গৃহপালিত স্বভাবে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ঠিক কোন সময়ে কুকুর পুরোপুরি গৃহপালিত হলো, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও একমত নন
কিছু গবেষণায় বলা হয়, কুকুরের গৃহপালনের শুরু প্রায় ১৮৩৭–১৯০১ সালের মধ্যে। আবার অন্য এক আধুনিক গবেষণা দাবি করে, কমপক্ষে ১০ হাজার বছর আগে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। নতুন গবেষণা আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছে—কুকুরের বিবর্তন শুধু প্রাচীন অতীতের ঘটনা নয়, বরং মানুষের সমাজে প্রবেশের পরও তাদের বন্য পূর্বপুরুষদের সঙ্গে যোগাযোগ চলতে থেকেছে
আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় হাজার হাজার আধুনিক কুকুর এবং নেকড়ের জিনোম বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিশ্লেষণে সামনে আসে বিস্ময়কর ফলাফল পৃথিবীর মোট কুকুর প্রজাতির প্রায় ৬৪ শতাংশের জিনে কোনও না কোনও মাত্রায় নেকড়ের ডিএনএ রয়েছে অর্থাৎ পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ কুকুর আজও নেকড়ের বংশধর
অড্রে লিন নামের এক জেনেটিক বিজ্ঞানী এই গবেষণা পরিচালনা করেন তাঁর মতে এত বছর ধরে বিজ্ঞানীরা ধরে নিয়েছিলেন যে কুকুরের জিনে নেকড়ের ডিএনএ থাকলেও তা বিবর্তনীয় অবশেষ যেন কোনও অতীত স্মৃতি। কিন্তু নতুন গবেষণা দেখাচ্ছে, এটি আদৌ অবশিষ্টাংশ নয়। বরং বহু শতাব্দী ধরে গৃহপালিত কুকুর এবং বন্য নেকড়ের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন হয়েছে, যার ফলে এই ডিএনএ এখনো কুকুরের শরীরে বহমান।
গবেষণা অনুযায়ী, নেকড়ে এবং কুকুরের জিনগত গঠন এতটাই কাছাকাছি যে, তাদের মধ্যে প্রজনন ঘটলে শাবক সম্পূর্ণ সক্ষমভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে এবং তারাও সন্তান জন্ম দিতে পারে। আগে মনে করা হতো, এই ঘটনা খুব বিরল। কিন্তু নতুন প্রমাণ বলছে বিগত কয়েক হাজার বছর ধরে নানা অঞ্চলেই নেকড়ে ও আধুনিক কুকুরের মধ্যে মিলনের ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষ করে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে বেড়ানো অ-গৃহপালিত কুকুরদের মধ্যে নেকড়ের ডিএনএ পাওয়া যাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। এই কুকুররা মানুষের বাড়িতে থাকে না, বরং মানুষের সান্নিধ্যে থেকেও বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। ফলে নেকড়ের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হওয়া অস্বাভাবিক নয়
গবেষকদের ধারণা, দলছুট স্ত্রী নেকড়ে এবং গ্রাম্য কুকুরদের মধ্যে বারবার প্রজননের ফলে কুকুরের জিনে নেকড়ের ডিএনএ ঢুকে পড়েছে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তা টিকে গেছে
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে
চেকোশ্লোভাকিয়ান উল্ফডগ সারলুস উল্ফডগ
এই দুই প্রজাতির ক্ষেত্রে নেকড়ের ডিএনএ প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। কারণ এদের উৎপত্তিই হয়েছে কুকুর এবং নেকড়ের সরাসরি আন্তঃপ্রজননের মাধ্যমে
পোষ্য হিসাবে ব্যবহৃত বড় প্রজাতিগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিএনএ পাওয়া গেছে—
গ্র্যান্ড অ্যাংলো-ফ্র্যাঙ্কাইস ট্রাইকালার হাউন্ড
যাদের জিনে প্রায় ৫ শতাংশ নেকড়ের ডিএনএ রয়েছে।
