Lenspedia Bangla Logo
  • কলকাতা
  • 30℃ Purba Bardhaman

বর্ধমানে ভোটার তালিকা সংশোধনে S.I.R অভিযান—বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম যাচাইয়ে প্রশাসনের নজির

বর্ধমান শহরজুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধনে চলছে বিশেষ S.I.R অভিযান। আজ ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে BLO, Supervisor এবং সিনিয়র অফিসাররা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে নাগরিকদের ফর্ম সংগ্রহ ও যাচাই করেছেন। ভুল থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই সংশোধন করে মোবাইল অ্যাপে স্ক্যান করে আপলোড করা হচ্ছে সার্ভারে। স্বচ্ছ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরিতে এই ডোরস্টেপ পরিষেবা প্রশাসনের এক বড় উদ্যোগ।

বর্ধমান শহর জুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ—S.I.R বা Special Intensive Revision অভিযান। সাধারণত ভোটার তালিকা সংশোধন মানেই নাগরিকদের সরকারি অফিসে গিয়ে সারিতে দাঁড়িয়ে ফর্ম জমা দেওয়া, তথ্য সংশোধন করানো বা নতুন নাম যুক্ত করা। কিন্তু এবার সেই চেনা ছবির বদল ঘটেছে সম্পূর্ণভাবে। ভোটার তালিকাকে আরও আধুনিক, নির্ভুল ও ঝামেলামুক্ত করতে প্রশাসন বেছে নিয়েছে ডোরস্টেপ সার্ভিস। আর সেই উদ্যোগের নজির দেখা গেল বর্ধমানের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে।

সকালের প্রথম থেকেই রীতিমতো চঞ্চল পরিবেশ। BLO, Supervisor, BLA–2 এবং অন্যান্য সহযোগী আধিকারিকরা দলের আকারে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন। লক্ষ্য একটাই—নাগরিকদের কাছে গিয়ে S.I.R ফর্ম সংগ্রহ করা, প্রয়োজন অনুযায়ী যাচাই করা এবং সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে সার্ভারে আপলোড করা। এই উদ্যোগের সৌজন্যে সাধারণ মানুষকে আর কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না, বরং দরজায় পৌঁছে যাচ্ছে সরকারি পরিষেবা।

ফর্ম হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হচ্ছে খুঁটিনাটি যাচাই

একটি S.I.R ফর্মে থাকে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—নাম, বয়স, ঠিকানা, লিঙ্গ, পরিচিতি, ভোটার নম্বর, সম্পর্কিত নথি ইত্যাদি। যেগুলো ভোটার তালিকায় কোনও ভুল এড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই ফর্ম সংগ্রহ করেই প্রথম কাজ হচ্ছে বিস্তারিত যাচাই। BLO এবং Supervisor–এর দল ফর্মের প্রতিটি অংশ খুঁটিয়ে পড়ছেন, নাগরিকের সঙ্গে মিলিয়ে নিচ্ছেন তথ্য। কোথাও সামান্য ভুল ধরা পড়লে নাগরিকের সামনেই তা সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে।

অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মতে, অনেক সময় নাগরিকরা ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে ভুল করে ফেলেন—হয়তো ভুল বানানে নাম লিখে ফেলেছেন, বয়সে সামান্য গরমিল, অথবা ঠিকানার তথ্য সম্পূর্ণ দেননি। আগে এসব ভুল ঠিক করতে আলাদা করে বিডিও অফিস বা নির্বাচন অফিসে যেতে হত। কিন্তু এবার সেই জটিলতা অনেকটাই কমে গেছে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই সবকিছু সংশোধন হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। ফলে মানুষের সময়, পরিশ্রম ও ঝামেলা—তিনিই কমছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল যাচাই—তথ্য আপলোড হচ্ছে মুহূর্তেই

তথ্য সংশোধনের পরেই শুরু হচ্ছে ডিজিটাল প্রসেস। আধিকারিকদের হাতে থাকা অফিসিয়াল মোবাইল অ্যাপে বিশেষ স্ক্যানিং সিস্টেমের মাধ্যমে ফর্ম স্ক্যান করা হচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ভোটার সার্ভারে আপলোড করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া ভোটার তালিকার সংশোধনকে করেছে দ্রুত, সঠিক এবং সম্পূর্ণ স্বচ্ছ।

