পূর্ব বর্ধমান জেলার নবম বইমেলা এবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে মেমারি ২ ব্লকের সাতগেছিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও বইমেলাকে ঘিরে বইপ্রেমীদের মধ্যে উৎসাহ তুঙ্গে। মেলা শুরু হওয়ার আগেই প্রশাসন ও আয়োজকদের তরফে প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে। সাতগেছিয়ার খোলা পরিবেশ ও মাঠের উপযুক্ত পরিকাঠামো এই বৃহৎ সাংস্কৃতিক আয়োজনের আদর্শ স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। বইমেলায় স্থানীয় ও বাইরে থেকে বহু প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। পাঠ্যপুস্তক, সাহিত্য, উপন্যাস, বিজ্ঞান, ইতিহাস, শিশুসাহিত্যসহ নানান ধরনের বই থাকবে প্রদর্শনীতে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা পাঠ, আলোচনাচক্র, শিশু কিশোরদের জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এইসব আয়োজন বইমেলাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে। মেলা সফল করতে প্রশাসনও সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। নিরাপত্তা, আলো, জল, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ সব ক্ষেত্রেই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বইমেলার মাধ্যমে পাঠ্যসংস্কৃতি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিভাদেরও সামনে তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে আয়োজকদের। বইমেলা শুধু বই কেনাবেচার মঞ্চ নয়, বরং পাঠক লেখক সাংস্কৃতিক মানুষের এক মিলনমেলা। মেমারি ২ ব্লকের এই আয়োজন আগামী দিনে জেলার অন্যতম উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হবে বলেই আশা করছেন স্থানীয়রা।
পূর্ব বর্ধমান জেলা আবারও প্রস্তুত এক মহা সাংস্কৃতিক উৎসবকে ঘিরে। জেলার নবম বইমেলা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে মেমারি–২ ব্লকের সাতগেছিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে। বইমেলাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে ডিজিটাল প্রচার, প্রশাসনিক তৎপরতা, সংগঠনের বৈঠক এবং পাঠক ও আগ্রহীদের মধ্যে অসাধারণ উন্মাদনা। এই বইমেলাটিকে কেবল একটি বার্ষিক ইভেন্ট হিসেবে না দেখে, বরং এটিকে জেলার পাঠ্যসংস্কৃতি, শিক্ষাগত সমৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতিনিধিত্বকারী এক বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
শুধু বই বিক্রির উৎসব নয়, এই আয়োজনটি পাঠক–লেখক–প্রকাশক–শিক্ষাবিদ–সংস্কৃতি কর্মীদের এক বৃহৎ সমাবেশ। তাই পূর্ব বর্ধমান জেলার নবম বইমেলাকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে তা স্বাভাবিক। এটি জেলার সাংস্কৃতিক ক্যালেন্ডারের অন্যতম আকর্ষণীয় এবং শিক্ষামূলক আয়োজন হিসেবে বিবেচিত। এই বিশাল আয়োজন স্থানীয় মানুষের কাছে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি জেলার সাংস্কৃতিক আত্মার প্রতিচ্ছবি হিসেবে কাজ করবে। নিচে বইমেলার প্রস্তুতি, বৈঠক, প্রশাসনিক কার্যক্রম, স্থানীয় অংশগ্রহণ এবং সামগ্রিক গুরুত্ব নিয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
পূর্ব বর্ধমান জেলার নবম বইমেলার জন্য মেমারি–২ ব্লকের সাতগেছিয়া স্পোর্টিং ক্লাব মাঠকে নির্বাচন করা হয়েছে। স্থান নির্বাচনের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কৌশলগত কারণ, যা মেলার সফলতা নিশ্চিত করতে সহায়ক:
বিশাল খোলা পরিবেশ: মাঠের আয়তন বৃহৎ হওয়ায় বিপুল সংখ্যক স্টল বসানো এবং একইসঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য একটি বড় মঞ্চ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা: স্থানটি জেলা সদর এবং অন্যান্য ব্লক থেকে সহজেই পৌঁছানো যায়, যা মেলার জনসমাগম বাড়াতে সাহায্য করবে।
পর্যাপ্ত জনসমাগম ক্ষমতা: খোলা পরিবেশ হওয়ায় একসঙ্গে বহু পাঠক ও দর্শক ভিড় করতে পারবেন।
