শাস্ত্র মতে, এমন তিনটি রাশি আছে যাদের প্রতি বজরংবলির বিশেষ কৃপাদৃষ্টি থাকে। জীবনের প্রতিটি সংকট ও বিপদের সময়ে হনুমানজি তাঁদের পাশে থেকে রক্ষা ও সাহসের জোগান দেন। দেখে নিন, সেই সৌভাগ্যবান রাশিগুলি কারা।
ভারতীয় পুরাণে ও হিন্দু ধর্মীয় দর্শনে ভগবান হনুমানজি সাহস, শক্তি, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে পূজিত হন। তাঁকে বলা হয় “অঞ্জনেয়”, “মারুতি”, “বজরংবলি” — এই প্রতিটি নামের মধ্যে নিহিত রয়েছে এক বিশেষ শক্তি ও আশ্রয়। যিনি তাঁর ভক্তের জীবনের অন্ধকারকে দূর করে, ভয়কে জয় করে, ন্যায় ও ধর্মের পথে চলার অনুপ্রেরণা দেন।
শাস্ত্রে বলা হয়েছে — “যে ব্যক্তির জীবনে হনুমানজির কৃপা বর্তমান, তার জীবনে উন্নতির অভাব হয় না।” কারণ হনুমানজিকে মঙ্গলের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হিসেবে ধরা হয়। তাই প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার দিনটি হনুমানজির পূজার জন্য সর্বাধিক শুভ বলে বিবেচিত।
এই দিনে যদি কেউ নিষ্ঠার সঙ্গে হনুমান চালীসা পাঠ করেন, সিন্ধুর লেপ দেন, বেসন লাড্ডু অর্পণ করেন ও “জয় বজরংবলি” উচ্চারণ করে প্রার্থনা করেন, তবে তাঁর জীবনের নানা বাধা দূর হয়, মানসিক স্থিরতা বৃদ্ধি পায় এবং সৌভাগ্যক্রমে জীবনে স্থিতিশীলতা আসে।
এমনই বিশ্বাস রয়েছে জ্যোতিষ ও ধর্মীয় শাস্ত্রে যে, তিনটি রাশি রয়েছেন, যাঁদের উপর হনুমানজির বিশেষ কৃপা বিরাজমান।
এই তিন রাশির জাতক-জাতিকারা জীবনের নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যেতে সক্ষম হন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন তিন রাশি বজরংবলির সবচেয়ে প্রিয়, এবং কেন তাঁরা এত আশীর্বাদপ্রাপ্ত।
রাশিচক্রের প্রথম রাশি হল মেষ (Aries)।
এ রাশির অধিপতি গ্রহ হল মঙ্গল, আর মঙ্গল দেবতা নিজেই শক্তি, সাহস ও যোদ্ধা মনোভাবের প্রতীক।
অন্যদিকে, হনুমানজিও মঙ্গলের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা — তাই এই দুটি শক্তির মিলন ঘটলে তা এক অসাধারণ ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে মেষ রাশির জাতকদের জীবনে।
মেষ রাশির জাতক-জাতিকারা সাহসী, উদ্যমী ও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হন।
তাঁরা কখনও ভয় পান না, বরং প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে সাদরে গ্রহণ করেন।
জীবনের প্রতিটি বাঁকে হনুমানজির কৃপা তাঁদের মানসিক স্থিরতা দেয়, যার ফলে তাঁরা সহজেই বিপদের মোকাবিলা করতে পারেন।
যখন অন্যরা হতাশায় ভুগছেন, মেষ রাশির মানুষ তখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন — এই মানসিক দৃঢ়তাই তাঁদের বড় শক্তি।
যাঁরা নিয়মিত হনুমানজির পূজা করেন, মঙ্গলবারের উপবাস পালন করেন, তাঁরা জীবনে এক অনন্য আত্মবিশ্বাস অর্জন করেন।
মঙ্গলবার সকালে লাল বস্ত্র পরিধান করুন।
হনুমান মন্দিরে গিয়ে লাল ফুল, লাড্ডু ও সিন্ধুর অর্পণ করুন।
“জয় বজরংবলি” মন্ত্র ২১ বার জপ করুন।
এভাবে আরাধনা করলে মেষ রাশির জাতকরা জীবনে ধন, খ্যাতি ও সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হন।
মেষ রাশির জাতক-জাতিকাদের জীবনে যে কোনও কঠিন পরিস্থিতি আসুক না কেন, হনুমানজির কৃপায় তাঁরা শক্ত মনোবল ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পান।
