ভারতের বৃহত্তম এয়ারলাইন IndiGo কে ঘিরে দেশজুড়ে অভূতপূর্ব বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। NDTVর রিপোর্ট অনুযায়ী, একদিনে শত শত ফ্লাইট বাতিল হওয়া, লাগেজ ডেলিভারিতে মারাত্মক বিলম্ব, যাত্রীদের খাবার ও পানীয় না দেওয়া এবং বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তথ্যহীন অবস্থায় অপেক্ষা করার মতো ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদসহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে হাজার হাজার যাত্রী লাগেজহীন, খাবারহীন অবস্থায় আটকে পড়েন। কিছু যাত্রী ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিমানবন্দরে আটকা পড়ে ছিলেন এবং NDTV কে জানান কেউ আমাদের কিছু জানাচ্ছে না, খাবারও দেয়নি। শুধু অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহন ব্যবস্থায় নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হয়েছে যাত্রী ও বিমান সংস্থাগুলো। দেশের সবচেয়ে বড় লো–কস্ট এয়ারলাইন IndiGo (ইন্ডিগো)-র হঠাৎ করে ব্যাপক সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল, লাগেজ ডেলিভারিতে দীর্ঘ বিলম্ব, বিমানবন্দরে খাবার ও পানীয় সরবরাহে ব্যর্থতা এবং যাত্রীদের প্রতি তথ্য–অস্পষ্টতা — এই সব কিছুর ফলে দেশজুড়ে বিমানবন্দরগুলোতে তীব্র বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। NDTV–সহ দেশের একাধিক গণমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, হাজার হাজার যাত্রী দিন–রাত বিমানবন্দরে আটকে পড়েছেন; কেউ তাদের লাগেজ খুঁজে পাননি, কেউ ১২–১৬ ঘণ্টা খাবার ছাড়া অপেক্ষা করেছেন, কেউ আবার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে রীতিমতো অসহায় অবস্থায় রয়েছেন।
এই বিশৃঙ্খলার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে DGCA–র নতুন Flight Duty Time Limitation (FDTL) নিয়ম, যেখানে পাইলট ও কেবিন ক্রুদের বিশ্রামের সময় এবং কাজের সীমা কঠোরভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। IndiGo জানিয়েছে, নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর পর্যাপ্ত ক্রু–ম্যানেজমেন্ট করতে না পারায় ফ্লাইট পরিচালনায় বড় সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি লাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেমে জট, রানওয়ে স্লট সমস্যা ও প্রযুক্তিগত ত্রুটিও পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে।
যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন— বিমানবন্দর হেল্পডেস্কে ঠিকমতো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাগের স্তূপ পাওয়া গেছে দিল্লি বিমানবন্দরে, যেখানে হাজার হাজার লাগেজ চিহ্নহীন অবস্থায় পড়ে ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় ক্ষুধার্ত শিশু, মেঝেতে বসে থাকা বয়স্ক যাত্রী এবং ক্ষোভে ফেটে পড়া মানুষের দল।দেশজুড়ে IndiGo ফ্লাইটে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। শতাধিক ফ্লাইট বাতিল, দীর্ঘ দেরি, লাগেজ ডেলিভারিতে বিপর্যয় এবং খাবার বা সঠিক তথ্য ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের বিমানবন্দরে আটকে থাকার ঘটনা তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। NDTV–র রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লিসহ একাধিক বিমানবন্দরে হাজার হাজার ব্যাগ চিহ্নহীনভাবে স্তূপ করে রাখা ছিল, যাত্রীরা ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে খাবার ও পানীয় ছাড়া অপেক্ষা করেছেন।
এই বিশৃঙ্খলার ফলে শুধু সাধারণ যাত্রী নয়, ব্যবসায়িক ভ্রমণকারী, পর্যটন সংস্থা, মেডিক্যাল জরুরি ভ্রমণ–সহ সব ক্ষেত্রেই বড় আঘাত এসে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ভারতের বিমান পরিবহন ব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতা উন্মোচন করেছে। IndiGo ক্ষমা চাইলেও, সমালোচকদের বক্তব্য— “শুধু ক্ষমা নয়, কাঠামোগত সমাধান দরকার।”
এখন কোটি মানুষের নজর রয়েছে DGCA ও IndiGo–র পরবর্তী ঘোষণার দিকে, যা দেশের বিমান ভ্রমণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
কীভাবে এবং কেন এতো বড় বিপর্যয় সৃষ্টি হল
সরকারি সংস্থা DGCA-এর ভূমিকা কী
IndiGo–র অভ্যন্তরীণ সমস্যা কীভাবে সংকট বাড়াল
যাত্রীদের কি ধরনের দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে
ফ্লাইট বাতিলের ফলে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা ও বিমান চলাচলে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী
ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে কোন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত
IndiGo বর্তমানে ভারতের ৬০ শতাংশেরও বেশি বাজার শেয়ার ধরে রেখেছে — অর্থাৎ দেশের অর্ধেকেরও বেশি যাত্রী IndiGo–তেই ভ্রমণ করেন। ফলে এয়ারলাইনের উপর চাপ যেমন বিশাল, তেমনি কোনও পরিস্থিতি বিঘ্ন ঘটলে তার প্রভাব পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়ে।