এরপরে আছে
সালুকি আফগান হাউন্ড
এদের ডিএনএ-তেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নেকড়ের বংশধারা রয়েছে।
তবে বড় কুকুর মানেই ডিএনএ বেশি এমনও নয়। উদাহরণস্বরূপ সেন্ট বার্নার্ড বড় আকৃতির হলেও এদের জিনে নেকড়ের ডিএনএ খুব কম
অন্যদিকে ছোট আকারের প্রজাতিতেও এটি পাওয়া যায়। যেমন
চিহুয়াহুয়া
যার শরীরে প্রায় ০.২ শতাংশ নেকড়ের ডিএনএ পাওয়া গেছে। এই পরিমাণ যদিও কম, তবু এ প্রজাতির শান্ত, ঘরোয়াভাব দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন।
গবেষকদের মতে, আধুনিক কুকুরের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য
আকারঘ্রাণশক্তি শিকারি ভাব আচরণগত প্রবণতা
এসবের ওপর নেকড়ের ডিএনএ একটি ভূমিকা পালন করে।
এটি শুধু অতীতের রেশ নয় বরং কুকুরের আচরণগত বিবর্তনের একটি সক্রিয় প্রভাবক।
যেসব সারমেয় শহরের রাস্তায় বা গ্রামের পথে বেড়ে ওঠে যাদের কোনও নির্দিষ্ট মালিক নেই তাদের নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শতভাগ ক্ষেত্রেই তারা নেকড়ের বংশধর। নেকড়ের ডিএনএ তাদের শরীরে স্থায়ীভাবে গেঁথে আছে। সম্ভবত তারা বছর বছর ধরে নেকড়ের সঙ্গে প্রজননের মাধ্যমে এই ডিএনএ বহন করছে
অড্রে লিনের মতে এই গবেষণা মানুষের দীর্ঘদিনের ভুল ধারণা ভেঙে দিয়েছে তিনি বলেন
কুকুরের জিনে নেকড়ের ডিএনএ খুবই কম থাকবে এই ধারণা ছিল প্রায় সকলের কিন্তু বিশ্লেষণ দেখিয়ে দিল বাস্তব তার বিপরীত
সহগবেষক লোগান কিস্টলার অবশ্য পরিষ্কার করে দিয়েছেন
এর অর্থ এই নয় যে আধুনিক গৃহপালিত নেকড়ে হঠাৎ আপনার বাড়িতে এসে পোষ্যের সঙ্গে মিলন করছে। এটি বহু প্রাচীন সময় ধরে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া
কুকুরকে আমরা আজ যেমন দেখি সেই রূপটি কিন্তু হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। হাজার হাজার বছর আগে মানুষের সঙ্গী হিসেবে প্রথম যেসব প্রাণী যোগ দিয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল নেকড়ে। নেকড়ের সেই বন্য জীবন থেকে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে আজকের পরিচিত সারমেয়ের রূপ ধারণ করেছে কুকুর। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে গল্পটি এখানেই শেষ নয়। আধুনিক কুকুরের শরীরে আজও প্রবাহিত হচ্ছে প্রাচীন নেকড়ের বংশধারা। বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল কুকুরের জিনে নেকড়ের যে ডিএনএ পাওয়া যায় তা শুধু বিবর্তনের একটি নিদর্শন বা বহু পুরনো স্মৃতি। সাম্প্রতিক গবেষণা সেই ধারণাকে পুরোপুরি পাল্টে দিল।
বিজ্ঞানীরা হাজার হাজার আধুনিক কুকুর এবং নেকড়ের জিন বিশ্লেষণ করে দেখেছেন পৃথিবীতে বিদ্যমান কুকুরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশের শরীরে এখনও রয়েছে নেকড়ের ডিএনএ। এর অর্থ হল আধুনিক কুকুর কেবল অতীতে নেকড়ের বংশধর হয়ে থেমে যায়নি। বরং দীর্ঘ কয়েক হাজার বছর ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে বন্য নেকড়ে এবং গৃহপালিত কুকুরের মধ্যে প্রজনন ঘটেছে। ফলে আজকের কুকুরদের শরীরে সেই জিন প্রবাহিত রয়েছে।