কর্মজীবনে উন্নতি, নেতৃত্বের সুযোগ এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফলতা — এ সবই তাঁদের জীবনে বজরংবলির আশীর্বাদে সম্ভব হয়।
বৃশ্চিক (Scorpio) রাশির অধিপতি গ্রহও মঙ্গল।
এই রাশি গভীরতা, রহস্য, আত্মসংযম ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে পূর্ণ।
বৃশ্চিক রাশির জাতকরা বাইরে থেকে শান্ত হলেও ভিতরে অসাধারণ শক্তিশালী মনোবল ধারণ করেন — যা হনুমানজির কৃপায় আরও তীব্র হয়।
এই রাশির মানুষরা সহজে হাল ছাড়েন না।
বজরংবলির কৃপায় তাঁরা জীবনের জটিল সময়েও ঠান্ডা মাথায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
তাঁদের মানসিক স্থিতিশীলতা ও দৃঢ় সংকল্পই জীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়ে ওঠে।
বৃশ্চিক রাশির জাতক-জাতিকারা হনুমানজির ভক্ত হলে তাঁদের অন্তর্নিহিত শক্তি জেগে ওঠে।
বিপদের সময়ে তাঁরা ভয় পান না; বরং আরও দৃঢ় হন, আরও লড়াই করার মানসিকতা তৈরি করেন।
সমস্যার মোকাবিলায় ধৈর্যশীলতা।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনের ভারসাম্য রক্ষা।
আত্মবিশ্বাস ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি।
তবে শাস্ত্রে বলা আছে — বৃশ্চিক রাশির জাতক যদি কাউকে নিজের শত্রু মনে করেন, তাঁরা সেই অন্যায়ের প্রতিশোধ নেনও হনুমানজির আশীর্বাদেই।
তবে এই শক্তি যেন সর্বদা ন্যায়ের পথে ব্যবহৃত হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রতি মঙ্গলবার লাল চন্দন দিয়ে হনুমানজির নামলেখা করুন।
হনুমান চালীসা পাঠের আগে প্রভুকে তিলক দিন ও লাল ফুল অর্পণ করুন।
“অঞ্জনেয়ায় বিদ্মহে, বালমুখায় ধীমহি, তন্নো হনুমান প্রচোদয়াত্” — এই গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করুন।
বৃশ্চিক রাশির জাতকরা হনুমানজির কৃপায় জীবনের প্রতিটি স্তরে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যান।
কর্মজীবন হোক বা পারিবারিক সম্পর্ক — তাঁরা প্রতিটি জায়গায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম হন।
বিশেষ করে কঠিন সময়েও তাঁরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন না, যা তাঁদের সাফল্যের মূল রহস্য।
মকর (Capricorn) রাশির অধিপতি গ্রহ হল শনিদেব।
কিন্তু শাস্ত্র মতে, যেহেতু হনুমানজিই শনি দেবের যন্ত্রণা থেকে ভক্তদের রক্ষা করেন, তাই মকর রাশি হনুমানজির বিশেষ কৃপাধন্য।
এই রাশির জাতকদের জীবনে সাধারণত কর্মনিষ্ঠা, সংযম ও অধ্যবসায় স্পষ্ট দেখা যায়।
বজরংবলি মকর রাশির জাতকদের জীবনে সাহস ও দৃঢ়তা এনে দেন।
যে বাধাগুলি তাঁদের পথে আসে, সেগুলি একে একে কেটে যায় প্রভুর আশীর্বাদে।
এই রাশির মানুষদের ধৈর্যশক্তি অসাধারণ, যা তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।
যখন অন্যরা তাড়াহুড়ো করে ভুল করে বসেন, মকর রাশির জাতক তখন ধীরে, পরিকল্পনা করে এগোন।
এই স্থিরতা ও পরিশ্রমের ফলেই তাঁরা জীবনের বড় সাফল্য পান।
দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যনিষ্ঠা।
স্থির মস্তিষ্কে সমস্যার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা।
কাজের প্রতি অদম্য একাগ্রতা।
নৈতিকতা ও শৃঙ্খলার প্রতি অবিচল বিশ্বাস।
হনুমানজির কৃপায় মকর রাশির মানুষরা শত্রুপক্ষের চক্রান্ত থেকেও রক্ষা পান।