সরকারি সূত্রে জানা যায়, ডিজিটাল আপলোডিং ব্যবস্থা S.I.R অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ আগে ফর্ম জমা দেওয়ার পর তা অফিসে গিয়ে আবার আলাদা করে স্ক্যান, ডেটা এন্ট্রি ও যাচাই করতে হত। এতে সময়ও লাগত, ভুল হওয়ার ঝুঁকিও থাকত। কিন্তু এবার মাঠ পর্যায়ে ডিজিটাল সিস্টেম চালু হওয়ায় ভুলের সম্ভাবনা কমেছে, আর দিনশেষেই অনুমোদন হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ ফর্মের।

মানুষের কাছেই পৌঁছে যাচ্ছে সরকারি পরিষেবা—জনগণের মুখে প্রশংসা

এদিন অনেক বাড়িতে দেখা যায় এক অভিনব দৃশ্য—মানুষ ফর্ম হাতে নিয়ে বের হয়ে আসছেন, আর কর্মকর্তারা তাঁদের সামনেই সংশোধন করে দিচ্ছেন। ফলে যারা সরকারি কাজে বাইরে যেতে পারতেন না, বিশেষত বয়স্ক মানুষ, শারীরিকভাবে অসুস্থ, কর্মব্যস্ত ব্যক্তি—তাঁদের জন্য এই উদ্যোগ হয়ে উঠেছে অত্যন্ত সুবিধাজনক।

একজন প্রবীণ নাগরিক বলেন,
“বয়স হয়েছে, সরকারি অফিসে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো এখন খুব কষ্টকর। কিন্তু আজ দেখলাম, বাড়িতেই এসে সব করে দিলেন। এর চেয়ে ভালো পরিষেবা আর কী হতে পারে?”

একজন গৃহবধূর কথায়,
“আমরা অনেক সময় অফিসে যেতে পারি না বাড়ির কাজের জন্য। কিন্তু আজ বাড়িতে এসে সংশোধন করে দেওয়াতে আমরা খুবই উপকৃত।”

BLO ও কর্মকর্তাদের ভূমিকা—দায়িত্বশীলতা, দ্রুততা ও মানবিকতার নিদর্শন

S.I.R অভিযানে BLO–দের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা নাগরিকদের প্রতিটি তথ্য বুঝিয়ে বলছেন, ভুল থাকলে সংশোধন করে দিচ্ছেন এবং নিশ্চিত করছেন যাতে কোনও নাগরিক বাদ না পড়েন। Supervisor ও সিনিয়র অফিসাররা নিশ্চিত করছেন পুরো প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কি না।

অনেক BLO জানান,
“ভোটার তালিকা সংশোধন মানেই মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। কোনও ভুল না থাকা খুবই প্রয়োজন। তাই আমরা চেষ্টা করছি প্রতিটি বাড়ি পরিদর্শন করে সঠিকভাবে যাচাই করতে।”

সঙ্গে রয়েছেন BLA–2 ও অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরাও। তাঁদের লক্ষ্য—একটি ওয়ার্ডের প্রতিটি নাগরিক যেন ভোটার তালিকায় সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হন বা সংশোধন পান।

ভোটার তালিকা আধুনিকীকরণে বড় পদক্ষেপ

S.I.R অভিযান শুধু ভোটার তালিকা সংশোধনই নয়, এটি ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করার এক উদ্যোগ। ডিজিটাল স্ক্যানিং, রিয়েল-টাইম আপলোডিং, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিষেবা প্রদান—এসবই ভবিষ্যতের স্মার্ট নির্বাচনী ব্যবস্থার ইঙ্গিত।

এই উদ্যোগের ফলে—

বর্ধমানের মাঠে দেখা গেল কার্যকর প্রশাসনিক সমন্বয়

আজকের অভিযান প্রমাণ করল, প্রশাসন চাইলে খুব সহজেই নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে উন্নত পরিষেবা। BLO, Supervisor, BLA–2 এবং সিনিয়র অফিসারদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার তালিকা সংশোধন কার্যক্রম ছিল নিখুঁত, দ্রুত ও স্বচ্ছ।

Lenspedia Bangla–র প্রতিনিধিরা সরেজমিনে ঘুরে দেখেন পুরো ঘটনা এবং জনগণের প্রতিক্রিয়া। মানুষের মুখে একটাই কথা—“এটা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ!”