NDTV–র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৫৫০টিরও বেশি IndiGo ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে — যা ২০ বছর পুরনো সংস্থার ইতিহাসে এক দিনে সর্বোচ্চ ফ্লাইট বাতিলের ঘটনা। দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, গোয়া, কলকাতা— দেশের প্রায় সব বড় বিমানবন্দরেই যাত্রীদের অবস্থা বিপর্যস্ত।
যাত্রীদের ভিড় এতটাই বেড়ে যায় যে দিল্লি বিমানবন্দরের একটি বিপুল অংশ লাগেজের পাহাড়ে পরিণত হয়। হাজার হাজার ব্যাগ কোনও আইডেন্টিফিকেশন ছাড়াই স্তূপ করে রাখা ছিল — যাত্রীরা নিজেদের ব্যাগ খুঁজে পেতে মরিয়া, বিমানবন্দরের কর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, ক্রোধ ও অসহায়তা — সবই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে DGCA (Directorate General of Civil Aviation) কর্তৃক কার্যকর হওয়া Flight Duty Time Limitation (FDTL)–এর নতুন নিয়ম। এই নিয়ম অনুযায়ী—
পাইলট ও কেবিন ক্রু কত ঘণ্টা টানা কাজ করতে পারবেন
কত ঘণ্টা বিশ্রাম বাধ্যতামূলক
রাতের ফ্লাইটের ক্ষেত্রে কত দায়িত্ব দেওয়া যাবে
— সবকিছুর উপরে কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে।
IndiGo দাবি করেছে—
“নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর আমাদের রোস্টার (কাজের সময়সূচি) প্রস্তুত করতে সময় লেগেছে। পর্যাপ্ত ক্রু পাওয়া যায়নি। ফলে অনেক ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।”
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে—
কর্মীর অভাব
বিমানবন্দরের ব্যাক–এন্ড টেকনিক্যাল সিস্টেমে ত্রুটি
ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেমের জট
রানওয়ে স্লট জ্যাম
আবহাওয়ার সাময়িক সমস্যাও অনেক জায়গায় ব্যবস্থাকে আরও চাপের মুখে ফেলেছে
যাত্রীদের অভিযোগ NDTV–র প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে—
অনেকে অভিযোগ করেছেন—
“সকাল থেকে রাত — কোনও খাবার, কোনও পানি, কোনও সঠিক তথ্য নেই।”
দিল্লি বিমানবন্দরের লাগেজ বিভাগে পাহাড়প্রমাণ ব্যাগ পড়েছিল —
যাত্রীরা বলছেন—
“আমার ব্যাগ কোথায় সেটা কেউ বলতে পারছে না।”
যাত্রীদের অনেকেই জানিয়েছেন—
খাবার দেওয়া হয়নি
পানি চেয়ে পাননি
IndiGo–র ক্রু সদস্যরা সঠিক নির্দেশনা দেননি
NDTV ভিডিওতে দেখা যায়—
বাচ্চারা ক্ষুধায় কাঁদছে
বয়স্ক যাত্রীরা দাঁড়িয়ে বা মেঝেতে বসে সময় কাটাচ্ছেন
অনেকে ওষুধের অভাবে অসুস্থ হয়েছেন
যাত্রীরা বারবার বলে উঠেছেন—
“কেউ বলছে দুই ঘণ্টা পরে ফ্লাইট, কেউ বলছে বাতিল। হেল্পডেস্কও কিছু বলতে পারছে না।”
এয়ারলাইনের পাশাপাশি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও যাত্রীদের রোষের মুখে।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—
লাগেজ সিস্টেম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেনি
হেল্পডেস্কে পর্যাপ্ত কর্মী ছিল না
ভিড় সামলাতে ব্যর্থ
যাত্রীদের প্রতি আচরণে অমানবিকতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
“ভারতের বিমানবন্দরগুলো যতো দ্রুত যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে, সেই তুলনায় পরিকাঠামো উন্নত হয়নি।”
এয়ারলাইনটি এক বিবৃতিতে NDTV–কে জানায়—
“আমাদের নেটওয়ার্কে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে। যাত্রীদের অসুবিধার জন্য দুঃখিত। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দিনরাত কাজ করছি।”
তবে যাত্রীরা বলছেন—
“ক্ষমা চাইলেই হবে না। বাস্তবে আমাদের কষ্টের সমাধান চাই।”
IndiGo–র ফ্লাইট বাতিলের ফলে—
ব্যবসায়িক মিটিং বাতিল
সরকারি জরুরি ভ্রমণ ব্যাহত
পর্যটনে বড় আঘাত
আন্তর্জাতিক সংযোগেও প্রভাব
এয়ার–কার্গো ও লজিস্টিক খাতে বিপর্যয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
“এটি শুধু কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল নয় — এটি ভারতের বিমান পরিবহন ব্যবস্থার গঠনগত দুর্বলতা।”
বিশেষজ্ঞদের মতে তিনটি ব্যবস্থা জরুরি—
IndiGo–তে দীর্ঘদিন ধরে ক্রু–সংকট চলছে।
যাত্রীদের প্রতি মিনিটে আপডেট দিতে হবে।
নিয়ম কঠোর হলে এয়ারলাইনকে রোস্টার ম্যানেজমেন্টে সাহায্য করতে হবে।
IndiGo ফ্লাইট বিপর্যয় দেখিয়ে দিয়েছে—
একটি এয়ারলাইনের উপর দেশের অত্যধিক নির্ভরতা কতটা বিপজ্জনক
বিমানবন্দরের পরিকাঠামো কতটা দুর্বল
যাত্রী অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা কতটা অপর্যাপ্ত
সংকট মুহূর্তে কোনও কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি নেই
ভারতের বিমান চলাচল এখন দ্রুত বৃদ্ধির পথে— কিন্তু পরিকাঠামো, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি সেই গতিতে বাড়েনি।
IndiGo–র এই বিপর্যয় দেশের বিমান পরিবহন খাতকে মৌলিক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে—
“যখন দেশের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইনই স্থিতিশীলতা রাখতে পারে না, তখন বাকি ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কী