Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

যৌন আবেদনে ব্রিটিশ সরকারকে বশ করেছিলেন ভারতসুন্দরী সৈকতে কাটিয়েছিলেন অখ্যাত জীবন

১৯৬১ সালে হরিয়ানার রোহতকে এক সম্ভ্রান্ত জাঠ পরিবারে জন্ম নেন পামেলা সিংহ চৌধরি মাত্র এক বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে পামেলার বাবা মেজর মহেন্দ্র সিংহ চিন ভারত যুদ্ধে শহিদ হন মা শকুন্তলা দেবীর স্নেহ আর সংগ্রামে বড় হয়ে ওঠেন পামেলা যার জীবন পরবর্তীতে বিস্ময় আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে

নব্বইয়ের দশকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক মহল এক অনন্য ধাক্কায় টলমল করে ওঠে আর সেই ধাক্কার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এক ভারতীয় সুন্দরী যার নাম পামেলা সিংহ চৌধরি পরবর্তীকালে পামেলা বোর্দে নামে যিনি বেশি পরিচিত হন ব্রিটেনে জমজমাট ট্যাবলয়েড সংবাদমাধ্যম একের পর এক উত্তাল খবর পরিবেশন করতে শুরু করে এবং সেখানে একমাত্র আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠেন এই ভারতীয় ললনা মাত্র সাত বছরের মধ্যে সাধারণ পরিবার থেকে আন্তর্জাতিক আলোচনায় উঠে আসা এক তরুণীর জীবন এমন ডামাডোল সৃষ্টি করেছিল যে ব্রিটিশ সরকারের স্থির অবস্থানও নড়ে যায় রাজনীতিতে মহিলাঘটিত কেলেঙ্কারি নতুন কিছু নয় কিন্তু পামেলাকে ঘিরে যে ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছিল তা ব্রিটেনকে দ্বিতীয়বারের জন্য বিব্রত এবং বিপর্যস্ত করে তোলে পামেলা তখন একদিকে ক্ষমতাশালীদের গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করতেন অন্যদিকে তাঁকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে উচ্চবিত্ত সমাজের কলগার্ল পরিচয় এই দ্বৈত জীবনই তৈরি করে এক ভয়ঙ্কর বিতর্কের ঝড় যা থামতেই চাইছিল না

পামেলা সিংহ ভারতসেরা হওয়ার পর থেকেই তাঁর উত্থান ছিল বেগবান তিনি হরিয়ানার এক সম্ভ্রান্ত জাঠ পরিবারে জন্মেছিলেন ১৯৬১ সালে শৈশবেই বাবাকে হারান কারণ পামেলার বাবা মেজর মহেন্দ্র সিংহ চিন ভারত যুদ্ধে শহিদ হন পরবর্তীতে সাহসিকতার জন্য ভারত সরকার তাঁকে মরণোত্তর মহাবীর চক্র প্রদান করে পামেলার মা শকুন্তলা দেবী সরকারি কলেজের হোস্টেলের ওয়ার্ডেন ছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের সূত্র ধরে হরিয়ানা পাবলিক সার্ভিস কমিশনে যোগ দেন তবে পামেলার সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক কোনো দিনই খুব মধুর ছিল না বন্ধুদের কাছে তিনি প্রায়ই বলতেন তাঁর মা তাঁর কাছে ভয়ঙ্কর এক পরিবেশ তৈরি করতেন

স্কুলজীবন কেটেছে জয়পুরের মহারানি গায়ত্রী দেবী স্কুলে এরপর দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজে ভর্তি হন পামেলা সেখানে প্রথমবার নিজের প্রতিভা সৌন্দর্য এবং আত্মবিশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন মানুষকে আকৃষ্ট করেন এবং এই সময়েই মডেলিংয়ের দিকে ঝোঁক তৈরি হয় তাঁর আশির দশকের গোড়ায় তিনি দিল্লির অ্যাডওয়েভ নামে একটি মডেলিং এজেন্সিতে যোগ দেন কিছু বিজ্ঞাপনে মুখ দেখানোর পরই তিনি বুঝতে পারেন বিজ্ঞাপনের দুনিয়া তাঁর জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র নয় বরং আরও বড় এবং আন্তর্জাতিক কিছু করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে তাই তিনি যাত্রা করেন মুম্বইয়ের পথে এবং সেখান থেকেই তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়

