Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

স্ত্রী পুত্রের বয়সের ফারাক পাঁচ বছর নথি নিয়ে ছোটাছুটি এসআইআর আতঙ্কে এবার আত্মঘাতী বাদুড়িয়ার প্রৌঢ়

মৃতের পুত্র বলেন গত পাঁচ ছ’দিন খাওয়া দাওয়া করেনি বাবা অনেকেই বাবাকে বলে এবার ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে হবে তার পর থেকেই উনি চিন্তিত হয়ে পড়েন আমরা বুঝিয়েও পারিনি

উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার এক শোকাবহ ঘটনার মধ্যে দিয়ে এসআইআর আতঙ্কের একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রকাশ পায়। ৫৭ বছরের শফিকুল মণ্ডল নামক এক প্রৌঢ় মানুষ আত্মহত্যা করেছেন তাঁর আতঙ্কগ্রস্ত পরিস্থিতির কারণে। তাঁর মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোরগোল সৃষ্টি হয়েছে এবং রাজনীতি, প্রশাসন, ও পরিবারে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মৃতের পরিবার এবং স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, এসআইআর আতঙ্কের কারণে শফিকুল মণ্ডল এই পদক্ষেপ নেন। পরিবার এবং স্থানীয় নেতাদের দাবি, শফিকুলের মৃত্যু শুধুমাত্র নথি সংশোধনের সমস্যার কারণে নয়, বরং একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতির কারণে ঘটেছে

শফিকুল মণ্ডল ছিলেন বাদুড়িয়া অঞ্চলের একজন সাধারণ কৃষক, যিনি দীর্ঘকাল ধরে পরিবারসহ সেখানে বসবাস করছিলেন। তাঁর পরিবার দাবি করে, কয়েক পুরুষ ধরে তাদের বাসস্থান ছিল বাদুড়িয়া এবং তারা বাংলার বাসিন্দা ছিলেন। শফিকুলের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিচয়পত্রে যে বয়স উল্লেখ করা হয়েছিল, তা প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের বয়সের সঙ্গে তুলনা করলে কিছুটা কম ছিল। এই ব্যাপারে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছিল, এবং শফিকুল নিজের পরিচয়পত্র এবং পরিবারের নথি সঠিকভাবে সংশোধন করতে পারছিলেন না। শফিকুল ছিলেন একজন স্বল্পশিক্ষিত মানুষ, যার কারণে এই কাগজপত্র সংশোধন নিয়ে বিভ্রান্তি এবং সমস্যার সম্মুখীন হন। তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি দফতরে যান, কিন্তু কোনও সমাধান পাননি

এই সমস্যা নিয়ে শফিকুলের ছেলেরা বার বার তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক এবং ভয় বিরাজ করছিল। তাঁর ছেলে রুহুল আমিন মণ্ডল জানান, "বাবা গত পাঁচ-ছ’দিন খাওয়া-দাওয়া করেনি। অনেকেই বাবাকে বলে এ বার ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’-এ যেতে হবে। তার পর থেকেই উনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। আমরা বুঝিয়েও পারিনি এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, যে শফিকুলের মধ্যে এক ধরনের ভীতি ছিল, যে ভীতি এসআইআর ঘোষণার পর তীব্র হয়ে ওঠে

রুহুল আরও জানান, তাঁর বাবা গত ১৫ দিন ধরে বিভিন্ন সরকারি দফতরে ছোটাছুটি করছিলেন, কিন্তু কোনও সমাধান পাননি। এসআইআর আতঙ্ক এবং বিভ্রান্তির কারণে শফিকুল স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছিলেন না। তার পরেও, পরিবারের সদস্যরা তাঁকে শান্ত করতে এবং এই সমস্যার সমাধান করতে বার বার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, কোনও কারণে তিনি ভয়ঙ্কর এক সিদ্ধান্ত নেন। গত কয়েক দিন ধরে তিনি নাওয়া-খাওয়া ভুলে যান এবং অবশেষে তিনি নিজের জীবনের সঙ্গে খেলা করেন

মৃতের পুত্র রুহুল আমিন মণ্ডল জানান, “আমাদের কাগজপত্রে সমস্যা নেই। আসলে বাবার দুটো বিয়ে। আমাদের মায়ের নামে ডকুমেন্টস দিয়ে বিভিন্ন কাজ করেছি এত দিন। কিন্তু এসআইআর ঘোষণার পরে গত ১৫ দিন ধরে দৌড়াদৌড়ি করছিল বাবা। আমাদের সঙ্গে মায়ের বয়সের ফারাক হয় ৫-৭ বছরের। অনেকে ভয় দেখান। সেই আতঙ্কে উনি নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন

বুধবার সকালে প্রৌঢ়ের মৃত্যুর পর এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রা যখন দেখতে পান শফিকুল মণ্ডল একটি নির্জন জায়গায় বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন, তখন তাঁকে দ্রুত বাদুড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে, চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যুর পর প্রৌঢ়ের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বসিরহাট মর্গে পাঠানো হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে, এবং এরই মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে উঠে গেছে

news image

এদিকে, মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে যে, এসআইআর আতঙ্ক সৃষ্টি করে রাজনীতি কাঁপানো হয়েছে। তৃণমূল নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, বিজেপি এই ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, যা মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং সন্ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব জানায়, "এভাবে ভয় এবং আতঙ্কের আবহ তৈরি করেছে বিজেপি। এতগুলো মৃত্যুর দায় তাদের

