বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি Joy Goswami সম্প্রতি গুরুতর অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। হঠাৎই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে পরিবার ও অনুরাগীরা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। তাঁর কন্যা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য এক রোলার কোস্টারের মতো কেটেছে একাধিক শল্যচিকিৎসার পর জয় গোস্বামী এখন বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থতা পাচ্ছেন। তবে চিকিৎসক ও পরিবারের পরামর্শ অনুযায়ী, কবির জন্য এখনো সম্পূর্ণ বিশ্রাম অপরিহার্য। তাঁদের বক্তব্য, সামনের কয়েক সপ্তাহ কাজ, সামাজিক যোগাযোগ বা বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকাই তার সঠিক পুনরুদ্ধারের পথ। অনেকেই ইতোমধ্যেই তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া করছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সময়টা তাঁদের জন্য খুবই নাজুক, তাই - যদিও অনেকেই ফোন এবং মেসেজের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ সীমিত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে, কবি পাঠক ও সাহিত্য প্রেমীদের কাছে এই সময়টা এক গভীর উদ্বেগের মধ্য দিয়ে কাটছে। যিনি বাংলা কবিতার এক স্বনামধন্য কন্ঠ, যিনি বছরের পর বছর বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে কবিতার রূপে গুণগতভাবে উপস্থাপন করেছেন, তাঁর আরোগ্য ও শক্তিতে ফিরে আসা সকলের কাম্য। একরকম ভাবে যদিও গুরুতর অপারেশন হয়েছে জয় গোস্বামী এখন বাড়িতে, পরিবারের সেবা ও বিশ্রামের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে সুস্থতার দিকে এগুচ্ছেন। চিকিৎসকরা ইতিমধ্যেই বলেছেন, ফোকাস রাখতে হবে ধৈর্য, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং আবেগ-মানসিক চাপ থেকে বিরত থাকা। এই কঠিন সময়েও, কবি প্রেমি, পাঠক এবং শুভানুধ্যায়ীরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর দ্রুত সুস্থতার প্রতীক্ষায়। সবাই প্রার্থনা করছে, যেন কবির কন্ঠ আবার কবিতার মাধুর্য ছড়ায়, আর তিনি ফিরিয়ে আনেন বাংলা কবিতার সেই অনবদ্য চার্ম।
বাংলা কবিতার জগতে জয় গোস্বামী এমন এক নাম, যাকে ঘিরে সাহিত্যপ্রেমীরা শুধু মুগ্ধতাই অনুভব করেন না, গভীর আবেগও লালন করেন। তাঁর কবিতা কখনও অনাবিল প্রেম, কখনও গভীর অস্তিত্ববোধ, কখনও মানুষের শৈশব, যৌবন, আকাঙ্ক্ষা ও ভাঙনের গল্পকে রূপ দেয় বিস্ময়কর সিম্ফনির মতো। তাঁর ভাষা কখনও শিশুর মতো সরল, কখনও দহনজ্বালা মতো তীব্র, কখনও আবার বৃষ্টির মতো কোমল। তাই স্বাভাবিকভাবেই, যখন তাঁর অসুস্থ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে, সমাজের সাহিত্যবৃত্ত মাত্রই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।
এমন নয় যে কেবল পাঠকরাই উদ্বিগ্ন হন। কবির সহকর্মী, লেখক-বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, তরুণ কবি সকলের ভিতরেই যেন এক অসহায় অপেক্ষা জন্ম নেয়। তাঁদের অনুভূতি যেন একটাই বাংলা কবিতার এমন এক স্তম্ভ অসুস্থ, এবং তার সুস্থতা কামনা করা অপরিহার্য এক মানবিক দায়িত্ব।
জয় গোস্বামী বহুদিন ধরেই বাংলা ভাষার অপরিহার্য কবি। তাঁর কবিতার ধরণ, বক্তব্য, আবেগ এবং ভাঙনের অভিজ্ঞতা তাঁকে তাঁর সময়ের অনেক কবি থেকে ভিন্ন করেছে। তাঁর অসুস্থতার খবরকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, একটি সমাজ কীভাবে তার শিল্পীকে ধারণ করে শুধু লেখক হিসেবে নয়, বরং নিজের একজন মানুষ হিসেবে।
যখন কোনো প্রিয় শিল্পী অসুস্থ হন, তখন তাঁর পাঠকরা শুধু তাঁর সুস্থতা চান না, তাঁকে ঘিরে নিজের জীবনেরও অনেক স্মৃতি পুনরায় ফিরে দেখেন। মানুষ ভাবে তাঁর লেখা কবিতাগুলো জীবনের কোনদিন আমাকে ধরে রেখেছিল? কোন লাইন আমাকে কাঁদিয়েছিল? কোন একটা শব্দ আমাকে ভিতর থেকে চাঙ্গা করেছিল? সেইসব স্মৃতি যেন এক স্রোতের মতো ফিরে আসে। সেই কারণে অসুস্থতার খবর মানুষের মনে আরেক ধরনের আবেগ তৈরি করে যেন নিজের পরিবারের কারো অসুস্থতার কথা শুনেছে।
জয় গোস্বামীর কবিতা নিয়ে আলোচনা করলে প্রথমেই আসে তাঁর ভাষার জাদু। ভাষা যেন তাঁর হাতে খেলা করে। তিনি শব্দকে কোনো বস্তুর মতো ব্যবহার করেন না বরং শব্দ যেন তাঁর কবিতায় জীবন্ত প্রজাপতি উড়তে থাকে, রঙ বদলায়, কখনও অস্থির, কখনও শান্ত। তাঁর কবিতার ভেতর এমন এক আবেগ আছে, যা একদিকে তীব্র, অন্যদিকে কোমল।
এই অবস্থায়, তাঁর অসুস্থতা যেন পাঠকদের মনে একটা দুঃশ্চিন্তার মেঘ টেনে আনে একটি প্রশ্নই বারবার উঠে আসে“তিনি কেমন আছেন?তিনি কি শিগগিরই লিখতে ফিরতে পারবেন? তিনি কি আগের মতো সুস্থ হবেন?
