রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরকে কেন্দ্র করে দিল্লিতে কূটনৈতিক উত্তেজনা, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক গুরুত্ব সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক বিশেষ পরিবেশ। দুই দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরকে বিশেষজ্ঞরা শুধু আনুষ্ঠানিক সফর নয়, বরং ভারত রাশিয়া কৌশলগত সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পুতিনের বৈঠকে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রযুক্তি সহযোগিতা এবং ভূরাজনৈতিক সমীকরণ ছিল মূল আলোচ্য বিষয়। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপে থাকায় ভারত এখন রাশিয়ার অন্যতম প্রধান সহযোগী বিশেষত জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। ভারতও দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা, সস্তা তেলের সরবরাহ এবং উচ্চপ্রযুক্তির প্রতিরক্ষা যন্ত্রাংশে রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্বকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।
ভারত–রাশিয়া সম্পর্ক আন্তর্জাতিক রাজনীতির সবচেয়ে পুরোনো এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের একটি। এই সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে, আবার বিকশিতও হয়েছে। শীতল যুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে বর্তমান বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থায় ভারত ও রাশিয়া— দু’দেশই নিজেদের পারস্পরিক সহযোগিতাকে গভীর করেছে। ২০২৫ সালের এই সফরকে তাই শুধু আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় সফর হিসেবে নয়, বরং একটি কৌশলগত পুনর্মূল্যায়নের সফর হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এই সফর এসেছে এমন সময়ে, যখন বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং জ্বালানি বাজারের অনিশ্চয়তা অব্যাহত। এর মধ্যে ভারত বৈশ্বিক দুনিয়ায় নিজের অবস্থান আরও মজবুত করতে চাইছে— কোনো ব্লকে জড়ানো নয়, বরং “Strategic Autonomy” ধরে রাখা।
এই পরিপ্রেক্ষিতে পুতিনের সফর ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পুতিনের এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে পারে। এবার বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—
বিশ্ব এখন পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পরে রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। একই সময়ে ভারত তার তেল, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাশিয়ার সঙ্গে আরও গভীর করেছে। যুদ্ধের সময় ভারত রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টেড ক্রুড অয়েল কিনে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সুবিধা পেয়েছে। রাশিয়া ভারতের ‘বিশ্বস্ত অংশীদার’ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে— আবার ভারতের দৃষ্টিতে রাশিয়া এমন একটি দেশ যাকে বাদ দিয়ে বৈদেশিক নীতি সম্ভব নয়।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরকে কেন্দ্র করে দিল্লিতে কূটনৈতিক উত্তেজনা, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক গুরুত্ব সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক বিশেষ পরিবেশ। দুই দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরকে বিশেষজ্ঞরা শুধু আনুষ্ঠানিক সফর নয়, বরং ভারত–রাশিয়া কৌশলগত সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পুতিনের বৈঠকে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রযুক্তি সহযোগিতা এবং ভূরাজনৈতিক সমীকরণ ছিল মূল আলোচ্য বিষয়। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপে থাকায় ভারত এখন রাশিয়ার অন্যতম প্রধান সহযোগী — বিশেষত জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। ভারতও দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা, সস্তা তেলের সরবরাহ এবং উচ্চপ্রযুক্তির প্রতিরক্ষা যন্ত্রাংশে রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্বকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।
এই সফরে দীর্ঘমেয়াদি তেল সরবরাহ চুক্তি, প্রতিরক্ষা উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ, ব্রহ্মোস প্রকল্পের সম্প্রসারণ, পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র— বিশেষ করে কুদানকুলাম প্রকল্পে অগ্রগতি, এবং চাকরি–সহ শ্রমিক বিনিময় চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া রাশিয়া ভারতে কৃষি, ফার্মাসিউটিক্যালস, আইটি পরিষেবা ও অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দুই দেশের বাণিজ্য বর্তমানে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
দিল্লিতে সফরকে ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়— ড্রোন ফ্লাইট নিষিদ্ধ, গুরুত্বপূর্ণ রুটে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন এবং কেন্দ্রীয় এলাকার ওপর কঠোর নজরদারি। পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের এই ঘনিষ্ঠ রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও ভারত স্পষ্ট করেছে— বিদেশনীতি নির্ভর করবে শুধুই দেশের স্বার্থের উপর।