১৯৮২ সালে তিনি ভারতসেরা সুন্দরী খেতাব জেতেন এরপর তিনি পেরুর লিমায় সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তারপর যাত্রা করেন নিউ ইয়র্কে সেখানে তাঁর যোগাযোগ তৈরি হয় একাধিক ধনী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তির সঙ্গে তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিখ্যাত আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগি যার প্রভাব বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত ছিল বলা হয় সৌদি আরবের বহু ধনী ব্যক্তিরও আগ্রহ ছিল পামেলার প্রতি তাঁর সৌন্দর্য আভিজাত্য আত্মবিশ্বাস এবং ভিন্নধর্মী ব্যক্তিত্ব তাঁদের মুগ্ধ করত নিউ ইয়র্ক থেকে জাপান হয়ে তিনি পৌঁছান ইংল্যান্ডে আর সেখান থেকেই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বিতর্কিত অধ্যায় শুরু হয়

ইংল্যান্ডে পামেলার পরিচয় হয় ফরাসি প্রযোজক ডোমিনিক বোর্দের সঙ্গে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁদের বিয়ে হয় তবে বিবাহিত জীবন টেকেনি তিন মাসের মধ্যেই পামেলা ডোমিনিককে ছেড়ে লন্ডনে চলে যান এবং জানান তিনি আর ফিরে আসবেন না ডোমিনিক পরবর্তীতে বলেন তিনি সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন কিন্তু পামেলার বিলাসী জীবনযাপনের উৎস তাঁর জানা ছিল না

লন্ডনে এসে পামেলা নতুন করে খ্যাতি সম্পদ এবং ক্ষমতার দিকে হাত বাড়ান তিনি মেলামেশা শুরু করেন রোমানিয়ার প্রিন্স পল ইতালির কাউন্ট কার্লো কলম্বোটি এবং দ্য রোলিং স্টোনস ব্যান্ডের রকস্টার বিল ওয়াইম্যানের সঙ্গে জানা যায় লন্ডনের এক নাইটক্লাবে তাঁর পরিচয় হয় সানডে টাইমসের অবিবাহিত সম্পাদক অ্যান্ড্রু নীলের সঙ্গে যাঁর সঙ্গে তাঁর এক তীব্র প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তিন মাস পর সম্পর্ক ভেঙে গেলে পামেলার আচরণ নিয়ে একাধিক গল্প ছড়িয়ে পড়ে বলা হয় তিনি প্রতিশোধ নিতে নীলের প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পাদক ডোনাল্ড ট্রেলফোর্ডের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন

এই সময়ই তাঁর পরিচয় হয় কনজারভেটিভ পার্টির সাংসদ ডেভিড শ এবং অন্য সাংসদ হেনরি বেলিংহামের সঙ্গে পামেলা তাঁদের সহকারী গবেষক হিসেবে পার্লামেন্টে প্রবেশাধিকার পান যা ছিল বিধিবিরুদ্ধ এবং এখান থেকেই শুরু হয় ব্রিটিশ রাজনীতির ভয়াবহ আলোড়ন বিরোধী দল লেবার পার্টি সরকারের পদত্যাগ দাবি জানায় কারণ এক রহস্যময় ভারতীয় মহিলা হঠাৎ করেই পার্লামেন্টের নিরাপত্তা ভেদ করে প্রবেশাধিকার পেয়েছেন তা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে এমআই ফাইভ তদন্তে নামে এবং পামেলাকে ঘিরে তৈরি হয় আরও ভয়াবহ কাহিনি

