শাস্ত্র বলছে নিজের কিছু জিনিস কখনওই কারও সঙ্গে ভাগ করা উচিত নয়। অজান্তেই এই অভ্যাস ক্ষতি ডেকে আনতে পারে আপনারই জীবনে। ব্যক্তিগত কিছু সামগ্রী অন্যকে দিলে নষ্ট হতে পারে সৌভাগ্য, বাড়তে পারে নেতিবাচক শক্তি এবং তৈরি হতে পারে মারাত্মক বিপর্যয়। তাই সতর্ক থাকুন, কোন জিনিসগুলি পরেও ভুল করে অন্যকে দেওয়া উচিত নয়, জানিয়ে দিচ্ছে শাস্ত্র।
মানুষ সামাজিক প্রাণী। পরিবার, বন্ধু কিংবা কাছের মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন জিনিস ভাগ করে নেওয়া আমাদের জীবনের এক স্বাভাবিক অভ্যাস। কাউকে সাহায্য করতে গিয়ে, বা বন্ধুত্বের খাতিরে আমরা অনেকেই নিজের ব্যক্তিগত জিনিস অন্যকে দিই। আবার অনেক সময় দেখা যায়, বন্ধুর পোশাক, গয়না, ঘড়ি কিংবা জুতো ধার নিয়ে ব্যবহার করা যা আজকাল খুবই সাধারণ একটি ঘটনা।
কিন্তু শাস্ত্র ও প্রাচীন আধ্যাত্মিক গ্রন্থগুলি বারবার সতর্ক করে দিয়েছে মানুষের জীবনে শুভ শক্তি ও অশুভ শক্তির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে এমন কিছু জিনিস কখনওই অন্যকে দেওয়া উচিত নয়।
আমাদের জীবনের প্রতিটি জিনিসই নাকি আমাদের শক্তি, মানসিক অবস্থা, ভাগ্য এবং আধ্যাত্মিক বলের সঙ্গে অদৃশ্যভাবে যুক্ত থাকে। ফলে নিজের ব্যবহৃত কিছু সামগ্রী কোনও কারণেই অন্যকে দিলে সেই শক্তির ধারায় পরিবর্তন আসে। যা একসময় জীবনে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কারও খারাপ সময় বা নেতিবাচক শক্তি আপনার জীবনে প্রবেশ করতে পারে, আবার আপনার শুভ শক্তিও কমে যেতে পারে আকারে-প্রকারে।
বন্ধুত্ব বা সম্পর্কের ভিত্তি যেখানে সমঝোতা, স্নেহ ও ভালোবাসা, সেখানে জিনিস ভাগ করে নেওয়া অনেক সময়েই ‘আস্থার নিদর্শন’ হিসেবে ধরা হয়।
বন্ধুর আজ জামা লাগবে, তাই আমাদের জামা দিয়ে দেওয়া এটা খুব স্বাভাবিক।
আবার কাউকে সাহায্য করতে গয়না বা ঘড়ি দিয়ে দেওয়া, বা কোনও অনুষ্ঠানে বান্ধবীর জুতো-পোশাক ধার নেওয়া এই অভ্যাস নতুন কিছু নয়।
কিন্তু শাস্ত্রের মতে, এই সাধারণ অভ্যাসই কখনও কখনও জীবনে অশুভ সময় ডেকে আনতে পারে।
আজকের এই প্রতিবেদনে জানব, কোন কোন ব্যক্তিগত সামগ্রী কখনওই অন্যকে দেওয়া উচিত নয় এবং কেন তা করা বিপজ্জনক হতে পারে।
প্রাচীন বিশ্বাস ও জ্যোতিষশাস্ত্র দু’দিকেই ঘড়িকে সময় ও ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
মানুষের জীবনে ‘সময়’ সবচেয়ে বড় শক্তি। আর এই শক্তিই নাকি ঘড়ির মাধ্যমে একদেহ থেকে অন্যদেহে স্থানান্তরিত হতে পারে।
শাস্ত্র বলছে
যার ঘড়ি আপনি পরলেন, তার সময়, তার শক্তি, তার ভাগ্যের ওঠা নামা অজান্তেই আপনার জীবনে প্রবেশ করতে পারে।
