Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

ভারতে বলিউড গানের আধিপত্য ‘ইন্ডিপেনডেন্ট গান’ কেন পাচ্ছে না পর্যাপ্ত প্রচার?

কলকাতার ‘ইন্ডিপেনডেন্ট’ বাংলা গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং শান্তিনিকেতনে কাটানো অমূল্য মুহূর্তের সান্নিধ্যে জীবনের নানা পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে অকপট শায়ান চৌধুরী অর্ণবের গল্প।

শায়ান চৌধুরী অর্ণব, কোক স্টুডিয়ো বাংলা’র রূপকার, বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে এক অতি পরিচিত এবং জনপ্রিয় নাম। তাঁর কণ্ঠে যে সুরের মাধুর্য এবং গানের প্রতি গভীর আবেগ রয়েছে, তা সবারই জানার মতো। কলকাতার 'ইন্ডিপেনডেন্ট' বাংলা গানের গৌরবময় অধ্যায় তিনি নিজে রচনা করেছেন। তবে তাঁকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের সীমা নেই। শায়ান চৌধুরী অর্ণব, যিনি নিজে গায়ক, সুরকার, প্রযোজক, এবং গানের এক নক্ষত্র, সবার নজর কেড়েছেন তাঁর জীবনযাপন এবং সঙ্গীতের প্রতি অগাধ ভালোবাসা দিয়ে। তবে সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও তাঁকে বিশেষভাবে চিনতে হবে, যেখানে তাঁর নিজের চিন্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

এমনকি, শায়ান চৌধুরী অর্ণবের জীবনযাপন নিজেই এক অদ্ভুত গল্প। শহরের কোলাহলে তিনি কখনোই তেমন মুগ্ধ হননি। শান্তিনিকেতনে কাটানো তাঁর শৈশব, কৈশোর, এবং যৌবন জীবনের এক বড় অংশ। শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি, পরিবেশ, এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীতের প্রতি তাঁর ভালবাসা—এসবই তাঁকে সঙ্গীতের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে। কিন্তু সেই শান্তিনিকেতন এবং তার জীবনের নানা স্মৃতি তিনি প্রায়ই মিস করেন। শায়ান চৌধুরী অর্ণব কখনোই নিজেকে তেমন সংসারী মনে করেন না, যদিও তিনি সংসার করছেন। ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলে, তিনি দু-তিন মাস ফোন ছাড়াই কাটিয়ে দিতে পারেন, যা তার সমাজমাধ্যম থেকে দূরে থাকার একটি বড় উদাহরণ।

অর্ণবের সঙ্গীত জগতে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তিনি বলেন, "যতই সঙ্গীত জীবনে চলুক, আমি কখনোই সুরকার হিসেবে সম্পূর্ণ সন্মানী হইনি।" তাঁর কাজের প্রতি এক গভীর মনোযোগ রয়েছে। অর্ণবের নিজের সুর, গান, অ্যারেঞ্জমেন্ট, এবং সঙ্গীতের সঙ্গে তিনি এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন। কোক স্টুডিয়ো বাংলা’র কাজ শুরুর সময় অর্ণবের চিন্তাভাবনা ছিল একেবারে ভিন্ন—প্রথমে শিল্পী নয়, গানের দিকে মনোযোগ দেওয়ার জন্য তিনি এমন একটি প্রক্রিয়া চালু করেন, যেখানে শিল্পী এবং গান একে অপরের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মেলানো হয়। তাঁর প্রথম সিজ়নের কাজ শুরু হওয়ার আগে মাত্র দু’মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই সিজ়ন ছিল সম্পূর্ণ এককভাবে অর্ণবের হাতে। পরবর্তী সিজ়নে অন্য মিউজ়িক প্রোডিউসারদের সহায়তায় কাজ সহজ হয়েছিল, তবে প্রথম সিজ়নের স্মৃতি আজও তাঁর মনে তাজা।

কোক স্টুডিয়ো বাংলা’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলেও, শায়ান চৌধুরী অর্ণব কখনোই কলকাতার সঙ্গীত পরিবেশকে সন্তুষ্ট নয়। তিনি বলেন, “কলকাতায় এত গতি, সকলে ছুটছে। শান্তিনিকেতনে যেমন সাইকেল চালিয়ে ঘুরতে পারি, নিজের মতো থাকতে পারি।” সঙ্গীতের জন্য শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি তাকে মুগ্ধ করে। তবে কলকাতায় তিনি যে সঙ্গীতের ব্যস্ততায় বিভ্রান্ত হয়ে যান, তা তাঁর জন্য কখনোই সুখকর নয়। তিনি আরও বলেন, “কলকাতায় এখন জায়গাটা কেমন বদ্ধ হয়ে আছে। সেখানে বাংলাদেশে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গান লিখছে, গান বানাচ্ছে, সুর দিচ্ছে।” এই মন্তব্যটি, যে শহরে শিল্পীদের জন্য উদার পরিবেশ এবং সুরের মুক্তি নেই, তা তার মতামতকেই প্রমাণিত করে।

news image
আরও খবর

অর্ণবের নিজের অ্যালবাম 'ভাল লাগে না' মুক্তি পেয়েছে, যেখানে সব গানই তাঁর নিজস্ব। তিনি আরও জানান, কিছু গান, যেমন 'মাঝে মাঝে তব' গানটি, লোকে অর্ণবের গান ভেবে ভুল করেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি তাঁর বিশেষ মনোযোগ রয়েছে। যদিও অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, "গিটার বাজিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া কি বাঙালির কাছে গ্রহণযোগ্য?" অর্ণব বলেন, "রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার নির্দিষ্ট ধরন রয়েছে, তবে আমি শান্তিনিকেতনের শিক্ষা মেনে গিটার বাজিয়ে গান গাই, যা অনেকের কাছে একটু নতুন ধরনের মনে হতে পারে।"

বাংলাদেশ এবং ভারত—দুই দেশের সঙ্গীতের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে বলে অর্ণব মনে করেন। তিনি বলেছেন, “এখানে অনেক নতুন ট্যালেন্ট খুঁজে পাচ্ছি, কিন্তু ভারতে ইন্ডিপেনডেন্ট গান প্রচারের জন্য পর্যাপ্ত স্পনসর নেই।" তার মতে, যদি তাঁর অ্যালবামটির স্পনসর না পেতেন, তাহলে এই অ্যালবামটি এবং মিউজ়িক ভিডিয়ো তৈরি করা সম্ভব হতো না। বাংলাদেশে সঙ্গীতের জন্য সবসময় সমর্থন রয়েছে, এবং অনেক নতুন প্রতিভা সেখান থেকে উঠে আসছে। সুতরাং, শায়ান চৌধুরী অর্ণবের মতে, ভারতীয় সঙ্গীত ইন্ডাস্ট্রিতে পরিবর্তন ও সমর্থনের অভাব এখনও একটি বড় সমস্যা।

অর্ণবের সঙ্গীত জীবন, শান্তিনিকেতনে কাটানো স্মৃতি, এবং ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি তাকে এক অনন্য শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলেছে। তাঁর কাজের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং মিউজ়িকের প্রতি আন্তরিকতা তাঁকে সকল শ্রোতার কাছে বিশেষ স্থান দিয়েছে।

Preview image