কবির অসুস্থতা শুধু শারীরিক সংকট নয়, এটি তাঁর সৃষ্টিরও অস্থায়ী বিরতি। আর সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিতে বিরতি মানেই পাঠকের মনে নীরবতা নেমে আসা। যে পাঠক তাঁর কবিতাকে শ্বাসের মতো গ্রহণ করে, সেই পাঠকের কাছে এই নীরবতা প্রায় শূন্যতার মতো অনুভূত হয়।
কিন্তু কবিতা কখনও হারিয়ে যায় না। কবির শরীর অসুস্থ হলেও তাঁর সৃষ্টির শক্তি অক্ষুণ্ণ থাকে। এমনকি অনেক সময় অসুস্থতা একজন কবিকে নতুন চিন্তার জগতে নিয়ে যায় যেখানে তিনি স্বাস্থ্যের ভঙ্গুরতা, জীবনের অনিশ্চয়তা, মানুষের সম্পর্কের গভীরতা, এবং জীবনের পুনর্জন্মকে নতুনভাবে অনুভব করেন।
জয় গোস্বামী এমনই এক কবি, যিনি জীবনের ভাঙনকে হাতে তুলে নিয়ে কবিতার ফুল ফুটিয়ে দিতে পারেন। তাঁর কবিতায় মৃত্যু যেমন এসেছে, তেমনই এসেছে জন্মএসেছে ধ্বংস, কিন্তু সেই ধ্বংসের পাশে দাঁড়ায় সৃষ্টি এসেছে নৈরাশ্য, কিন্তু সেই নৈরাশ্যের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে আলো; এসেছে প্রেম, কিন্তু প্রেমের ভিতরেও থাকে অনিবার্য হারানোর গল্প।
এই সময়ে তাঁর অসুস্থতার কারণে মানুষ শুধু চিন্তিত নয় তাঁকে যেন আরও বেশি করে স্মরণ করছে। তাঁর কবিতার লাইন, তাঁর সাক্ষাৎকারের কথা, তাঁর লেখা ছোট গদ্য সবকিছু যেন নতুন করে পাঠকের কাছে ফিরে আসছে।
একজন শিল্পীর অসুস্থতা কখনও কেবল তাঁর নিজের সমস্যা নয়এটি তাঁর শিল্পভোক্তাদের মনেও ঢেউ তোলে। যেন সচেতনভাবে সবাই বুঝতে পারে একটি কবি তাঁর শরীর নিয়ে লড়ছেন, কিন্তু তাঁর সৃষ্টি সুস্থভাবে বেঁচে আছে।
বাংলার সাহিত্যইতিহাসে এমন পরিস্থিতি নতুন নয়। জীবনানন্দ দাশ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তিপদ ব্রহ্মচারী সকলের জীবনে এমন সংকট গেছে। কিন্তু প্রত্যেকেই নিজের সৃষ্টিশীল শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন। তাই জয় গোস্বামীর ক্ষেত্রেও মানুষের মন বিশ্বাস করে এই কবি আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন, আবার কবিতাকে তাঁর কণ্ঠে, কলমে এবং চিন্তায় পুনরায় জাগ্রত করবেন।
এই সময়ে তাঁর পরিবার যেভাবে তাঁকে ঘিরে রেখেছে, তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পরিবারই একজন শিল্পীর প্রথম আশ্রয় অসুস্থতা বা মানসিক চাপের মুহূর্তে পরিবারই তার প্রধান ভরসা। পরিবার তাকে সেরে ওঠার জায়গা দেয়, শান্তির পরিবেশ দেয়, এবং সবচেয়ে বড় কথা পুনরায় সৃষ্টিশীলতার পথে ফেরার প্রেরণা দেয়।
এই প্রেক্ষাপটে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পাঠকের নীরব প্রার্থনা। যে পাঠক কখনও কবিকে সামনে দেখেননি, সেও যেন নিজের মতো করে প্রার্থনা করেন তাঁর কবিতার কাছে ফিরিয়ে দিতে। কারণ কবির সুস্থতা মানে শুধু একজন মানুষের সুস্থতা নয় এটি হাজারো পাঠকের মনোজগতের শান্তি।