যদি সেই ব্যক্তি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যায়, তবে তার নেতিবাচক সময়ের অংশও আপনার জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।
একইভাবে আপনি যদি নিজের ঘড়ি অন্যকে দেন, তবে আপনার ‘সময়’ দুর্বল হয়ে পড়ে বলে বিশ্বাস।
এতে কর্মক্ষেত্রে বাধা, আর্থিক ক্ষতি, সম্পর্কের জটিলতা—এমন বহু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘড়ি কখনওই ধার দেওয়া উচিত নয়।
এমনকি কারও ঘড়ি ধার নেওয়াও এড়িয়ে চলতে হবে।
জীবনে সবচেয়ে বেশি সময় আমরা যে জিনিসের সঙ্গে থাকি, তা হলো জামাকাপড়।
প্রতিদিন আমাদের শরীরের ঘাম, স্পন্দন, শক্তি, আবেগ—সবকিছুই নাকি পোশাকের সঙ্গে মিশে যায়।
বাস্তু ও আধ্যাত্মিক শাস্ত্র বলে—
জামাকাপড়ে থাকে ‘ব্যক্তিগত শক্তি’।
এই শক্তি অন্য কেউ ব্যবহার করলে, সেই ব্যক্তির শক্তির সঙ্গে আপনার শক্তির সংঘর্ষ তৈরি হয়।
ফলে সৃষ্টি হয় নেতিবাচক প্রভাব।
মানসিক অস্থিরতা
আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া
বারবার বাধা আসা
ব্যক্তিগত শক্তির ক্ষয়
জীবনে অশান্তি
দুর্ভাগ্য বৃদ্ধি
শাস্ত্র জানায়—
যদি জামা দিতে হয়ই, নুনজলে ধুয়ে দিতে হবে।
এতে পোশাকের পুরনো শক্তি নষ্ট হয় এবং নতুনের নেতিবাচক প্রভাব কমে।
গয়না শুধু সাজের বস্তু নয়—ভারতের সংস্কৃতিতে এগুলি শক্তি, সমৃদ্ধি, ভালো ভাগ্য এবং দেবী শক্তির প্রতীক।
তাই গয়নার শক্তি নাকি খুব স্পর্শকাতর।
জ্যোতিষশাস্ত্র বলছে—
গয়নার মধ্যেও থাকে ‘আউরা’ বা শক্তিবল।
আপনি যখন সেটি অন্যকে দেন, তখন আপনার ভাগ্যের কিছু অংশ তার কাছে চলে যায়।
যার গয়না আপনি নিলেন—তার জীবনে যদি অশান্তি, আর্থিক সমস্যা বা নেতিবাচক শক্তি থাকে, তা সরাসরি আপনার জীবনে ঢুকে পড়তে পারে।
অর্থের ক্ষতি
দাম্পত্য অশান্তি
ক্যারিয়ারে বাধা
সম্পর্ক ভাঙন
স্বাস্থ্যহানি
শাস্ত্র অনুসারে, জুতো বা চটির সঙ্গে শনিদেবের সংযোগ রয়েছে।
শনিদেব কর্মফল প্রদানকারী দেবতা, এবং তাঁর শক্তি অত্যন্ত কঠোর।
শনি দোষ বাড়তে পারে।
এর ফল—
অর্থসঙ্কট
কর্মক্ষেত্রে সমস্যা
শারীরিক কষ্ট
পরিবারে ঝামেলা
সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হওয়া
এর মাধ্যমে সেই ব্যক্তির কর্মফল বা নেতিবাচক শক্তি আপনার জীবনে আসতে পারে।
কর্মজীবনে বাধা, বারবার ব্যর্থতা, প্রমোশন দেরি—এমন সব সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মানুষের জীবনে শক্তির প্রবাহ বা ‘এনার্জি’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বলে মনে করা হয়। প্রাচীন যোগশাস্ত্র, জ্যোতিষ, তন্ত্র, আধ্যাত্মিকতা এবং বাস্তুবিদ্যায় বলা হয়েছে—প্রত্যেক মানুষের চারপাশে এক ধরনের শক্তিবল বা আউরা থাকে, যা তার ভাগ্য, মানসিক অবস্থা এবং জীবনের ছন্দকে প্রভাবিত করে। এই শক্তি শুধু শরীর বা মনেই সীমাবদ্ধ নয়; আমাদের ব্যবহৃত জিনিস, পোশাক, অলঙ্কার, এমনকি দৈনন্দিন সামগ্রীতেও সেই শক্তির ছাপ রয়ে যায়।