উপসংহার

বর্ধমান শহরের এই S.I.R অভিযান শুধু ভোটার তালিকা সংশোধন নয়, এটি একটি উদাহরণ—কীভাবে আধুনিক প্রযুক্তি, সঠিক পরিকল্পনা এবং মানুষের দরজায় পৌঁছে দেওয়া সরকারি পরিষেবা মিলেমিশে তৈরি করতে পারে এক কার্যকর, সময়োপযোগী ও জনবান্ধব প্রশাসন।

নাগরিকদের সঠিক ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আজ বর্ধমানের মাঠে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
 

ডিজিটাল ভারত মিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উদ্যোগ

বর্তমান সময়ে দেশের প্রশাসনিক কাজকর্ম ক্রমশ ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ মিশনের মূল লক্ষ্য—প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তিনির্ভর পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। ভোটার তালিকা সংশোধনের এই S.I.R অভিযান সেই লক্ষ্যকে আরও একধাপ এগিয়ে দিল। অফিসের বাইরে না গিয়েই নাগরিকদের তথ্য যাচাই, সংশোধন এবং আপলোডের সুযোগ দেওয়া—এ যেন ডিজিটাল সুবিধাকে মানুষকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বাস্তব উদাহরণ।

প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, আগামীদিনে আরও উন্নত মোবাইল অ্যাপ, বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন এবং রিয়েল-টাইম ডেটা অ্যানালিটিকস যুক্ত করা হবে এই ব্যবস্থায়। ফলে ভোটার তালিকা হবে আরও আধুনিক, ত্রুটিমুক্ত এবং সম্পূর্ণ স্বচ্ছ।

একজন সিনিয়র অফিসার বলেন,
“দেশ দ্রুত ডিজিটাল দিকে এগোচ্ছে। তাই ভোটার তালিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ নথিতে ভুল বা অসঙ্গতি যেন না থাকে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। মাঠ পর্যায়ে ডিজিটাল স্ক্যানিং সেই লক্ষ্য পূরণে বড় ভূমিকা রাখবে।”

নাগরিকদের মধ্যে উৎসাহ ও সচেতনতা বাড়ছে

এই অভিযানে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষেরও প্রচুর আগ্রহ। অনেকে নিজে থেকেই অপেক্ষা করেছেন BLO–র জন্য। নিজের বিবরণ সঠিক রাখতে মানুষ যে কতটা সচেতন—এই উদ্যোগ সেটাই প্রমাণ করেছে। বিশেষ করে নতুন ভোটারদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৮–১৯ বছরের বহু তরুণ-তরুণী ফর্ম জমা দিতে এগিয়ে এসেছেন, অনেকেই জানতে চেয়েছেন কীভাবে প্রথমবারের মতো ভোটার ID পাবেন, কোন কোন নথি লাগবে, প্রক্রিয়া কতদিনে সম্পন্ন হয় ইত্যাদি।

একজন কলেজ পড়ুয়া বলেন,
“এবার প্রথমবার ভোট দিতে পারব। তাই তথ্য যেন ঠিক থাকে তা নিশ্চিত করতে আজ বিশেষভাবে প্রস্তুত ছিলাম।”

এই ধরনের সচেতনতা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। কারণ সঠিক ভোটার তালিকা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের চ্যালেঞ্জ ও অভিজ্ঞতা

যদিও পুরো অভিযান প্রশংসা কুড়িয়েছে, তবুও BLO এবং কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে সামান্য চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছেন। অনেক নাগরিক দিনের বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থাকেন না, ফলে তাঁদের সঙ্গে দেখা করা কঠিন। কোথাও আবার বাড়ির ঠিকানা মিলছে না, অথবা পরিবারের সকলে উপস্থিত না থাকায় যাচাই প্রক্রিয়া দীর্ঘ হচ্ছে। তবে কর্মকর্তারা ধৈর্য ধরে বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁদের কথায়—
“এই কাজটা সময়সাপেক্ষ, কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই যতটা সম্ভব প্রতিটি পরিবারকে কভার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অনেকেই ফর্ম পূরণ করেছেন কিন্তু প্রয়োজনীয় নথির ফটোকপি রাখেননি। এমন অবস্থায় BLO–রা তাঁদের নিকটবর্তী CSC বা Xerox সেন্টার থেকে নথি সংগ্রহ করে আনতে পরামর্শ দেন। অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই সহযোগিতা করেছেন যাতে কোনও নাগরিক বাদ না পড়েন।

ভোটার তালিকা সংশোধনে নতুন দিশা

সামগ্রিকভাবে এই উদ্যোগ প্রমাণ করছে—প্রশাসনের কাজ কাগজ-কলমের সীমাবদ্ধতায় আটকে নেই। বরং প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে চাইছে প্রশাসন। বর্ধমানের এই S.I.R অভিযান ভবিষ্যতে রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও অনুসরণীয় মডেল তৈরি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে—
“ডোরস্টেপ সার্ভিস, ডিজিটাল স্ক্যানিং এবং তাত্ক্ষণিক আপলোড—এ তিনটি বিষয় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভুল করবে।”

Preview image