একজন কবি অসুস্থ হলে সাহিত্যকেও যেন একটু থমকে যেতে দেখা যায়। কবিতা কাঁদে না, কিন্তু পাঠকের মন কাঁদে। ভাষা ক্ষুণ্ণ হয় না, কিন্তু ভাষার মর্মস্থলে যেন একটা শূন্যতা তৈরি হয়। এই শূন্যতার ভেতরই মানুষ বুঝতে পারে একজন শিল্পীর স্বাস্থ্য শুধু তাঁর পরিবারের নয়, একটি সমাজেরও প্রয়োজন।
অসুস্থতার সময় মানুষ সাধারণত জীবনকে নতুন করে দেখে। হয়তো জয় গোস্বামীও এই মুহূর্তে জীবনের ভঙ্গুরতা, শরীরের সীমাবদ্ধতা, এবং সময়ের নির্মমতার সামনে দাঁড়িয়ে এক ধরনের নতুন অনুভূতি অনুভব করছেন। একজন কবির কাছে এই অভিজ্ঞতা কখনও কখনও নতুন ভাষা, নতুন শব্দ, নতুন কবিতার জন্ম দেয়।
বাংলা কবিতার জগৎ তাঁর সুস্থতার দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষ জানে তিনি সুস্থ হলে আবার লিখবেন। তাঁর কবিতা আবার মানুষের জীবনে আলো হয়ে আসবে। তিনি আবার তাঁর সৃষ্টিশীলতায় ফিরে আসবেন। বাংলা ভাষা আবার তাঁর নতুন কবিতার মাধ্যমে আলো ছড়াবে।
এই মুহূর্তে তাঁর সুস্থতা নিয়ে মানুষের যে উদ্বেগ, তা শুধু মানবিকই নয় সাংস্কৃতিকও। কারণ এক কবির জীবন মানে একটি ভাষার ভিত। একজন কবির অসুস্থতা মানে সেই ভাষার এক সুরের ম্লান হয়ে যাওয়া। আর তাঁর সুস্থতা মানে সেই সুরের পুনর্জন্ম।
সময় ধীরে ধীরে তাকে সুস্থ করে তুলবে বিশ্বাস করে বাংলা ভাষার প্রতিটি পাঠক।
অসুস্থ জয় গোস্বামীএকাধিক সার্জারির পর এখন কেমন আছেন প্রিয় কবি?এই প্রশ্নটি এখন শুধু বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের নয়, বাংলা কবিতার সঙ্গে আবেগগতভাবে যুক্ত প্রতিটি মানুষের মনের মধ্যে বয়ে বেড়াচ্ছে। একটি সমাজ যখন তার কোনো প্রিয় শিল্পীর সংকটের মুখোমুখি হয়, তখন সেই সমাজের উদ্বেগ কেবল শারীরিক নয়; সেটি অনেক বেশি আবেগময়, স্মৃতি নির্ভর এবং সাংস্কৃতিকও বটে। জয় গোস্বামী এমন এক কবি, যার লেখা একাধিক প্রজন্মকে ছুঁয়েছে, এমন কবি যার কবিতা কারও শৈশবের স্মৃতি, কারও কৈশোরের প্রেম, কারও জীবনের অন্ধকারে আলো, কারও হতাশার ভিড়ে খুঁজে পাওয়া নিঃশ্বাস। তাই তাঁর অসুস্থতার খবর মানুষের হৃদয়ে এমনভাবে আঘাত করে, যেন নিজের ঘনিষ্ঠ কারও খবর শুনছে।
এই সময়টা তাঁর জন্য এক পুনর্জন্মের মতো। অসুস্থতা মানুষকে নতুন করে জানতে শেখায়, নিজের ভেতর তাকাতে শেখায়, জীবনের মূল্য বুঝতে শেখায়। একজন কবির ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা আরও গভীর। তিনি হয়তো এখন নিজের শরীরের সঙ্গে লড়ছেন, কিন্তু তাঁর মন হয়তো কবিতার নতুন নদীর শব্দ শুনছে।
শব্দ তাঁকে কখনও ছেড়ে যায় না। কবি কখনও সত্যিকারে নীরব হন না। তাঁদের নীরবতার ভেতরও থাকে শব্দের শুকনো পাতার খসখস, ব্যথার নরম নরম স্তর, এবং জীবনের চিরন্তন তাগিদ।
সময় ধীরে ধীরে তাঁকে সুস্থ করে তুলবে।
জয় গোস্বামী আবার ফিরে আসবেন তাঁর কবিতার ভুবনে।
বাংলা কবিতা আবার নতুন আলোয় ভরে উঠবে।
আর পাঠক তাঁর অপেক্ষায় থাকবে
শান্ত, স্থির, নিঃশব্দ, কিন্তু গভীর ভালোবাসা নিয়ে।