বিভিন্ন পত্রিকা দাবি করে পামেলার দ্বৈত জীবন রয়েছে তিনি নাকি একদিকে সাংসদের গবেষক অন্যদিকে উচ্চবিত্ত সমাজের কলগার্ল এই খবরেই ব্রিটিশ জনমনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয় একটি ম্যাগাজিন দাবি করে পামেলা সপ্তাহের যে কোনো দিন পাঁচশ পাউন্ড এবং সপ্তাহান্তে দুই হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে শয্যাসঙ্গী হতে রাজি এমন দাবি ছড়িয়ে পড়তেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম একে আরও অশ্লীল ও অতিরঞ্জিত ভাবে প্রচার করতে থাকে

news image
আরও খবর

এই পরিস্থিতিতে পামেলা বিলাসবহুল পেন্টহাউস ছেড়ে অজ্ঞাতবাসে চলে যান কিন্তু ঘটনা এখানেই থামেনি ১৯৮৯ সালে তিনি তাঁর বন্ধু ডেভিড সুলিভানের কাছে জানান তাঁর কাছে এমন গোপন তথ্য রয়েছে যা প্রকাশ হলে ব্রিটিশ সরকারের পতন পর্যন্ত ঘটতে পারে বলা হয় লিবিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্রই পুরো কাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছিলেন তিনি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এ কারণেই তাঁর নাম নিয়ে এত চাঞ্চল্য

এদিকে হরিয়ানায় থাকা তাঁর পরিবারের সদস্যরা মেয়ের এই বিতর্কিত পরিচয়ে মর্মাহত হয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করেন পামেলা তখন নিঃসঙ্গ এক জীবন বেছে নেন ধনকুবেরদের সঙ্গে বাস জুটানো ভেলকি আর রাজনীতি মিডিয়া এবং কেলেঙ্কারির তীব্র চাপ তাঁর জীবনকে গ্রাস করেছিল

যে তরুণী মাত্র তেইশ চব্বিশ বছর বয়সেই ভারতসেরা সুন্দরীর মুকুট মাথায় তুলে নিয়েছিলেন এবং অচিরেই আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন তাঁর জীবনগল্প যেন চলচ্চিত্রের থেকেও বেশি নাটকীয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়ে ওঠেন ব্রিটিশ সমাজের আলোচনার কেন্দ্র আবার একই সঙ্গে বিতর্কেরও কেন্দ্রবিন্দু যিনি একসময় লন্ডনের ক্ষমতাশালী রাজনীতিক শিল্পপতি ধনকুবের এবং প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমের নজরে ছিলেন তিনিই পরে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলেন অখ্যাত অন্ধকারে তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কেলেঙ্কারি এবং চাঞ্চল্যের আগুন একসময় যে ব্রিটিশ করিডরকে কাঁপিয়ে তুলেছিল তা সময়ের স্রোতে একদিন নিভে যায় অথচ প্রশ্ন রয়ে যায় তিনি কি সত্যিই আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক ভয়ঙ্কর খেলায় ব্যবহৃত হয়েছিলেন নাকি নিজের স্বপ্নের পেছনে দৌড়াতে গিয়ে নিজের অজান্তেই এমন এক ঘূর্ণিপাকে ঢুকে পড়েছিলেন যেখান থেকে আর বেরোনোর পথ খুঁজে পাননি