তাঁরা জীবনে যত কষ্টই পান না কেন, শেষ পর্যন্ত জয় তাঁদেরই হয়।
মঙ্গলবার ও শনিবার হনুমানজির আরাধনা করুন।
শনি দেবের মূর্তিতে তেল অর্পণ করার আগে হনুমানজিকে প্রণাম করুন।
হনুমান চালীসা পাঠ শেষে “জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর” স্তব পাঠ করুন।
মকর রাশির জাতকদের জীবনে হনুমানজির কৃপা একপ্রকার সুরক্ষাবলয় তৈরি করে।
তাঁরা কর্মক্ষেত্রে সাফল্য পান, পারিবারিক জীবনে স্থিতিশীলতা আসে, এবং আর্থিক দিক থেকেও উন্নতি হয়।
তাঁদের কঠোর পরিশ্রম ও ঈশ্বরবিশ্বাস মিলেই জীবনের সকল প্রতিকূলতাকে পরাস্ত করে।
হনুমানজির অধিষ্ঠান দিন হিসেবে মঙ্গলবারকে অত্যন্ত শুভ বলা হয়। এই দিনে উপবাস রাখলে মানসিক শুদ্ধি ও আত্মসংযম বৃদ্ধি পায়।
ভোরবেলায় স্নান সেরে লাল বস্ত্র পরিধান করুন এবং হনুমানজির নাম জপ করে দিন শুরু করুন। উপবাসের সময় ফল, দুধ বা নিরামিষ আহার গ্রহণ করা যেতে পারে। সন্ধ্যায় মন্দিরে বা গৃহস্থানের পূজাস্থানে প্রভুর আরাধনা করুন।
উপবাসের মূল উদ্দেশ্য শুধু আহার বর্জন নয়, বরং মন, বাক্য ও কর্মের পবিত্রতা বজায় রাখা। এই একাগ্রতা ভক্তিকে গভীর করে তোলে, যার ফলে প্রভুর কৃপা দ্রুত লাভ করা যায়।
হনুমান চালীসা পাঠ করার মতো শক্তিশালী আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া আর খুব কমই আছে। এতে এমন এক দিভ্য শক্তি নিহিত রয়েছে, যা ভয়, অলসতা ও নেতিবাচক চিন্তা দূর করে মনকে স্থির করে তোলে।
বিশেষ করে সূর্যোদয়ের সময় অথবা সন্ধ্যা বেলাতে মনোনিবেশ করে চালীসা পাঠ করলে ফল বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বাস করা হয়, নিয়মিত হনুমান চালীসা পাঠ করলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্য আসে — কর্মজীবন, শিক্ষা, সম্পর্ক ও স্বাস্থ্য সব দিকেই প্রভুর কৃপা প্রসারিত হয়।
হনুমানজির প্রতিমা বা মূর্তির বাম পা থেকে অল্প সিন্ধুর নিয়ে নিজের কপালে তিলক দিন।
এটি শুধু পূজার আচার নয়, বরং এটি এক প্রতীক — যা বোঝায় যে ভক্ত প্রভুর আশ্রয়ে রয়েছেন।
এই প্রক্রিয়া মানসিক শান্তি, আত্মবিশ্বাস ও সুরক্ষার বোধ জাগিয়ে তোলে।
লাল রঙ হল শক্তি, সাহস ও উদ্যমের প্রতীক। তাই হনুমানজির পূজায় লাল বা কমলা রঙের ফুল যেমন জবা, গাঁদা বা পদ্ম অর্পণ করা অত্যন্ত শুভ।
ফুলের সঙ্গে মন থেকে প্রার্থনা করুন — “প্রভু, আমাকে ন্যায়ের পথে চলার শক্তি দিন।”
প্রতিদিন অন্তত ১১ বার “জয় বজরংবলি, জয় হনুমান” মন্ত্রটি জপ করুন।
এই নামজপের মধ্যেই নিহিত আছে এক অদ্ভুত শক্তি, যা মনকে উদ্বেগমুক্ত করে এবং আত্মবিশ্বাস জাগায়।
বিশ্বাস করুন, হনুমানজির নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের নেতিবাচক শক্তি দূর হয়ে যায়।
ভগবান হনুমানজির কৃপা এমন এক দैবশক্তি যা ভয়কে জয় করতে শেখায়, আত্মবিশ্বাস জাগায় এবং ন্যায়ের পথে চলতে অনুপ্রাণিত করে।
মেষ, বৃশ্চিক ও মকর রাশির জাতক-জাতিকাদের জীবনে এই কৃপা আরও গভীরভাবে কাজ করে।
তাঁরা জীবনের কঠিন সময়েও ভেঙে না পড়ে বরং নবউদ্যমে সামনে এগিয়ে যান।
এই তিন রাশির মানুষদের জন্য হনুমানজি শুধু একজন দেবতা নন — তিনি এক অবলম্বন, এক প্রেরণা, এক অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস।
তাঁর নাম স্মরণেই মেলে সাহস, শক্তি ও সাফল্যের নিশ্চয়তা।
জয় হনুমান, জয় বজরংবলি