মানুষের সমাজে কুকুরের ভূমিকা দিন দিন বাড়লেও বনে বসবাসকারী নেকড়ের প্রভাব তাদের বংশে এখনও সুস্পষ্ট। গবেষকেরা বলছেন কুকুরের আকার আচরণ ঘ্রাণশক্তি এবং শিকারি প্রবৃত্তির মতো বহু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে নেকড়ের ডিএনএর সরাসরি সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ কুকুর যতই গৃহপালিত হোক তার চরিত্রের কিছু অংশ আজও সেই প্রাচীন বন্য পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া।
নয়া গবেষণা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে। গ্রাম বা ছোট শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো যেসব সারমেয় থাকে যাদের নির্দিষ্ট মালিক নেই তাদের শরীরে নেকড়ের ডিএনএ মেলানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কারণ এসব সারমেয় মানুষের কাছে থাকলেও প্রকৃতিতে অবাধ বিচরণ তাদের নেকড়ের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটাতে পারে। ফলে তাদের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্মে সেই জিন ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
গবেষণার ফলাফলে প্রমাণ মিলেছে যে প্রকৃতির যাত্রাপথ কখনও একরৈখিক নয়। মানুষ যেভাবে কুকুরকে গৃহপালিত প্রাণী বলে ভাবে প্রকৃতি সেই সীমারেখা মানেনি। বরং প্রকৃতি কুকুর এবং নেকড়ের মধ্যে জৈবিক সংযোগ বজায় রেখেছে হাজার বছরেরও বেশি সময়। মানুষের তৈরি নিয়ম প্রকৃতির কাছে অতি ক্ষুদ্র বিষয়। প্রকৃতি নিজের নিয়মে প্রাণীর রূপ গঠন করে এবং সেই রূপ সময়ের প্রবাহে ক্রমাগত বদলাতে থাকে।
এই আবিষ্কার শুধু কুকুরের বিবর্তন নিয়ে আমাদের ধারণাই বদলায়নি বরং দেখিয়ে দিয়েছে বন্য প্রাণী এবং গৃহপালিত প্রাণীর সম্পর্ক দীর্ঘকালের বিবর্তন একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া মানুষের সমাজে বাস করেও প্রাণীরা মাঝে মাঝে বন্য পূর্বপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে মানুষের তৈরি প্রজাতিগত সীমারেখা প্রকৃতির নিয়মে খুব সহজে ভেঙে যেতে পারে।
মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী কুকুরকে আমরা যতই শান্ত এবং পরিবার উপযোগী প্রাণী হিসেবে জানি তার দেহে আজও বহমান প্রাগৈতিহাসিক বনের স্পন্দন। সেই নেকড়ের রক্ত কুকুরের জিনে যে এখনও বেঁচে আছে তা শুধু বিস্ময়ের বিষয় নয় বরং বিজ্ঞান এবং প্রাণিবিজ্ঞানের জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আধুনিক জিন বিশ্লেষণ দেখিয়ে দিচ্ছে কুকুরের আচরণগত বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে তার বুদ্ধিমত্তা পর্যন্ত বহু দিক নেকড়ের ডিএনএর সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
গবেষকেরা বলেছেন ভবিষ্যতে আরও গভীর গবেষণা করলে জানা যাবে নেকড়ের কোন কোন বৈশিষ্ট্য কীভাবে কুকুরের প্রজাতিতে প্রভাব ফেলেছে এবং কোন কোন বৈশিষ্ট্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। এই তথ্য প্রাণীবিজ্ঞান জেনেটিক্স এবং বিবর্তনবিজ্ঞান তিন ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আপনার ঘরের শান্ত স্নেহময় পোষ্য সারমেয়টি হয়তো প্রতিদিন আপনার পাশে বসে থাকে আপনার সঙ্গে খেলে আপনার প্রতি ভালোবাসা দেখায়। তবু তার জিনের গভীরে ঘুমিয়ে আছে বহু হাজার বছর আগের বন্য নেকড়ের অচেনা ছায়া। এই ছায়াই কুকুরকে করেছে বিস্ময়কর এক প্রাণী এবং বিজ্ঞানকে দিয়েছে অনুসন্ধানের নতুন পথ। আধুনিক গবেষণা প্রমাণ করেছে কুকুর কেবল মানুষের সঙ্গী নয় বরং বিবর্তন এবং প্রকৃতির এক অনবদ্য দলিল।