পামেলা সিংহ চৌধরির জীবন তাই কেবল একজন সুন্দরীর সাফল্য এবং পতনের গল্প নয় তাঁর জীবন আসলে ক্ষমতা খ্যাতি লোভ প্রলোভন এবং ষড়যন্ত্রের জালের ভিতর আটকে পড়া এক ব্যক্তির সংগ্রাম এই সংগ্রাম কখনও ছিল তাঁর নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে কখনও আবার চারদিক ঘিরে থাকা ক্ষমতাবান পুরুষদের ছায়ার বিরুদ্ধে যাঁরা তাঁকে প্রশ্রয় দিয়েছেন আবার বিপদের সময় তাকে একা ফেলে দিয়েছিলেন একসময় তাঁকে ঘিরে সংবাদমাধ্যম এতটাই উত্তাল হয়ে উঠেছিল যে ব্রিটিশ সরকার পর্যন্ত চাপের মুখে পড়ে মহলের ভেতর থেকে ফাঁস হওয়া গোপন তথ্যের সম্ভাবনা ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের দুশ্চিন্তা এবং রাজনৈতিক দলগুলির চাপ সব মিলিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন এক আতঙ্কের নাম কিন্তু এইসবের মধ্যেই কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছিলেন মানুষ পামেলা

ক্ষমতার অন্দরমহলে প্রবেশ করার সুযোগ সব মানুষের ভাগ্যে জোটে না পামেলার সৌন্দর্য বুদ্ধিমত্তা এবং আত্মবিশ্বাস তাঁকে সহজেই সেই দরজায় নিয়ে গিয়েছিল যা সাধারণ মানুষের কাছে আজীবন বন্ধ থেকে যায় কিন্তু সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করেই তিনি নিজের জন্য এমন এক দুনিয়া তৈরি করলেন যেখানে শত্রু বন্ধুর পার্থক্য মুছে যায় যেখানে বিশ্বাস মানে এক অদৃশ্য সুতো আর সন্দেহ মানে ভয়াবহ পতন যেখানে নিজের অতীতকে অস্বীকার করেও বাঁচা যায় কিন্তু বর্তমানকে সামলানো যায় না

একসময় রাজনীতি মিডিয়া এবং গোপন বিদেশি চক্রের সমীকরণে তিনি হয়ে ওঠেন এক দাবার ঘুঁটি তাঁর জীবনের ওপর ঝুলতে থাকে ভয়ঙ্কর অভিযোগ আবার তাঁর মুখেই শোনা যায় অবিশ্বাস্য সব তথ্য যা ব্রিটিশ সরকারের পতন ঘটাতে পারে দাবি করা হয় তিনি জানতেন এমন সব গোপন আলাপ এবং ক্ষমতার ভিতরের কাহিনি যা একাধিক দেশের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্য কতটা আর গল্প কতটা তা আর কেউ জানল না কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব রহস্য হারিয়ে গেল ইতিহাসের অন্ধকারে

পামেলা সিংহ চৌধরির জীবন তাই এক সতর্কবার্তার মতো তিনি দেখিয়েছেন খ্যাতির দুনিয়া যতটা ঝলমলে দেখায় ভেতরে ততটাই ভয়ঙ্কর সুন্দরী হওয়ার সুফল যেমন থাকে তেমনি থাকে বিপদ এবং প্রলোভনের অদ্ভুত চাপ ক্ষমতাবানদের দুনিয়ায় টিকে থাকতে গেলে শুধু সৌন্দর্য নয় লাগে শক্ত ইচ্ছাশক্তি অভিজ্ঞতা এবং দুনিয়াকে পড়ার ক্ষমতা যা পামেলার ছিল কিন্তু তার মধ্যেই ছিল ভীষণ ভঙ্গুরতা এই ভঙ্গুরতা তাঁকে টেনে নিয়ে যায় এমন এক পথে যেখান থেকে কোনদিনই তিনি ফিরে আসতে পারেননি

একসময় যিনি ভারতের নাম তুলে ধরেছিলেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে তিনিই আজ রয়ে গেছেন অস্পষ্ট স্মৃতির ধুলোয় হারিয়ে যাওয়া একটি গল্প হয়ে রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি রহস্য হয়ে এবং মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন রেখে যে পামেলা চৌধরি কি সত্যিই নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষার শিকার না কি তিনি ছিলেন এক বৃহত্তর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অন্ধকার জগতের অংশ যেখানে কেউ কারও নয় এবং শেষ পর্যন্ত সবাই একা হয়ে যায়

Preview image