স্থানীয় সমর্থন: সাতগেছিয়া এলাকার মানুষজন দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রতি যথেষ্ট উৎসাহী। স্থানীয় ক্লাব ও সংগঠনের সহায়তায় মেলা পরিচালনা সহজ হয় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কার্যকর থাকে।
এই মাঠ নির্বাচন প্রমাণ করে যে আয়োজকরা মেলার সুগম্যতা (Accessibility) এবং পরিচালনার দক্ষতা (Operational Efficiency)-কে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
বইমেলা আয়োজনের আগেই সম্প্রতি মেমারি–২ ব্লকের বিডিও (Block Development Officer) অফিসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠক ছিল মেলার সফলতা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা (Strategic Direction) প্রদানের প্রধান মঞ্চ।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যারা:
রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী ও মন্তেশ্বর বিধায়াক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী (মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক)।
পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক (DLO) বিদ্যুৎ দাস (প্রশাসনিক সমন্বয়কারী)।
বর্ধমান সদর দক্ষিণের এসডিও (SDO) বুদ্ধদেব পান (আইনশৃঙ্খলা ও সার্বিক তত্ত্বাবধান)।
মেমারি–২ ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সৌমজিত বসু (স্থানীয় সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনা)।
জয়েন্ট বিডিও কুন্তল কুমার মণ্ডল এবং প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক ও স্থানীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
এই বৈঠকে মেলার নিরাপত্তা থেকে শুরু করে স্টল বরাদ্দ, মঞ্চ, আলোকসজ্জা, সুপেয় জল, পরিচ্ছন্নতা, পার্কিং, পথ নির্দেশিকা—সব বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হয়। বিশেষ করে মেলার সময় যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেদিকে কঠোর নজর রাখা হয়েছে।
মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বইমেলা নিয়ে বলেন—
“একটি বইমেলা শুধুমাত্র বই কেনাবেচার অনুষ্ঠান নয়, এটি সমাজের বৌদ্ধিক বিকাশের মঞ্চ। পাঠ্যসংস্কৃতি ছাড়া কোনো সমাজই শক্তিশালী হতে পারে না। পূর্ব বর্ধমানের বইমেলা রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক আয়োজন হয়ে উঠুক—এটাই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি আরও জানান, জেলা ও ব্লক প্রশাসনের সহযোগিতায় বইমেলা আরও বৃহত্তর পরিসরে করা হবে এবং স্কুল–কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপকভাবে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস পুনরুজ্জীবিত হয়।
বইমেলা শুধু বইয়ের দোকান সাজিয়ে বসে থাকা নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব। পাঠকদের জন্য এখানে থাকছে জ্ঞানের আদান-প্রদান এবং বিনোদনের এক চমৎকার মিশ্রণ।
৩.১. প্রকাশনী সংস্থার অংশগ্রহণ ও বৈচিত্র্য
কলকাতার বড় বড় প্রকাশনা সংস্থা ছাড়াও জেলা ও ব্লকের বহু প্রকাশক তাঁদের বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে হাজির থাকবেন। এতে নিশ্চিত হবে যে সব ধরণের পাঠক তাঁদের পছন্দের বই খুঁজে নিতে পারবেন।
| বইয়ের বিভাগ | গুরুত্ব |
| উপন্যাস, গল্প, কবিতা | সাহিত্যপ্রেমীদের মূল আকর্ষণ। |
| সাহিত্য সমালোচনা | পাঠকদের গভীর জ্ঞান লাভে সাহায্য করবে। |
| শিশুসাহিত্য | শিশুদের মধ্যে পড়া ও ছবি দেখার আগ্রহ তৈরি করবে। |
| বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | বিজ্ঞানভিত্তিক চেতনার বিকাশ ঘটানো। |
| ইতিহাস ও দর্শন | সমাজের শিকড় ও মনন নিয়ে আলোচনা। |
| শিক্ষামূলক বই | ছাত্রছাত্রী ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার্থীদের জন্য সম্পদ। |
৩.২. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সাহিত্যিকদের সমাবেশ
প্রতিদিন সন্ধ্যায় মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:
কবিতা পাঠ ও লেখনী: জেলার প্রবীণ ও নবীন কবিরা তাঁদের সৃষ্টি পাঠ করবেন।
নাট্য পরিবেশন ও সঙ্গীত: স্থানীয় নাট্যদল ও সঙ্গীতশিল্পীরা মঞ্চ মাতাবেন।
লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান: জেলার সমৃদ্ধ লোকসংস্কৃতিকে তুলে ধরা হবে।
অভিজ্ঞ সাহিত্যিকদের কথামালা: বিশিষ্ট সাহিত্যিকরা তাঁদের সাহিত্যকর্ম ও দর্শন নিয়ে আলোচনা করবেন, যা তরুণ লেখকদের জন্য শিক্ষামূলক হবে।
৩.৩. ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রতিযোগিতা ও বই প্রকাশ
প্রতিযোগিতা: চিত্রাঙ্কন, কুইজ, এক মিনিট বক্তৃতা, লেখনী প্রতিযোগিতা—এগুলি ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীলতা বাড়াবে।
বই প্রকাশ: বিভিন্ন লেখকের নতুন বই প্রকাশ হবে মেলার স্টেজে, যা মেলাকে সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসবে।
স্থানীয় প্রতিভা: স্থানীয় লেখক–কবি–সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য বিশেষ স্টল ও মঞ্চ অনুষ্ঠান রাখা হচ্ছে, যাতে তাঁদের প্রতিভা জাতীয় স্তরে পৌঁছানোর সুযোগ পায়।
যদিও বইমেলা মূলত সাহিত্য উৎসব, এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে।
ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট: স্টল নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ, ডেকোরেশন—এই কাজগুলিতে স্থানীয় কর্মীদের কর্মসংস্থান হয়।
বাণিজ্যিক সুবিধা: খাবার দোকান, খেলনা–স্টেশনারি বিক্রি, এবং স্থানীয় কারুশিল্পের স্টলগুলিতে বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়।
পর্যটন ও পরিবহন: মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পরিবহন (টোটো, অটো, রিকশা) এবং ছোট হোটেলগুলোর ব্যবসা বৃদ্ধি পায়।
আয়োজকদের মতে, মেলাটি স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার লেনদেন ঘটাবে, যা এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সুযোগ।
মেলা আয়োজকদের মতে, "যেখানে বই, সেখানেই জ্ঞান। আর যেখানে জ্ঞান, সেখানে সমাজের উন্নতি।" বর্তমান প্রজন্ম মোবাইল–নির্ভর হওয়ায় বই পড়ার অভ্যাস কমছে। বইমেলা সেই অভ্যাসকে ফের জাগিয়ে তোলে।
বইমেলা 'জ্ঞান বিতরণের কেন্দ্র' হিসেবে কাজ করে।
নতুন বই ও নতুন লেখকের সঙ্গে পরিচিতি ঘটে।
পরিবার ও শিশুদের মধ্যে 'পড়ার উৎসব' হিসেবে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়।
এই মিশন সফল করার জন্য স্কুলগুলির সঙ্গে বিশেষ সংযোগ তৈরি করা হয়েছে, যাতে তারা দল বেঁধে ছাত্রছাত্রীদের মেলায় নিয়ে আসে।
বইমেলার আকার বড় হওয়ায় নিরাপত্তা ও জনসমাগম ব্যবস্থাপনা একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে প্রশাসন উচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে:
পুলিশের মোতায়েন: মেলা চলাকালীন পর্যাপ্ত মহিলা ও পুরুষ পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
সিসিটিভি নজরদারি: স্টল, প্রবেশদ্বার, মঞ্চ—সব জায়গায় উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি লাগানো হবে, যা ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসা: একটি প্রাথমিক চিকিৎসা শিবির (Medical Team) এবং অ্যাম্বুলেন্স সর্বদা প্রস্তুত রাখা হবে।
অগ্নিনির্বাপণ: ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপক যান ও সরঞ্জাম থাকবে।
পার্কিং ব্যবস্থা: সুষ্ঠু ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য সুসংগঠিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলার নবম বইমেলা বইপ্রেমী মানুষের জন্য এক অনন্য উৎসব। মেমারি–২ ব্লকের সাতগেছিয়া স্পোর্টিং ক্লাব মাঠ এবার সাক্ষী হবে—পাঠ্যের পুনর্জাগরণ, সংস্কৃতির উন্মোচন, তরুণ প্রতিভার বিকাশ এবং সামাজিক বন্ধনের দৃঢ়তা।
আয়োজকদের দাবি—আগামী কয়েক বছরে এই মেলাকে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা ও বিদেশি লেখকদের অংশগ্রহণে পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত করাই লক্ষ্য। এই মেলা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বই শুধু জ্ঞানের ভাণ্ডার নয়, এটি সমাজের অগ্রগতির পথপ্রদর্শক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।