হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল, অক্সফোর্ড ও জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—২০০৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শরীরে কীটনাশকের মাত্রা যত বাড়ছে, পুরুষের শুক্রাণুর মান ততটাই কমছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফল ও সব্জিতে ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করে প্রজননক্ষমতার উপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলছে।
ফল-সব্জি ও শাকপাতায় থাকা কীটনাশকের বিষ শরীরের জন্য হয়ে উঠছে নীরব ঘাতক। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত সীমার মধ্যে কীটনাশকের ব্যবহার নিশ্চিত করার কঠোর নিয়ম থাকলেও, বাস্তবে সেই নিয়ম পুরোপুরি মানা হচ্ছে না বলে দাবি উঠছে গবেষকদের তরফে। খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফএসএসএআই প্রতিটি খাদ্যপণ্যে কীটনাশকের মাত্রা পরীক্ষা করলেও, বাজারে বিক্রি হওয়া বহু ফল ও সব্জিতে ক্ষতিকর মাত্রায় রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে।
হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির ২০০৫ থেকে ২০২৫ সালের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে—যত বেশি কীটনাশক রক্তে মিশছে, পুরুষের শুক্রাণুর মান ততটাই খারাপ হচ্ছে। শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং পুরুষ বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি বাড়ছে। এই বিষাক্ত উপাদান শরীরে ঢুকে স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, এমনকি ক্যানসারের মতো ভয়ঙ্কর রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়।
‘জার্নাল এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিওনিকোটিনয়েড, অর্গানোফসফেট ও এন-মিথাইল কার্বামেট জাতীয় কীটনাশকগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। এই সব রাসায়নিক রক্তে মিশে শুক্রাশয়ের কোষ নষ্ট করে, হরমোন উৎপাদনে বাধা দেয় এবং প্রজননক্ষমতা হ্রাস ঘটায়। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এমনকি ধোয়ার পরেও কাঁচা আনাজ বা ফলের মধ্যে এই রাসায়নিকের অবশিষ্টাংশ থেকে যায়।
বিশেষ করে পালং শাকের মতো পাতাযুক্ত সব্জিতে পার্মাথ্রিন নামক নিউরোটক্সিনের উপস্থিতি বিপজ্জনক মাত্রায় ধরা পড়েছে। বাজার থেকে কেনা প্রায় ৭৬ শতাংশ পালং শাকে এই উপাদান পাওয়া গেছে। এই কারণে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন—শাকপাতা খাওয়ার আগে অন্তত ১৫ মিনিট নুন-জলে ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
বাড়িতে সহজ উপায়ে কীটনাশক দূর করার জন্য কয়েকটি কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন—বেকিং সোডা ও জলের মিশ্রণে সব্জি ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ধোয়া, অথবা সমান পরিমাণে জল ও ভিনিগার মিশিয়ে তাতে এক চিমটে নুন দিয়ে সেই দ্রবণে ফল বা শাকপাতা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখা। এতে প্রায় ৯০ শতাংশ কীটনাশক ধুয়ে যায়।
সবশেষে, বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা—চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ডিটক্স ডায়েট বা বিশেষ ডায়েট শুরু করবেন না। কারণ, বিষাক্ত কীটনাশক থেকে মুক্ত থাকতে যতটা প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সচেতনতা, ততটাই প্রয়োজন সঠিকভাবে ফল-সব্জি পরিষ্কার করে খাওয়া। সুস্থ প্রজননক্ষমতা ও দীর্ঘায়ুর চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে প্রতিদিনের এই ছোট অভ্যাসগুলিতেই।