সফরটিকে অনেক বিশ্লেষক “Strategic Autonomy”–এর দৃঢ় উদাহরণ হিসেবে দেখছেন— যেখানে ভারত পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেও রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক এবং প্রয়োজনীয় অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করছে। সার্বিকভাবে, পুতিনের এই সফর ভারত–রাশিয়া সম্পর্ককে নতুন গতিপথে নিয়ে গেছে এবং আগামী বছরগুলিতে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও বাণিজ্যে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই কারণে:
পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর হচ্ছে— QUAD, I2U2, Indo-Pacific policy— সবই তার প্রমাণ। কিন্তু ভারত পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালেও রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ন্যাটো দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি চাপের মুখে। রপ্তানি কমছে, বিদেশি বাজার সংকুচিত, দেশের মুদ্রা রুবল ক্ষতিগ্রস্ত। এমন সময়ে ভারত রাশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও জ্বালানি বাজার।
ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বড় অংশ রাশিয়া–নির্ভর। Su-30 MKI, S-400, T-90 tank— বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি রাশিয়ার সঙ্গে। এছাড়া জ্বালানির সস্তা উৎস হিসেবে রাশিয়া ভারতের জন্য অপরিহার্য।
তাই এই সফর মূলত দুই দেশের প্রয়োজনীয়তার সময়োপযোগী সাক্ষাৎ।
পুতিনের সফরের আগে দিল্লিতে জারি করা হয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা।
• গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলিতে মোতায়েন বিশেষ বাহিনী
• ভারতীয় বিমান বাহিনীর নজরদারি
• ড্রোন ফ্লাইট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
• বিজয় চক–সহ কেন্দ্রীয় এলাকার রাস্তা আংশিকভাবে বন্ধ
কূটনৈতিক প্রোটোকল অনুযায়ী এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলেও, পুতিনের উচ্চ–প্রোফাইল উপস্থিতির কারণে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়।
আজকের বৈঠকের মূল ফোকাস পাঁচটি বিষয়ে—
ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা প্রকল্প চাইছে—
Su-30 MKI আপগ্রেড
S-400 পরবর্তী কিস্তি
ব্রহ্মোস–এর যৌথ উৎপাদন বৃদ্ধি
ট্যাঙ্ক ও হেলিকপ্টার আধুনিকীকরণ
রাশিয়ার মতে—
“ভারত আমাদের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরক্ষা অংশীদার। যৌথ প্রযুক্তি উন্নয়ন আরও বাড়াতে চাই।”
রাশিয়া থেকে ভারত বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক পরিমাণ তেল কিনছে—
এতে ভারত তেল আমদানিতে ২০–৩০% ব্যয় বাঁচিয়েছে।
সফরে নতুন জ্বালানি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে—
Long-term oil supply contracts
LNG supply expansion
Nuclear energy cooperation (Kudankulam project)
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বর্তমানে ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
২০২৩–২৪ এ ভারত–রাশিয়া বাণিজ্য ৩ গুণ বেড়েছে।
নতুন লক্ষ্যমাত্রা—
২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা
ভারত থেকে কৃষিজ পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস ও IT পরিষেবা রপ্তানি বাড়ানো
রাশিয়া ভারতীয় দক্ষ শ্রমিক নিয়োগে আগ্রহী—
নির্মাণ, IT, স্বাস্থ্যসেবা, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে।
ভারত রাশিয়ার কাছে স্পষ্ট করেছে—
Indo-Pacific এলাকায় ভারতের স্বার্থকে সম্মান করতে হবে
ভারত শান্তি চায়, যুদ্ধ নয়
ভারত কোনো ব্লকে যুক্ত নয়, তবে প্রতিটি দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখবে
এখন ভারত তার ৩০%–এর বেশি তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করছে।
রাশিয়ার সুবিধা:
ভারত বড় বাজার পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিক্রি সীমিত, তাই ভারতের প্রয়োজন তাদের জন্য লাভজনক
ভারতের সুবিধা:
ডিসকাউন্টেড তেল
জ্বালানি নিরাপত্তা
আমদানির খরচ কমে
পুতিন ভারতের কাছে এই তেল বাণিজ্য দীর্ঘমেয়াদি করতে চান।
পশ্চিমা দেশগুলো ভারতের দিকে নজর রেখে মন্তব্য করছে—
ভারত তাদের উত্তর দিয়েছে—
অর্থাৎ— ভারতের জাতীয় স্বার্থই প্রথম।
এই সফরে মার্কিন প্রতিক্রিয়া আসবে বলেই ধারণা।
রাশিয়ার তিনটি বড় কারণ—
এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যে ভারত বড় ভূমিকা রাখে।
ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জ্বালানি আমদানিকারক।
ভারত রাশিয়ার সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক।
• Renewable energy partnership
• Rail–connectivity & logistics corridor
• Long-term crude oil supply
• Joint defence manufacturing
• Visa facilitation for skilled workers
• Cybersecurity cooperation
ভারতে পুতিনের প্রতি একটি ‘strong leader’–এর ইমেজ রয়েছে।
এই সফর ভারতীয় জনগণের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছে—
কেউ বলছে ভারত–রাশিয়া বন্ধুত্ব পুরনো,
কেউ বলছে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।
ভ্লাদিমির পুতিনের এই সফর—
ভারত–রাশিয়া সম্পর্ককে নতুন জ্বালানি দেবে
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াবে
জ্বালানি নিরাপত্তায় ভারতের অবস্থান শক্ত করবে
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় উঠবে
ভূরাজনীতিতে ভারতের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে
এটি একটি ঐতিহাসিক সফর—
যা ভবিষ্যতের Indo–Russia সম্পর্ককে নির্ধারণ করবে