অন্যদিকে, বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে তৃণমূলই এসআইআর নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। বিজেপি নেতারা জানান, "তৃণমূল সরকারই এই আতঙ্ক সৃষ্টির পেছনে দায়ী। মানুষদের ভুল বুঝিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে।" এই রাজনীতিক তর্ক এবং পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এলাকার সাধারণ মানুষকে আরও বিভ্রান্ত করেছে এবং এই ঘটনার পর রাজনৈতিক অস্থিরতা তীব্র হয়ে উঠেছে

এমন একটি ঘটনার পর শফিকুলের পরিবারের সদস্যরা একেবারে শোকাহত হয়ে পড়েছেন তারা এখনও জানাতে পারেননি কীভাবে তারা নিজেদের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবে শফিকুলের আত্মহত্যার পর তার ছেলে রুহুল আমিন মণ্ডল স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কাছে দাবি করেছেন "আমার বাবাকে তো আর পাব না কিন্তু আর কারও সঙ্গে যেন এমন না হয় তাই আপনারা চাইলে বাবার দেহ সামনে রেখে বিক্ষোভ আন্দোলন করতে পারেন" রুহুলের এই কথা থেকে তার গভীর শোক এবং ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে তিনি শুধু নিজের বাবা হারানোর দুঃখে বিহ্বল নন বরং তিনি চান যাতে এমন ঘটনা আর কারো সঙ্গে না ঘটে তার বাবা যে ভয় এবং আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করেছেন তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আর কোনো পরিবার যেন এমন কষ্ট না পায়। শফিকুলের আত্মহত্যার পর তাঁর পরিবারের শোকের সাথে সাথে এলাকাবাসী এবং সমাজের মধ্যে সমবেদনা সৃষ্টি হয়েছে তবে এর সাথে সাথে রাজনীতি এবং প্রশাসনের অবহেলাও মানুষের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে পরিবারটির জন্য এই সময়টি অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা জানেন না কিভাবে এতো বড় ক্ষতি থেকে তাঁরা উঠবেন এবং তাঁদের জীবন পুনরায় সুস্থ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন শফিকুলের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের একমাত্র চাওয়া হলো এই ধরনের পরিস্থিতি যেন আর কারো সামনে না আসে এবং ভবিষ্যতে সকলের জন্য নিরাপত্তা এবং সঠিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়

এই মৃত্যুর ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তি এবং পরিবারের ক্ষতি নয় বরং এটি সমাজ এবং রাষ্ট্রের একটি বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে অসঙ্গতি এবং বিভ্রান্তি ভুল নথি সংশোধন ও সাধারণ মানুষের ভীতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে এই ধরনের ঘটনাগুলি আরও ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে এসআইআর আতঙ্কের কারণে একজন প্রৌঢ়ের আত্মহত্যা রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে আরও বিশদ আলোচনা ও চিন্তার প্রয়োজনীয়তা তীব্র হয়ে উঠেছে। সমাজে যখন সরকারি কাজকর্মে অসঙ্গতি হয় এবং সঠিক তথ্য প্রদান বা সংশোধনের কোনো ব্যবস্থা নেই তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ এবং আতঙ্ক সৃষ্টি হয় যা কখনও কখনও মারাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যায় এমন ঘটনা আমাদের সামনে তুলে আনে। এই ধরনের পরিস্থিতি শুধু একজন ব্যক্তির জন্য নয় বরং পুরো সমাজের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। একদিকে সরকারি দফতরের গাফিলতি অন্যদিকে মানুষের মধ্যে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আস্থা হ্রাস পায় এবং সেই সঙ্গে ভীতি, আতঙ্ক ও সংশয় বৃদ্ধি পায়। এসআইআর আতঙ্কের মতো একটি পরিস্থিতি যখন সাধারণ মানুষের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠে তখন তাদের মানসিক অবস্থাও চরমে পৌঁছায় এবং এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বও বেড়ে যায়। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ সমস্যার মুখোমুখি না হয়। এর ফলে সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের প্রতি বিশ্বাসের অভাব ঘটে এবং সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রাসঙ্গিক নথি সংশোধনসহ জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা যাতে ভবিষ্যতে এরকম অপ্রত্যাশিত এবং দুঃখজনক ঘটনা না ঘটে

এই ঘটনার ফলে রাজনীতির মাঠে দ্বন্দ্ব এবং সংঘর্ষ আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে এবং এর প্রভাব এলাকাবাসী এবং সাধারণ মানুষের উপর পড়েছে যখন একদিকে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপ করছে অন্যদিকে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত এবং বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে তারা নিজেদের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই পরিস্থিতি শুধু রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয় বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিভাজন তৈরি করেছে এর ফলে জনগণের মধ্যে অস্থিরতা এবং সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে যা সমাজের শান্তি এবং সুরক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই ঘটনার প্রভাব শুধু বর্তমান সময়ের উপর নয় বরং ভবিষ্যতের জন্যও একটি সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, যখন মানুষের মধ্যে আশঙ্কা এবং বিভ্রান্তি বাড়ে তখন তা পুরো সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। এর পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা এবং সমাধানের দিকে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা জোরালো হয়েছে সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা যাতে ভবিষ্যতে এমন ধরনের বিভ্রান্তি এবং আতঙ্ক না ছড়ায়। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস এবং সমাধানের পথ খোলা সম্ভব হবে যা সমাজের স্থিতিশীলতা এবং শান্তির জন্য অপরিহার্য

Preview image