এই কারণেই শাস্ত্রে সতর্ক করা হয়েছে—ব্যক্তিগত জিনিস অন্যকে দিলে বা অন্যের জিনিস ব্যবহার করলে দুই ব্যক্তির শক্তির আদান-প্রদান ঘটে। আপনি যে জিনিসটি দিলেন, তার সঙ্গে আপনার শক্তিবল অন্যের জীবনে প্রবেশ করতে পারে; আবার অন্য ব্যক্তির শক্তিও আপনার জীবনে ঢুকে পড়তে পারে। যদি দুই শক্তির প্রকৃতি এক না হয়—একটির শুভ শক্তি বেশি, অন্যটির অশুভ—তাহলে জীবনে শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।
এর ফলে ধীরে ধীরে শুভ শক্তি কমে যেতে পারে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে, আর্থিক সমস্যা বা মানসিক চাপ বাড়তে পারে। আবার অজান্তেই অন্যের নেতিবাচক সময়, দুর্ভাগ্য বা মানসিক অস্থিরতা আপনার জীবনে প্রবেশ করতে পারে। তাই শাস্ত্রীয় মতে, ব্যক্তিগত জিনিস শেয়ার করা অনেক সময় ক্ষতিকর বলে ধরা হয়।
যদি ব্যক্তি খুব কাছের হয়
যদি আপনার ও তার শক্তি মিলে যায়
যদি খুব প্রয়োজন হয়
তবে ব্যবহার করার আগে গঙ্গাজল বা নুনজল ব্যবহার করলে নেতিবাচক প্রভাব কমে
মানুষের জীবনে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। কাছের মানুষদের সঙ্গে জিনিস ভাগ করে নেওয়া আমাদের সংস্কৃতিরই একটি অংশ। কিন্তু শাস্ত্রের ভাষায়, ব্যক্তিগত কিছু সামগ্রী রয়েছে যেগুলি শরীরের মতোই মন ও শক্তির সঙ্গে অদৃশ্যভাবে যুক্ত থাকে। ফলে সেই জিনিসগুলি অন্যকে দেওয়া বা অন্যের কাছ থেকে নেওয়া আমাদের জীবনে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সময়, ভাগ্য, শক্তির মতো সূক্ষ্ম সব উপাদানই পোশাক, গয়না, ঘড়ি বা জুতোর মাধ্যমে নাকি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে প্রবেশ করতে পারে—এমনটাই বিশ্বাস বহু প্রাচীন গ্রন্থে।
জীবনে শুভ শক্তি ধরে রাখতে হলে নিজের ব্যক্তিগত জিনিস নিয়ে সচেতন থাকা জরুরি। সম্পর্কের খাতিরে সবকিছু ভাগ করে নেওয়া ভালো হলেও, কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ ব্যক্তিগত শক্তি দুর্বল হলে জীবনে অশান্তি, ব্যর্থতা, আর্থিক সমস্যা বা মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। তাই নিজের শক্তিবল, সৌভাগ্য এবং মানসিক স্থিতি অটুট রাখতে হলে শাস্ত্রে উল্লিখিত সতর্কবার্তা মানা উচিত।
অবশেষে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্যই মূল মন্ত্র। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখুন, কিন্তু নিজের শক্তি ও শুভ সময়কে রক্ষা করেও চলুন। প্রয়োজনমতো সাহায্য করুন, তবে জিনিস শেয়ার করার ক্ষেত্রে সচেতন সিদ্ধান্তই আপনাকে রাখবে সুরক্ষিত ও সফল।